জ্বলদর্চি

সকলি শুকোলো কুসুম প্রায় /পুলককান্তি কর

চিত্র- শুভম দাস 

সকলি শুকোলো কুসুম প্রায় 

পুলককান্তি কর


সিডি প্লেয়ারটায় হাল্কা ভলিউমে গান শুনতে শুনতে দেয়ালে টাঙ্গানো রবিঠাকুরের দিকে চেয়ে ঈষৎ ভ্রু কুঁচকে হাসল মৃদুলা। সত্যি সত্যি গোপন কথা গোপন না থেকে নীরব নয়নে ফুটে ওঠে? কে জানে। সত্যি যদি ফুটে উঠেও থাকে কোনও দিন, কেউ কি দেখলো? কেউ কি লক্ষ্য করলো, দিনে দিনে শব্দ থেমে যায়, থেমে যায় হৃদয়ের সব জলস্রোত? অলস সময় নিয়ে সামনের শিম মাচাটার উপর যে চড়ুইটা বসে বসে তিড়িং বিড়িং খেলছে বা ওই বেহায়ার মতো ঢ্যাঙা কদমগাছ বর্ষার ফুল ফোটাতে ফোটাতে কি ভেবেছে কোনওদিন দিনে দিনে কেমন করে শুকিয়ে গেল মাধবীলতা? জল ছিল, সার ছিল, বেয়ে বেয়ে উঠে যাওয়ার দালানও ছিল, শুধু কদম তলায় বাঁশি বাজানোর লোক ছিল না যে, খেয়াল করেনি কেউ! আজকাল বড় নীরস লাগে সব! 

   চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখতে না রাখতেই ব্রহ্মময়ী হাঁক পাড়লেন, বড় খুকু, ওষুধটা একটু দিয়ে যা তো রে মা! মৃদুলা উঠে গিয়ে মায়ের খাটের পাশে দাঁড়ালো। ‘সব ওষুধ খুলে তোমার কাছে এই বাটিতেই তো রেখে গেছি মা!’

- একটু খাইয়ে দে না রে!

- ডাক্তার কি বলেছে মা? একটু নিজের হাতে নিজের টুকটাক কাজগুলো যদি না করো, অকর্মণ্য হয়ে যাবে। ওয়াকার কিনে দিয়েছি, একটু হাঁটতেও তো পারো। খালি দিনরাত থুম্বা মেরে বসে থাকো!

- অত কড়া করে বলিস না মা। এই বাহানায় তোর হাতে একটু খেতে পারি। সারাটা দিনই তো তোর একাজ-ওকাজ! 

- এইটুকু তো ছাড়তে হবে মা! তোমাদের কাছে থাকবো বলে তো চাকরীটাই ছেড়ে দিলাম। কিন্তু ঘর সংসারের কাজ না দেখে সব সময় তোমার মুখের দিকে চেয়ে বসে থাকলে কি দিন চলবে? 

- সে তো জানি রে বড় খুকু! তোর বাবা বলত, এক খানা ছেলে চাই, সে নাকি আমাদের দেখবে, স্বর্গের বাতি দেবে! তার বাতিতে তোর বাবা স্বর্গ দেখেছে কি না জানিনা, তবে আমার কাছে তুইই আমার পুত্র সন্তান। সব দায়িত্ব কর্তব্য তো তুইই করিস। 

- ছাড়ো মা এসব কথা। হাঁ করো, ওষুধটা দিই। 

   ওষুধ খাইয়ে মায়ের শাড়ীর আঁচলটা দিয়েই মুখটা মুছিয়ে মৃদুলা বলল, সকালে রুটির সাথে কি খাবে মা? 

- কর না যা হোক কিছু! 

- শিমের চচ্চড়ি করে দিই? আর দুপুরে কী আনবো? মাছ না কি চিকেন খাবে একটু পাতলা করে? 

- আমাকে আর জিজ্ঞাসা করিস কেন মা? আর গেরস্তালি করতে ইচ্ছে যায় না! 

- এটা আমারও অভ্যাস মা। তুমি মাথার উপর আছো বলে নিজেকেও কখনও গিন্নি বান্নি ভাবতে পারিনি। 

  এমন সময় পাশের বাড়ী থেকে একটা ছোট্ট বাচ্চা এসে বলল, ‘কী গো পিছি, তুমি ছকালে ছিম তুলতে যাবে বলেছিলে, গেলে না তো! আমি কত্তক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম! 

- ও বাবা! স্যরি সরি! বুবুন সোনা সিম তুলতে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলে, আমি তো দোষ করে ফেলেছি বাবু! মৃদুলা নিজের অপরাধ কবুল করলো। 

- থিক আছে, চলো। তবে আজকে আমায় বুবুন ছোনা বলে ডেকো না। আজ আমার নাম দিয়েছি কাত্তিক ঠাকুর!

