বিমান পাত্র
তালাশ
ভালোবাসা পোড়ে বেসামাল নিকোটিনে-
রাতের শরীর রক্ত ও রস চোষে ;
অর্গাজমের চাদর জেনেছে শুধু-
কখন বা প্রেম বদলায় আক্রোশে !
জীবন মানেই নেশাতুর মৃগনাভী ;
প্রতিদিন মরা মায়াবী শ্লোকের শ্লেষে I
যোনির গর্ভে মৃত্য উপত্যকা-
ডুবে থাকে দেহ লিঙ্গের আশ্লেষে !
প্রজাপতিদের গন্ধকামুক চোখে-
কেন বারবার প্রেম শুধু নীল বিষ !
নগ্ন শরীর ভালোবাসা খুঁজে ফেরে-
স্তনেরবৃন্তে বুনে নেয় ওয়েসিস ।
এখোঁজ যখন ব্যর্থ আর্তনাদে
এক দেহ থেকে আরেক দেহতে মেশে ;
নীরব রাতের সোফার দখল নিয়ে
ভালোবাসা বাঁচে ঝুটা খোয়াবের দেশে।
দুঃস্বপ্ন
সেদিন হঠাৎ সকালে চলতে গিয়ে দেখলাম ,
একটা বিষধর সাপ নির্জীব দড়ি হয়ে পড়ে আছে !
দুপুরে তাকিয়ে দেখি , মানুষগুলো
রাস্তায় বুকের ওপর ভর করে হাঁটছে !
সন্ধেবেলা দেখলাম ,একটা আস্ত চাঁদকে কিমা করে
দামি মদের চাট বানিয়ে খাচ্ছে কিছু লোক-
যারা নাকি দেশ চালায় !
মধ্যরাতে দেখি , গোটা পৃথিবীটা
পচা গলা জীবন্ত দেহের দুর্গন্ধে বীভৎস হয়ে উঠেছে !
ওপরের একটা ঘটনাও সত্যি ছিল না-
ভোরবেলায় দেখা দুঃস্বপ্ন ছিল !
🍂
হাসপাতাল
কেউ সদ্য জন্ম নেওয়া ছেলের মুখ দেখে
হাসতে হাসতে বেরোচ্ছে ।
কেউ আবার প্রিয়জনের চলে যাওয়ার খবরে
কান্নাভেজা চোখে ভেতরে ঢুকছে I
রুগ্ন মুখে কাউকে বেরোতে দেখে
হোটেলের ছেলেটা বাসি ভাত খেতে খেতে বলে,
"কাকা, এবারেও বেঁচে গেল !"
আবার মাঝরাতে দলামাখা রক্তমাংসের দেহ নিয়ে
একদল কোন রকমে ঢুকে "ডাক্তার ! নার্স !"-বলে
কাতর স্বরে চিৎকার করছে ।
তারই মধ্যে কেউ যেন
বিষাদমাখা চাপা স্বরে বলছে
"মাসিমাকে আর বাঁচানো গেল না রে !"
প্রবেশ-বাহিরের মাথায় জ্বলন্ত লাল আলো
কেমন যেন সিঁদুরে মেঘের মতো দেখায়;
পৃথিবীটাকে একটা হাসপাতাল মনে হয় !
সেই হাসিটা
যেই হাসিটা বছর তিরিশ আগে
দেখেছিল একটি কিশোর ছেলে ;
সেই হাসিটাই দ্যাখে পৌঢ় চোখে-
মাঝে মধ্যে ফেসবুকেতে পেলে ।
সেই হাসিটা আগের মতোই আছে ;
এখনও সেই দু'গালে টোল পড়ে ।
বয়স কেবল আদলে ছাপ ফেলে ;
সেই হাসিতে আজও সোনা ঝরে !
সেই হাসিতে পাগলপারা একুশ-
কাব্য কত আঁকতো মনে মনে ;
'ভালোবাসি' হয় নি তাকে বলা ;
ভাবনা ছিল গহীন মনের কোণে !
হঠাৎ যেদিন শুনলো বজ্রবাণী-
"মেয়েটির না বিয়ে ঠিক বৈশাখে !"
সেই ছেলেটি নিথর পাথর হলো !
হারিয়ে গেল জীবননদীর পাঁকে !
সেই হাসিটা বুঝিয়ে দিল তাকে-
"জীবন শুধুই সাদা এবং কালো ! "
তবু বলতে ইচ্ছে করতো ভীষণ-
"সেই হাসিটা দূরেই থাক না ভালো !"
তারপরেতে জীবন বয়ে গেছে -
নদীর পারে যেমন ছলাৎ ঢেউ ;
সেই হাসিটার সোনার আলো নিয়ে-
"কেমন আছিস ?" -বলে না আর কেউ !
জীবন এখন দাবি আদায় করে-
নীরস সুদ আর আসলটুকু গুণে ;
সেই হাসিটা তবু বেঁচে আছে-
ফেসবুক আর এই ছেলেটার মনে !
স্মৃতি-মানুষ
হয়তো আজই চলে যেতে পারি
হয়তো বা কাল
হয়তো বা এখনই I
সময় এমনই কাপালিক !
অনিশ্চয়তার খ্যাপা বানে ভেসে থাকবে জন্ম জন্মান্তর
টুকরো-টাকরা খড়কুটি নিয়ে
স্মৃতির কিছুটা মানুষ ।
বোকা ঈশ্বর
এই আছি , এই নেই !
ধুলোমাটির খেলাঘর থেকে
কে যে কখন এক নিমেষে
অ্যালবামে চলে যায় !
কাঁচের গ্লাসের জীবন কখন যে
খসে পড়ে আনাড়ি ছেলেটার হাত থেকে ,
এতদিন চেষ্টা করেও
বোকা ঈশ্বর
উত্তরটা লিখতে পারেন নি !
বর্ষামরণ কাব্য
শাওন নামের মেঘলা সে এক মেয়ে ,
সকাল বিকেল পাখির মতন এসে
হাওয়ার তালে উঠতো সে গান গেয়ে-
বৃষ্টিধারায় মত্ত মাদল হেসে ৷
আমার তখন স্বপ্নালু দুই চোখ ,
রূপকথাদের ভিজছে সবুজ বাসা ;
আমার তখন অবুঝ কিশোর ঝোঁক-
বুকের ভিতর বেলাগাম ভালোবাসা ।
বর্ষাদিনের ভরসা নেই যে কিছু-
অভিসারী মন আজও মরণের পিছু !
জোছনাকে ঠিক আটকাতে ?
আসবিই তুই , আসবিই তুই
নীল শালোয়ার ওড়নাতে !
রূপকথাদের পরী হবি
জোছনভরা সেই রাতে !
আমি তখন পাগলাটে এক বাউণ্ডুলে-
এই পৃথিবীর নগদী সব দুঃখ ভুলে
জ্বালবো চোখে গোলাপ-বাতির কোমল আলো !
বল, বল না আমায়-
তখন আমার বন্ধু হবি ?
0 Comments