জ্বলদর্চি

ভাঙা আয়নার মন /পর্ব ৪৩ /মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

ভাঙা আয়নার মন 
পর্ব  ৪৩
 মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া 

 || টিপ টিপ বৃষ্টির দুপুর ||

 সেকেন্ড এম বি বি এস পরীক্ষা শুরুর মুখে মস্ত এক ফোঁড়া মৌচাকের মতো ঠেলে উঠল তার  কাঁধে কিন্তু  পরীক্ষার ভয় বেতালের মড়ার মতো   এমন ঝুলছিল  কাঁধেই যে  ব্যথা ট্যাথা সে মালুম পাচ্ছে না।বই থেকে চোখ তোলারও সময় নেই  রুমমেট জয়ন্তীদিই আ্যন্টিবায়োটিক, ব্যথার ওষুধ গিলিয়ে,তুলো ভিজিয়ে হট কম্প্রেস দেয়। 
          চারতলা থেকে খাবার এনে দিয়েছে বালি জেঠা। পরীক্ষার কটা দিন মেস থেকে ভাত এনে ঘরে দিয়ে যায় জেঠা।জেঠার নাম কেন বালি কে জানে।মেস হরি কাকার কিন্তু রান্না করে জেঠা। বাকি সময় জেঠা ফাইফরমাশ খাটে সবার।দোকান থেকে জিনিস এনে দেয়। আগের রাতে ঘরে ঘরে এসে কার কী আনতে হবে লিখে টাকা নিয়ে যায়। পরীক্ষার সময় দুধ,পাউরুটি কিনতে যাওয়ারও সময় নেই  বলে জেঠাই ভরসা। অমায়িক স্বভাবের কারণে হস্টেলে সবাই ভালবাসে জেঠাকে। এর তার কাজ করে যে টাকা পায় সে কটা টাকা বালি জেঠা জমিয়ে রাখে। পোস্টাপিসে নাতনির নামে আর ডি করেছি দিদি। হাতে সময় থাকলে জেঠার সঙ্গে সে গল্প করার সময় তার কেমন করিম ভাই,বিশুদাদের কথা মনে আসে।  ছোট খাটো স্বপ্ন দেখা একই রকম মানুষ যেন সব।
          গেল মাসে বাড়ি গেলে করিম ভাই বলল  মোশারি একখান কিনিছ ছোড়দি  পঁয়তাল্লিশ  টাকা নেছ ষ।হাওয়া খেলে কী!উরিব্বাপরে! লাইলনের মোশারির খোলে শুতি আরাম সেইরম।
       মোশার আর উপায় নেই বলো ছোড়দি।ভাইর মোশারির কতা জানতি এ হামচার কারুর তো বাকি নেই।মোশারাও পাড়ায় গে বলি বেড়াচ্ছে! বিশুদার কথায় থামবি হারামজাদা বলে দাবড়ে উঠে নিজেও করিম ভাই খিক খিক হাসে।
           এত ভাত কেন জেঠা? পরীক্ষের সময় পেট ভরে ভাত খাবা । নাইলে অত বড় বড় বই পড়বা কী করে? জেঠার নরম গলা শুনে হেসে ঢকাঢক মাথা নেড়ে সে আলু আর তার ভাত ঢেকে রাখলো।ঠাণ্ডা হয়ে গেলে মেসের ভাত গিলতে পারবি না কিন্তু বলে বলে জয়ন্তীদিও  ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক ক্ষণ।দুদিকে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে ঝিনি আর আলু  পড়ছে। বারোটা নাগাদ লাফিয়ে উঠে আলু হিটার জ্বেলে ফটাফট দুটো ডিম ভেজে ফেলল।
      কড়কড়ে  ঠাণ্ডা ভাত শুকনো কটকটা আলুভাজা  ডাল আর ঘ্যাঁট দিয়ে ভিজিয়ে নরম করে ওমলেট মেখে খেল দুজনে। ওইটুকু খেলি যে? আলু ধমকে উঠল। ফুয়েল ফুয়েল।দুত্তোর ফুয়েল।গলার ওধারে আর নামছে না।বিনে সব ঢেলে থালা ধুয়ে আবার বসে গেল তারা।   

🍂
ad

           ঘন্টা দুই পরে দরজা ঠেলে কলি এসে বলল, টিকটিকি হবি ঝিনি? মানে? ভেবে দেখলাম কিভাবে রক ফেস দিয়ে লোক ওঠানামা করে ?ওই সামিট করতে যায় যারা ,মাউন্টেয়ারিং-এর ট্রেনিং করে সবই আসলে টিকটিকির মোড অফ আ্যকশান!
 রাত দুটোর সময় তোর মাথায় টিকটিকি উঠল?  
        আরে সেদিন ক্যান্টিনের দেওয়ালে সুহাস রক ক্লাইম্বিং বোঝাচ্ছিল।শুশুনিয়ায় নাকি কবে কোর্স করেছে। মন দিয়ে কালটিভেট করছি গোটা ব্যাপারটা দোতলা থেকে অর্ক হতচ্ছাড়া তাক করে এক জাগ জল ঢেলে দিলো আর ভিজে গোবর হয়ে বেচারা হস্টেলে চলে গেল। ঘটনা সেদিন থেকেই মাথায় ঘুরছে। ভেবে দ্যাখ খাড়া পাহাড়ে যদি ওঠাই যায় তালে দেওয়ালেও কি সম্ভব না?আমার ধারণা দেওয়াল বেয়ে ওঠা কোনো সমস্যা না।একটু চেষ্টা করলেই হয়ে যাবে।
         পুরো আউলে গেছে রে। আলু বলল, এইবার কামড়াবে। হ্যাঁ রে তোরা কি মানুষ?পরশু প্যাথলজি আর রাত দুটোর সময় গুলতানি দিচ্ছিস।প্যাথোর বি -ও তো জানিস না। সুপ্তি টয়লেট যেতে যেতে তাদের দরজা খোলা দেখে ঢুকে পড়ল।বেড়ালের তালব্য শ  না প্যাথোর বি? আর একটা উইকেট পড়তে যাচ্ছে বুঝলি আলু মাথা ঝাঁকিয়ে বলল ;সত্যিই পড়তে পড়তে আমরা সবাই উন্মাদ পাগল না হয়ে যাই। 
              নষ্টের গোড়া ওই বিদ্যে সাগর বাবু! কোন পাকা ধানে ওনার মই দিয়েছি আমরা বল দিকিনি!হাত নেড়ে সুপ্তি বলল,দিব্যি আমরা ঘুঁটে দিয়ে, ডাঁটা চচ্চড়ি চিবিয়ে ভাতঘুম দিয়ে উঠে পান খেতে খেতে পাড়া বেড়াতাম তা না,মেয়েদের নেকাপড়া শেকাতে ভদ্রলোক উঠে পড়ে লাগলেন! এট্টু চা হবে রে আলু? তোর সেই বৈজ্ঞানিক চা? আলু সসপ্যানে জল বসিয়ে দিল। ছাঁকনি নেই বলে আলু জলে চা আর চিনি ছেড়ে খানিক ঢেকে রাখে তারপর ওপর থেকে গেলাসে চা ঢেলে দেয়।দুচার কুচি চা পাতা ভেসে থাকে আছাঁকা চায়ে এবং আলুর মতে সেটাই বিজ্ঞানসম্মত।
         চা খাবিতো গেলাস নিয়ায় যার যার।বলিস কী?গেলাস ধোওয়ার ভয়ে আমি এইমাত্তর হরলিক্স, চিনি আর জল খেয়ে একটু লাফিয়ে নিলাম; আবার গেলাস আনতে বলছিস?লাফিয়ে নিয়ে পেটের মধ্যে হরলিক্স গুলছিস ?ওই লাফাতে গিয়েই তো টিকটিকি হবার আইডিয়াটা আরো ঘোরালো হয়ে এল। তুই তাইলে সসপ্যান থেকেই খা। 
            কেন যে তোরা একস্ট্রা কাপ টাপ রাখিস না রুমে! গজগজ করল কলি।চায়ের কি মান সম্মান নেই?একে ছাঁকনি ছাড়া তার ওপর সসপ্যান থেকে সরাসরি?তাছাড়া পেটে এখনো হরলিক্স তৈরি হচ্ছে। আশ্চর্য!চা দেবে কিন্তু কাপ নেই। গেলাসটা তালে  ধুয়েই আনি গে যাই।চা খেয়ে আবার সবাই মুখ গুঁজে দিল বইয়ে।
           মুশকিল হলো  পরীক্ষার প্রথম দিন।দ্যাখ না দ্যাখ সেই সকালেই তার বিপুল আকৃতির ফোঁড়া ফেটে গ্যালগ্যাল করে পুঁজ বেরোতে লাগলো। জয়ন্তীদি যতটা পারে সে সব বার করে গজ দিয়ে ঢেকে কোনোরকমে গোটা তিনেক ব্যান্ডেড লাগিয়ে বলল  দিদির জ্বর বলে আমাকে ওর কাছে যেতেই হচ্ছে; নাইলে সঙ্গে যেতাম। হাত দিবি না,সন্ধেবেলা ফিরে ড্রেসিং করবো আমি। সে অবশ্য ফিরেও দেখলো না।কিন্তু আর জি কর যাবে বলে তাদের ইয়ারের  চার পাঁচ জন মিলে  যখন একখানা হলুদ ট্যাক্সি দাঁড় করিয়েছে  হন্তদন্ত ফিফথ ইয়ারের মিতাদি এসে তাদের সঙ্গে উঠে পড়ল। জয়ন্তীর মুখে শুনলাম স্রোতস্বিনী অতবড় ফোঁড়া নিয়ে যাচ্ছে কী হয় না হয় আমি বরং তোদের সঙ্গে যাই।
          কুইনি মিতা ডিকস্টাকে কেউ ঘাঁটায় না। চারতলায় ডাইনিং হলের পাশে সিঙ্গল সিটেড রুমে একলা থাকে। হলের  টিভিটা যে যখন খায় খুলেই রেখে আসে বলে পরীক্ষার সময় সে তেড়ে তেড়ে আসে সাউন্ড কমাতে বা টিভি বন্ধ করাতে।মাস দুই আগে কে যেন রাত্তিরে এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে গেছে টিভিতে। সেই ইস্তক টিভিরও গঙ্গাপ্রাপ্তি হয়েছে। মিতাদিরই সবচাইতে অসুবিধে হতো বলে সবার ধারণা জল এসেছে মিতাদির বালতি থেকেই। কিন্তু না না কারণে কেউ তাকে ঘাঁটায় না। মিতাদি সেধে তাদের সঙ্গে যেতে চাইলেও যেমন তারা কেউ কোনো কথা বলল না।
        পরীক্ষার টেনশন,ফাটা ফোঁড়া সব নিয়ে জেরবার সে হলে ঢোকার খানিক আগে খেয়াল করল আ্যডমিট কার্ডটাই আনা হয়নি। ঘেমে উঠলো সে।অগুন্তি সর্ষে ফুলের মধ্যে ভেসে যাওয়া খড়কুটোর মতো সে মিতাদির হাত চেপে ধরলো।
        কী হবে ও মিতা দি? কিচ্ছু হবে না। আমি কথা বলছি।তুই পরীক্ষায় বসে যাবি। কোথায় রেখেছিস বল,আমি হস্টেলে গিয়ে তোর রুমের থেকে এনে দিচ্ছি কার্ড।কার্ডটা আছে আমার ট্রাংকে সব চে ওপরের ছবির দেশে কবিতার দেশে বইয়ের ভেতর না  না সাগর থেকে ফেরা বইটার ভেতর মানে তাইই মনে পড়ছে; সে  নিরুপায়  মাথা ঝাঁকায়। আর ট্রাঙ্কের চাবি আমার বালিশের তলায় আর এই যে আমাদের রুমের চাবি।মিতাদি অনেক বলে কয়ে তাকে হলে বসিয়ে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল। ঘন্টাদেড়েক পর আ্যডমিট কার্ড তার হাতে এসেও গেল।
         এতটা কেয়ারলেস তুই ,তোর জন্য  সারা মাস উপোস দিতে হবে এইবার ঝিনি।যথাসর্বস্ব তো গেছেই আজ।মিতাদির কাছ থেকে ঘরের চাবি নিয়ে তালা খুলতে খুলতে হিসহিস করে উঠলো আলু।মিতাদি ডায়াগনোসড ক্লেপটোম্যানিয়াক। কেউ তার সঙ্গে থাকতে চায় না এই কারণেই। ডাকসাইটে ঝগড়াটিয়া বলে কেউ তেমন মেশেও না তার সঙ্গে।অথচ আলু, জয়ন্তীদি আর তার মাস চালানোর টাকাপয়সা এমনকি ঝিনির খুলে রাখা সোনার দুলটাও যেমনকি তেমন পড়ে আছে দেখে আলু হতভম্বের মতো তার দিকে তাকিয়ে রইল।
       আ্যডমিট কার্ড তাড়াতাড়ি করে আনতে ট্যাক্সি করেই যাতায়াত করেছে বলে ঝিনি গেছিল মিতাদিকে টাকা দিতে।বাদ দে ওসব‌। এখন ভালো করে খেয়ে পড়গে যা। পরশু তো এফ এস এম। জয়ন্তী না ফিরলে বলবি। আমি ড্রেসিং করে দেব।মিতাদির ঘরে হালকা একটা গন্ধ পেলো ঝিনি।ছোট বেলায় পাঁচ নয়া পয়সা পেলে তারা দাদু বুড়োর দোকানে লেবু লজেন্স খেত। অবিকল সেই গন্ধ। গন্ধটা  মিতাদির জিনিসপাতি না  গা থেকে আসছে না বুঝতে পেরে  সে শুধু মৌদির হাতটা একটু ধরে থাকল।  টেনশনে সকালে তোর হাত ঘামছিল, কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে ফিকে হাসল মিতাদি।যা পড়তে যা।
          সেপ্টেম্বর মাস।হাওয়ায় পুজোর গন্ধ।পরীক্ষা শেষে বাড়ি গেছিল ঝিনি। পঁচিশ তারিখে ষষ্ঠী।
ছোড়দা এল পুজো বার্ষিকী আনন্দমেলা নিয়ে। দানিও শনিবার দেখে হাজির। আগের মতই আনন্দ মেলার মজার গল্প জোরে জোরে পড়ছে ছোড়দা আর তিনজন হিহি করে আসছে আগের মতই।
        বাদাম পেয়াজকুচো আর লংকা দিয়ে চিড়ে ভেজেছে মা। চা নিয়ে সাদাকালো টিভিখানা খুলতেই তারা শুনল আদবানি রথ নিয়ে রাম মন্দিরের প্রচারে নামছে গুজরাটের সোমনাথ থেকে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা পর্যন্ত।
প্রতিদিন এই রথ প্রায় ৩০০ কিলোমিটার যাবে এবং আদবানি ছটা করে জনসভায় ভাষণ দেবে।
       দাঙ্গা বাঁধে যদি? অবশ্যই বাঁধবে। ছোড়দামনির প্রশ্নের শুকনো উত্তর দিল তাদের বাবা। 
       স্লোগান দিতে গিয়ে আমি চিনতে শিখি নতুন মানুষজন/স্লোগান দিতে গিয়ে আমি বুঝতে পারি কে ভাই কে দুশমন/...স্লোগান দিতে গিয়ে আমি সবার সাথে আমার দাবি প্রকাশ্যে তুললাম....
  করসেবকদের নিয়ে রামমন্দিরের জন্য প্রচারে উত্তর ভারতের নানা শহরে দাঙ্গার প্রতিবাদে ধর্মতলায় নানা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জমায়েত ছিল সেদিন। খানিক আগেই  সবাই মিলে তারা যুদ্ধ শেষের যুদ্ধে খোলো ভীরু সাজ গাইছিল। 
স্ট্রিট কর্নারে  বক্তব্য রাখল নীলরতনের সৌরভদা। তারপরই খালি গলায় গাইছিল প্রেসিডেন্সির অজেয়দা।
         এ গানটা সে মহুলের মুখে শুনেছিল ।ওদের যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে প্রতুল মুখোপাধ্যায় এসে গেয়েছিলেন।মুনদিদের সঙ্গে কলেজ থেকে একসাথে বেরোলেও ভিড়ে তারা আলাদা হয়ে গেছিল। অবশ্য নীলদা,অলিদির মতো চেনামুখ ছিল অনেক তবু আজ সরাসরি জমায়েতে এসে একলাই যেন গানটার মুখোমুখি পড়ে গেল সে।.