- হঠাৎ এমন নাম নিলে কেন সোনা? 

- ওই তো ঠাকুমা বলছিল, আমার চুলগুলা নাকি কাত্তিক ঠাকুরের মতো ঝাঁকলা ঝাঁকলা হয়েছে! 

- ও মা, তাই তো! তুমি তো আমাদের কাত্তিক ঠাকুরই বটে! তোমাকে তবে কাত্তিক সোনা বলে ডাকি? 

- না না ছোনা না, ঠাকুর বল আমায়। চল এবার, ছিম তুলতে যাই!

- চলো। 

  এই সকালে নিয়ম করে মৃদুলা গাছে জল দেয়। একটা বড় টিউব কিনেছে এজন্য। ট্যাপের মুখে লাগিয়ে সব গাছ সারতে ঘন্টা দেড়েক লেগেই যায়। এই সময়টা এই বাচ্চাটি আসে রোজ। ‘পিছি’ বলে ডাকে। বছর তিনেকের বাচ্চা – ‘শ’ টা লেগে যায়, তবে ‘র’ টা ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারে সে।

  হঠাৎ মৃদুলা খেয়াল করলো – ওদের গেটের বাইরে একটা গাড়ী এসে দাঁড়ালো। এক ভদ্রলোক - বেশ সুটেড বুটেড – গাড়ী থেকে নেমে ধীরে ধীরে গেট খুলে ভেতরে এলেন। কাছে আসতে মৃদুলা চিনতে পারলো, ডাঃ অশোক রায়। ঘরেরই একটা নাইটি পরে ও গাছে জল দিচ্ছিল। গলায় ওড়নাটুকুও নেই; থতমত খেয়ে বলল, ‘ডাঃ রায়, আপনি? এখানে?’ 

- কেন আসতে নেই? 

- না, তা নয়। তবে একেবারেই আনএক্সপেক্টেড। 

- ‘একেবারে’  কেন বলছেন? বদলীর চাকরী যখন পশ্চিমবাংলার যে কোনও জায়গায় তো বদলী হতে পারে। আপনাদের এই নন্দনপুরটা যখন বাংলার মধ্যে, তখন এখানে বদলি হতে দোষ কি? 

- আপন এত বছর নর্থবেঙ্গল করে এলেন, তারপরও কলকাতায় বাড়ীর কাছে পোস্টিং হল না? 

- ও অনেক ব্যাপার মৃদুলা। সর্বোপরি এই ভালো। এখানে সপ্তাহে চারদিন টানা কাজ করে দিলেই হবে। বাকী তিনদিন কলকাতায় চলে যাবো। এখান থেকে আড়াই তিন ঘন্টারই তো পথ! অসুবিধে হবে না! 

- আসুন আসুন। ঘরে আসুন। 

  মৃদুলার আহ্বানে ঘরে এলেন ডাক্তার রায়। এখনও চেহারাটা ধরে রেখেছেন উনি। মাথার সামনেটা হাল্কা কাঁচাপাকা চুল, বাম দিকে সিঁথি করা। গায়ের রঙটা বেশ টানটান ও চকচকে। বয়সে উনি মৃদুলার সমবয়সীই হবেন। আটচল্লিশ-ঊনপঞ্চাশ তো হবেই। ভদ্রলোক খুব উইটি এবং একই সাথে প্রাণ চঞ্চল। মৃদুলা চাকরী জীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছে উত্তর দিনাজপুরে। ওখানকার সদর হাসপাতালে নার্সিং স্টাফ হিসেবে ছিল প্রায় তেরো বছর। ওই সময় ডাঃ রায় ওখানে জয়েন করেছিলেন। মেডিসিন এ এম.ডি. পাশ করে ফার্স্ট পোস্টিং ছিলো ওখানেই। বছর সাতেক উনি ওখানে ছিলেন। খুবই জনপ্রিয়তা ছিল তাঁর। যতটা চিকিৎসার গুণে, তার চেয়েও বেশী ওনার ব্যাবহারে। চট করে একটা হাউসকোট গায়ে জড়িয়ে মৃদুলা বলল, একটু  সরবৎ খাবেন, না কি চা? 

- কিছু নেবো না। আপনি বসুন তো!

- সে তো বসবোই। দাঁড়ান, আপাতত জল দিই, চা বসাচ্ছি পরে। 

- আরে এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? 

- ব্যস্ত হচ্ছি না। আজ আপনার হাসপাতাল যাওয়া নেই?

- ঘরে থাকতে থাকতে দিনক্ষণও সব গুলিয়ে গেছে দেখছি! বলুন তো আজ কী বার? 

- ওঃ আজ তো রবিবার! তাহলে আজ বাড়ী যান নি যে?

