জ্বলদর্চি

জলাভূমি সংরক্ষণ দিবস (২রা ফেব্রুয়ারি)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

জলাভূমি সংরক্ষণ দিবস (২রা ফেব্রুয়ারি)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে 

আজ জলাভূমি সংরক্ষণ দিবস, আসুন এই সম্পর্কে আমরা সব কিছুই জেনে নিই।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জীব বৈচিত্র্য, কৃষি, মৎস্য পর্যটনের নানা ক্ষেত্রে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো জলাভূমি।
জলাভূমি রক্ষা এবং সংরক্ষণের সচেতনতার লক্ষ্যে প্রতিবছর ২রা ফেব্রুয়ারি পালিত হয় 'বিশ্ব জলাভূমি সংরক্ষণ' দিবস।

 সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের দেশেও এই দিবসটি পালিত হয় ২রা ফেব্রুয়ারি।
জলাভূমির গুরুত্ব যে অপরিসীম তা বুঝতে পেরে ১৯৭১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসার শহরে পরিবেশবাদী সম্মেলনে জলাভূমির ব্যবহার ও সংরক্ষণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সই হয়, যা 'রামসার কনভেনশন' চুক্তি বলে পরিচিত।
১৯৭৫ সালে রামসার কনভেনশন চুক্তি কার্যকর হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে ২রা ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে জলাভূমি সংরক্ষণ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ১৭১ টি দেশ এই চুক্তিতে সই করেছে। আই ইউ সি এন, ইউনেস্কো সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ১০০ টিরও বেশি দেশের পরিবেশ সচেতন নাগরিক 'বিশ্ব জলাভূমি দিবস' পালন করেন।

🍂

ভারতবর্ষের মধ্যে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সব থেকে সমৃদ্ধ অঞ্চল হল পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চল। পৃথিবী বিখ্যাত সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য আলাদা করে আর কিছু বলার নেই। শুধুমাত্র সমৃদ্ধ জীব বৈচিত্র্যই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন- সাইক্লোনের হাত থেকে অতন্দ্রপ্রহরীর মত সমভূমিকে বাঁচানোর কাজ করে। ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে রামসার সাইট(রামসার কনভেনশন কতৃক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জলাভূমি) বলে ঘোষণা করা হয়।

জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র, জীববৈচিত্র্য, স্থানীয় ও আঞ্চলিক তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, মিষ্টি জলের আধার, ভূগর্ভস্থ জলের পুনর্ভরাট, কার্বন আধার, জলবায়ুর অভিঘাত প্রশমন ও অভিযোজন, জীবিকার উৎস ও অর্থনীতি ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
জলাভূমি সংরক্ষণ ও মজবুত ব্যবহারে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো তুলে ধরতে ২০২২ সালে এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, 'মানুষ ও প্রকৃতির জন্য জলাভূমি কার্যক্রম'
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী অষ্টাদশ শতক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় ৮৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। বনভূমির থেকেও জলাভূমি তিন গুন হারে লুপ্ত হয়ে গেছে। জার্নাল নেচার জিও সায়েন্সের ২০২১ সালের ৮ই মার্চের সম্পাদকীয়তে বিগত ৫০ বছরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া ৩৫ শতাংশ জলাভূমির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জলাভূমি সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো, দ্রুত হারিয়ে যাওয়া থেকে জলাভূমিকে রক্ষা, সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের বৈশ্বিক এবং জাতীয় পর্যায়ে এখনই সচেষ্ট হওয়া দরকার।

জলাভূমি জীব বৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। এখানে বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির প্রাণী ,উদ্ভিদ, পাখি ও কীটপতঙ্গের বসবাসের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান। জলাভূমি বিভিন্ন প্রাণীর এবং শীতকালীন পরিযায়ী পাখির আশ্রয়স্থল বলা যেতে পারে। রামসার কনভেনশন অনুযায়ী একটি জলাভূমিকে এমন একটি জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত যে, সেখানে যেন বছরের আট মাস জল থাকে। জলাভূমি শুধুমাত্র জল ধরে রাখারই কাজে লাগে না, বন্যার সময় অতিরিক্ত জলও ধরে রাখে বলে অতিবন্যার ঝুঁকি কমে যায়,তাই জলাভূমিকে পৃথিবীর কিডনি বলা হয়। জলাভূমি পৃথিবীতে জীবন টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই বলতে পারি, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই জলাভূমির গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং তা সংরক্ষিত করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments