হাজার কবিতা লেখার শেষে..
কমলিকা ভট্টাচার্য
*********************
কথা দিলাম
সময় নিক কেড়ে সব সুখ
অজানা দুঃখে ভেঙ্গে যাক বুক
তোমার মন আমার মনে খুঁজে পাক বাসা
কথা দিলাম!
তোমায় ছেড়ে যাবো নাকো ভালোবাসা!
যত ট্রেন যাক, আমি ছাড়বো না হাত
তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকবো সারা রাত
হাসি ফিরে আসবে ,আসবে নতুন আশা
কথা দিলাম!
আমার বুকে থাকবে তুমি ভালোবাসা!
বিশ্বাসের ইঁট গেঁথে গেঁথে বানিয়েছি যে ঘর
ভাঙবে না তা আসুক যতই ঝড়
যতই পথে থাকুক বিছানো কাঁটা
কথা দিলাম!
তোমার পায়ে পায়ে মিলেই চলবে আমার হাঁটা!
যতই কালো মেঘে ঢাকুক নীল আকাশ
থমথমে চারিদিক ,গুমোট করুক বাতাস
আসুক না হয় আজ সেই মহাপ্রলয় সর্বনাশা
কথা দিলাম!
হাত ধরে থাকবো আমি তোমার ভালোবাসা!
(এই কবিতাটি আমার এক প্রিয় কবির কবিতার আঙ্গিকে লেখা তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে)
তপস্বী
আমি ঝরা ফুল পাতা,
ঝেঁটিয়ে সরিয়ে দাও যত দূরে,
হাওয়ায় ভেসে
আবার তোমার উঠোন দিই ভরে।
আমি দূর্বা ঘাস,
তোমার পায়ের তলায় দলিত,
মাথা নোয়াই,
তবু কান্না চেপে উঠে দাঁড়াই।
আমি ঢেউয়ের ফেনা,
তটের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ি,
তোমার শক্তি আমায় ভেঙে দেয়,
তবু স্রোতের টানে ফিরে যাই,
আবার আসি।
আমি সারমেয় লেজ,
তোমার লাঞ্ছনার বোঝা বই,
তবু মাথা ঝাঁকিয়ে বলি—
আমি আছি।
আমার কান কাটা,
আমার আত্মা রক্তাক্ত,
তবু আমি আছি।
আমি গাছের শিকড়,
যে মাটি আমাকে দূরে ঠেলে দেয়,
তার বুকেই লুকিয়ে থাকি।
খরা আমার শরীর পোড়ায়,
তবু মাটির গভীরে জল খুঁজি।
আমি ভাঙা নৌকা,
ঝড়ে দুলে যাই,
তোমার শীতল চাহনি
আমাকে ডুবিয়ে দিতে চায়।
তবু আমি ভেসে চলি—
তোমারই অপমানের ঢেউয়ে
আমি সেই নদী,
যার স্রোত থামে না শীতলতায়।
আমি সময়ের আয়না,
তোমার ফেলে দেওয়া প্রতিটি অপমানের ছায়া,
যা আমায় আরও শক্ত করে।
আমি ধুলো জঞ্জাল,
তবু তোমার উঠোনের জমি,
তোমার আকাশে ভাসি।
আমি একা,
তবু আমি অটুট।
আমি ভস্মাবশেষ,
আগুন নিভে যাওয়ার পরে
ছাইয়ের নিচে লুকিয়ে থাকা
উষ্ণ প্রদীপ।
আমি লাঞ্ছনা,
গঞ্জনা আর অবহেলায় পোক্ত,
বুকের গভীরে লাভার স্রোত,
মাধ্যাকর্ষণ রক্ত।
আমি সেই তপস্বী,
যার ধ্যান ভাঙে না অভিশাপে,
মোহের তাপে।
আমি সেই নারী,
যার কণ্ঠে বাঁধা অগ্নি শ্লোক।
আমি ক্ষয়ে যাওয়া সময়ের
অক্ষয় বীজ।
আমার ভিতরে জন্ম নেয়
একটি নতুন ভোর।
আমি জেগে আছি—
প্রতিটি ঘৃণার পর,
প্রতিটি অপমানের শেষে।
তুলে আনি নতুন ছন্দ,
বয়ে যাই সময়ের সাথে।
তবু থেকে যাই চিরকাল,
জন্ম দিই ভালোবাসার ...
