জ্বলদর্চি

ভাঙা আয়নার মন/পর্ব -৩৪/মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

 
ভাঙা আয়নার মন 
পর্ব -৩৪

মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

|| বুলবুলি এসেছিল বাগানে ||

                                                                              
     "বুলবুলি এসেছিল বাগানে/ভেঙে দিতে চেয়ে /যত বদ বাবুদের মাইফেল/অন্ত্যমিলে কি দেব রাইফেল?"
    ঝিনিদের নিচের ঘরে কে ভরাট গলায় আবৃত্তি করে উঠল।বাজায় গিটার অথচ মেঘের মতো গমগম করে উদয়দার গলা।কবিতা শুনেই দোতলায় পড়ার ঘরে বেদম ক্ষেপে উঠলেন অংকের পরেশবাবু স্যার।এইসব অকালকুষ্মাণ্ডের দল কলেজ কামাই দিয়ে পদ্যে পদ্যে দেশোদ্ধার কচ্ছেন!যত্তসব হতভাগা!আর তোমার ব্যাপারটা কি ঝিনুক? তখন থেকে কষেই যাচ্ছো কষেই যাচ্ছো সহজ একটা ক্যালকুলাস কি মেলাতেই পেরে উঠছ না?আর পারবেটাই বা কী করে? লেখাপড়ার জন্য কালি কলমের সঙ্গে মন বলে আর একখানা পদার্থের দরকার হয় যে সেটা তো জানা আছে নাকি ফর্মুলার সাথে সব গুলে খেয়েছো?
       ফরফর করে অত ঘনঘন খাতার পাতা ওল্টানোর কারণটাই বা কী জানতে পাই??     
        দোতালার পড়ার ঘরের ঠিক নীচেই তাদের বসার ঘর থেকে অনেকের টুকরো গলার আওয়াজ,হঠাত হঠাত বেজে ওঠা হারমনিয়াম আর গিটারের শব্দ উঠছে। ছোড়দা কি আজ তাড়াতাড়িই এসে গেল?
           এমনিতেই সোম,বুধ,শনি তার রুটিনটা একটু কঠিন ভোরবেলা কেমিস্ট্রি পড়ে  স্কুল আর ছুটির পরে পরেই পরেশবাবু স্যার অংক করাতে এসে পড়েন আর সন্ধের পরে আসেন ইংরেজির সেই শিববাবু স্যার। মঙ্গল,বেস্পতি, শুক্কুরবার সে ফিজিক্স পড়তে যায় মলয়বাবু স্যারের বাড়িতে। ক
     আসলে নিজেদের বাড়িতেই স্যাররা ব্যাচ করে করে পড়ান। ছোট থেকেই পড়াচ্ছেন বলে এই পরেশবাবু আর শিববাবু স্যার কোনোরকমে নিজেদের সময় অ্যাডজাস্ট করে বাড়ি এসে পড়াতে রাজি হয়েছেন। ফলে ওনাদের সময় পাল্টানোর প্রশ্নই ওঠে না। মঙ্গল আর শুক্রবার ব্রততীদিও  আসেন বায়োলজি পড়াতে।ওই দুটোদিন সব থেকে ভাল লাগে তার,পড়ার চাইতে গল্প হয় অনেক বেশি,মহাকাশ নিয়ে,সমুদ্র নিয়ে,ইতিহাস নিয়ে, বিভূতিভূষণ নিয়েও।
          অন্যদিন যাহোক সে চালিয়ে নেয় শুধু সপ্তা দুই বাদে বাদে ছোড়দা এসে পড়লেই সমস্যা। গণসঙ্গীত বা নাটকের মহড়া,পত্রিকা বা মনিমেলা নানান কাজ নিয়ে মেজদা-ছোড়দার বন্ধুরা আসতেই থাকে।  সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে ঝিনিও উত্তেজিত থাকে খুব। 
        সবাইকে শিখিয়ে পড়িয়ে, কাজের ভাগযোগ করে ছোড়দা কোলকাতা যায় বটে কিন্তু আগের মতোই তার মন পড়ে থাকে এখানে। 
      ছোট বুলাদা,অহনাদি মাস্টার্সে ঢুকে গেছে। ওদের মতোই শুভাদা,বিনিদিরাও কলকাতার কলেজে পড়ে আর বেশীরভাগই ডেলি প‍্যাসেঞ্জারি করে বলে ওদের মারফতই ছোটবড় চিরকুট আসে ছোড়দার।  মাঝে মাঝেই ছোড়দার লম্বা চিঠিতে থাকে সারা পৃথিবীর মানুষের দুঃখকষ্টর কথা,পড়ে পড়ে কিছু একটা করার জন্য টানটান হয়ে থাকে তারা।
       গ্ৰামে বন্ধুদের নিয়ে  বছরে বার তিনেক মেডিকেল ক্যাম্প বসায়  দাদারা।এবারেও সেই ক্যাম্প এসে গেছে।ওষুধবিষুধ নিয়ে তারা শুভাদা আর বিনিদির বাড়িতে ভাগাভাগি করে থাকছে আর প্রাইমারি ইস্কুলের বারান্দায় বিনে পয়সার চিকিচ্ছে চালাচ্ছে আজ তিনদিন।

