জ্বলদর্চি

ভিটেমাটি /পুলককান্তি কর

চিত্র- শুভম দাস
ভিটেমাটি 
পুলককান্তি কর


লোকটার মধ্যে যেন একটা জাদু আছে। বিকেল চারটে বাজতে না বাজতেই কী যেন একটা অমোঘ আকর্ষণ কাজ করে। জুতো মোজা পরে আমি উসখুস বসে থাকি। হালকা রং ওঠা একটা গেরুয়া চাদর লুঙ্গির মতো পরা, ওপরে ফতুয়া আর গেরুয়া জহর কোট। কালো মাজা রঙের শিবানন্দকে দেখলে সন্ন্যাসী বলেই ভুল হয়; যদিও সে সন্ন্যাসী নয়। আলমোড়াতেই একটা সন্ন্যাসীদের আখড়াতে থাকে; ওখানকার রান্নাবান্নায় হাত লাগায়, বাজার-হাট করে। বেলা দুটো-আড়াইটের পর থেকে ও মুক্তপুরুষ। বেশ কিছুদিন হলো লোকটার সাথে আলাপ হয়েছে আমার, সীমতলার দিকে বেড়াতে গিয়ে। তারপর থেকে ওর সাথে হাঁটতে বেরোনোটাই যেন নেশা হয়ে গেছে আমার! 
   আমরা যে রাস্তায় বেরিয়ে গল্প করি, তা নয়। যে যার মতো হাঁটি। শিবানন্দ এই এলাকার লোক হওয়ার সুবাদে বা শারীরিক বলের কারণে আমার থেকে বেশ কিছুটা আগে আগেই হাঁটে। আমি চারদিকের দৃশ্য দেখতে দেখতে হাঁটি; ও কিছুটা এগিয়ে দাঁড়িয়ে যায় - দূরত্ব আবার বাড়ে। কোনওদিন কথা হয়, কোনওদিন হয় না। চারপাশের অপার নিস্তব্ধতার মধ্যে দুই অসমবয়সী এবং অসম মননের লোক হেঁটে যায়, শুধু হেঁটে যায়। আজকাল আলমোড়ায় লোকের বড় ভিড়। তাই চলতি রাস্তা ছেড়ে একটু গ্ৰামের দিকে আমার যাই। আজ শিবানন্দ যেন একটু বেশী ধীরেই হাঁটছে। মাঝে মাঝেই আমার সাথে একথা ওকথা বলার ফাঁকে গাছ চেনাচ্ছে, তাদের লোকায়ত ভেষজ গুণাগুণ বলছে। এখানকার লোকজন অনেকে ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। শিবানন্দ কিছুটা দেহাতী মেশানো বাংলায় আমার সাথে কথা বলে। হঠাৎ করে সে যেন বেশ দার্শনিক ভঙ্গিতে গম্ভীর স্বরে বলল, 'ডাক্তার সাব, দেশান্তরী হলে মনও কি দেশান্তরী হয়?' প্রশ্নটা বেশ কঠিন, এক কথায় বিনা প্রস্তুতিতে উত্তর দেওয়া আরও কঠিন। সে ঠিক কোন অ্যাঙ্গেলে প্রশ্নটা করছে বুঝতে না পেরে খানিক চালাকি করে বললাম, 'মন যখন দেহকে আশ্রয় করে থাকে, তখন সেও দেশান্তরী বই কি?' 
-ডাক্তার সাব, মন কি সত্যি দেহকে আশ্রয় করে থাকে? তবে মন দেহ ছেড়ে শতযোজন বেড়িয়ে আসে কী করে?

শক্ত কথা, যুৎসই জবাবে এখুনি কিছু মনে আসছে না। তাই কতকটা কথা ঘোরানোর জন্যই বললাম, 'হঠাৎ তুমি মন নিয়ে পড়লে কেন শিবানন্দ?' 
-কথাটা ঠিক মন নিয়ে নয় ডাক্তার সাব! ভাবনাটা এলো সুখবোধের প্রসঙ্গে! এই যে লোক নিজের জায়গা-জমি ছেড়ে অন্য জায়গায় বসত করে, তাতে কি তার সুখবোধের তফাৎ হয় না? 

