বার্লিনের ডায়েরি
৬৫ পর্ব
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(অভিশপ্ত পম্পেই নগরীর পরবর্তী অংশ )
অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে আছে শ্রীময়ীর শহর। বেশ কয়েক ঘন্টা আগে ট্রান্সফরমার আগুনে পুড়ে যাওয়ায় নিষ্প্রদীপ ওর লোকালয়ের সর্বত্র। পড়ার টেবিলে জ্বলন্ত মোমের বাতির পোড়া শরীরের গা বেয়ে নামছে তরল। প্রতিদিনের সাংসারিক কাজের শেষে রাতের এই অবসরে কাগজ কলম নিয়ে বসেছিলো 'বার্লিনের ডায়েরির ' প্রায় শেষ পর্বের দিকে। ওর সঞ্চিত ধন সেই পুরোনো বিবর্ণ পাতা খসা হলদে ডায়েরিটি নিয়ে। অনুজ্জ্বল নরম আলোয় চারদিকে বেশ এক ছায়াছায়া ভৌতিক পরিবেশ। জানালার বাইরের আকাশ ভরা নিঃসীম শূন্যের অন্ধকার, রবাহুতের মত ঘরে হামলা চালানোর মতলবে ডাকাতের মত ঢুকে পরতে চায় শ্রীর লেখার মুড উধাও । মোমের শিখা তিরতির করে কাঁপে। ওর চোখে পলক পড়ে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে পায়েপায়ে পৌঁছে গিয়েছে ধ্বংসপ্রাপ্ত মৃত নগরী পম্পেইয়ের অতীতের কবরে। শ্রীময়ীর মনের পাতায় জেগে ওঠে ঐতিহাসিক এক ভয়ঙ্কর ছবি।
উদ্ধার ২০০০বছর আগের মৃত দেহ।
স্বপ্নে দেখা কোনো দুঃসময়ের স্মৃতির মতই পম্পেই নগরের বিলুপ্তির কাহিনীর বর্ণনায় শ্রী বারেবারে ফিরে চলেছিলো সেই নাগরিক জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকা শান্ত মনোরম সবুজ পর্বত সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াসের পাদদেশে। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ঘন বসতি পূর্ণ হারকুলিয়াম নেপলস ইত্যাদির মত শহর ও জনপদে। কিন্তু কালক্রমে দেখা যায় এই অঞ্চলটি ছিল ভূকম্প অধ্যুষিত। বছরে প্রায় দুই চারবার ভূকম্পন দেখা দিলেও পম্পেই বাসীদের কাছে তা অত্যন্ত গুরুত্বহীন সাধারণ ঘটনার মত। মোটেই বিশেষ গ্রাহ্যের ছিল না। ঘুমন্ত ভিসুভিয়াস যে জ্বলন্ত অগ্নিগর্ভ আগ্নেয়গিরি হয়ে এমন ভয়ঙ্কর মারণ রূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারে তা সে অঞ্চলের অধিবাসীরা কোস্মিনকালে বা দুঃস্বপ্নেও ভাবে নি।
সেদিন ছিল পম্পেইয়ের জাতীয় উৎসব। খ্রিস্টপূর্ব ৬২সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী। সহসা রিখটার স্কেলে প্রায় ৬ মাত্রা নিয়ে হঠাৎ এক বিরাট ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল ক্যাম্পানিয়া অঞ্চলটি। সেদিন বহুমানুষ ঘর ছাড়া হয়েছিল এবং মৃত্যু বরণ করেছিল। আত্মরক্ষার তাগিদে অনেকে ক্যাম্পেনিয়া অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছিল । এই অঞ্চলের অন্তর্গত নেপলস --ভিসুভিয়াস --পম্পেই ইত্যাদি শহরের সাথে এই ভূমিকম্পে পম্পেই ও তার সংলগ্ন নগর অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেড়ে আকাশ ছোঁয়া হয়েছিল। ভয়ঙ্কর মারণ রূপে এর পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল কিছুকাল পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯সালে। ভয়াবহ সেই অগ্নুৎপাতে মর্মান্তিক ভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এই শহরটির সাথে আশেপাশের আরো শহর জনপদ। ভিসুভিয়াসের মুখ থেকে নিঃসৃত জ্বলন্ত গলিত লাভা ক্রমশঃ ঠান্ডা হয়ে যে সমতল ভূমি গঠিত হয়েছিল তা দেখা যায় প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০ মিটার উচুঁতে স্থিতু হয়েছিল। উদ্ধার ২০০০ বছর আগের মৃত দেহ।