- রবিবার বাড়ী যাই না। বিকেলে চেম্বার করি, রাতের ইমার্জেন্সি করে একেবারে মঙ্গলবার বাড়ী ফিরবো।

- আবার ফেরা কবে?

- শুক্রবার সকালে আসবো।

- আমার এখানকার ঠিকানা পেলেন কোত্থেকে?

- চাইলে, কী না পাওয়া যায় মৃদুলা!

- প্রায় দশ’বছর হয়ে গেল; এতদিন বাদে চেয়েছেন বলে অবাক হয়েছি। 

- ওটা তো আপনাকে সম্মান জানিয়েই!

   আর কথা না বলে চা বসাতে গেল মৃদুলা। ও ফিরে আসতে স্বগতোক্তির মতো বললেন ডাঃ রায়, আসলে মাস দুয়েক আগে দিনাজপুরে গিয়েছিলাম আমি। সার্ভিসবুকের কিছু গোলমাল ছিল, ওগুলো কারেকশন করাতে। তা ওখানে অশোকাদি, বিন্দুদির সাথে দেখা হল। ওঁদের কাছেই শুনলাম আপনি নাকি চাকরি ছেড়ে চলে এসেছেন। ঠিকানাটা ওদের থেকেই নেওয়া। ওঁদের সাথে আপনার যোগাযোগ আছে এখনও?

- ওই জন্মদিন আর নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়টুকুই টিকে আছে এখনও! সবাই তো ব্যস্ত।

- আপনিও কি ব্যস্ত?

- আমার ব্যস্ততাটা সময় না ফুরোবার!

- আপনি তো তেমন মেয়ে নন! আপনি তো সারাদিন কিছু না কিছু নিয়ে মেতে থাকতেন; নিদেন পক্ষে বই পড়া তো বন্ধ থাকতো না আপনার। কতদিন রাত্রে কলবুক পেয়ে ওয়ার্ডে গিয়ে দেখেছি আপনি কোনওনা কোনও বই খুলে রেখেছেন টেবিলের উপর। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনকে পুষ্টি দিতেন।

- এখনও সেই ভাবেই দিন কাটে ডাঃ রায়। সকালে গাছপালা নিয়ে থাকি। ওই যে বাচ্চাটা দেখলেন – ওর সাথেও খেলাধূলো করি অনেকক্ষণ। 

- ওরা ভাগ্যবান।

- ভাগ্য ওদের কিনা জানিনা, তবে আমার জন্য যে ওরা কত দরকারী, শরীর টরীর খারাপ হলে বুঝি!

- আপনার শরীরও খারাপ হয়? 

- কেন ডাঃ রায়, আমি মানুষ নই?

- ওই সাত বছরে তো একদিনও আপনার চিকিৎসা করার সুযোগ পাইনি!

- আপনি কি আমার শরীর খারাপের জন্য মুখিয়ে থাকতেন? 

লজ্জা পেয়ে মাথা নাড়লেন ডাঃ রায়। ‘না, না, ব্যাপারটা তেমন নয়!’ 

  মৃদুলা পরিস্থিতিটা সহজ করার জন্য বলল, তখন বয়স ছিল কম! এখন আর রক্তের সে তেজ নেই! 

- তাহলে কি অন্য পক্ষ সাহস দেখাতে পারে?

মৃদুলা বুঝেও না বোঝার ভান করে বলল, রোগ ব্যাধিরা সেই স্পর্ধা তো দেখাচ্ছে ডাঃ রায়! 

- ওদের তো স্পর্ধা নয় মৃদুলা, বলুন আস্পর্ধা। যে কদিন আপনাদের এখানে আছি আমাকে সুযোগ দিন তাদের দর্প চূর্ণ করার! 

- সে গুড়ে বালি ডাঃ রায়! আপনার বিষয় নয় যে! হাঁটুতে বাত ধরেছে। 

- ওঃ! ডাঃ বর্মনের ডিপার্টমেন্ট। উনি এক্সট্রাটা কী দেবেন শুনি? মেডিসিনের লোক সব সারাতে পারে, জানেন কী? ওরাও পেনকিলার দেবে, আমিও দেবো! এক্সট্রা কোন ওষুধটা উনি দেবেন? মজা করলেন ডাঃ রায়!

- নিন, চা খান। জলখাবার তৈরী হচ্ছে, খেয়ে যাবেন।

- আচ্ছা মৃদুলা, চাকরীটা ছাড়লেন কেন?

- বাবার জন্য!

- উনি কই! আই মিন আপনার বাবা-মা?

- বাবা বছর তিনেক হল গত হয়েছেন। মা ও ঘরে আছেন। হার্টের পেশেন্ট। ষ্ট্রোক হয়েছিল গত বছর। তবে থেকে একদিক প্রায় অচল। ফিজিও থেরাপি চলছে।

- চলে আসার কারণটা বললেন না!