আমি নিজে বিষয়টা নিয়ে যে কখনও খতিয়ে দেখেছি, তা নয়। তবে কিছুটা ওপর ওপর বললাম, 'সুখটা তো মনের একটা অবস্থা শিবানন্দ! মানুষ খেয়ে সুখ পায়, পড়ে সুখ পায়, দেশ বেড়িয়ে সুখ পায় - ফলে সবসময় যে সুখবোধটা তার মূল জায়গাকে কেন্দ্র করে হবে - তা কিন্তু নয়।' 
   কথাটা শিবানন্দের যে খুব পছন্দ হয়েছে তেমন মনে হলো না। সে কথার ঢঙটা একটু বদলে বলল, 'এটা অশ্বগন্ধা - এটা পাহাড়ী এলাকায় ভালো হয় - একে সমতলে আপনাদের কলকাতায় লাগালে কি এ বাঁচবে? দেখবেন শুকিয়ে যাবে। পাহাড়ে কমলালেবু যে মিষ্টতা পায়, নীচের দিকে নামলে তার টক হয়ে যায় কেন? মনে তাদের সুখ থাকে না বলেই না!' 
-মানুষ গাছেদের থেকে অনেক উন্নত ও জটিল গড়নের শিবানন্দ!  মানুষ অনেক কঠিন বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে বলেই তাদের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অনেক বেশী। তারা যে কোনও পরিবেশেই নিজেকে দেহ আর মনে এমন ভাবে সাজিয়ে নিতে পারে যাতে তাদের এইসব মানসিক অনুভূতিগুলোও আমূল বদলে যায়। 
-সব মানুষ কি সেটা পারে? আমার তো মনে হয়, অধিকাংশ মানুষই এসব পারে না। 
-না শিবানন্দ। বরং উল্টোটা। সামান্য কিছু মানুষই হয়তো পারে না। অধিকাংশ মানুষই পারে এবং খুব খুশীমনেই পারে। সব থেকে বড় কথা ভরা পেটেই তো সুখ! জীবিকার প্রয়োজনই তো মূলতঃ মানুষকে মাটিছাড়া হতে হয়।
-আপনি তো ডাক্তার মানুষ! আপনি নিজের ভিটেয় থাকলে কি পেটের ভাত জোগাতে পারতেন না? খুব পারতেন! আপনি দেশান্তরী কেন হলেন? নিশ্চিতভাবেই কোন না কোনও সুখের অভাবকে ভুলতে চেয়েই না! 
   শিবানন্দের সাথে এই জাতীয় আলোচনায় যেতে কোনও প্রবৃত্তি হলো না আমার। আমি চুপ করে থেকে দূরের একটা গাছ দেখিয়ে বললাম, 'ওই গাছটা কি শিবানন্দ?' 
-ওটা চিনার গাছ। 
-চিনার গাছের পাতাটা সবুজ, এত টকটকে লাল রঙ হল কী করে?
-এ গাছের পাতা শরৎকাল হলেই এমন গাঢ় লাল রঙের হয়ে যায়। ভারী সুন্দর লাগে দেখতে তখন!
  আমার মনে পড়ল কাশ্মীরে আমি এমন দেখেছি বটে! এই গাছ ওদিকেও হয়। ঠিক ম‍্যাপল গাছের মতো! শিবানন্দ বলল, 'মাড়তলাতে এই গাছ খুব দেখা যায়। গিয়েছেন কখনও?' 
-না। এখান থেকে কতদূর? 
-মাত্র দশ কিলোমিটার ডাক্তার সাব। এতদিন এখানে এসেছেন, একবার ঘুরেটুরে আসতে পারতেন তো! খালি হাসপাতালে রোগী দেখলে হবে? যে দেশে এসেছেন, তার সবরকম সৌন্দর্যের খানিকটা যদি খুঁড়ে দেখতে না পারেন তবে নতুনের প্রেমে পড়বেনই বা কী করে!

কথাটা খাঁটি। তবে কিনা আমি তো কতকটা ঘরকুনোই। নিজের আস্তানার চারপাশটাই আমার পৃথিবী হয়ে যায় অজান্তে। আমি তার বাইরে বড় একটা বেরোতে পারি না। বললাম, 'শিবানন্দ, আমাকে মাড়তলা নিয়ে যাবে কাল পরশু? তবে আগে থেকে ম্যানেজ করে রাখবো।' 
-ডাক্তার সাব আমি তো কাল থেকে কয়েকদিন থাকবো না!
-কেন গো? কোথায় যাবে? 
-দেশে। 
-সেখানে কে আছে? 
-আমার বৌ-বাচ্চা আছে, খেতিবাড়ি আছে। 
-তা তুমি বৌ-বাচ্চা ছেড়ে এখানে পড়ে থাকো কেন? এখানে তুমি কিছু উপার্জন করো বলে তো মনে হয় না! 

