বাংলার ঘাস পাতা ফুল ফল, পর্ব -- ৬২
ঢেঁড়স
ভাস্করব্রত পতি
ভেঁড়ি বা ঢেঁড়স একটি অন্যতম সব্জি হিসেবে পরিচিত। ওড়িশার উত্তরাঞ্চলে একে বলে 'মেঢ়াশিঙ্গা'। আসলে ঢেঁড়স ফল বেঁকে মেঢ়ার শিংয়ের মত হয়ে যায়। তাই এরকম নামকরণ। ঢেঁড়স ফল ৬ - ১০ ইঞ্চি লম্বা। সামনের অংশ ক্রমশঃ সরু হয়ে ছুঁচালো আকার ধারণ করে। ফলের গায়ে শিরা থাকে। দেখতে অনেকটা মহিলাদের আঙুলের মতো। তাই একে 'লেডিস্ ফিঙ্গার' (Lady's finger) নামে ডাকা হয়। তবে ইংরেজিতে এটিকে বলা হয় ওকরা (Okra)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এলাকায় ঢেঁড়সকে বলা হয় গাম্বো (gumbo)। এই শব্দটি পর্তুগিজ 'quingombo' থেকে উদ্ভূত। পূর্ব আফ্রিকীয় শব্দ 'quillobo' হল এটির আদি শব্দ। হিন্দিতে ভিণ্ডি বা ভেণ্ডি, আরবিতে বামিয়া এবং বান্টু ভাষায় কিঙ্গুম্বো বলা হয়।
ঢেঁড়শের আদি বাসস্থান ইথিওপিয়া। দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ শতকে আরবি ভাষায় মিশরীয় ও মূর জাতির বিভিন্ন লেখায় ঢেঁড়সের কথা উল্লিখিত রয়েছে। ষোড়শ শতকের ভাবপ্রকাশে রয়েছে --
'ডিন্ডিশো রোমশ ফলো মুনি নির্মিত ইত্যপি।
রুচিকৃদ্ ডিন্ডিশো ভেদী পিত্তশ্লেষ্মাপহঃস্মৃত।
সুশীতো বাতলো রুরুক্ষো মৃতলশ্চাশ্মরী হরঃ'।
যার বাংলা করলে হয়, এই ডিন্ডিশ ফলের আরও দুটি নাম রোমশ ফল এবং মুনি নির্মিত ফল। এই ফলটির রসশক্তি ও বীর্যশক্তি উভয়েই কার্যকর। রসগত স্বভাবে এটি ভেদক। শরীরের পিত্ত বিকার দূর করে রুচি আনে। তবে এটি বায়ু বর্ধক, রুক্ষ, মূত্রবর্ধক এবং অশ্মরী দূর করে। রোম বা রোঁয়া থাকে বলে ঢেঁড়সকে কেউ কেউ বলেন 'রোমশ'। ঢেঁড়সের মধ্যে যে আঠা আঠা হড়হড়ে ভাব থাকে, তা নিয়ে ঢাকা এলাকায় শোনা যায় --
'মামার বাড়ি গেলাম
কিবা ভাত খাইলাম
ঢেঁড়স গাছ
ঢেঁড়শের বৈজ্ঞানিক নাম Abelmoschus esculentus(L.) Moench। এটি Malvaceae পরিবারের অন্তর্গত। এছাড়াও যেসব প্রজাতির ঢেঁড়সের দেখা মেলে --
Abelmoschus bammia Webb
abelmoschus longifolius (Willd.) Kostel.
Abelmoschus officinalis (DC.) Endl.
Abelmoschus praecox Sickenb.
Abelmoschus tuberculatus Pal & Singh
Hibiscus esculentus L.
Hibiscus hispidissimus A.Chev. nom. illeg.
Hibiscus longifolius Willd.
Hibiscus praecox Forssk.
ঢেঁড়স গাছ ২-৩ ফুট লম্বা হয়। পাতাগুলো দেখতে রেড়ি গাছের মতো। খসখসে ও সূক্ষ সূক্ষ রোমযুক্ত। পাতা ৩-৫ টি অংশে বিভক্ত। পাতার বোঁটা ৫ - ৬ ইঞ্চি লম্বা। ফুল হলুদ রঙের কিন্তু মধ্যভাগ বেগুনি রঙের।
ঢেঁড়স ভর্তি গাছ
ঢেঁড়সের মধ্যে থাকে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। এছাড়াও এতে আছে ক্যারোটিন, থিয়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ফলিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড এবং অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড। ঢেঁড়সের মধ্যে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি ক্যান্সার রোগ সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।
ঢেঁড়স ফুল
ঢেঁড়সের তরকারি খুব উপাদেয়। ঢেঁড়স ভাজা এবং ঢেঁড়স সেদ্ধ রসনা তৃপ্তকারী খাবার হিসেবে জনপ্রিয়। ঢেঁড়স খেলে প্রস্রাব ও দাস্ত দুইই পরিষ্কার হয়। প্রস্রাবে উগ্রগন্ধ, খুসখুসে কাসি, ধাতু ক্ষরণ, হাঁপানি, ব্লাড সুগার ইত্যাদির উপশমে ঢেঁড়স খুব কার্যকরী। কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় ঢেঁড়স। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় ঢেঁড়স। চুলের কন্ডিশনার হিসেবে ঢেঁড়স বেশ ভালো।
🍂
0 Comments