গুচ্ছ কবিতা / কবি দুর্গাপদ ঘাঁটি
সুড়ঙ্গের সংসার
সুড়ঙ্গকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নিয়েছি গায়ে
কিভাবে ভাঙবে তার গোপন প্রাসাদ
পকেটের গভীরে সংক্রমিত শিকড়
বাম হাতের হস্তাক্ষর সাক্ষী থেকেছে তাদের
এরই মাঝে নপুংসক নদী এঁকে ফেলে গহবর
প্রাণিত হয় উদ্ধৃত প্রসবিনী
আক্রান্তের মুষল পর্বে আঁকা হয় কুয়াশা
দম নিতে থাকে সবুজ বিকৃত কনীনিকায়
পৌনঃপুনিক খুঁজে বেড়ায় আলো
মেলোডির সাত রঙ পড়ে কচিপাতায়
জীবিত আলোয় সুড়ঙ্গের বিপরীত পৃষ্ঠায় রোপিত হয় দশমিক হাব যদি আঙুলের সাথে ছুঁয়া থাকে শৃঙ্খলিত ধ্বনি।
অভিশপ্ত শিকড়
কৃষ্টির মরাগাঙে চালিয়েছো শেকড়
মধ্যযুগের পাহারায় সন্তদের হাত ধরে
তখনও অক্ষরমালারা দেউল ভাঙেনি ওপারের
অমাবস্যা চোখ রাঙায় পুর্ণিমা আকাশে
কাঁসর আর রমজান সাজিয়েছে গুটি
বিষবৃক্ষের শাখায় শাখায় হিমালয়ের মত
শিকড়ের তখন কিনাই উল্লাস!
আলো তার জলও তার -বাতাসও
দু'হাজার শতকধরে সানিয়েছে নখ
মাথার ভেতর
এখন তার অনেক শাখা
তোমার ভেতর আমার ভেতর
যুগের বার্তা আসে আর যায় রক্ত ঝরিয়ে
ভিজে যায় মাটি ঘামে তবু শিকড় ছাড়েনি কেউ
শুধু একুশের দেশে নয় এপারেও আছে আবেশে
ঔরঙ্গজেব দেখিয়েছে শনিতের আলপথ
উল্টো রথে বাবরির বিরানব্বুই
তবুও অক্ষরমালারা জোরে শ্বাস নেয়
শিকড় উপড়ে ফেলার
পরাজয় মানে শিকড়ের গভীরতায়।
আর ওরা শ্বাপদের নিঃশ্বাস নিয়ে জেগে ওঠে
আরও আবারও
নিলয়ের সঙ্গে অলিন্দের লড়াই লাগিয়ে
আরো চায় কয়েকটা রেড রোড।
ওরা জানে মূলাধার ধরে আছে অজস্র শেকড়
অনেক গভীরে আমাদের দুর্বলতার।
প্রিয় জীবিকার জন্য
হৃদপিণ্ডকে লালিত করে নিঃস্ব হলে যুগ যুগ
রাক্ষুসে পাপেই ঝরে পড়ে জোছনারাশি
তখন তুমি পিঠ চুলকে চলে যায়
অন্ধকারের হাসনুহানায়
জীবিকার স্রোতে হৃদয়গুলি
ভরে উঠে ডাস্টবিনে
তারপর আদিম স্রোতে ধরে নাও
লটারির সর্বনেশে নম্বর
অথচ তুমিই বলেছিলে তৃতীয় বর্ষে
'সব আঙুল ছুঁয়ে রবে বিবেকে'
তারপর বয়ে গেছে স্রোত একাধিক হলুদ খামে
দশটা বছর রকে বসে শেষে প্রকৃতির ভার নিয়েছে
সুপ্ত ইচ্ছায় জ্বালানী দিতে
আজ আর যকৃত কথা শোনেনা
সংসারের ঢালু পথে ভদকাও বেচো দ্বারে দ্বারে
আসলে সবাই খোঁজে কাস্মীর,একটি হাওয়া মহল
কলেজ ক্যাম্পাস ভেঙে পড়ে বাস্তিলের মতো
ভেতরের উত্তাপ ঝেড়ে ফেলো সব ডাস্টবিনে
যদিও এইভাবে পৃথিবী ভরে উঠে পাপি আত্মায়
যেদিকে বেহুঁশ বেলুন ছোটে চিতার মতন।
🍂
পর্বতের জীবনকথা
তোমার অস্তিত্বের দুটি পর্বত
মাথা তুলে আছে অনন্তকাল
একটি শিশুর অন্যটি জানোয়ারের
আর সমগ্রটি সৃজিত হয়েছে
খলিফার টানে
রাতের পর রাত পরিচিত পশুগুলি
দলিত করে সমগ্র উপত্যকা
আর একটু একটু করে কেড়ে নেয়
কুসুমের অধিকার
কখনও তোমার ভেতরের সহচরী
জ্বালিয়ে দেয় আগুন অকাতরে
পাশবিক দাঁতে ছিন্ন ভিন্ন করে
শিশুর ও শিল্পীর লালিত বাগান
অথচ পবিত্র প্রশাখাগুলি যুগ যুগ
শক্তি যুগিয়েছে কিশলয়ে
ইলোরার লিপির মত।
রোদ্দুরেই আছি
ছায়ার বাইরে থেকেছি চিরকাল
ছায়াকে ভালো বেশে তার নীচে
যাই নি কখনও
রোদ্দুরকেই আমি ভালো বাসি,
তাই দেওয়ালে এঁকেছি রোদ্দুর
দেখেছি রোদ্দুর
সারি সারি বিশুদ্ধ রোদ্দুর
ছায়া নেই, নেই সেঁত সেঁতে উঠোন
রোদ্দুরের সৃষ্টির উল্লাসে কখনও কালবৈশেখী শুনেছি অপূ-দুর্গার অক্ষিপটে
ছায়াকে উড়িয়ে দিয়েছি বার বার
যে ছায়া শরীর থেকে উপড়ে নেয় পোড়ানো শিরদাঁড়া আর পোড়া চাঁদে খোঁজে ফেরে
অমানিশার মায়াবী বিতান
যে ছায়া রোদ্দুরের পোড়ে না
ছায়ার ছায়ায় দাঁড়িয়ে স্রোতের সমুখ পানে
চেয়ে থাকে চিরকাল লক্ষীর হাত ধরে
হাজারও পথ চলতি ছায়ার আস্তাকুঁড়ে
তাইতো আমি রৌদ্দুরের ছায়ায়
স্নাত হতে হতে রোদ্দুরের পথে ছায়া মুছে
ছায়া আঁকছি অবিরত রোদ্দুরের মতো
সেই রোদ্দুরের তলে ঘর বেঁধেছি
আপন মনে রোদ্দুরের হাত ধরে।
0 Comments