শিবানন্দ চুপ করে রইল। খানিক পরে বলল, 'উপার্জন করে আর কী করবো? অভাব তো তেমন নেই।' 
মানুষের অভাববোধের শেষ থাকে না। সে যতই থাকুক। এমন সাদামাটা লোকের এই অকপট স্বীকারোক্তি কোথাও ছুঁয়ে গেল আমায়। যদিও মাঝে একটা 'তেমন'-এর খোঁচা রয়েছে; তবু বললাম, 'ছেলের পড়াশুনোটুনোতেও তো খরচ লাগে! 
-ও তো এখন সব বুনিয়াদি স্কুল; টাকা পয়সা লাগে না। ছেলে আর কতদূরই বা পড়বে টেনেটুনে স্কুল ফাইনাল! 
-তোমার কি একটাই ছেলে? 
-না, মেয়েও আছে। 
-শুনি তো তোমাদের সমাজে পণটন প্রচুর দিতে হয়! তার জন্যও তো... 
কথাটা শেষ করতে দিল না শিবানন্দ। 'অতশত আমি ভাবি না ডাক্তার সাব! রূপ যৌবন আছে মেয়ের। ওর মা কিছু একটা ব্যবস্থা করে নেবে।' 
-তুমি বাবা, তোমার কোনও দায়িত্ব নেই? 
-সেটা মেটাতেই তো মাঝে মাঝে দেশে যাই ডাক্তার সাব!
 
সব কথা বোধগম্য হতে নেই, হবার দরকারও পড়ে না। আমি বললাম, 'তুমি ফিরবে কবে?' 
-দিন দশ বারো যাক; তারপর ফিরব আশা করি। 

আমারও এক দেশের বাড়ি ছিল। যতদিন বাবা-মা ছিলেন যাওয়ার একটা তাড়না অবচেতনে কাজ করতো। জমি জায়গাও ছিল বেশ কতকটা। জ্ঞাতিদের মধ্যে একজন চাষবাস করে সেসব - যদিও আমি ভাগ-টাগ চাই না কিছুরই। ঘরদোর একটু পরিষ্কার করে রাখতে বলি, জানিনা আদৌ রাখে কিনা। মা মারা যাবার পর বাৎসরিক শ্রাদ্ধ করতে শেষ যেবার দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম, তাও হয়ে গেল সাত-আট বছর। শিবানন্দ কিছুটা চাপা স্বরে বলল, 'ডাক্তার সাব বাড়ি যাব তো, একটু শক্তিটক্তি বাড়াবার ওষুধ লিখে দেবেন?'

এই শক্তিবর্দ্ধক ওষুধ যে কোন শক্তি বাড়ানোর, এতদিনের অভিজ্ঞতায় আমি বেশ বুঝতে পারি। বললাম, 'বাসায় পৌঁছে মনে ক'রো, লিখে দেব এখন!'
   শিবানন্দ খানিকটা নিস্পৃহ গলায় বলল, 'জানেন ডাক্তার সাব, আমার পরিবারের এই খিদেটা বড্ড বেশী ছিল। বছর দশেক আগে আমার তাকতটাও কম ছিল না। মূলত সেই জোরেই তো ওকে বশ করি!'
   কথার অর্থ ঠিক পরিষ্কার হলো না, তবু এই নিয়ে প্রশ্ন করতে রুচিতেও বাধলো। শিবানন্দ ঠিক আমার প্রশ্নের তোয়াক্কা করছে বলে মনেও হলো না। কিছুটা স্বগোতক্তির মত বললো, 'সে এক দিন ছিল ডাক্তার সাব! রক্তেরও জোর ছিল, চাহিদারও! মালতী, মানে আমার পরিবারের আগের পক্ষের নাকি তেমন একটা তাকত ছিল না। মান্যগণ্য পরিবার, শিক্ষিত মানুষ। সেই দুঃখে না কে জানে, বরটা একদিন বিবাগী হয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গেল। আমিও মওকা পেয়ে গেলাম মালতীকে নিয়ে ভেসে গেলাম সমুদ্দুরে। কী বলব ডাক্তার সাব, মালতী নিজেও একটা সমুদ্দুর! তল পাইনি তার কোনওদিন। সময়ে মেয়েটা হল, জানিনা কার - বোধহয় আগের পক্ষেরই হবে! এমন সুন্দর ফর্সা মুখ তো আর আমার থেকে হবে না! কয়েক বছর বাদে ছেলেও হলো। ঝড় যখন থিতোল, বুঝলাম, মালতী তার আগের পক্ষের বরটাকে বেশ ভালোবাসে!
   কিছুটা কথার সঙ্গ দেবো বলেই বললাম, 'তুমি বুঝলে কী করে? মালতি তোমায় বলেছে?' 
-সব কথা কি বলতে হয় ডাক্তার সাব। আমি বুঝি।!
-তুমিও কি সেইজন্য বাড়ি ছেড়ে বিবাগী? 
-না; ঠিক তা নয়! তবে সঠিকটা যে কী, তাও জানিনা। জানেন ডাক্তার সাব, ওর বরটা বছরে এক-দুবার আমাদের বাড়িতে আসতো! আমি আড়ালে আবডালে থেকেও দেখেছি। আমার অনুপস্থিতিতে মালতীর সাথে সে বিশেষ কিছু কথা বলত না, ঝগড়াঝাঁটি, মান-অভিমান তো দূরঅস্ত! খেতে দিলে খেত, মেয়েটাকেও যে কাছে টানতো এমন নয়!  কিন্তু মালতী দেখতাম ওকে ফ‍্যালফ‍্যাল করে চেয়ে দেখতো! 
-সে কী এখনও যায় তোমার বাড়ী?
-না, না। 
-কেন? 
-তা তো জানি না ডাক্তার সাব।;
-তাও ধরো কতদিন? 
-যবে থেকে এসে আমি তার সাথে থাকতে শুরু করেছি। 