         কী দৃপ্ত ভঙ্গিতে গাইছিল অজেয়দা। মোষ তাড়ানো সহজ নাকি মোষের শিংয়ে মৃত্যু বাঁধা মহুলের মুখে প্রথমে এই দু লাইন শুনেই চমকে গেছিল সে।আজ আবারো তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। সবাই গলা মেলাতে শুরু করল আর ভিড়ের মধ্যে এক ঝলক সে দেখতে পেল পলাশকে।
          জমায়েত শেষে যে যার মতো ছড়িয়ে পড়ার সময় একলাই বাস ধরতে জোর হাঁটা দিল সে।মেঘ করেছে।যে কোনো সময় ঢালবে।বাসস্টপের দিকে দৌড় লাগাবে ভাবতেই এইটুকু মেঘ দেখেই কাবু হয়ে পড়লেন মেমসাহেব ; চমকে দেখলো পলাশ হাসছে।
চল চল হাঁটা লাগাই। কোথায় যাব?আর টিপ টিপ বৃষ্টির বিকেলে  দুজন গানটার কথায় মশগুল হয়ে হাঁটতে শুরু করল। চমৎকার আর দৃপ্ত তো বুঝলাম কিন্তু মেমসাহেব এই গানের কথামত স্লোগানে সবার সাথে  গলা মেলাতে গেলে আপনার একলসেঁড়ে চলা যে ঘুচে যাবে। ভাবুন একবার জুটল যত  ঘরের খেয়ে মোষ তাড়ানো উল্টো স্বভাব/মোষ তাড়ানো সহজ নাকি/মোষের শিংয়ে মৃত্যু বাঁধা/তবুও কারা লাল নিশানের গানে/চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে শ্লোগান! শ্লোগান!
         আমি একলসেঁড়ে কে বলল তোকে? রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ল সে। আর তখন থেকে মেমসাহেব মেমসাহেব করছিস কেন রে? প্রথম প্রথম ওর'ম এট্টু বলতে হয়। কিসের প্রথম? হচ্ছে তো গান নিয়ে কথা। ক্ষ্যাপা মোষের পিঠ থেকে একটু নাম দেখি। নিজেদের কথাবার্তা বলি।শেষমেষ তারা কলেজ স্কোয়ারে পৌঁছোলো।
     শেডের নিচে দাঁড়ালো ওরা।জলের দিকে তাকিয়ে পলাশ বলল,বিশ্ব ভারতীর ফর্ম এনেছি। কিসের ফর্ম?কেমিস্ট্রি পড়তে চাই। ডাক্তারি পড়তে ভাল্লাগছে না। ঘটনা কী তোর? প্রথমে পত্রিকার নাম বদলে দিতে গেলি তারপর কলেজের চলতি ইউনিয়ন ছেড়ে এ বি এস এ তে এলি আর আজ বলছিস সেকেন্ড এম বি বি এস দিয়ে ডাক্তারি পড়া ছাড়বি? তোর তো দেখি পুরো মাথাই খারাপ। আমাদের গ্রামের ভীম পাগলের মত কিছুদিন পরেই মোটা একখানা বাঁশ আর তালমিছরির বোতলে খানিক সর্ষের তেল বগলে নিয়ে কম্বল পরে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটবি।  বাঁশ আর সর্ষের তেল কেন? ওটা একটা স্টেজ।ওর পরেই বেঁধে রাখতে হবে।
           আপাতত আমার মাথা নিয়ে না ভেবে তোর মাথাটা মোছ দেখি।ভালোই ভিজেছিস বলে পকেট থেকে বড় একটা রুমাল এগিয়ে দিলে ঝিনি মাথা মুছতে থাকে। বৃষ্টির টিপটিপ বন্ধ হয়েছে।হাঁটতে হাঁটতে  খিদে পেয়ে গেছে রে।চ'রোল খাই । পেট ভর্তি খিদে আর পকেটে কম পয়সা থাকলে রোলই তো ভরসা বলে রাস্তার ওপারে থেকে  দুখানা এগরোল নিয়ে এল পলাশ। এইবার পেট খোলসা করে বল দেখি ,রোলে কামড় দিয়ে ঝিনি জানতে চাইল এত অস্থির চিত্ত কেন তোর। কোন মতির ঠিক নেই। সমস্যা কী তোর?অল্প সমস্যা না,বেশী সমস্যা? আপাতত প্রবলেম আমার একটাই। কী সেটা?জানিস না তুই?

Post a Comment

0 Comments