জ্বলদর্চি

গুচ্ছকবিতা /মৌসুমী মুখার্জি

গুচ্ছকবিতা

মৌসুমী মুখার্জি

অনুভব

কতদিন  কোন  পদ্য  লিখিনা
অব্যক্ত বেদনায় ছেয়ে যায় প্রাণ    
মন রোজ একটু করে করে 
অন্ধকারের  দিকে হাঁটে।
শান্ত  নদী ,কুলকুল ঝরনা,নীল  আকাশ আর সবুজ বনানী 
তেমন করে ডাকে না,
যেমন ডাকতো আগে।
নৈঃশব্দ্যের আবরণে মোড়া শব্দেরা আজ বন্দি খাতায়। 
খোঁপা করা চুল ঢাকা ঘোমটায়, 
বড্ড রহস্যময়ী হয় নারী
জাসমিনের গন্ধও কেমন যেন  আকর্ষণহীন ;
দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহরগুনি
কখন আসবে সাদা কপোতের দল...
ডানায় রামধনুর সাত রঙ আর 
মুক্তির আস্বাদন নিয়ে।


দিবারাত্রির গল্প

নিকষ কালো রাত্রি 
আলো ঝলমলে দিন
তারায় ভরা রাত্রি,
আলোয় ভরা দিন।
চাঁদের স্নিগ্ধ রাত,সূর্যের প্রখর দিন 
কত না বলা কথার রাত, 
আর করতোয়া দিন 
কী অসাধারণ এক বৈপরীত্য!
তবু অমোঘ আকর্ষণ একে অপরকে পূর্ণ করার 
তাই দিন ডুব দেয় রাত্রির গহন বুকে,
আর রাত্রি! সে দিনেরই ছন্দ খোঁজে।
জীবনগাথাও চলে একইভাবে
কালের যাত্রার পথে।
 

রঙ মিলানতি

লাল নীল হলুদ সবুজ কালো 
মন রঙগুলোকে
সাজিয়ে নিলাম অলস দুপুরে
প্রথমেই  রাখলাম লাল টকটকে অভিমানী অনুরাগকে
কিন্ত তাকে রাখবো কোথায় ?
বড্ড অভিমান যে
আলতো হাতে লুকিয়ে ফেললাম দেরাজটার গোপন কুঠুরিতে।
তারপর হাতে নিলাম আসমানী নীল 
কিন্ত ভেবে পেলাম না ,তাকেই বা রাখি কোথায়? চঞ্চল আর  ছটফটে নীল
বেঁধে রেখে কষ্ট দিতে পারলাম না
তাকে উড়িয়ে দিলাম আসমানেই।
এবার পালা গেরুয়া বিষাদের 
একটা গেরুয়া রঙের চাদর আকাশময় বিছিয়ে 
দেবার চেষ্টায় মরিয়া সে,
অনেক কষ্টে তাকেও বন্দি করলাম 
সূর্যাস্তের রক্তিম আভাতে।
কিন্ত কিছুতেই কাবু করতে পারলাম না নিকষ কালো আঁধারটাকে
তাই বৃথা চেষ্টা না করে তাকে মিলিয়ে দিলাম 
ভোরের স্নিগ্ধ আলোর সাথে।
যখনই ঝলমলে হলুদ রঙে ঢেকে যাবে আকাশ 
তখন সে নিজেই মিলিয়ে যাবে।

🍂

রূপকথা চুপকথা

বেড়ে চলা দূরত্ব আরো বেড়ে যায় 
আলোকবর্ষ হয় মাপকাঠি
দেশলাই খুঁজে মরে কেরোসিন কুপি।
রূপকথা লুকিয়েছিল 
স্নান ঘরে, পাটভাঙা শাড়ি
নাভিমূল মাপে যখন
আঁচলের শেষের চাবি গোছা তখন সংসার সাজায় কেনো?
সংসার! সে তো এক কাপ চায়ের।
বাকিটা বালির বাঁধ
মুঠিতে যত চেপে ধরো
আলগা হবে ততো
ক্লান্তির শেষে মুছে নেওয়া ঘাম 
তোয়ালেতে সুখের চাবিকাঠি
কেটে যায় কতই প্রহর 
একা থাকার নিভৃত ক্ষণে 
নাবালক নকশিকাঁথার
নিপুণ বুননে।
শেষে থাকে শুধুই বেলাভূমি
পাড়ভাঙা স্রোতের টানে।

বর্ষা  আমার
 
আমার বর্ষা জল থৈ থৈ
আমার বর্ষা কাজল কালো সই
আমার বর্ষা উঠোন ভরা ঢেউ ।
আমার বর্ষা কাগজের নৌকো
আমার বর্ষা হাঁটু ভরা কাদা
আমার বর্ষা হাসনুহানার মন মাতানো সাদা।
আমার বর্ষা মাথায় কচু পাতা
আমার বর্ষায় সেই তো ছিল আমাদের ছাতা
আমার বর্ষা মাটির সোঁদা গন্ধ 
আমার বর্ষা খুঁজে ফেরে হারানো ছন্দ। 
আমার বর্ষা দলবেঁধে ভিজে চুপ
আমার বর্ষা যৌবনের চির সবুজ 
আমার বর্ষা সদ্য ফোটা জুঁই
আমার বর্ষা আসবি ফিরে তুই !
আমার বর্ষা খিচুড়ি ভাজা ইলিশ 
আমার বর্ষা সিফন শাড়িতে স্টাইলিস।
আমার বর্ষা মনখারাপের 
রবীন্দ্র নজরুল 
আমার বর্ষা কালের স্রোতে 
নিত্য সমুজ্বল।

Post a Comment

1 Comments

  1. কমলিকা ভট্টাচার্যFebruary 01, 2025

    রঙ মেলানতি কবিতাটি বেশ ভালো লাগলো

    ReplyDelete