বোমা পড়লে বুঝি কম চমকাতাম। ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। বললাম, 'বুঝলাম না ঠিক!' 
-আপনি আমাদের আশ্রমের যতীন মহারাজকে চেনেন? 
-হ্যাঁ। 
-তিনি মালতীর আগের বর। 
-তা তুমি এখানে এসে জুটলে কী করে? 
শিবানন্দ বলল, 'চলুন ডাক্তার সাব, আজ অনেক সন্ধে হয়ে গেছে। যদি কখনও সত্যি বুঝি, কেন এসে জুটলাম, আপনাকে নিশ্চয়ই জানাবো। আজ চলুন।
   পৃথিবীতে যে কত কিছু ঘটে! কতটুকু আমরা ব্যাখ্যা পাই, কতটুকু ব্যাখ্যার অতীত, আন্দাজ করা বড় শক্ত। মানুষের মন দেহের মধ্যে থেকেও দেহাতীত হয়ে যায় কীভাবে, বুঝতে বুঝতেই জীবনটা কেটে যাবে বোধহয়!
                 (২)
   পৃথিবীতে কারোর জন্যই কিছু আটকে থাকে না। কথাটি বহুশ্রুত, তবু বাস্তব জীবনে বিষয়টা বহুবার প্রমাণিত হয়। এতগুলো বছর আমাকে ছাড়া যার নাকি এক মুহূর্ত কাটতো না - সে কত নির্দ্বিধায় তার এখনকার লিভ ইন পার্টনারকে নিয়ে আলমোড়া বেড়াতে চলে এসেছে! এই মোবাইল ফেসবুকের যুগে আমি যে আলমোড়ায় থাকি এই তথ্য কি আলোর কাছে অজানা? আমি নির্বাসন নিয়েছি ঠিকই, কিন্তু আত্মগোপন তো করিনি! নাকি বিষয়টা থোড়াই কেয়ার! দেখলে দেখবে! জ্বললে জ্বলবে! তাতে তার কী! আলমোড়ায় একটা অশ্বক্ষুরাকৃতি খাঁজ আছে, সীমতাল নাম জায়গাটার। বেশ দর্শনীয় স্থান। বোধহয় বেড়াতে বেড়াতে সেখানেই এসেছিল। আমাকে দেখেছে কিনা বুঝলাম না নড়াচড়ায়। অথচ ওর ভাবভঙ্গী সবই তো এককালে মুখস্থ ছিল আমার! যাক গে যাক্! অহেতুকে হেতু ভাবলে কার্যক্ষেত্রে সমস্যাই বাড়ে। শিবানন্দ আজ আসেনি। খবর পাঠিয়েছে ফেরার পথে আশ্রম ঘুরে যেতে। যতীন মহারাজের শরীরটা নাকি কদিন থেকে ভালো নেই। 
   পরীক্ষা টরীক্ষা করে বিষয়টা ভালো ঠেকলো না। বড় একটা লাম্পের মত কিছু ঠেকলো হাতে। সদরে গিয়ে পেট সিটি, আলট্রাসোনোগ্রাফি করা দরকার। যতীন মহারাজ শরীর নিয়ে আদৌ চিন্তা করেন না। বললেন, 'দরকার কী ডাক্তার সাহেব, মুক্তি যদি আসে অকারণ ওষুধ পথ্য দিয়ে তার পথ আগলাবো কেন?'
-রোগব্যাধি বুঝি মুক্তির পথ? ওরা সাধনার পথে বাধা তো! 
-ওটার হাত ধরেই তো মুক্তি আসে ডাক্তার সাহেব। আমাদের শ্রীরামকৃষ্ণ কতদিন বেঁচে ছিলেন? মাত্র তেপান্ন বছর। স্বামী বিবেকানন্দ? মাত্র ঊনচল্লিশ বছর... 
বাধা দিয়ে বললাম, 'আমার কাজ তো চিকিৎসা করা মহারাজ। আমার লড়াইটা রোগ ব্যাধির সাথে - কখনও ওরা জেতে, কখনও আমি... তবু লড়াটা আমার কর্তব্য। আমি থাকতে আপনাকে অবহেলা করে তো রোগটা বাড়াতে দিতে পারি না। শিবানন্দ বলল, 'আপনি চিন্তা করবেন না ডাক্তার সাব, কী করতে হবে লিখে দিন, আমি কালই সদরে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেব।