অন্ধকারের দোলনা
অন্ধকার গুলো পাশাপাশি বসে রাত গড়ছে
ঘন ঘন থোকা থোকা জমাট জমাট
মনের ভিতর একটা অনুভুতি
ক্রমশ বাসা বাঁধছে
কিন কিন চাপ চাপ ভরাট ভরাট
হাওয়া গুলো উড়ে উড়ে উচ্চচাপ নিম্নচাপ
ভারী ভারী লঘু লঘু ঝোড়ো ঝোড়ো
মাথার ভিতর চিন্তার একগুয়ে জিদের ধাপ
টন টন ছিঁড়ে ছিঁড়ে মরো মরো।
রাতের বুক চিরে ঝিলের মতো তীক্ষ্ণ আলো
চুপচাপ কাঁপন, খুঁজে খুঁজে ভালো ভালো।
স্মৃতির ভাঁজে জমে থাকা হিমেল শ্বাস
নীরব জ্বালায় পুড়ে যায় অশ্রুর উল্লাস।
জমাট ব্যথার জলে ধুয়ে যায় শব্দ
অজস্র রেশ, লেগে থাকা নীরব প্রলয় জব্দ।
চোখের পলকে ধসে পড়ে মনের দেওয়াল
চড়াই ভাঁজে জমে ওঠে একরাশ আঁধার কাল।
ঝিকমিক দুঃস্বপ্ন, ঝাপসা ঘামে ভেজা
কেন যেন বড্ড চেনা এই চুপচাপের কাপড় পেঁজা।
গভীর থমথমে ভার, নিঃশ্বাসে রুদ্ধ নিশি
এ এক অন্ধকারের দোলনা, নীরবতার দায়ভার ঘাড়ে পুষি।
🍂
নতুন পঙ্ক্তির জন্ম
যদি তুমি হাত বাড়াও,
আমার নিঃশ্বাসে জন্ম নেবে এক নতুন কবিতা।
শব্দের মৃত্তিকায় লুকিয়ে থাকা অঙ্কুর
তোমার স্পর্শে জেগে উঠবে
মেঘের স্তনে জমে থাকা অতৃপ্ত বৃষ্টি
হয়ে উঠবে এক ঝরনা স্রোত।
যদি তুমি দৃষ্টি ফেলো,
আমার শূন্য পাতার কোলে জাগবে এক নতুন ছন্দ।
যে শব্দ অপূর্ণ, যে বাক্য আজও স্তব্ধ,
তোমার আলোয় তা খুলে দেবে তার গোপন দরজা,
আর চেতনার কুয়াশা সরিয়ে
রচনা করবে এক অলৌকিক জাগরণ।
যদি তুমি নিঃশব্দে পাশে থাকো,
আমার কল্পনার বিষাদরাত্রি ভোরের রঙ পাবে।
বিচ্ছিন্ন পঙ্ক্তিরা খুঁজে নেবে একে অপরের হাত,
অগোছালো অনুভূতিরা বাঁধবে নতুন মেঘদূত,
যার প্রথম অক্ষর রবে তোমার অনুপ্রেরণার তলে।
যদি তুমি সত্যিই হাত বাড়াও,
তবে এক কবিতা জন্ম নেবে,
আর তার শিরায়-উপশিরায় বয়ে যাবে
তোমার অঙ্গুলির ছোঁয়া!
বাঁধা পেরিয়ে হাজারো কবিতা
হাজারো কবিতা লিখব আমি
মুষলধারায় ভিজে যাক গ্রীষ্মের পুড়ে যাওয়া শরীর,
সেই তুফানের রাত ফুঁড়ে বেরিয়ে
উড়ে চলব আমি, ঝড়ের ডানায় ভর দিয়ে।
দিনের আলোয় আঁধারি জঙ্গল ছাড়িয়ে
হয়ে যাব এক পলাতক রবি।
তুমিই যে আমার আকাশ,
তোমার ছোঁয়া ছাড়া কই আমার আশ্রয়?
সুনামির উত্তাল ঢেউয়ের তলায় ডুবে গিয়েও
জল থেকে উঠে আসা এক কল্পনাশক্তি আমি।
ভূকম্পের তীব্র কম্পনে মাটির নিচে চাপা পড়লেও
আমার শব্দেরা শিকড় হয়ে জন্ম নেবে নতুন মাটিতে।
দাবানলের আগুনে ঝলসে যাওয়া হৃদয়ের ছাইয়ে
লিখে যাব এক একটি লাল শব্দ—
যা একদিন ফিনিক্স পাখির মত
জ্বলে উঠবে নতুন ভোরের আলোয়।
বন্যার ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া ভিটে মাটি হারিয়েও
আমি দাঁড়াব আবার, কাদা থেকে গড়ে তুলব নিজের ঘর।
আপনজনের অকালমৃত্যুর শোকে
শ্মশানের শূন্যতার গভীরে শুনব
সৃষ্টির নীরব কণ্ঠস্বর।
গুড়িয়ে যাওয়া মেরুদণ্ডে,
শিকল পরা পায়ে
ধুলোয় মিশে যাওয়া সম্মানকে সাথী করে,
লিখব আমি—
হাজারো কবিতা।
কারণ শব্দই আমার মুক্তি।
তবু তোমার ছোঁয়ার অভাবে
সব শব্দ নীরব হয়ে যায়।
তোমার অনুভবের স্পর্শে
জেগে উঠুক কবিতারা—
জেগে উঠুক আমার আত্মা।
আমাকে শুধু বেঁধে রাখো
তোমার হৃদয়ের মণিকোঠায়।
হাজার ঝড়, হাজার দুঃখের ভেতর দিয়ে
0 Comments