- জানেন তো ডাঃ রায়, লোক বলে – বাবা আর মেয়ের সম্পর্ক নাকি খুব মধুর হয়; বিশেষ করে যদি সেই মেয়েটি প্রথম সন্তান হয়। 

-  আপনিই তো বড় মেয়ে?

- হ্যাঁ। আমার পরে এক ভাই, আর এক বোন!

- ওরা কি করে?

- ভাই দিল্লিতে থাকে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। বোনও নার্সিং পড়েছিল – এখন চাকরি করে – পুরুলিয়ায়।

- ওনাদের বিয়ে হয়ে গেছে?

- হ্যাঁ। ভাই ওর কালিগকেই বিয়ে করেছে। বোনের বর স্কুল টিচার। বাঁকুড়ায় ওর শ্বশুরবাড়ি। 

- বাবা হঠাৎ আপনার চাকরী নিয়ে পড়লেন কেন?

- কে দেখবে ওঁদের? বুড়ো বয়সে যদি ছেলে মেয়েরা সহায় না হয় তবে আর লোকে সন্তান কামনা করে কেন?

- তার জন্য কি ত্যাগটা আপনাকেই স্বীকার করতে হল?

- ব্যাপারটা তা নয় ডাঃ রায়! আপনার যদি বিবেক বলে কিছু থাকে – তবে প্রথমেই যেটা বর্তায় - সেটা হল ‘দায়’! 

- তখন কি আপনার বাবার কোনও ক্রাইসিস ছিল? 

- রিটায়ারমেন্টের পরে বাবার একটু আর্থরাইটিস আর সায়াটিকার সমস্যা ছিল। হাইডোজের এটা ওটা আর পেনকিলার খেয়ে খেয়ে কিডনির রোগ ধরল। ফোন করলেই – হাহুতাশ, ভাই বোনেরা পাত্তা দিত না, অগত্যা...

- আপনি তখন বাবার সাথে আপনার রিলেশন নিয়ে কিছু একটা বলছিলেন!

- হ্যাঁ। সাধারণত বাবা মেয়ের মধ্যে একটা অন্যধরনের সম্পর্ক হয়। আমাদের পরিবারে সেটা ছিল না। আমার বাবা অত্যন্ত ভাই অন্ত প্রাণ ছিলেন – এবং সেটা তিনি গোপনও করতেন না। তাই বলে যে আমাদের অনাদর করতেন, তা নয়। আমার বোনের এই নিয়ে খুব বিরক্তি ছিল। ও স্বাবলম্বী হওয়ার পরে, সেইজন্য আর বাবাকে চিনতোই না। তবে আমার আবার এসব খুব একটা দাগ কাটে না।

- সে তো বটেই! আপনার হৃদয়টা বেশ কঠিন!

- আসলে আমার মনে কি হয় জানেন ডাক্তার রায়? স্নেহ-ভালোবাসা-মানুষের মৌলিক একটা প্রকাশ। সে বাবা-মা হয়েছে বলে প্রতিটি পুত্র কন্যাকে নিক্তি মেপে ভালোবাসতে হবে- এটা অন্যায় দাবী! সব স্নেহ ভালোবাসাই যে নিঃস্বার্থ হতে হবে তার তো মানে নেই! অনেক সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসায় অনেক রকমের মোটিভও থাকে। অনেকে বলেন – যেখানে স্বার্থ আছে সেটা আদতে ভালোবাসা না - আমি আবার সেই তত্ত্ব বিশেষ মানতে পারি না! 

- তারপর?

- তারপর আর কি? ফোন করলেই একটা কথা – কবে বাড়ী আসবি? এই তো তোর মায়ের শরীর। অমুক তারিখে ডায়ালিসিস করতে যেতে হবে, কে নিয়ে যাবে – ইত্যাদি। একদিন ভাবলাম – সত্যিই তো! যে লোকটার জন্য আমার পৃথিবীর আলো দেখা, বড় হওয়া, চাকরী করা – তার জন্য কি আমার তরফ থেকে কিছুই করার নেই?

- আপনার চাকরী ক’বছর হয়েছিল?

- সতেরো বছর!

- তাহলে তো পেনসন পান না।

- না!

- এই বোকামি কেউ করে মৃদুলা? আর তিনটে বছর চাকরীটা করতে পারতেন!

- কী হবে আর পেনসন নিয়ে। মা, বাবার হাফ পেনসন পায়। আমারও অল্প  বিস্তর কিছু জমানো ছিল। সামনে এতটা জমি, সব্জি-টব্জি এখানেই লাগাই। শুধু চাল ডাল আলু পেঁয়াজ কেনা। বেশী লাগে না আমার!