   আমাকে একটু এগিয়ে দিতে এসে শিবানন্দ প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, 'ডাক্তার সাব ক‍্যান্সার ট‍্যান্সার নয় তো?' 
-পরীক্ষা না করে কী ভাবে বলি বলো? 
-ওর সব যেন না হয় ডাক্তার সাব! উনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। ঈশ্বর করুন, আমার আয়ু যেন ওঁর গায়ে লাগে।
   আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম, 'চিন্তা করো না শিবানন্দ; ঈশ্বরের অভিপ্রায় কি বোঝা যায়? তুমি বরং ঈশ্বরকে ডাকো, তিনি সব ভালোর মালিক।' 
   শিবানন্দ কেঁদে ফেললো; এই সন্ধ্যার আধো অন্ধকারে ওর কান্নার শব্দ মনটাকে বড় ব্যাকুল করে তুললো। আমি আস্তে আস্তে বাসার দিকে ফিরলাম। আমার বাবা প্রস্টেটের ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন, মা ফুসফুসের। সারা শরীরে ছড়িয়ে গিয়েছিল এই মারন রোগ। হাসপাতাল থেকে মা গ্রামের বাড়িতেই ফিরে যেতে চাইতেন। শ্বশুরের ভিটে! মেয়েদের অদ্ভুত মানসিক অ্যাডজাস্টমেন্ট! নাকি সংস্কার! শ্বশুরের সাথে মায়ের আদৌ কোন সৌহার্দ্যের সম্পর্ক ছিল কিনা মনে পড়ে না। আমার ঠাকুরদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ মানুষ ছিলেন। বাড়ীর অন্দরমহলে তাঁর নিষেধাজ্ঞাটাই খাটতো অন্য কোনও স্নেহের তরঙ্গ আসতো বলে তো মনে হতো না। বাবাও কতকটা ওঁর ধাতই পেয়েছিলেন। দাম্পত্য নিশ্চযই রক্ষা হতো, তবে বাবার সাথে মায়ের আদৌ কোনও মিল ছিল না। তবু মা জীবনের শেষ কটা দিন গ্রামের বাড়ীর চৌহদ্দিতে ফিরে মরতে চেয়েছিলেন। হয়তো চেনা গাছপালা, চেনা আসবাব, নিজের হাতে গড়ে সাজিয়ে তোলা বাড়ির প্রতিটি আনাচ-কানাচ তাঁর সাথে শেষ দেখা করার প্রতীক্ষায় ছিল। তবু শহরের ব্যস্ততম ডাক্তার, আমি শেষ সময়টুকু মায়ের সঠিক চিকিৎসা এবং সাহচর্যের অভাবের দোহাই দিয়ে তার শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ করতে পারিনি। মা হাসপাতালেই মারা গিয়েছিলেন, শুধু তাঁর দাহকার্য গ্রামের পারিবারিক শ্মশানেই হয়েছিল। নিজের ভিটেয় মরার মধ্যেও কি কোন সুখবোধ কাজ করে? অধিকাংশ মানুষ, অবশ্য যাদের মধ্যে এ ধরনের বোধ কাজ করে, তারা শেষ জীবনে নিজের ভিটে ফিরতে চায় কি ওই টানে? আমার ভাবনার মাঝে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের লাল মাটি ছেয়ে রইল সারাক্ষণ।
বাড়ি ফিরে চা-এর জল চাপিয়ে চেয়ারে বসতে যাব, দরজার টোকায় চমকে উঠলাম। এসময়ে এখানে কেউ আমায় ডাকে না। শিবানন্দ নাকি? দরজা খুলে দেখলাম, আলো। চমকে উঠে বললাম, তুমি? এখানে? 