শ্রীময়ীর মনেপড়ে মধুর হেসে বর্ণনার শুরুতেই মিস ব্রানটা বলেছিল পম্পেই এতো বড়ো শহর তারএত বিশাল ব্যাপ্তি যে মাত্র এই কয়েক ঘন্টার সীমিত সময়ে সব দেখা সম্ভব নয় বলে এই ট্যুরে নির্দিষ্ট কিছু অংশই দেখাবে। খনন কার্যের সাথে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এখনো চলার ফলে প্রতিনিয়ত নতুন তথ্যের আবিষ্কার হয়ে চলেছে। ঐ যে দূরের সাগরের নীল জলের মাথায় সাদা ফেনার রাশিরাশি ঢেউ কিনারার বালিতে এসে আছড়ে পড়ছে তারই তীর ঘেঁষে মনোরম পরিবেশে কেমন নিশ্চিন্তে শান্তির নিবাসে গড়ে তুলেছিলো সুখী বিলাসী শহরের বাসিন্দারা। পৃথিবীর প্রাচীনতম অভিজাত জনপদগুলোর একটি ছিলো এই পম্পেই নগরী। সে সময় প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি ছিলো পম্পেই।
নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য ছিল আটটি ফটক আর এগারো টি ওয়াচ টাওয়ার।বর্তমান সময়ের মতই বহুকাল আগে ইতালী সমগ্র বিশ্বের দরবারে শিল্প সংস্কৃতির পীঠস্থান অন্যতম প্রধান উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র ছিল। এই নগরীর একপাশে ছিল হারকুলেনিয়াম ও আরেকটি পাশে ছিল স্ট্যাবি শহর। ইতালীর রাজা ওসকান খ্রীষ্টপূর্ব ৭ থেকে ৬ শতাব্দীতে যদি ও এই শহরের গোড়া পত্তন করেছিলেন এবং তবু ও বলা যায় এই শহরটি পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছিল খ্রীস্টপূর্ব ৪ শতাব্দীতে। সেই সময় ইউরোপে সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে পম্পেই নগরী রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। এবং সে সময় থেকেই রোমানরা সেখানে সম্পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করেছিল। শতাব্দীর প্রারম্ভেই পম্পেই শহর ইতিহাসের প্রাচীন নগরী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে ।
🍂
তিতির বলে এই এতোবড়ো সমৃদ্ধ নগরীর নাম পম্পেই ! কেমন অদ্ভুত শোনায় ? শ্রী ও সুর মিলিয়ে বলেছিলো একই প্রশ্ন আমারও মনে। ঐ প্রাচীন কালের বিস্মৃত প্রায় অতীতের এক ঐতিহ্য পূর্ণ বিলাসী শহরের নাম পম্পেই ? মিস ব্রানটা ঠোঁটের কোণে খানিকটা গাম্ভীর্য এনে ব্যাখ্যা করেছিল পম্পেই এই নামটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে। পম্পেই মানে '' বিজয় মিছিল''। কিংবদন্তি অনুসারে হারকিউলিস, জায়ান্ট গেরিয়ান কে একাকী ধর্মান্ধতার সাথে পরাস্ত করে শহরের চারিদিকে বিশাল বিজয়োৎসব মিছিল নিয়ে যাত্রা করেছিল।সেই ' বিজয় মিছিল'' থেকে এই শহরের নাম পম্পেই। আবার কোনো ঐতিহাসিকের মতে দক্ষিণ ইতালীর প্রাচীন অস্কান ভাষায় পম্পেই কথাটির মানে হচ্ছে পাঁচ। শ্রী চলার পথে গল্পের ছলে তিতির ও ঋষভ কে বলেছিলো তৎকালীন সময়ে পাঁচটি গ্রামের সমাহার থেকেই এই নামটি এসেছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের বর্ণনায় প্রাচীন রোমের পম্পেইয়া পরিবার এখানে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল তার থেকেই পম্পেই শব্দের উৎপত্তি।