🍂

      কালও ঝিনি স্কুলে যাবার পথে চুপচাপ কেজি তিনেক চাল আর খানিক ডাল আর আলূ দিয়ে এসেছে। ছ'জনের জন্য বিনিদি রান্না করছে,
ঝিনিদের দায়িত্ব কাঁচামাল অর্থাৎ হাত সাফাইয়ের দ্বারা চাল ডাল সবজির জোগান দেওয়ার।
        আজ অবশ্য ক্যাম্প শেষ,তারা ফিরে যাবে দানির সাথে,ছোড়দা যাবে সোমবার । সব মিটিয়ে ছোড়দার আসতে মোটামুটি তার অংক টিউশান শেষ হয়ে যাবে আর ইংরেজি স্যার ডুয়ার্স গেছেন, বাঁচিয়েছেন বাবা,এ সপ্তা আসবেন না।
         কিন্তু এই ক্যালকুলাসটা আর চশমার ফাঁকে সরু টর্চলাইটের মত স্যারের চোখ...নীচে হারমনিয়মে সা-পা ধরে রাখলো কেউ,তুষারদা বোধহয় তবলা ঠিক করছে। মাস পাঁচ তো কেটেই গেল ইলেভেনের,এখনও যদি গানবাজনা, নাটক-থিয়েটারে মন পড়ে থাকে তবে পঁচিশে ডাবল জিরো আটকায় কে?
      মাথা নিচু করে রাখে সে। ঘটনা সত্যি। ইলেভেনে ওঠা ইস্তক সন্ধেবেলা পরেশবাবু স্যার মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা নেন অংকের। ইলেভেন ক্লাসের মাস দুই  বাদে একবার সব অংকই সে ভুল করে বসলো। 
        ক্লাব থেকে নাটকের প্রতিযোগিতায় গেছিল তারা। সেরা অভিনয়ের প্রাইজ পেয়েছিল তাদের দল।তালেগোলে অংকের চ্যাপ্টারটা  করাই হয়নি করাই হয়নি আর স্যার টিউশানিতে এসেই বসিয়ে দিলেন পরীক্ষায়।
        ঝিনির চোখে তখনও  মেডেলটা ভাসছিলো আর ভুলভাল সব পাতাগুলো ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কেটে দিয়েও স্যার ক্ষান্ত হলেন না। লালকালিতে নীচে পঁচিশ লিখে উপরে দুটো শূন্য বসিয়ে বাড়ির সবাইকে ডেকে দেখিয়ে তবে গেলেন।একসাথে সব অংক ভুল করার ক্রেডিট হিসেবে তিনি আরও একটা শূন্য অ্যাড করেছেন এই ঘোষণাও দেন।সে সময় বাবা দাদারাও বাড়িতে।
          কেলেংকারি আরকি। সমস্যা একটু বেশিই সিরিয়াস।কেননা  মেডিকেল স্টুডেন্ট হলেও এইচ এস অবধি অংকে দাদাদের রেজাল্ট ভালো। শুধু ভালো না, বাড়াবাড়ি রকমের ভালো।
 দানি তো আবার মাধ্যমিকের অ্যাডিশনাল ম্যাথেও একশ পেয়ে বসেছিল আর তাদের বাড়ির মেয়ে হয়ে সে কিনা শূন্য পেল তাও আবার দুটো? 
         দাদারা বলার চেষ্টা করলেও মা ধমকে  থামিয়ে দিল।।জ্যাক অব অল ট্রেডস শেখাতে এসো না।ছেলেপিলে মাধ্যমিক দিয়েপ্পর ইলেভেনের কোর্স শুরু করে আর এই গুনধর মেয়ে ফোর ফাইভে রং টিউশনি পড়ানো ধরলো কী নাকি ক্লাবের ফাণ্ডে টাকা দেবে।আরে আগে নিজেতো ভাল করে শেখ!
আর শিখবেই বা কখন মাধ্যমিক দিয়ে অবধি তো ট্রেনে ফেরিওলা সেজে ঘুরছে। এতদিন যথেষ্ট একটু ছাড় দিয়েছি।এইচ এস অবধি আবার সব বন্ধ।