-ভেতরে তো আসতে দাও আগে।
-এসো এসো। একা এসেছো?
-প্রাক্তনের সাথে দেখা করতে গেলে কি বর্তমান কে বয়ে আনা যায়? 
-তুমি কি এখন অতীতে আছো?
-হ্যাঁ। এই মুহূর্তে! 
-চা খাও। বসিয়েছি। 
-তুমি চা বানাতে পারো এখন?
-মানুষ সবই পারে আলো; না পারাটা শুধু পারতে না চাওয়া! মনে মনে বললাম, 'এখন যেমন তুমি আমাকে ছাড়াই থাকতে পারো!' 
   চায়ের জল বাড়িয়ে দিলাম এক কাপ। 'তুমি আমার ঠিকানা পেলে কোথায়?' 
-তুমি আলমোড়ায় থাকো জানতাম। এসে খোঁজখবর করলাম। 
-তুমি কি এজন্যই আলমোড়া এসেছ? 
   কথাটা বলেই একটু সংকোচ বোধ হল এবং সেটাকে সত্যি প্রমাণ করেই আলো বলল, 'না। হরিদ্বার, নৈনিতাল বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করেছিল প্রশান্ত। আলমোড়া তো পথেই পড়ে।'
-তাহলে? 
-তাহলে কি? বিকেলে তোমাকে দেখলাম এক ঝলক। ভাবলাম দেখা যখন হলই, কথা বলেই যাই।
-তুমি কেমন আছো আলো?
-ভালো আছি বলেই তো মনে হয়।
-তোমার এখনকার ঘরে দমবন্ধ লাগে? 
-না। প্রশান্ত সারাক্ষণ ভরে রাখে!
-তুমি সুখী হয়েছে তো আলো?
-হুঁ। একটু চুপ করে থেকে আবার বলল, 'খারাপ লাগলো?' 
  অবাক হলাম। খারাপ লাগবে কেন? আমি তো আলোকে ভালোবাসি। তার সুখে থাকা কি আমি চাই না? নাকি চাই ঠিকই, তবু মনের কোনও এক কোণে ও একটু খারাপ থাকলে খুশি হই বেশি! সুসংস্কৃত প্রতিহিংসার স্পৃহা! সত্যিই কি আমার কষ্ট হলো? বললাম, 'যেতে তো তুমি চাওনি আলো। আমি একপ্রকার তোমাকে জোর করেছি। সুতরাং তোমার খারাপ থাকাটাও কিন্তু আমারই ব্যর্থতা! আমি সব সময় চেয়েছি, তুমি সুখী হও!'
-তুমি আলমোড়া চলে এলে কেন তমাল? 
-সারাদিন এত চাপ, এত ব্যস্ততা, এত টাকা আর ভালো লাগছিল না। 
-তুমি তো তেমনটাই চেয়েছিলে।
-চাওয়ায় ভুল ছিল। পৃথিবীর বহু কিছু আছে আলো, তাতে অতিপৃক্ত না হলে ঠিক বোঝা যায় না, তার বোঝাটা কত! 
-এই বোধ যদি আগে হত! 
-তাতে কী! তোমার তো লোকসান হয়নি! হয়তো তুমি সঙ্গে থাকলে আমার উপলব্ধিটাই হতো না!
-আমার তো কোন চাহিদা ছিল না তমাল! আমি তো শুধু তোমার সঙ্গটুকুই চেয়েছিলাম। আমি তোমার মনে উপলব্ধির অন্তরায় হয়ে থাকবো আজীবন, এটা আমার জন্য খুব বিড়ম্বনার। 
-এই কথাটা ধরো না আলো। আসলে এটা অহেতু। 
-বুঝলাম না। 
-এটা দর্শনের কথা আলো। হেতু মানে কী? কারণ। যেটা কারণের মত দেখতে কিন্তু কারণ নয়, তাকে অহেতু বলে। আমরা সারাজীবন অহেতুকেই হেতু ভাবি আলো। সমস্যাটা ওখানেই হয়।
-তুমি কি এখানেই বাকি জীবন থেকে যাবে তমাল?