- মাছ-মাংস? 

- খাই না। বাবা মারা যাওয়ার পর মা’কে জোর করে চেষ্টা করেছিলাম। রাজী হয়নি। ফলে আমারও ছেড়ে গেছে।

- এটা ঠিক করেননি আপনি। জানেন তো হাঁটু ব্যাথায় মাছ-মাংস খাওয়া জরুরী। অন্তত দুধটা খান তো?

- দুধ খাওয়ার অভ্যেস নেই, সেই ছোটবেলা থেকেই।

- তাহলে ছানা খান। দই খান।

- আচ্ছা!

- আচ্ছা কি? আমি জানি এটা আপনার মুখের কথা! আদতে আপনি খাবেন না!

- আরে এত চিন্তা করবেন না ডাঃ রায়। খাবোনা কেন? না খেলে বাকী জীবন সুস্থ থাকবো কী করে?

- আপনি কি এভাবেই জীবনটা কাটিয়ে দেবেন মৃদুলা?

- কেন? এতে খারাপটা কি?

- মায়ের পরে কীভাবে কাটাবেন সময়?

  মৃদুলা রবীন্দ্রনাথের ফটোর দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, কেন উনি তো আছেন!

- ওতেই হবে?

- ওটাই অনেক ডাঃ রায়।

- আপনাকে দেখলে এখনও খুব বেশী বয়সের মনে হয়না মৃদুলা। চাইলে অন্যরকমও ভাবতে পারেন। মৃদুলা এই কথাই কোনও উত্তর না দিয়ে বলল, বসুন, জলখাবারটা হল কিনা দেখি!

   ডাঃ রায় চলে যেতে মায়ের ঘরে গেল মৃদুলা। মাকে ভালো করে তেল মাখিয়ে চান করাতে হবে। একটা ভালো মালিশের তেল একজন সাজেষ্ট করেছে, প্যারালাইসিসে নাকি ভালো কাজ দেয়। ওকে ঢুকতে দেখে ব্রহ্মময়ী বললেন, কে এসেছিল রে!

- ডাঃ অশোক রায়। আমি যখন দিনাজপুরে ছিলাম, তখন উনি ওখানেই পোস্টেড ছিলেন।

- কেমন ডাক্তার?

- খুবই ভালো ডাক্তার, মা!

- তাহলে একবার আমাকে দেখিয়ে নিতে পারতিস তো!

- কেন মা? তোমাকে যে ডাঃ সাহা দেখছেন।

- তাও একজন ভালো ডাক্তার বাড়ীতে এসেছিলেন। ওনার একটা মতামত নেওয়া যেতে পারতো!

- তুমি তো এরকম ছিলে না মা! দিনে দিনে বাবার মত হয়ে যাচ্ছো!

- কী এমন খারাপ কথা বললাম,  বড়খুকু?

- বললে না! বাড়ীতে ডাক্তার এলেই রোগের কথা বলতে হবে? এতে চিকিৎসা বিভ্রাট হয় বোঝ না?

- বিভ্রাটের কী আছে! এর ওষুধ তো খেতে যাচ্ছি না! 

- এর ওষুধ খাবে না তো, দেখাবে কেন? ফ্রীতে পাওয়া যাচ্ছে বলে?

- লোকে সেকেন্ড ওপিনিয়ন নেয় না?

- ছাড়ো তো মা! এসব কথা বলতে গেলেই মাথাটা গরম হয়ে যায়!

- তোর তো সবটাতেই গরম মাথা! যমকেও বলিহারি! মরণ হয় না আমার! তোর ঘাড়ে পড়ে আছি... বোঝা!

- কী কথা থেকে কোন কথায় যাচ্ছো মা? কী খারাপ কথাটা বললাম তোমাকে? বোঝার কথাটাই বা আসছে কেন? বাবার ব্যাপারটা মনে নেই! কতবার করে বললাম, আমাদের শীর্ষেন্দু বোস – সিনিয়ার ডাক্তার ওনার - পরামর্শ মতো চলো। ডায়ালিসিসের রুগী! এখুনি গলব্লাডারটা অপারেশনের দরকার নেই! শুনলো না। বলল – তুই নার্সিং শিখে কি ডাক্তার হয়ে গেছিস? অত বড় নামকরা হাসপাতালের এত নামী ডাক্তার, সে কি ভুল পরামর্শ দেবে? দেখলে তো কী হল! 

- ওটা নিয়তি, বড়খুকু!

- নিয়তি তো এভাবে বুদ্ধির ভ্রম ঘটায় মা! নইলে ভাগ্যের খেলা চলবে কী করে!

