জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ রাধাবল্লভ চক্রবর্ত্তী


গুচ্ছ কবিতা 

রাধাবল্লভ চক্রবর্ত্তী 


যজ্ঞ 

হে শ্রেষ্ঠ, তোমাকে খুঁজে পাওয়া গেল এবে, সম্ভারের বিপরীতে।
এসো, এই তীব্র শরীর নিয়ে, ফাঁস করি সব যুদ্ধকৌশল।
তোমাকে পাওয়া এত আকষ্মি, অথচ এতই দুর্লভ —
শেষ হয়েও এতকাল শেষ হয়নি যা যা, আজ সেসকলই 
দেখবে অন্তিম; তুমি প্রেম বলো কাকে? আরও অতীতে
সরে আসি, সে এক অন্য মুখ — যাকে দেখে ভেঙে পড়ি,
যাকে দেখে বুকে আসে বল! তবে শুধু আয়ু আর আয়ু?
সিদ্ধান্ত নেই, আছে সম্ভাব্য একঝাঁক পরিকল্পনা?
জানো, তুমি জানো, কত শিথিল হ’য়ে এসেছে রাশ,
অথচ আমিও জানি, এমন হওয়ার তো কথা ছিল না!
বিবরণ আছে আজও, থাকবে অগম্য ভবিষ্যতে, তবু
স্রোত কোথা? তাপ নেই, নেই কোনও উচ্ছ্বলতা; সৃষ্টি,
তোমায় কতো লুকিয়ে নিয়েছি, ভাবি যদি, এই যে সম্ভার,
তার বিপরীতে, হে শ্রেষ্ঠ, তোমায় আবার খুঁজে পাবো তো?


দোলনা

অনিয়ত এই জোছনায় বারেবারে নিজেকে জড়ানো, কেবলই আহত
হওয়া। অভিমুখ আজ হ’তে চায় কোনও দুর্বোধ্য সমুদ্রের
দিকে। এখনও তোমার অক্ষরে, হে তরুণ কবি, জলের প্রতিবিম্ব
দেখি। পাপ বলে কাকে? বহু স্বপ্ন দেখিয়ে শেষে গ্রাস ছিনিয়ে
নেওয়া? আমি মরে যাই বারবার, আর আমাকে খুঁড়ে এনে যে
করে তবুও বর্তমান, সে যেন কখনও বাঁচতে চায়নি? ধাঁধা-র 
উত্তরে তুমি কয়েকটি ব্যর্থ জন্ম দেখিয়েছিলে; সে কি প্রদর্শনী
কেবলই? নাকি সমষ্টিগত প্রতিবাদ? অথচ নীরব — অক্ষিকোটর 
থেকে মুছে নিয়ে জল, তুমি তো দারুণ অন্ধকারেও নিয়েছিলে চিনে;
তবে কি ধরে নিতে হ’বে, স্বেচ্ছায়, বুঝতে চাওনি এ কথা:
প্রতিটি প্রশ্নই ছিল আমার উত্তরের অধীনে।

🍂


বিশুদ্ধ

দাসত্ব মেনেছি কোটিকাল, আমার রক্ত আজ অনুসারী, ফল্গুধারা।
মৃত ভালো লাগে; যেহেতু, শিথিল হ’য়ে আসা, নীরব, বর্তমান
হওয়া, আরও বিরল প্রতিভা। পথে পথে কেবলই হন্যমান পাগলী —
কয়েকটি বিক্ষিপ্ত আকাশ থেকে ছুটে আসা মেঘ, রৌদ্র, ডাহুক
স্বপ্নে দেখায় আমাকে, সহজ বাংলা, কাঠিন্যে ভরা ডাবলিন।
এসো, হে পূর্বতন গ্রীক বীর, সমবেত হই, পুনরায় অবসরকাল 
কাটাই পদ্মবীজ খেয়ে — রাত্রি যেহেতু বলে তাহাদের কথা,
আমি এড়িয়ে যেতে চাই রাত্রি-কে, কিন্তু কাঁহাতক? বিলম্বিত
হচ্ছি ক্রমশ, চমকপ্রদ হ’লে দৃষ্টি ছিনিয়ে নেওয়া যায় কতখানি?
বিরহ যে তোমাকে না-পাওয়ার বিরহে বিরহী, তা আর কেউ না
জানুক, আমি জানি। নিশানা খোলা মাঠে টাঙিয়ে দিয়েছ, দেখেছি;
হে বর্তমান, তোমার প্রতিরূপ আঁকি: একহাতে বরাভয়, অন্যটিতে ঘুষ!

দাসত্ব মেনেছি, কোটিকাল? তবে তো, হে মৃত, তোমাকে মুক্তি দেওয়ার
সময় এসেছে, নিয়ে তোমার সমস্ত শিথিল নীরবতা ও কলুষ।


নেপথ্যে

সমূহ আড়াল ক’রে তুমি, বলেছ: হা রে, অন্ধ!
প্রভূত ছিনিয়ে নিয়ে তুমি, বলেছ: উদ্বাহু।
তারওপর আরও কিছু ভেবে রাখা ছিল? কোথায় সেসব?
বহু জন্মান্তর শেষ ক’রে, এসেছি অনন্ত খুঁজে নিতে।
বিষিয়ে দিচ্ছি সম্যক, নেই তার বাধা, বন্ধনী; রক্ষণ 
হারিয়ে এখন, উদ্‌যাপন করি, করি বিলাপও — কথা 
ছিল, মরা সাপের হাড়ের মতো প্রতিস্পর্ধী; ফিরে আসি,
বারেবারে, প্রবাদের শকুন হ’য়ে। ‘হা শূন্য, হা শূন্য’ বলে
ঘর পূর্ণ করি আমি প্রতিবার, যেন ছিল বিপ্রতীপে
চেতনামালিনী — কিছু লিকলিকে হাত জড়ো করো,
তোমরা, হে ভিনদেশের যক্ষরা, তাতে কোনও প্রতিজ্ঞা
দেখে দিতে দাও কৌশলে — আবার বেঁধেছি তোমায়
প্রেম ও প্রচণ্ড বিষে, টুকরো টুকরো হও, নিজে, বাঁচতে চাওয়ার অপরাধে!


যুদ্ধ

আবশ্যক; এই অস্থিরতা, অসারতা। ছিল কিছু পুণ্য, শ্লোক;
ছিল না কি পাপ ও প্রতিষ্ঠার লোভ? অচেনা উপদ্বীপ
পেরিয়ে গিয়েও দেখি, জীবন তখনও পরভৃৎ! খন্ড
খন্ড এইসব স্রোতধারা — অতিষ্ঠ? কুমকুম মেখে নিয়ে
কোনও অস্তমিত মেঘ সাজো; সাজো, গলদঘর্ম মধুকর;
নবাগত আসে, এবং ফিরে চলে যায় — এমনই গতিময়তা?
এত যে কথা — কথার অর্থ নেই, অর্থের শোভা নেই, শোভনতার 
কোনও সংস্থান ছিল? নাকি নেই? তবে কেন বিচলিত
হওয়া? তবে কেন উন্মুখ? শুধু পেতে চাওয়া, উপাধি-পল্লব;
 অপার দূরত্ব গড়ার যুদ্ধে নিজেকেই খুঁজে গেলে তবে?
তুমি জয়ী হও যদি, আমিও তো হার তবু স্বীকার করিনি!

Post a Comment

1 Comments

  1. খুব খুব ভালো লেখা

    ReplyDelete