জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ বিমান পাত্র


গুচ্ছ কবিতা 
বিমান পাত্র

তালাশ

ভালোবাসা পোড়ে বেসামাল নিকোটিনে-
রাতের শরীর রক্ত ও রস চোষে ;
অর্গাজমের চাদর জেনেছে শুধু-
কখন বা প্রেম বদলায় আক্রোশে !

জীবন মানেই নেশাতুর মৃগনাভী ;
প্রতিদিন মরা মায়াবী শ্লোকের শ্লেষে I
যোনির গর্ভে মৃত্য উপত্যকা-
ডুবে থাকে দেহ লিঙ্গের আশ্লেষে !

প্রজাপতিদের গন্ধকামুক চোখে-
কেন বারবার প্রেম শুধু নীল বিষ !
নগ্ন শরীর ভালোবাসা খুঁজে ফেরে-
স্তনেরবৃন্তে বুনে নেয় ওয়েসিস ।

এখোঁজ যখন ব্যর্থ আর্তনাদে
এক দেহ থেকে আরেক দেহতে মেশে ;
নীরব রাতের সোফার দখল নিয়ে
ভালোবাসা বাঁচে ঝুটা খোয়াবের দেশে। 




দুঃস্বপ্ন

সেদিন হঠাৎ সকালে চলতে গিয়ে দেখলাম ,
একটা বিষধর সাপ নির্জীব দড়ি হয়ে পড়ে আছে !
দুপুরে তাকিয়ে দেখি , মানুষগুলো
রাস্তায় বুকের ওপর ভর করে হাঁটছে !
সন্ধেবেলা দেখলাম ,একটা আস্ত চাঁদকে কিমা করে
দামি মদের চাট বানিয়ে খাচ্ছে কিছু লোক-
যারা নাকি দেশ চালায় !
মধ্যরাতে দেখি , গোটা পৃথিবীটা
পচা গলা জীবন্ত দেহের দুর্গন্ধে বীভৎস হয়ে উঠেছে !
ওপরের একটা ঘটনাও সত্যি ছিল না-
ভোরবেলায় দেখা দুঃস্বপ্ন ছিল !


🍂


হাসপাতাল

কেউ সদ্য জন্ম নেওয়া ছেলের মুখ দেখে
হাসতে হাসতে বেরোচ্ছে ।
কেউ আবার প্রিয়জনের চলে যাওয়ার খবরে
কান্নাভেজা চোখে ভেতরে ঢুকছে I
রুগ্ন মুখে কাউকে বেরোতে দেখে 
হোটেলের ছেলেটা বাসি ভাত খেতে খেতে বলে,
"কাকা, এবারেও বেঁচে গেল !"
আবার মাঝরাতে দলামাখা রক্তমাংসের দেহ নিয়ে 
একদল কোন রকমে ঢুকে "ডাক্তার ! নার্স !"-বলে 
কাতর স্বরে চিৎকার করছে । 
তারই মধ্যে কেউ যেন 
বিষাদমাখা চাপা স্বরে বলছে 
"মাসিমাকে আর বাঁচানো গেল না রে !"
প্রবেশ-বাহিরের মাথায় জ্বলন্ত লাল আলো 
কেমন যেন সিঁদুরে মেঘের মতো দেখায়;
পৃথিবীটাকে একটা হাসপাতাল মনে হয় !




সেই হাসিটা

যেই হাসিটা বছর তিরিশ আগে 
দেখেছিল একটি কিশোর ছেলে ;
সেই হাসিটাই দ্যাখে পৌঢ় চোখে-
মাঝে মধ্যে ফেসবুকেতে পেলে ।

সেই হাসিটা আগের মতোই আছে ;
এখনও সেই দু'গালে টোল পড়ে ।
বয়স কেবল আদলে ছাপ ফেলে ;
সেই হাসিতে আজও সোনা ঝরে !

সেই হাসিতে পাগলপারা একুশ-
কাব্য কত আঁকতো মনে মনে ;
'ভালোবাসি' হয় নি তাকে বলা ;
ভাবনা ছিল গহীন মনের কোণে !

হঠাৎ যেদিন শুনলো বজ্রবাণী-
"মেয়েটির না বিয়ে ঠিক বৈশাখে !"
সেই ছেলেটি নিথর পাথর হলো !
হারিয়ে গেল জীবননদীর পাঁকে !

সেই হাসিটা বুঝিয়ে দিল তাকে-
"জীবন শুধুই সাদা এবং কালো ! "
তবু বলতে ইচ্ছে করতো ভীষণ-
"সেই হাসিটা দূরেই থাক না ভালো !"

তারপরেতে জীবন বয়ে গেছে -
 নদীর পারে যেমন ছলাৎ ঢেউ ;
সেই হাসিটার সোনার আলো নিয়ে-
"কেমন আছিস ?" -বলে না আর কেউ !

জীবন এখন দাবি আদায় করে-
নীরস সুদ আর আসলটুকু গুণে ;
সেই হাসিটা তবু বেঁচে আছে-
ফেসবুক আর এই ছেলেটার মনে !


স্মৃতি-মানুষ

হয়তো আজই চলে যেতে পারি
হয়তো বা কাল 
হয়তো বা এখনই I
সময় এমনই কাপালিক !
অনিশ্চয়তার খ্যাপা বানে ভেসে থাকবে জন্ম জন্মান্তর
টুকরো-টাকরা খড়কুটি নিয়ে
স্মৃতির কিছুটা মানুষ ।



বোকা ঈশ্বর


এই আছি , এই নেই !
ধুলোমাটির খেলাঘর থেকে
কে যে কখন এক  নিমেষে 
অ্যালবামে চলে যায় !
কাঁচের গ্লাসের জীবন কখন যে
খসে পড়ে আনাড়ি ছেলেটার হাত থেকে ,
এতদিন চেষ্টা করেও
বোকা ঈশ্বর 
উত্তরটা লিখতে পারেন নি !



বর্ষামরণ কাব্য

শাওন নামের মেঘলা সে এক মেয়ে ,
সকাল বিকেল পাখির মতন এসে
হাওয়ার তালে উঠতো সে গান গেয়ে-
বৃষ্টিধারায় মত্ত মাদল হেসে ৷

আমার তখন স্বপ্নালু দুই চোখ ,
রূপকথাদের ভিজছে সবুজ বাসা ;
আমার তখন অবুঝ কিশোর ঝোঁক-
বুকের ভিতর বেলাগাম ভালোবাসা ।

বর্ষাদিনের ভরসা নেই যে কিছু-
অভিসারী মন আজও মরণের পিছু !


জোছনাকে ঠিক আটকাতে ?
আসবিই তুই , আসবিই তুই 
নীল শালোয়ার ওড়নাতে !
রূপকথাদের পরী হবি
জোছনভরা সেই রাতে !
আমি তখন পাগলাটে এক বাউণ্ডুলে-
এই পৃথিবীর নগদী সব দুঃখ ভুলে
জ্বালবো চোখে গোলাপ-বাতির কোমল আলো !
বল, বল না আমায়-
তখন আমার বন্ধু হবি ?
তখন আমায় বাসবি ভালো ?


Post a Comment

0 Comments