দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
আজ ২২ সে মার্চ বিশ্ব জল দিবস। আসুন এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
জল হলো একটি অজৈব, স্বচ্ছ, স্বাদহীন, গন্ধহীন এবং প্রায় বর্ণহীন এক রাসায়নিক পদার্থ, যা পৃথিবীর বারিমণ্ডলের ও যে কোন প্রাণী - কোষ বা উদ্ভিদ-কোষের একটি প্রধান উপাদান।যদিও জল কোন প্রাণী বা উদ্ভিদকে কোন রকমের শক্তির বা জৈব পরিপোষকের যোগান দেয় না, তবু এখনও পর্যন্ত আমরা যা জানি, তাতে সমস্ত ধরনের প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য জল অপরিহার্য। এই জন্য মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার আগে প্রথমে সেখানে জলের অস্তিত্ব খোঁজেন। কারণ, এখনও মোটামুটিভাবে মনে করা হয় যে, জল যদি না থাকে, তাহলে সেখানে প্রাণ থাকতে পারে না।
ভূপৃষ্ঠের ৭০.৯% অংশ জুড়ে জলের অস্তিত্ব রয়েছে এবং পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জীবের জীবনধারণের জন্যই জল একটি অত্যাবশ্যক পদার্থ। পৃথিবীতে প্রাপ্ত জলের ৯৬.৫% পাওয়া যায় মহাসাগরে, ১.৭% ভূগর্ভে, ১.৭% হিমশৈল ও তুষার হিসেবে, একটি ক্ষুদ্র অংশ অন্যান্য বড় জলাশয়ে এবং ০.০০১% বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত মেঘ, জলীয় বাষ্প হিসেবে ও বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, ইত্যাদিরূপে।পৃথিবীর জলের মাত্র ২.৫% হল বিশুদ্ধ জল এবং বাকি ৯৮.৮% হল ভূগর্ভস্থ জল ও বরফ। বিশুদ্ধ জলের ০.৩%-এরও কম অংশ পাওয়া যায় নদীতে, হ্রদে ও বায়ুমণ্ডলে এবং তার চেয়েও ন্যূনতর অংশ পাওয়া যায় বিভিন্ন জীবের শরীর ও উৎপাদিত পণ্যে। পৃথিবীতে জল প্রতিনিয়তই বাষ্পীভবন, ঘনীভবন, বাষ্পত্যাগ, ইত্যাদি বিশিষ্ট পানিচক্র মাধ্যমে ঘূর্ণমান। বাষ্পীভবন ও বাষ্পত্যাগের কারণেই পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত ইত্যাদি ঘটে।
🍂
পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষের বাস৷ আরো ২০০ কোটি মানুষ এই বিশাল জনস্রোতে যোগ দেবে ২০৫০ সাল নাগাদ। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের প্রতিটি মানুষ প্রতি দিন গড়ে ২ থেকে ৪ লিটার জল পান করে। তবে আমরা প্রতি দিন যে পরিমাণ জল পান করি তার বেশির ভাগ অংশই খাদ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন পশু পালন, খামারের কাজ যেমন,এক কেজি গম উৎপাদনে খরচ হয় ১৫০০ লিটার জল। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) আলোচ্যসূচি অনুযায়ী এজেন্ডা ২১-এ প্রথম বিশ্ব জল দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব জল দিবস পালিত হয় এবং তার পর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলি এই দিনটিকে নিজ নিজ রাষ্ট্রসীমার মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের জলসম্পদ সংক্রান্ত সুপারিশ ও উন্নয়ন প্রস্তাবগুলির প্রতি মনোনিবেশের দিন হিসেবে উৎসর্গ করেন। প্রতি বছর বিশ্ব জল দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থার যে কোনও একটি বিশেষ কর্মসূচি পালন করে থাকে।২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাষ্ট্রসংঘ বিশ্ব জল দিবসের থিম, বার্তা ও প্রধান সংস্থা নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলির পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও পরিচ্ছন্ন জল ও জলসম্পদ রক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এই দিন বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করেন। রাষ্ট্রসংঘ বিশ্ব জল উন্নয়ন প্রতিবেদন সাধারণত বিশ্ব জল দিবসেই প্রকাশ করে থাকে।
অন্যান্য প্রাণীর জীবনধারণের জন্যও জল অপরিহার্য। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রান্তেই সুপেয় পানির সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তবুও প্রায় একশ কোটি মানুষ নিরাপদ জল ও প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ থেকে বঞ্চিত।নিরাপদ জলের ব্যবহারের সাথে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের সুস্পষ্ট পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। কয়েকজন পর্যবেক্ষক অনুমান করেছেন যে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকাংশেরও বেশি জল সংক্রান্ত সঙ্কটের সম্মুখীন হবে।নভেম্বর, ২০০৯-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে কয়েকটি উন্নয়নশীল অঞ্চলে যোগানের তুলনায় জলের চাহিদা ৫০% ছাড়িয়ে যাবে।বিশ্ব অর্থনীতিতে জল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ জল বহু রাসায়নিক পদার্থের দ্রাবক হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন শিল্পে শীতলীকরণ এবং পরিবহনের কাজে সহায়তা করে।
0 Comments