মিস ব্রানটার হাতে পম্পেই নগরের রোডম্যাপ থাকলেও সে যেন হাতের তালুর মত চেনে এ শহর কে। নিয়ম মত আউড়ে চলেছে সাল তারিখ সমেত এ নগরীর আবিষ্কারের ইতিহাস। পম্পেইতে ধ্বংসাবশেষ প্রথম,১৬ শতকের শেষের দিকে ডোমেনিকো ফন্টানা আবিষ্কার করেছিলেন। হারকিউলেনিয়াম ১৭০৯সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল, এবং ১৭৩৮ সালে সেখানে পুনরায় খনন কাজ শুরু হয়।খনন কার্য্য চলতে থাকলে ১৭৬৩ সালে একটি শিলালিপি ("Rei publicae Pompeianorum") পাওয়া গেছে যা এই স্থানটিকে পম্পেই হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো। ১৮ শতকের মাঝামাঝি এই শহরের আবিষ্কারের কাজে আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ ডনকার্লোসের পৃষ্ঠপোষকতায় নেপলসের রাজা। সামরিক প্রকৌশলী কার্লওয়েবার ১৭৫০সাল থেকে ১৭৬৪ সাল পর্যন্ত পদ্ধতিগত অধ্যয়ন চালিয়েছিলেন। কিন্তু অন্যান্য প্রাথমিক খনন প্রায়শই এলোমেলো এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিল, যা গুপ্তধন সন্ধানকারী বা অন্যান্য অপ্রশিক্ষিত শ্রমিকদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলো। ১৮৬০ সালে এলোমেলো খনন বন্ধ করা হয়েছিল, যখন ইতালীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ জিউসেপ ফিওরেলি খননের পরিচালক হন।
পম্পেই নয়টি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল; প্রতিটি অঞ্চলের ইনসুলা (ব্লক) সংখ্যাযুক্ত ছিল, এবং রাস্তার প্রতিটি দরজাকে একটি নম্বর দেওয়া হয়েছিল যাতে প্রতিটি বাড়ি তিনটি সংখ্যা দ্বারা সুবিধা জনকভাবে অবস্থিত হতে পারে। আগ্নেয়গিরির ছাই যেখানে মৃতদেহগুলো ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল সেখানে সিমেন্ট ঢেলে মৃতদেহ তৈরি করার কৌশলও ভূতাত্বিক ফিওরেলি তৈরি করেছিলেন। খনন কার্যের ফলে এই শহরের মাটির তলা থেকে প্রাপ্ত সামগ্রীর পর্যালোচনায় এবং আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনায় ও প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছিলো ভিসুভিয়াসের তরল লাভার ছাই আসলে সংরক্ষণের কাজ করেছে। ওরা দেখেছিলো খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকের রোমক আমলের নানা বাড়ির নিদর্শন। কিছু বাড়ি পাওয়া গিয়েছিলো তিনতলা পর্য্যন্ত অক্ষত,তার কাঠের জানলা দরজা কপাট অবিকৃত অবস্থায় দেখে ঋষভের সাথে অদ্রিজা ও শ্রী বিস্ময়ে হতবাক। ওদের কিছুতেই বিশ্বাস হয় নি দুহাজার বছরের প্রাচীন এক শহরের ইতিকথার ধ্বংসাবশেষের সাক্ষী ওরা। ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া নিত্য ব্যাবহার্য্য জিনিস আসবাব পত্র থেকে তৈজস পত্র সব প্রাণে চমক লাগায়। এমন কি প্রত্নতত্ত্ববিদরা ও খুবই আশ্চর্য্য হয়ে গিয়েছিলেন যখন সেখানে দুই হাজার বছরের পুরোনো পাউরুটি আর শুকনো ফল অবিকল একই প্রকার রয়েছে দেখেছিলেন। আজও স্বপ্নের মত মনেপড়ে সে দৃশ্য অদ্রিজার সাথে শ্রী বিস্মিত চোখে হতবাক হয়ে দেখে আৎকে উঠেছিলো। ছাই ভস্মের নীচে প্রাণী সহ মানুষের শব দেহ ফ্রোজেন অবস্থায় রয়েছে।
