স্বস্তিকা ধর
ফাল্গুন-মলিন জঙ্গল
৯ ই চৈত্র , ১৪৩১
আমাদের গ্রামে বসন্ত এলোনা এবার!
শীতই এই সুযোগে , দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর-
রংরেজ চাঁদ অদেখা রইলো মসীকৃষ্ণ মেঘের গলুইতে
ভরা মার্চেও আমাদের ভিখিরিপনা ,
একটুকরো সূর্যকে নিজের করে পাবার চাহিদায়
আমার
-রাতের অপেক্ষা
-দুপুরের অপেক্ষা
- সকালের দিকে টুকরো টাকরা 'কি খবর' ফুটে উঠবার অপেক্ষাও
নিঃশেষ একেবারে
আপনি আর আমি যে শ্বাস নিচ্ছি একই হাওয়ায় ,
এই গুরুত্বপূর্ণ কথাটা আর আজকাল তেমন করে অনুভব করিনা;
মনেও পড়েনা! প্রায় !
কে যেন একজন , গত সপ্তাহে বলছিলো ;
'স্বতঃস্ফূর্ত লিখে যাও' !
স্বতঃস্ফূর্ত, কান্নাই ছিল কেবল -
বারো সপ্তাহে , চব্বিশ রকমের কান্না
লেখার ভাবনা , কালি, কলম , অক্ষর সহ,
ভেসে উঠেই মিলিয়ে যাচ্ছে
ভাতের ভেতর গলে যাওয়া মাখনের মতো তার স্বাদ পাচ্ছি ,
অবয়ব পাচ্ছি না
মার্চের বিশ্বাসীরা , রাখছে, সারাদিনের নির্জলা উপবাস
আমি ভাবছি , আপনি কাছে থাকলে জিজ্ঞেস করতাম -
' কার জন্য এতো উপবাস .....ইত্যাদি ?
দুই মাসের , ছয় মাসের , দশ মাসের শিশুদের লাশ,
যে মায়েরা আঁকড়ে ধরে আছেন গণহত্যার রাসলীলায় -
কথায় - উপকথায় - গল্পে - গাথায় , তারাই আমাদের অমর অমৃত নির্যাস নয় কি?
এঁদের অতিক্রম করবে , কোন পুরুষ দেবতার অহংকারী পূজাপ্রার্থী আকাঙ্খা? '
-কিন্তু , আপনি নেই
কাছে দূরে কোথাও নেই
একটুকরো সুতোর মাফিক , অস্তিত্বের এদিকে সেদিকে আলগা জড়িয়ে থাকার মতোও নেই
যেন আপনি কোনোদিন ছিলেন না
যেন আপনি আমার কল্পনা প্রসূত খেয়াল-খোয়াব
একদম ওদের ওই অহংকারী পূজাপ্রার্থী আকাঙ্খী পুরুষ দেবতার মতো
শুধুমাত্র অমর অমৃত নারীর চাহত যাকে একান্ত নিজের সত্যির মতো
বিশ্বাসের কাঁচবাক্সে ফেনিয়ে তুলেছে, গেঁজিয়ে তুলেছে
বিষ মদের আলগা-জৌলুশ নেশা যেমন I
বিশল্যকরণী
২৩ সে ফাল্গুন , ১৪৩১
ধীরে ধীরে সেরে উঠছি আমি
মাথাটা ধরে আছে আজ পনেরদিন একটানা
রাতের ঘুম কমেছে
বেড়েছে ভোরের স্বপ্ন
আপনাকে এখনো পাই যখন তখন
ডুবে আছি অফিস এর কাজে,
হঠাৎ দেখি
আমার লেখার টেবিল থেকে হাতখানেক দূরের হাঁটুডোবা ঝর্ণায় আধশোয়া হয়ে
আপনি সাঁতার খেলায় আসার অনুনয় বিনয় থেকে শেষে পীড়াপীড়ি করছেন
আমি ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে,
হাসিতে মাখামাখি আপত্তি জানাই
'আরে সাঁতার জানিনা , ডুবে যাবো তো !'
আপনি সরবে শোরগোল তুলে -
' আমি শিখিয়ে দেবো; আমি ভালো কোচ '
বলেই মিলিয়ে যাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের জঙ্গলে
আমি লেখার টেবিল থেকে কার্শিয়াং এর দিকে একপলক
চোখ তুলি
চোখ নামিয়ে মন দিই লেখায়
মুখে বলি -
সাবধানে সাবধানে সাবধানে
এ সময় নদীতে বান আসে তো খুব
জানি কারোর কথা শোনবার অভ্যেস নেই আপনার একেবারেই
আজ শুনে দেখুন , ভালো লাগবে
এইভাবেই ওষুধ তৈরী হচ্ছে মনের অন্দরমহলে
বিশল্যকরণীর আবহে , আচ্ছন্ন চেতনা,
ধীরে ধীরে সেরে উঠছে আপনার ম্যাডেমোইসেল
দুর্যোগের রাত্রি
১৬ ই শ্রাবন , ১৪৩১
তোমাকে লিখছি , দুর্যোগের রাত্রির ভিতর বসে দুর্যোগের চিঠি
তোমাকে লিখছি ;
বিশ্বাস করো. অসহ্য জংলী, বে-আদব আজ হাওয়া !
মুখ বুজে , সহ্য করছে , কোনোমতে পাশ কাটাচ্ছে সাতটি পাহাড় .
ভরাডুবি অন্ধকার,
সপাট আলোর ফলা- বৃষ্টি মুষলধারে
ঝড়ের নির্লজ্জ তোলপাড়ে,
থেকে থেকেই কেঁপে উঠছে বুকের শিরা, উপশিরা .
জলাঞ্জলি , জঞ্জালের ছাই
যত্নে ধোয়া চালের মতো সাফা হয়ে ফুটে উঠছে মনের মুকুর
এ দুর্যোগে বলা যায় জনমের কথা ;
কেবল এ জনমের নয় ,
তারও আগে,
তারও পরে...
এসব রাতে , যখন তোমার ঘুমের ভিতর বেখেয়ালের আদত
বৃষ্টির শব্দের ভিতর,
ঝড়ের হাওয়ার স্রোতে,
পাঠাচ্ছে ডাক , অনাদরের
আমি বে-খবর , ঘুমের ভিতর
স্পষ্ট তোমায় দেখতে পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছি , পরিতৃপ্তি ভরে.
সকাল হতেই , অন্য আমি
ধুম জ্বর , ছাদের ঘর
তুমুল রোদে , অঙ্ক কষছি ; লাভের , ক্ষতির, রাগের , ঘৃণার
কত নিক্তি পেলাম !
রাতের স্বপ্ন-জট ছাড়াচ্ছি
শান্ত পাহাড় , বাতাস নম্র
বৃষ্টি পরবাসে .
তোমাকে লিখেছি কত দুর্যোগের রাত্রির ভিতরে বসে, দুর্যোগের চিঠি
জেগে নয়,
ঘুমের ভিতর
🍂
1 Comments
আপনার তিনটি কবিতাই ভালো লাগলো। বিশেষ করে 'বিশল্যকরণী'। কবিতাটি নিজেকে নিজের দিকে তাকাতে বাধ্য করে। কলমের কী জাদু!
ReplyDelete