- কিন্তু আমার ষ্ট্রোকটাও তো একবছর পার হয়ে গেল। বামদিকটা তো এখনও ঠিক হল না। এবার তোর এই ডাক্তারকেই দেখা।

- কেন মিছিমিছি অবলিগেশন বাড়াবে মা। উনি চেনা লোক, ভিজিট নেবেন না। বড় সমস্যা।

- একটা ভিজিট না নিলে কি ওদের দিন চলবে না বড় খুকু? চেনা লোকের থেকে ভিজিটটা না হয় নাই নিল! যত খাঁই হবে ছেলে-বউর তত খিদে বাড়বে। ডাক্তারদের পয়সা তো আর নিজের ভোগে লাগে না!

- তোমার সাথে কথা বলা বিড়ম্বনা মা! নাও শুয়ে পড়ো। মৃদুলা একমনে তেল মালিশ করা শুরু করল। ডাঃ রায়ের মুখটা মনে পড়লো তার। ভদ্রলোক কি এখনও বিয়ে করেন নি? জিজ্ঞাসা যে করা যেতো না, তা নয়। তবে কিনা প্রসঙ্গ উঠলেই কথা বাড়বে। দিনাজপুরের সেই দিনগুলোয় নানান অছিলায় ডাঃ রায় তাঁর মনের বাসনা গোপন রাখেন নি। হয়তো খুব সরব হয়ে নয়, তবে বোঝা যেত। মৃদুলা সব সময় পাঁকাল মাছের মতো ওসব কথায় পাশ কাটিয়ে যেত। উনি রাউন্ডে আসলে নানান অছিলায় ওয়ার্ডেই বসে থাকতেন। বিশেষ করে মৃদুলা ডিউটিতে একা থাকলে গল্প যেন ফুরোতেই চাইতো না। ওর নাইটে যদি কলবুক যেত – দু-মিনিটেই এসে হাজির হতেন তিনি। যেন রেডিই হয়ে থাকতেন আসার জন্য। এলে কাজটাজ গুছিয়ে অন্তত আধঘন্টা গল্প তো করতেনই। ওর নাইটের দিনগুলোয় রাত এগারোটা নাগাদ একবার রাউন্ডে আসতেন। মৃদুলা খোঁজ নিয়ে দেখেছে - অন্যন্য সিস্টারদের নাইটে উনি রুটিন করে আসতেন না। তবে এটা ঠিক, উনি এতটাই মার্জিত রুচির ছিলেন যে অন্য কেউ ওঁর মনের সামান্যটুকুও আঁচ করতে পারে নি। যখন ওঁর বদলির অর্ডার এসেছিল, তখন অনেকটা পরিষ্কার করেই ওকে অফার দিয়েছিলেন। মৃদুলা সাড়া দেয়নি। আজ এতদিন কি উনি ওর প্রতীক্ষাতেই বসে আছেন? কথার ভাঁজে কি তেমন কিছু ছিল! মৃদুলা মনে মনে সারা সকালের কথোপকথন রোমন্থন করল। তেমন কিছু মনে হল না। 

  তেল মাখিয়ে মৃদুলা বলল, চলো মা, চানটা করিয়ে দিই। বাথরুমে একটা টুলে ওঁকে বসিয়ে ও আবার ঘরে গেল মায়ের শুকনো জামা-কাপড় আনতে। হঠাৎ অন্যমনষ্ক ভাবে বাথরুমের দরজার চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল দড়াম করে। শব্দ পেয়ে ছুটে এল অনিমা। ও বারোঘন্টার কাজের মেয়ে। ধরাধরি করে যখন মৃদুলাকে তুলে ঘরে আনা হল, সে একেবারে হাঁটতে পারছে না। হাঁটুতে জোর চোট এগেছে। এমনিতেই আর্থরাইটিসের ব্যাথা, তার উপর পড়ার চোট। ব্রহ্মময়ী বললেন, অনিমা ডাক্তার ডেকে আন!

- কাকে ডাকবো, মাসীমা! এই রোববারের দুপুর বেলা কে আসবে?

- দ্যাখনা আমাদের শান্তনু ডাক্তারকে। ওতো এসময় বাড়ীতেই থাকবে। শুনেছি তো ও হাড়গোড়েরই ডাক্তার!

   মৃদুলা শুনতে পেয়ে সমানে বাধা দিতে লাগলো। ‘ছাড়ো না মা, একটু চুন হলুদ লাগাই; না কমলে দেখা যাবে!

- কী ছাড়বো বড়খুকু? নিজে এই লাইনের লোক, বুঝিস না? আমরা দুটো মেয়ে মানুষ - আমরা কি বুঝবো - এক্সরে ট্রেক্সরে করতে হবে নাকি? তুই শুনিস না তো অনিমা! সব সময় ওর হুকুমেই চলতে হবে নাকি? তুই যা!

