শূন্য বাড়ি
শহরের রাস্তায় আজ নেমেছে অন্ধকার,
আলোর বাতি জ্বালানোর
দায়িত্ব যার,
আজও কি ছুটি তার?
শূন্য ঘর, নিভু নিভু আলো,
স্মৃতির পাতায় জমে ধুলো,
তবু বুড়ো শ্বাস ঘিরে
ফিরে পাওয়ার আশ্বাস।
একদিন উঠোন ভরতো হেসে খেলে,
দরজায় ছোট ছোট হাত,
স্কুল ব্যাগ ছুঁড়ে রেখে
ডাক দিত কেউ,
আজ নেই সেই ডাক ,
দরজা কাঁপিয়ে শীতল বাতাস
তোলে নীরবতার ঢেউ।
সবাই গেছে কাজে,
ক'জন ফিরেছে?
জং ধরা গেটের কড়ায়
ঝুলে থাকে একরাশ অপেক্ষা,
যখন তখন বাজে এক সুর
যেন কেউ আসবে থেকে অনেক দূর।
বিছানার কোণে বসে
আশা জেগে রয়
আজকে সে আসবে বোধহয়!
ডাইনিং টেবিলের চারপাশে
শুধু ফাঁকা চেয়ার বসে থাকে,
তিন বেলার খাবার
আজ একা প্লেটে সাজে,
কে আর কথা বলে?
কে আর বিরক্ত করে?
পুরোনো খেলনা, ধুলো ধরা বই,
কোণের আলমারিতে ঘুমিয়ে থাকে ট্রফি,
বাগানের দোলনাটা
শুধু বাতাসে দুলে ওঠে,
একটা পুরোনো ছবি তাকিয়ে থাকে,
যেন সে-ও অপেক্ষা করে
ফিরে আসার, একসাথে বসার।
আজ কাপ-প্লেটগুলো
শুধু স্মৃতির স্মারক,
দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে কোণে
অতীতের ছায়া ভিজে থাকে,
ঘরটার নিঃশ্বাস ভারী হয়,
সময় থমকে দাঁড়ায়,
অপেক্ষা শুধু বেড়ে চলে...
রঙ চটা নামপ্লেটে
পরিচয় জেগে আছে,
অক্ষরগুলো ধুলোয় ঢাকা,
তবু সে জানে,
এই বাড়িটা এখনো কাউকে চেনে,
যদিও সে-ই ভুলে গেছে সবাইকে।
অস্তিত্বের খোঁজে
ফিরিয়েছে সবাই ...
বোধ করিয়েছে অস্তিত্ব নাই
তবু হাঁটি নিজের খোঁজে
কোথা থেকে আমি শব্দ বাজে।
অস্তিত্বের খোঁজে দাঁড়াই বৃক্ষের সম্মুখে
কড়া তেজে ঝলসানো পাতা পড়ে চোখে।
মিশে যেতে চাই নদীর তরলতায়
নতজানু উজান আমাকে ফেলে যায়।
মাথা উঁচু করে প্রশ্ন করি সূর্যকে
বলতে পারো আমি কে?
মেঘের আড়ালে নিজেকে ঢেকে
সেও মুখ ফেরায় আমায় দেখে।
নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি আমি কি আছি?
কিসের জন্য বাঁচি?
বুঝিয়ে নিজের অস্তিত্ব ,যে হাওয়াকে দেখিনি
সেই করে যায় আকাশবাণী
মিথ্যার মোড়কে সত্য হারিয়েছে অস্তিত্ব
মন করেছে সব সহনের দাসত্ব।
তাই ভিজে মাটিতেই দেখে পদচিহ্ন
অস্তিত্ব খুঁজে হাঁটা দিন রাত অপরাহ্ন।
🍂
অযাচিত
প্রশ্ন ছিল না কিছু
তবু উত্তর পেলাম
চাইনি বিচার
তবু অবিচার পেলাম
চাইনি নাম
তবু দুর্নাম পেলাম
চাইনি সুখ
তবু অসুখ পেলাম
চাইনি সময়
তবু অসময় পেলাম
চাইনি অনুমতি
তবু আদেশ পেলাম
চাইনি পথ
তবু ভ্রান্তি পেলাম
চাইনি সম্পর্ক
তবু বিচ্ছেদ পেলাম
চাইনি ছায়া
তবু অন্ধকার পেলাম
চাইনি স্বপ্ন
তবু ভাঙা ঘুম পেলাম
চাইনি বিশ্বাস
তবু প্রতারণা পেলাম
চাইনি অপেক্ষা
তবু অনন্ত প্রতীক্ষা পেলাম
চাইনি যা কিছু
তবু তাই সব পেলাম
চাইনি তো জীবনও
তবু মৃত্যুর কষ্ট পেলাম...
তেমন সন্ধ্যায় ...
তেমন সন্ধ্যায় আমি স্নান সেরে হয়ে যাই একলা আলো,
সঙ্গীত নয়, আমি নিজেই এক অনন্ত সুর,
যার স্বরলিপি কেউ লেখেনি, কেউ লিখবেও না।
আমি নিজেই স্বরলিপি,যার প্রতিটি নোট বয়ে নিয়ে চলে আকাশগঙ্গার ঢেউ।
তুমি তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এক নীরব শ্রোতা,
ঝাউয়ের ফাঁকে লুকিয়ে চেয়ে থাকো
যেমন চাঁদ দেখে যায় নীচের সমুদ্র,
কিন্তু আমার ভালোবাসা আগুন নয়, সে তো সমুদ্র,
জ্বলে না, শুধু বয়ে যায় গভীর টানে।
তেমন দুপুরের আমি বন্ধ ঘর নই,
আমি সেই জানালা, যেখানে রোদ এসে বসে স্বপ্ন দেখে গল্প করে।
তুমি কি জানো, আমি নিজেই এক শহর এক দেশ এক আকাশ ?
আমার দেহে লুকিয়ে আছে অনেক ইতিহাস।
আমার চোখের কোণে যে সুখ তুমি খুঁজে পাও,
তা আসলে আমার নিজের ভাঁজে রাখা আকাশ।
আমার শরীর কোনো নৌকা নয়,
সে তো এক সমুদ্রযাত্রা, দিকহীন, অনন্ত।
তেমন রাতে ঝড় এলে, আমি ভেঙে যাই না,
বরং ঝড়ের কান্না আমি নিজেই শুষে নিই।
সমস্ত মহাদ্রুম আমারই ছায়ায় মাথা নোয়ায়,
আমি তার একান্ত আশ্রয়।
রাত শেষে ভোর আসে?
না, আমি নিজেই ভোর হয়ে উঠি,
আমার ছোঁয়ায় মলিন পৃথিবী আবার নির্মল হয়।
আর তুমি?
আমায় নীরবে অধিকার করে
তারপর হেলায় চলে যাও
পথ শূন্য হয়,
কিন্তু আমি কি শুধু এক পথ?
আমি তো সেই গন্তব্য, যেখানে এসে দাঁড়ালে
সব হারানো পথিকও নতুন ঠিকানা খুঁজে পায়।
তাই মনে রেখো—
তুমি আসো বা না আসো,
আমি আছি, আমি থাকব,
তোমার ছায়ার ওপারে,
0 Comments