উত্তর দিলাম না কিছু। চা দুকাপ ছেঁকে এনে আলোর সামনে রাখলাম। নানান ধরনের কুকিজ বিস্কুট পছন্দ ছিল তার। এখন আমার ঘরে সেসব কিছুই নেই। কিছুটা কুন্ঠিত হয়ে বললাম, বাড়িতে শুধু থিন অ্যারারুট বিস্কুটই আছে, তুমি তো পছন্দ করতে না... 
-বিস্কিট ছাড়া চা অভ্যেস করে নিয়েছি তমাল। 
-কেন? 
-ওই যে বললে, অহেতু! 

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। কিছু না বললে খারাপ দেখায় এই ভেবে বললাম, 'তখন জিজ্ঞেস করছিলে, উত্তরটা দেওয়া হয়নি। ভাবছি দেশের বাড়ি ফিরে যাব।'
-মানে বাঁকুড়ায়? 
-হ্যাঁ। 
-কবে ফিরবে? 
-ভাবিনি। 
-ফিরে যাওয়ার ভাবনাটাও বুঝি এখুনি এল। 

মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। আমাকে অনুমান করে নেওয়ার অভ্যেসটা তবে এখনো নষ্ট হয়নি আলোর! ও বলল, 'ফিরে গিয়ে কি করবে ওখানে? ডাক্তারি?'
-নাঃ। ডাক্তারি আর ভালো লাগছে না। 
-ওমা! কেন? 
-আলো আমার আজকাল আর কোনও লড়াই ভালো লাগেনা, সেটা সাবজেক্টিভ হোক অথবা অবজেক্টিভ! 
-বিষয়টা তো খেলা! তুমি খেলা না ভেবে লড়াই বলে ভাবো কেন? 
-ওটাই তো আমার সমস্যা আলো! সারাজীবন জিততে চেয়েছি। পড়াশোনায়, পরীক্ষায়, জীবনে! আল্টিমেট দেখেছি - এই জেতার মুহূর্তগুলোয় নিজের মধ্যে কেবল দুন্দুভি বেজেছে,  জগৎসংসারের কোনও কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি। আমি হারি অথবা জিতি -- আমাদের চারপাশের কিছু এসে যায় না। হয়তো এই চারপাশটা নিজের নয় বলেই। 
-চারপাশ বলতে কি তুমি মানুষজনের কথা বলছো তমাল?
-না আমি স্থাবর বিষয়গুলোর কথা বলছি। জানো আলো, এখানে আমার এক পরিচিত লোক আছে, শিবানন্দ নাম, বলবো তার কথা একদিন তোমাকে, যদি সুযোগ হয়। সে একদিন বলেছিল বটে, নিজের শেকড়টা যেখানে গাঁথে, সুখের শেকড়টাও সেখানেই বাড়ে! কথাটা খুব একটা আমল দিইনি, হয়তো এখনও দিই না, তবে মনে হয় একবার বাজিয়ে দেখি। -আমায় সাথে নেবে তোমার? 
-তা কী করে হয় আলো? তোমার তো নতুন পিছুটান আছে। 
-না তমাল! আমি কোনও বন্ধনে জড়িয়ে নেই। আমি স্বাধীন; নিজের মর্জির মালিক। 
-তবু! 
-এইতো তোমার সমস্যা! সারাজীবন শুধু উচিত অনুচিতের বিবেক দিয়ে অন্যের কর্তব্য-কর্ম তুমি নির্ধারণ করেছ তামাল! তুমি ঠিক করে দিয়েছো আমি তোমার সাথে থাকব, নাকি অন্যের সাথে!
-কিন্তু প্রশান্তের কী দোষ! ও তো তোমার সব ইচ্ছে অনিচ্ছের মর্যাদা দিয়েছে, তোমার খুশি হওয়ার পথকে মসৃণ করেছে, ওকে কী বলবে? 
-বলাবলির কী আছে তমাল! আমার যখন যেখানে যার সাথে থাকার ইচ্ছে হবে, থাকবো। 
-না আলো। বিষয়টা বড় বিড়ম্বনার। 
-তুমি বুঝি চাও না, আমি তোমার সাথে যাই! 
-নিশ্চই চাই, বেলা তো ফুরিয়ে এল! নিজের পূর্বপুরুষের ভিটেয় প্রতিদিন আমি তোমার সাথে ভোর চাই, তোমার সাথে রাত... তবু ...
-বেশ তো, কবে যাবে জানিও।

অনেকক্ষণ চুপ করে বসে বললাম, 'চা তো খেলে না। ঠান্ডা হয়ে যাবে তো!'
-থাক আরেকটু ঠান্ডা হোক।