  অনিমা দ্রুত বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। একটা বাড়ী পরেই শান্তনু ডাক্তারের বাড়ী। ওদের বাড়ীর ছাদ থেকে দেখা যায় বাড়ীটা। একটু বাদেই শান্তনু এসে হাজির। এখন বেশ নাদুস নুদুস চেহারা হয়েছে তার। আগে খুব শরীর সচেতন ছিল। ছাদে উঠে ব্যায়াম করতো, ডাম্বেল ভাজতো। ওকে দেখে বলল, কী ব্যাপার মৃদুলা, কী হল?

- দ্যাখোনা, বাথরুমে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছি। উটকো উপদ্রব! বাঁ হাঁটুতে খুব লেগেছে!


🍂
ad

- দেখি, কোথায় লেগেছে!

  মৃদুলা দোনোমোনো করলো হাঁটুটা দেখাতে! শান্তনু ওর পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে আর একটা নীচু টুল রাখলো মৃদুলার সামনে। নিজের হাতে ওর বাঁ পাটা ধরে আস্তে আস্তে রাখল টুলটার ওপর। তারপর ধীরে ধীরে নাইটিটা সরিয়ে হাঁটুর উপর তুলে হাত দিয়ে ভালো করে দেখলো জায়গাটা।

- না রে, তেমন এক্সটারনাল ইনজুরি কিছু হয়নি! তবে সোয়েলিং হয়েছে বেশ খানিকটা।

- এমন ফোলা তো আমার বেশ কিছু দিন ধরেই হয়েছে শান্তনুদা।

- কেন রে? আর্থারাইটিস বাধিয়েছিস নাকি?

- হ্যাঁ! 

- জ্বর-টর হয় নাকি রে? এ বয়সে তো রিউমাটয়েডও হয়!

- না, না। অস্টিও আর্থারাইটিস। এক্সরে করিয়েছি মাস ছ’য়েক আগে। শান্তনু হাতের দুপিঠ দিয়ে ভালো করে জায়গাটার উষ্ণতা নিল, হাত দিয়ে পা টাকে কয়েকবার ফ্লেক্সন একটেনশন করিয়ে বলল, নাড়াতে পারছিস?

- হ্যাঁ। 

- মনে হচ্ছে ফ্রাকচার হয়নি। ওষুধ দিচ্ছি। সেফসাইডের জন্য দিন তিনেক ওষুধ খেয়ে দ্যাখ, নইলে এক্সরে করাবো। যাই এবার?

- তোমার কি এখন চেম্বার আছে না কি শান্তনুদা?

- রোববার সকালে পেশেন্ট দেখি না রে! ছুটি এবেলা।

- তাহলে একটুখানি বোসো। অনিমা সরবৎ করে আনছে, খাও। এই গরমের সময় এই দুপুরবেলা আর চা খেও না। 

- না রে যাই! ছেলেটা বায়না ধরেছে ওকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যেতে হবে। 

- কোনটা? বড়টা, না বুবুন?

- বড়টা। বুবুনটা এত দুষ্টু নয়! ও তো মোটামুটি সারাদিন তোর কাছেই থাকে শুনি।

- হ্যাঁ। আমার সাথেই ওর যত খেলাধূলা। রোজ রোজ ও নিজের নতুন নাম দেয়, জান কি তা?

- তাই নাকি? তা আজ কী নাম দিয়েছে নিজের?

- কাত্তিক ঠাকুর!

- বা বা! তিন বছরেই এই?

- ওর বাবাই বা কম কি ছিল? একবার সলমনের মতো সিক্স প্যাক, একবার আমীরের মতো এইট! পাগলামিটা তার কম ছিল কি?

   শান্তনু হাসল। মৃদুলা বলল, ছেলে তো কার্ত্তিক হল, তুমি হঠাৎ গনেশ ঠাকুর হয়ে গেলে কেন? 

- সারাদিন বসে রুগি দেখা। হাঁটা চলা তো নেই!

- দরকার পড়লে হাঁটো! রাস্তায় অসুবিধে হলে ট্রেডমিল কিনে ঘরে হাঁটো। ছাদে উঠে জগিং করো।

- এখন আর উৎসাহ পাই না রে! আগে তো অন্য আকর্ষণ ছিল!

- উৎসাহটা নিজের প্রয়োজন, শান্তনুদা! বউ বাচ্চার কথা ভেবেও তো সুস্থ থাকা দরকার!

   অনিমা সরবৎ আর ঘরে বানানো কয়েকটা নাড়ু নিয়ে এলো। শান্তনু বলল, নাড়ুগুলো নিয়ে যাও!

- খাওনা, আমার নিজের হাতে বানানো!

- তাহলে একটা দে।

- আগে তো মিষ্টি খেতে প্রচুর ভালোবাসতে! কলেজ ষ্কোয়ার চত্বরে তো একটা মিষ্টি দোকানও বাদ দিতে না। রোজ বিকেলে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে কোনও না কোনও দোকানে মিষ্টি খেতে! 