       ফের তার গানের স্কুল আর  গিটার বন্ধ হয়ে গেল। মার কথার ওপরে কথা চলে না বাড়িতে,তবু ভাগ্যিস বাবা বাড়ি ছিল, মাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ছোড়দা এলে রিহার্সেলে বসার অনুমতিটুকু 
তাও পাওয়া গেল।
              টাস্ক ঠিকঠাক না পেলে কপালে দুঃখু আছে বলতে বলতে চারটে নাগাদ স্যর বিদেয় হলেন। ঝিনি দেখেছে ছোড়দা বাড়ি এলেই স্যার টাস্ক বাড়িয়ে দেন।রাত জাগতে হবে আর কি,আপাতত  দৌড়ে সে বসে গেল সবার সাথে।শুভা গানের এই জায়গাটা ঠিক রাখবি তুই, ছোড়দা বলছিল,আমি চড়ায় ধরব,হারমনি এফেক্টটা আসবে তালে।
               একি মৃদুল, তোরা যাসনি ? পোনে পাঁচটার ট্রেনটা মিস করে যাবিতো,অরু আছে বলেই ষ্টেশন না গিয়ে চলে এলাম আমি। ছোড়দার কথায় চোখ সবার দরজার দিকে ঘুরে গেল। চশমা পরা ফর্সামত রোগা এক ছেলে,দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।    
        ওরা গেছে,আমায় অরুদা বলল এখানে আসতে।আসলে ইয়ে জ্বর চলে এল পেঁদিয়ে।আরে আরে টলছিস কেন?লাফিয়ে উঠে ছোড়দা ধরল তাকে,এত খুব জ্বর রে সজল,ধরতো ওকে,চ' আমার ঘরে শুবি চ',ছোড়দারা ধরে ধরে নিয়ে গেল আর গুলতানি শুরু হয়ে গেল।
     শুভাদা চোখ মটকে বললো,ডাক্তারি করতে এসে রোগে পড়লেন ডাক্তার! এ কী সমিস্যে ভাইটির !
      বনগাঁ লোকালের ইঞ্জিনের মত কাঁপতে কাঁপতে এল যে,শেষটায় ম্যালেরি ধরল নাকি? তবলায় হাত বোলাতে বোলাতে তুষারদা টিপ্পনি দিল।কুইনাইন ম্যালেরিয়া সারায় কিন্তু কুইনাইন সারবে কিসে গিটারের পিড়িং পিড়িং বন্ধ করে হেঁকে উঠল উদয়দা।
     উদো,উল্টোপাল্টা উদাহরণ দেওয়া বন্ধ করবি?মাথায়তো কাউডাং,যেখানে যাবি গন্ধ ছড়াবি, কিন্তু ক্লাবের সব কাজেই দেখি একটা না একটা ফ্যাচাং! গত মাসে অনুষ্ঠানের দিন সক্কালবেলা বলা নেই কওয়া নেই কি বৃষ্টিটাই নামল। ঝিনি,বুলিরাতো উঠোনে ঝ্যাঁটা পুতে তবে সে বৃষ্টি থামালো। ব্যাঙ পেলে আবশ্য আরও আগে থামত না রে ঝিনি?
       এই ঝ্যাঁটা আর ব্যাঙের কেসটা কি ঝিনি? মনসুরভাই চোখ গোল্লা করে জিজ্ঞেস করল।
             আরে আমাদের বাড়িতে বকুলদি থাকে না?বকুলদির মামী এসেছিল সেদিন,তা বৃষ্টির জন্য কেবলই ঘরবার করছি দেখে বকুলদির মামী বলল বিষ্টি থামাতে উঠোনে ঝ্যাঁটা পুঁতে পাশে একটা ব্যাঙ চিত করে শুইয়ে রাখতে। ব্যাঙ অবশ্য পেলাম না।
         সবাই মিলে হাহা হিহি হচ্ছিল খুব,ছোড়দা হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল জ্বর তো দেখি তিনের কাছাকাছি।প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলাম, ঝিনি তুই আর ঋতু ওপরে গিয়ে মাথাটা ধুয়ে দে তো,তোদের আজ রিহার্সেলের দরকার নেই।কাল সকাল সাড়ে দশটায় বসা যাবে গানটা নিয়ে।এখন আমরা পুরনোগুলোই ঝালিয়েনি ।
