বাংলার ঘাস পাতা ফুল ফল, পর্ব -- ৬৯
জারুল
ভাস্করব্রত পতি
'ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ দুপুর—
চিল একা নদীটির পাশে
জারুল গাছের ডালে বসে বসে
চেয়ে থাকে ওপারের দিকে।
পায়রা গিয়েছে উড়ে তবু চরে, খোপে তার... '।
-- জীবনানন্দ দাশ
এটি একটি শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ। বড় রাস্তার পাশে এখন লাগানো হচ্ছে। উচ্চতায় প্রায় ছয় মিটার পর্যন্ত হয়। চিন হল এর আদি নিবাস। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও এটি জন্মায়। এটি মহারাষ্ট্রের রাজ্য ফুল হিসেবে পরিচিত।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে ব্রম্ভাকে এই ফুল দিয়ে পূজা করা হয়। ফলে এই ফুল বাড়ির উন্নতি নিয়ে আসে। আবার থেরবাদ বৌদ্ধধর্মে জারুলকে জ্ঞান অর্জনের জন্য অন্যতম বৃক্ষ হিসেবে ভাবা হয়। আর একাদশ বুদ্ধ (পদুমা) এবং দ্বাদশ বুদ্ধ (নারদ) দ্বারা এটিকে বোধি বৃক্ষ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
সবুজ মাঠের প্রান্তে জারুল গাছ
ছোট জারুলের অনেক ধরনের নাম রয়েছে। একে বলা হয় তিলা জারুল, জলধর, তিনিশ, চক্রী ইত্যাদি। অসমীয়াতে এজার, সংস্কৃতে মহাসোনা, সিংহলীতে মুরুথা, মারাঠীতে জারুল, তমহান, তামিলে কাডালি, কন্নড়ে হোলি দশাভালা, তেলুগুতে মনিমারুঠু, থাই ভাষায় ইন্থানিন, ইংরেজিতে Pride of India, Queen's Flower, Giant Crape Myrtle, Queen's Crape Myrtle, Indian Lilac, Banabá Plant ইত্যাদি বলে। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম Lagerstroemia indica। গাছের ডালের মাথায় থোকা থোকা বেগুনি রঙের বড় বড় ফুল ফুটে থাকে। কোঁকড়ানো ৬ পাঁপড়িযুক্ত ফুলগুলি ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া। জারুলের বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia speciosa (L.) Pers। এটি Lythraceae পরিবারভুক্ত। জারুল মাঝারি আকৃতির পত্রমোচী গাছ। কাণ্ড ধূসর বর্ণের। সাধারণত ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। বড় বড় পাতা যা ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা। বিপ্রতীপ পত্রবিন্যাস দেখা যায়। জারুলের অন্যান্য প্রজাতিগুলি হল --
Adambea glabra Lam.
Lagerstroemia augusta Wall. nom. inval.
Lagerstroemia flos-reginae Retz.
Lagerstroemia macrocarpa Wall. nom. inval.
Lagerstroemia major Retz.
Lagerstroemia munchausia Willd.
Lagerstroemia plicifolia Stokes
Lagerstroemia reginae Roxb.
Munchausia speciosa L.
মোটামুটি গাছ লাগানোর ৩-৫ বছর পরে গাছে ফুল ফোটে। এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে প্রথমে এবং ফের জুলাই থেকে আগষ্টের মধ্যে ফুল ফোটে। আর ফল পাকে নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে। কবি আহসান হাবীব তাঁর 'স্বদেশ ' কবিতায় লিখেছেন --
‘এই ছবিটি চেনা
মনের মধ্যে যখন খুশি
এই ছবিটি আঁকি।
এক পাশে তার জারুল গাছে
গাছ ভর্তি জারুল ফুল
চা তৈরির জন্য জাপান, তাইওয়ান ও ফিলিপিন্সে এর পাতা ও অন্যান্য অংশ কাজে লাগানো হয়। ভিয়েতনামে এর নরম পাতা খাওয়া হয় এবং পাকা ফল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে ব্যবহৃত হয়। ছোট জারুল গাছে ভেষজ গুণ রয়েছে। এর পাতা এবং ফলের মধ্যে মেলে ইলাজিটানিস, মেনথালিন ও এলামাইন। এর পাতার রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত। এই গাছের পুরোনো পাতায় হাইপোগ্লাইকেমিক থাকে। যা কিনা ইনসুলিনের মতো কাজ করে। এটি মলসংগ্রাহক, উষ্ণবীর্য, রক্ত অতিসারনাশক, বায়ুরোগনাশক এবং কফনাশক।
🍂
0 Comments