চারপাশটা বড় নিঃস্তব্ধ। ঘরের দেয়াল ঘড়িটা কেবল টিক্ টিক্ শব্দে জানিয়ে যাচ্ছে, সময় বয়েই চলেছে। আলোকে দেখে খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে। সহবাসটা আসলে অভ‍্যেস। সুযোগ থাকলেই ইচ্ছেটা মাথাচাড়া দেয়। আলোর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, 'একটু খানি আমার বুকে আসবে, আলো?'
আলো মুখ নীচু করে চুপ করে বসে রইল। মনে হল, অসম্মতি নেই। ওকে দুহাত বাড়িয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরলাম, আগের মতো, হয়তো বা অনভ‍্যাসে আরো জোরে। পাগলের মত ওর চুলের মধ্যে মুখ গুঁজে খুঁজতে লাগলাম ওর চুলের গন্ধ। ওর জামা কাপড় থেকে আগে সুন্দর একটা  ডিটারজেন্টের গন্ধ বেরোত...কাঁধে বুকে মুখ দিয়ে শুনতে লাগলাম - সব কিছু। স-ব বদলে গেছে। মাথার শ্যাম্পু, কাপড়ের ডিটারজেন্ট... কেউ আর পুরনো ব্র্যাণ্ডের নয়, বা ব্র্যাণ্ড হয়তো একই - গন্ধগুলো বদলে গেছে। এক ঝটকায় ওকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে বললাম, 'দাঁড়াও আলো - তোমায় চিনতে পারছি না যে একদম!' দৌড়ে গেলাম পাশের ঘরে। আলোর জন্য একটা বিশেষ পারফিউম কিনে আনতাম ওর প্রতিটি জন্মদিনে;  শেষবারেরটা দেওয়া হয়নি। একটু পরে ফিরে এসে দেখলাম - ও নেই। তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলাম এঘর ওঘর - ও কোথাও নেই! দরজা ছিটকিনি খোলা। ফিরে কী বন্ধ করেছিলাম? মনে পড়ে না - নাকি স্বপ্ন দেখলাম? সজোরে গায়ে চিমটি কেটে বুঝলাম, স্বপ্ন নয়! দিব্যি ওর জন্য এক কাপ চা এখনও টেবিলে রাখা আছে! অবিশ্বাস্য! এ কী ভুতুড়ে কাণ্ড! আলো কি ভূত হয়ে গেল? জীবন্ত মানুষ কি ভূত হতে পারে? আর তাছাড়া আমি ডাক্তার - আমি কি সব বিশ্বাস করতে পারি? আলো সত্যি সত্যি এসেছিল; আমি জানি। 
সন্ধ্যেবেলায় বাড়ির বাইরের দালানটায় একটা সাবেক কালের আরামকেদারায় আয়েশ করে সামনের শিরীষ গাছটাকে দেখছিলাম। আবছা অন্ধকারে বেশ রহস্যময় হয়ে আছে। অনেক পাখি রাতে এই গাছটায় এসে বসে, বিশ্রাম নেয় রাতভর। আমার বাঁদিকে বেশ একটা বড় জবা গাছ আর বাতাবী ফুলের গাছ। মায়ের লাগানো। সন্ধেতারাটা একটু আগেই শিরীষের ফাঁক দিয়ে লুকোচুরি খেলছিল আমার সাথে। আমার অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে বোধহয় এতক্ষণে উঠে গেছে বাড়ির ছাদে। অন্ধকারেরা কেমন ঝুপঝুপ করে এখানে-ওখানে এসে বসে পড়ছে! আজ সকাল থেকেই মাথাটা বড্ড ধরে আছে। দু-একবার বমিও হল। উঠে ওষুধ খেতেও ইচ্ছে করছে না। কেউ যদি ভেজা হাত দিয়ে কপালে একটু ভুলিয়ে দিত, আরাম লাগতো বোধহয়। 
গতকাল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে বড় একজন নিউরোলজিস্ট কনসাল্ট করে এলাম। আমার এক বন্ধু সিনিয়র। রিপোর্ট এবং আমার সব কথা শুনে বললেন, 'ডক্টর মিত্র, আপনাকে আর কী লুকোব! আপনার ক্যান্সার সেলগুলো মেটাস্টিসিস হয়ে মাথার এমন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে, আপনার মাঝে মাঝে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে, ডিলিশনও হচ্ছে। এই ফেজটা কেটে গেলে আপনি বুঝি উঠতে পারছেন না - আদতে ওটা বাস্তব ছিল না কি অলীক! মিথ্যেগুলো সত্যি হয়ে আসছে আপনার সামনে। 
   সত্যিই ঈশ্বর বড় দয়াময়। ভাগ্যিস ডিলিউশন হয়! একটু পরেই আলো আসবে। আমাকে খাওয়াবে, ওষুধ দেবে - আমরা সহবাস করবো কিছুক্ষণ। তারপর ও চলে গেলে উন্মুক্ত প্রান্তরে এসে দাঁড়াবো। সব গাছ তলায় তখন সাবেক কালের হাতল ওয়ালা বেঞ্চ পাতা হবে, আমার ঠাকুরদা গ্রামীণ বিচার সভায় এসে বসবেন। বাবা-কাকারা একধারে -  মা-কাকিমারা গাছের আড়ালে। তাঁরা সবাই যে যার কাজের ফাঁকে আমাকে আমাকে উঁকি মেরে দেখবেন। মা আমাকে কাছে ডাকলেই বাবা ধমকে উঠবেন, 'কী কর দুর্গা, তোমার সবটাতেই বড় অধৈর্য্য! দেখছো না, খোকা এখন মাছ ধরতে গেছে বিলের ধারে... ছিপ নিয়ে গেছে কোলা ব্যাঙ, মাছ নিয়ে গেছে চিলে... আলো, ও আলো, বোন আমার, আড়াল হয়ে আমার মাথায় স্পর্শ হয়ে ঝরো...

Post a Comment

0 Comments