       নাচার লাগল তার।পনেরো দিন ধরে অপেক্ষা করে সে এই গানের রিহার্সালের জন্য কিন্তু ক্লাবের সবই বড়দের, বিশেষ করে ছোড়দার কথাতে চলে। সে আর ঋতু উঠে রুগির কাছে গেল।
   জল আনল বালতিতে,কেটলি ভরল,মাথার নীচে পলিথিন রাখল,মাথাটা আর একটু নীচে করে দে ঋতু,শুনছেন মাথাটা আর একটু ঝুলিয়ে দিন আপনার, কিন্তু কোনও উত্তর পাওয়া গেল না। ঋতুই টেনে টেনে মাথাটা নামালো খানিক।ঠাণ্ডা জলে বেশ করে মাথা ধুয়ে,হাত-পার তালু ভিজে গামছা দিয়ে মুছে দিল তারা। এই খেয়েছে ঝিনি।
        কি হয়েছে? বালিশটা ভিজে হেভি কেলো করেছে। বড়দি জানতে পারলেই সব্বোনাশ। মাকে সবাই  দারুণ ভয় খায়।সাতটা বাজতে গেল,মা মনে হয় আজ আর আসবে না।ডি আই অফিসে গেছেতো। দেরি হলে মা বারাসাতে ছোট মাসির বাড়ি থেকে যাবে বলছিল। 
       বালিশটা আলমারির মাথায় খবরের কাগজ চাপা দিয়ে রাখল ঝিনি।কাল লুকিয়ে রোদে দিয়ে নিলেই হবে।        
        সাতটা বাজলো নাকি রে? দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ঋতু লাফিয়ে উঠল। সাড়ে-ছটা থেকে পড়া আছে,এখান থেকে সোজা যাব বলে বই নিয়ে বেরিয়েছি,না গেলে বাড়িতে লোক পাঠাবে স্যার,আমি যাই রে,কাল সকালে আসবখন।
              ঋতু চলে গেলে একাই মাথার নীচে শুকনো বালিশ দিল সে,লেপটা ভাল করে টেনে দিল আর তখনই ছেলেটা লাল চোখ খুলে বলল বমি পাচ্ছে খুব। উঠতে পারবেন? মাথা নাড়ল ছেলেটা আর ঝিনি দৌড়ে গিয়ে দোতালার ছাদে উপুড় করে রাখা একটা ভাঙা বালতি নিয়ে এল।
          মাথাটা দুদিক থেকে চেপে রাখল সে,আস্তে শুয়ে দিল আবার। ভিজে গামছায় মুখ মুছে দিল। বাথরুমে গিয়ে বালতি পরিস্কার করে মেজে ঘরের মেঝেতে গড়িয়ে পড়া জল মুছে নিল। তারপর মিডি স্কার্ট ছেড়ে ভাল করে স্নান করে লম্বা ঝুলের সুতির ফ্রক পরল সে।ঝিনিইইই দুধ খেয়ে যাআআ,রান্নাঘর থেকে বকুলদি চেঁচালো।
          একটা বাটিতে দু'মুঠো মুড়ি আর দুটো বিস্কিট নিয়ে গ্লাসে একটু গ্লুকোজ তৈরি করল সে,এসব কি ওই জ্বোরো রুগির জন্য? তা নিজের দুধটাইতো খেলি না, বকুলদির কথায় সে আবার পিছিয়ে এসে দুধের কাপ শেষ করল।এত বড় চুল ভেজালি এখন,শুকুবে?উত্তর দিল না সে।
            শুনছেন? জল খাবেন একটু? ছেলেটা তাকালো।মুড়ি-বিস্কিট পড়ে রইল তবে জলটা খেল আস্তে আস্তে ।ঠিক হয়ে যাবে।
             কপালে পুরনো কাপড় দিয়ে জলপটি লাগিয়ে ছোড়দার টেবিল থেকে চটি একটা বই বার করে পাতা ওলটাতে লাগল, বুদ্ধদেব বসুর 'তপস্বী ও তরঙ্গিণী। আর ছোড়দা এসেই, জলপটি কেন? তোকে যে বললাম মাথা ধুয়ে দিতে। দিয়েছিতো। দে দেখি থার্মোমিটার।যাক কমছে, জ্বরটা।
ছোড়দা বলল কেমন লাগছে মৃদুল? বেটার। কিছু খাবি? উহু,জিভে কিচ্ছু ভাল লাগছে না,জলটাও মিষ্টি লাগছে।
