রাধাবল্লভ চক্রবর্ত্তী
১.
‘আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক’
স্বপ্নই নিরাপদ তবে?
স্বপ্নের ভিতর
গড়ে নিতে হ’বে ঘর?
জানো না?
স্বপ্নের ভিতর ঘুম
ঘুমের ভিতর ক্লান্তি
ক্লান্তির ভিতর রাত
রাতের ভিতর নক্ষত্র
নক্ষত্রের বিপরীতে কেবলই অন্ধকার!
আর যদি জানতে চাও,
তবে এই নরম বিছানা;
কমনীয় — খোঁজে শরীর শুধু!
এবং… শরীরের ভিতর মাংস
মাংসের প্রতি লোভ —
জেগে ওঠে নখ; ছিঁড়ে খেতে!
এর চেয়ে বড় সত্যি
আর কোথায় খুঁজে পেতে?
অন্ধকার! অন্ধকার!
অন্ধকার খালি!
হাজার হাতের তালি
বেজে ওঠে — শোনা যায় —
‘এসেছে এই তো চরম সুযোগ!’ ভেবে নিয়ে
শুরু হয় ভীষণ মেহন!
যথারীতি ক্লান্তি জড়িয়ে
ঘুমিয়ে পড়ি;
ঘুমের ভিতর স্বপ্ন
স্বপ্নের ভিতর দেখি:
যেন আমারই মেয়ের
ছিন্নভিন্ন মরদেহ!
🍂
২.
এ-কথা ঠিক নয়। জানি আমি।
(কিন্তু বলবে কে?)
এমন পা-ফেলানোয় ভুল আছে।
(শুধরাবে কে?)
ভাঙন রয়েছে অনেক। জানি, জানি।
(কিন্তু টলাবে কে?)
তুমি অনেক উঁচু ছুঁতে চাইছ;
তা-ও জানি,
কিন্তু, আকাশ নোয়াবে কে?
বলো কে?
৩.
যে ঘটনায় এত আলোড়ন, তার অভিঘাত
জেনে, নিজের দিকেই তাকাই, ভাবি:
আমি কোনওভাবে জড়িত কিনা —
মুহূর্তে ফুলে ওঠে শরীর, প্রতিটি রোমকূপ,
তারও থেকে বেশি ক্রোধ; তারও বেশি ঘৃণা!
বীর্যহীন ভাবো যদি, তবে শোনো:
আমিও ভেবেছি এই উড়াল সময় ও ঘটনাপ্রবাহের
কাছে বোধহয় থেকে গেছি ঋণী;
অপরাধ আমারও রয়েছে; আমি ঐ বিপুল
সমাবেশ, মিছিলে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারিনি…
৪.
শরশয্যা
হাজার হাতের প্রহরণ, তবু হে সুন্দর, তুমি কি অসহায়?
প্রতিটি পদস্খলন আমাকে ছুঁড়ে দেয়, অপার্থিব কোনও
জোছনার মাঝে — শূন্য হ’তে আরেক শূন্যে। দাহ
ক’রে ফিরে এসে ওরা নিশ্চুপ, কেননা তর্কসুলভ বন্ধুরা;
প্রশ্ন জন্ম দেবে শুধুই প্রশ্নের। অঙ্গরাগ ঠিকরায় অন্ধকারে —
জানে কি জখম ওরা? নিরুত্তর হ’য়ে আজ শিখে নেয় কোলাহল;
তুমি কি আমায় চেনো? আমার শোক জানো? আমি তো
তেমন বিখ্যাত নই — পলাশ হয়েছে যতখানি বিখ্যাত,
ফাল্গুনে। কারোর কাছে ফিরে যাইনি আমি; কেউই আসেনি
ফিরে আমার কাছে; আজ সেতু গড়ে দাও তবে, বীভৎস
হৃদয়-সমুদ্দুর দু’টির মাঝে। আশ্চর্য আমার মতন ক’রে
হই। তোমার আয়ু নিয়ে আমি ধ্বংস হ’য়ে যাই — তবু
কি সুন্দর, এতকিছুর মাঝে নিজেকে অসহায় লাগে?
প্রহরণ নেই বুঝি আজ? জীবন ও মরণের মাঝে, উদ্যত
শ্বাসের মতো, তূণীর উজাড় ক’রে, তির নিক্ষেপ ক’রে
পতন ঘটাও — সেই হোক, বরং জানব আমি আমার শরশয্যা!
৫.
প্রত্ন
সংশয়, সমাধান চিহ্ন হ’য়ে গেছে। শরীর যেভাবে দাবি
করে, প্রত্নের মর্যাদা — আধভাঙা দেউলেই ফিরি অবশেষে,
কোথায় যাব আর? ঠাঁই নিইনি কতকাল, ঘরে —
আদর্শ পালন করি, অথবা অর্থ খুঁজি; কিংবা হনন
শিখি — ঈর্ষান্বিত চাঁদের আলো তোমার মুখের ’পরে
পড়ুক, হে বালিকা; দেখনি কি? নিরস্ত্র রয়েছি কতকাল,
অস্ত্র ফেলে — একসমুদ্র ঢেউ, এক লক্ষ দুপুরের রোদ নিয়ে;
নয়তো নিজের কাছে হ’তে হ’ত এত ছোট! উন্মুখ
হ’য়ে দেখি, কীভাবে যাচ্ছে সরে আমার কাছ থেকে আমার
আগ্রহ — যেভাবে সরে যায়, মুমূর্ষু রোগীর থেকে আরোগ্য
ক্রমশ। দু’চোখ ফিয়র্ড আজ, দীর্ঘশ্বাস হয় তারও
চেয়ে আরও দৃষ্টিঅতীত। কোথাও সমাধান নেই? ছন্দ?
অর্থ? এই এত পথ পেরিয়ে এনে তাকে দেখি, শরীর
0 Comments