মিষ্টার অড্রিন এবং ইরিনার প্রশ্নের বিশ্লেষণ করে গাইড সাহেবা ব্রানটা ওদের ইংলিশে বারবার বোঝাচ্ছিলেন বৈজ্ঞানিক দের মতে ছাইয়ের প্রলেপ দ্বারা ঢাকা ছিল বলে সেখানে আর্দ্রতা আর বায়ুর পরিমান একে বারেই নাম মাত্র থাকায় কোনো জিনিসে পচন ধরেনি বা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়নি।হাজার হাজার ফুট ছাই ভস্মের নীচে মাটির ঢিবির তলে যেখান থেকে সে সময়ের পম্পেই বাসীদের জীবন যাত্রা সম্পর্কে বেশ সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গিয়েছিলো। পরবর্তীকালে ভূতত্ত্ববিদ মিষ্টার গিসেপে ফাউরেলি এই বিশাল ছাইয়ের পাহাড়ে খনন কার্য্য চালিয়ে ভিতর থেকে পম্পেইবাসীর অসংখ্য শবদেহ উদ্ধার করে প্লাস্টার অফ প্যারিস প্রয়োগের মাধ্যমে দেহ গুলোকে পুনর্নির্মাণ করেন। এবং যেমন পাওয়া গিয়েছিল ঠিক তেমন করেই রূপদান করে যথাযথ স্থানে সাজিয়ে রাখেন স্ট্যাচুর মত।এরপরই তিনি হাজারো চিত্র কর্ম এবং ভাস্কর্য্যের উদ্ধার করেছিলেন যার অধিকাংশই ছিল অশ্লীল। এবং গভর্মেন্ট থেকে দায়িত্ব নিয়ে প্রাচীনকালের শিল্পের নিদর্শন স্বরূপ সভ্যতা ও শিল্পের দ্বন্দে সামাজিক ঝড় ওঠার সম্ভাবনায় সর্বসমক্ষ থেকে আড়াল করে নেপলের সিক্রেট জাদুঘরে সিল করে সে মূর্তি রেখে দেওয়া হয়েছে। সমাধি নগরী পম্পেই। গলিত লাভার ছাইয়ে ঢাকা মাটির সমাধি থেকে মুক্তি পাওয়া পম্পেইর এই মৃত নগরী বর্তমানে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল যা পর্যটকের দ্বারা সর্বাপেক্ষা বেশী পরিদর্শন করা হয়েছে। এবং প্রতি বছরই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক ভ্রমণার্থীর এখানে সমাগম দেখাযায়।ইউনেস্কোর তালিকায় পম্পেই নগরের সাথে হেরোকুলেনিয়াম এবং আপেলনেৎস্কে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আধুনিক পৃথিবীতে পম্পেইয়ের এই সমাধি শহরটি ইতালীর সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে।
শ্রীময়ী খুব মনোযোগ দিয়ে হাসি খুশি ব্রানটার বর্ণনা শুনে ঋষভ কে বলে খেয়াল করে দেখলাম মিস গাইডটির বর্ণনার সাথে আমার কয়েক দিন আগে পড়া পম্পেই ভিসুভিয়াসের কাহিনীর হুবহু মিল। এখানে যেন উম্মুক্ত আকাশের নীচে গুরু গম্ভীর ইতিহাসের ক্লাস চলছে এবং ইতালীয়ান ব্রানটা ঔপন্যাসিক রবার্ট হ্যারিসের লেখা বইটার আদ্যপ্রান্ত মুখস্থর মত বলে চলেছে। আকাশ কুয়াশাছন্ন মেঘে ঢাকা ,বেলা বারার সাথে সাথেই সকালের মসৃণ রোদ উধাও। প্রবল শীতের হাওয়ায় কাঁপুনি লাগছে তবুও ওরা হেঁটে চলেছে মৃত নগরীর রহস্যের সন্ধানে রাজপথে। ক্রমশঃ
0 Comments