                জিভ ঠিক আছে,আমি জলে গ্লুকোজ দিয়ে দিয়েছিলাম আপনার বমি হলতো,মুড়ি খেলে আপনার নুনটাও খাওয়া হয়ে যেত। দেখেছিস,ঝিনিটাও ডাক্তারি শিখে ফেলল; ছোড়দা আদর করে গালটা টেনে দিল তার। আর বমি পাচ্ছে? না,ঘুমঘুম পাচ্ছে। ঘুমো তা'লে।
     ঝিনি,আমি একটু বেরোচ্ছি, একটা ঝামেলা না মিটলে বিনিদের কাজে অসুবিধে হবে। খেয়াল রাখিস একটু,মাতো আসবে না আজ,ফিরে একসাথে খাবো।চা খেলি না ছোড়দা ? দিল তো বকুল। সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল ছোড়দার পায়ের আওয়াজ।
          কোন ক্লাস তোমার? ইলেভেন। আমি প্রলয় মানে ইয়ে পুলুর সাথেই ফাইনাল ইয়ার,তোমার নাম ঝিনি?আমার বাড়ির নাম ঝিনুক। তাহলে তো আরো একখানা নাম তোমার আছেই।স্রোতস্বিনী।ও বাবা।সে তো খুব ভারভারিক্কে ব্যপার।ডাকতে শুনতে ঝিনিই ভালো!
           এখনতো ভাল আছেন আপনি,আমি পাশের ঘরে পড়তে যাই তা'লে? জল খাব আর একটু,এমনি জল। ঝিনি জল এনে দিয়ে ঘরের কোণে একটা ধূপ জ্বেলে দিল। সন্ধেবেলার পুজো? না,সেতো নীচের ঘরে বকুলদি জ্বেলেছে ,আসলে অসুখ করলে কেমন মন খারাপ করেতো,ভাল গন্ধে কেটে যায়।
            বাবা,কত কি জানে ঝিনুক এই বকুলদিটা কে? বলতে বলতেই বকুলদি এল, ঝিনি শোন দিকি এদিকে ; বলছিলাম জ্বরে তো ভাত টাত খায় না,রুটি করবো নাকি?নিচু গলায় জিগ্যেস করল বকুলদি।জ্বর হলে এখন সব খায়,দানি বলেছে না? তাও তুমি দুটো রুটিও করে রাখো, মুখে ভাল লাগলে,খাবেন। সে ফিরে এসে বসলো আবার।
         তা ঝিনুকমালাই কি বাড়ির ম্যানেজার নাকি? কিন্তু আমি যে ঘেমে যাচ্ছি খুব।না না,মা কাজে গেছে তাছাড়া বকুলদিই সব দেখাশুনো করে। ভিজে গামছায় সে মুছিয়ে দিল মুখ।ফ্যান চালিয়ে দিল আস্তে। মনে হয় জ্বর কমছে ,ঘামছেন ওইজন্যই ।
          তুমি দেখি অনেক জানো আর তোমাদের এখানটায় একেবারে বাড়ির মত গন্ধ । এটাতো একটা বাড়িই। ঝিনুক শোনো। যেতে গিয়েও ফিরল সে,কিছু লাগবে? তুমি এখানেই বই পড় না।পুলুটাও চলে গেল, একা আসলে... 
         বইখাতা নিয়ে এল সে ছোড়দার টেবিলে।
        তোমাদের নাটকের রেকর্ডিংয়ে একটা গান শুনেছিলাম তোমার গলায় না? সে হাসল। শোনাবে? না।
        আচ্ছা বেশ।পড় তুমি। আর তখনই রান্নাঘরে কি একটা বাসন ঝনঝন করে উঠল,হাওয়া উঠল এমন,জানলা দরজা ঠাস ঠাস করে পড়তে লাগল,বকুলদি চিলেকোঠার দরজা দিতে ছুটল, সে দৌড়ল নীচে জানলা দিতে।বৃষ্টি এল খুব জোর। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ছোড়দা ফিরল আর খেয়েদেয়ে অংক নিয়ে বসতে বসতে রাতের মধ্যে রাত নামল আরও।
              স্বাগত ২০২৫

Post a Comment

0 Comments