গুচ্ছ কবিতা
প্রবীর চক্রবর্ত্তী
অনুচ্চারিত
ছত্রে ছত্রে তোমার নিরাশ্রয় উপমার কাছে
আমি নতজানু।
আশ্রয় খুঁজেছি বহুগামিতা এড়িয়ে
অলঙ্কার নৈপুণ্য পিছনে ফেলে।
শুধু মুক্তির প্রার্থনায়
নিরর্থক ভেসে গেছে শিলালিপি।
বাগিচাজুড়ে শ্বাপদের অস্থির আস্ফালন
উন্মত্ত বৈভব ভেঙে ভেঙে অল্পেয়ে জলজ প্রাণ।
এভাবেই মৃত্যুদিন উপেক্ষা করতে করতে
নিজের মরদেহের উপর ভুল করে
এঁকে দিই মাঙ্গলিক আল্পনা।
তারপর অলস রাতের পথ ধরে
মেঘজন্মা রণক্লান্ত মন খুঁজে নেয়
নিরর্থক আখরগুলো, স্তব্ধবাক, অনুচ্চারিত।
কর্ষণ ভূমি
নিয়ন্তার থেকে উত্তাপ সঞ্চারিত হয়
কর্ষণভূমিতে।
লুকিয়ে থাকা উদ্বায়ী জীবন
উন্মুক্ত হয় অবিচ্ছিন্ন পর্যায়ে।
অবরুদ্ধ বেড়া ভেঙে মুক্ত
সুষুপ্ত কামনাগুলো
ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করে অহরহ।
ঘর্ষণ থেকে উদ্ভূত সমস্বর
প্রার্থনা করে
জাগতিক মনোরথ, রশ্মি জাল।
সৌন্দর্যের লীলাভূমি তৈরি থাকে
নিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খলায়, সচেতন।
শুধু অনিয়ন্ত্রিত পদক্ষেপ
ভেঙে দেয় হোমকুণ্ড।
🍂
মখমল বা মফসসল
জীবনজুড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়
নিত্য নতুন চপলতায় বাঁধা
একটি দুটি স্বপ্ন চুরি করে
মিলিয়ে দিই পরিপূর্ণ ধাঁধা।
চাওয়ার সাথে ফারাক বাড়ে রোজ
আঘাত এসে ব্যাঘাত ঘটায় মনে
নির্জন এক দ্বীপের আলোছায়ায়
পিছন ফিরে দেখছি সংগোপনে।
তুমি তো সেই অভিমানী চপলতা
চেতনায় ভাসছ সমুজ্জ্বল
শব্দ দিয়ে সাজানো সংসার
মখমল কিম্বা মফস্সল।
স্বরলিপি
আলস্যের ভ্রম কেটে
বেরিয়ে আসে দিকবর্ণ আলো
ভেঙে যায় স্থাপত্যের চিরন্তনরেখা।
পথ খোঁজে সহজাত মুক্তি
নিরাশ্রয় নিরন্ন উদ্ভাবন।
রাত্রি খুঁজে নেয় যন্ত্রণার ভাষা
বোধ ছুঁয়ে যায় চেতনার স্তর
আলগোছে তুলে দেয় মননের কলি
নিবিড় পর্যবেক্ষণে পরিস্ফুট রেখা
কাব্যিক সুষমায় স্বপ্ন ছুঁয়ে যায়।
দ্রোহ আসে মুক্তপথ আলোকজ্জ্বল করে
গভীরে ডুবে যায় স্বরলিপি।
0 Comments