- তুই কী করে জানলি?

- বাবা, এক ক্যাম্পাসেই তো থাকতাম!

- এখন মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। সুগার ধরেছে। সঙ্গে হাই ব্লাড কোলেস্টেরল! প্রেসারটাও বর্ডার লাইনে!

- নিজের যত্ন নাও না, না কি?

- সময় পাইনা রে!

- অর্থ উপার্জন করাটা কি নিজের জীবনের চেয়েও বেশী?

- আজ উঠিরে! অনিমাকে পাঠা, আপাতত কিছু ওষুধ দিয়ে দিচ্ছি। বাকীটা লিখে দিচ্ছি। বিকেলে কিনে নিস।

  উঠতে গিয়েও আবার বসে পড়ল শান্তনু। বলল, ডান পা টা তোল তো টুলের উপর! বলেই আগের মতো নাইটিটা তুলে ডান হাঁটুটাও দেখলো আগের মতো। বলল, ঠিক আছে রে, আসি! 

- এসো। 

- জানিস তো টুকুস, তোকে উনিশ বছর বাদে দেখলাম। খুব একটা বদলাসনি। শুধু রঙটা দু পোঁছ গাঢ় হয়েছে। না হলে এখনও তিরিশের কোঠায় চালিয়ে দেওয়া যায়।

- হ্যাঁ, তুমি যেদিন এম.এস পাশ করলে সেদিনই তোমাকে শেষ দেখেছিলাম।

- তারপর তো আমি  চাকরি তে জয়েন করেছিলাম কিছুদিনের জন্য! তুই তো তখনও কলকাতা মেডিকেল কলেজে। তোর তখন সেকেন্ড ইয়ার। তবে আমার বিয়ের সময় তো তুই বোধহয় দিনাজপুরেই ছিলি?

- হ্যাঁ। 

- দিন বড় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে! 

- সুখের দিন দ্রুতই ফুরোয় শান্তনুদা।

- এবার চলি রে। অনিমা কে পাঠিয়ে দিস।

   মৃদুলার সেই উনিশ বছর আগের দিনটার কথা মনে পড়ল। সেদিন ওরা দুজনেই বাড়ী ফিরছিল। তিন চারটে স্টেশন আগে হঠাৎ ট্রেন কী সব সিগনালিং এর সমস্যার জন্য দাঁড়িয়ে পড়েছিল। শান্তনুদা বলল, কী করবি? ট্রেন থেকে নেমে রোডে দেখব, নাকি ট্রেনেই ওয়েট করবি?

- বাড়ীতে চিন্তা করবে তো। সন্ধে কখন পেরিয়ে গেছে! 

- চল, দেখি কী করা যায়।

  স্টেশন থেকে নেমে বাজারে এসে একটা অটো জোগাড় করা গেছিল। তখন অটোগুলো অন্য রকম ছিল। সামনে ড্রাইভার বসতো। পেছনটার দুপাশে সাইডে করে সিট থাকতো জীপ গাড়ীর মতো। দুপাশে দুজন বসে। এবড়ো খেবড়ো রাস্তার উপর দিয়ে যখন অটোটা চলছিল নিজেকে স্থির রাখাটাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। ও ঢলে ঢলে পড়ছিল শান্তনুর উপর। শান্তনু একসময় ওর পাশে এসে ড্রাইভারের পেছনের সিটটার উপর ওকে ঠেসে ওর হাত ধরে শক্ত করে বসেছিল সারাটা পথ। ওর সারা শরীরে তখন অজানা কত ধরণের জলতরঙ্গের স্রোত। কখনো রিন রিন, কখনও টুং টাং। শান্তনুর পিঠে লেপ্টে ছিল ওর এতদিনের নির্জনে বেড়ে ওঠা। আজ ও এতবার করে ওর হাঁটু ছুঁলো, দেখলো, হাত বুলোলো – কই আগের মতো রিন রিন করে উঠলো না তো ওর ভেতরের জলতরঙ্গটা! কই মনে হলো না তো, এই ছোঁয়ার জন্য তার প্রতীক্ষায় কেটে গেছে এতগুলো বছর। টুকাই যে বলতো শান্তনুদার ছাদে উঠে ব্যায়াম করা, জগিং করা সবই নাকি ওরই জন্য – সেসব কি তবে মিছে কথা! ইস্ট্রোজেনের সব খেলা কি ফুরিয়ে গেছে ওর দেহে? ওর চোখ গেল রবিঠাকুরের দিকে। উনি ওর কানে কানে বললেন, ‘সকলি শুকোলো, কুসুম প্রায়... ‘ 

               

Post a Comment

0 Comments