জ্বলদর্চি

দূর দেশের লোকগল্প— ২৪০/ওমান (দক্ষিণ আফ্রিকা)রাজকুমারির বিয়ে /চিন্ময় দাশ

চিত্র- অর্ণব মিত্র
দূর দেশের লোকগল্প— ২৪০
ওমান (দক্ষিণ আফ্রিকা)

রাজকুমারির বিয়ে
চিন্ময় দাশ


এক দেশে এক রাজা ছিল। একটি মেয়েও ছিল সেই রাজার। দেখতে দেখতে বড়ও হয়েছে মেয়েটি। মেয়ে বিয়ের যুগ্যি হলে, সব বাবাদের যা হয়। উপযুক্ত ছেলে জোগাড় করতে হবে মেয়ের জন্য, সেই ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
কিন্তু যেমন তেমন ছেলে হলে তো চলবে না। ছেলে নাই রজামশাইর। যার সাথে মেয়ের বিয়ে দেবেন, সেই ছেলেই রাজা হবে একদিন। রাজা হবার যোগ্যতা আছে, এমন একজন ছেলেরই দরকার।
রাজামশাই ভাবলেন, ছেলের খোঁজ করবার আগে, মেয়ের মতটা নিয়ে নেওয়া দরকার। মেয়ে কী ভাবছে, সেটা না জেনে, এগোনো ঠিক কাজ হবে না। সেই ভেবে, মেয়েকে ডেকে পাঠালেন রাজামশাই। আর, তাতেই হোল বিপত্তি।
ভরা দরবার। নিজের সিংহাসনের পাশেই মেয়েকে বসতে দিয়েছেন রাজা। আদুরে গলায় বললেন—বয়স হয়েছে তোমার। এবার তো বিয়ের ব্যবস্থা করতে হয়, মা।
মেয়ে কোন উত্তরই দিল না। একবার রাজামশাইর মুখে দিকে চাইল। একবার চেয়ে দেখল ভরা দরবারের দিকে। তার পর? তার পর সেই যে ঠোঁটে কুলুপ এঁটে দিল, রা-টিও কাড়ল না আর। মুখে কোনও কথা নাই রাজার মেয়ের। হাজার চেষ্টা করেও, ফল হোল না কিছুই। কথাই বলে না সে। 
রাজা তো ফাঁপরে পড়ে গেলেন। একটিই মেয়ে তাঁর। তার মুখে কথা নাই। কী করেন তিনি? 
রাজার মন্ত্রী বুড়োমানুষ। অগাধ বুদ্ধি বুড়োর মাথায়। সে রাজাকে পরামর্শ দিল—এক কাজ করা যাক, রাজামশাই।
--বলো শুনি, কী কাজ।
--ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দিই। যে যুবক রাজকুমারিকে কথা বলাতে পারবে, তার সাথেই বিয়ে দেওয়া হবে মেয়ের।
রাজা আঁতকে উঠলেন-- তাতে তো দলে দলে যুবক ছেলেরা এসে হাজির হবে। নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে একেবারে।
বুড়ো হেসে বলল— সে ভার আমার উপর ছেড়ে দিন আপনি। 
রাজ্য জুড়ে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দেওয়া হোল— রাজকুমারি মুখ বন্ধ রেখেছে। যে ছেলে তাকে কথা বলাতে পারবে, তার সাথেই বিয়ে দেওয়া হবে রাজার মেয়ের। তবে, চেষ্টা করেও না পারলে, তখন কিন্তু রেহাই নাই।  সারা জীবন রাজকুমারির হুকুমের চাকর হয়ে, ফাইফরমাস খেটে যেতে হবে।
এই শেষের কথাতেই কাজ হোল। তেমন কারওই সাহস হোল না এগোতে। দিন যায়। কেউ আর আসে না রাজবাড়িতে। পথ চেয়েই দিন কেটে যায় সকলের।
হয়েছে কী, রাজকুমারির বিয়ের খবর পাশের রাজ্যের রাজারও কানে গিয়েছে। সে রাজার তিন তিনজন ছেলে। রাজা ভাবল, এই এক মওকা পাওয়া গিয়েছে। সে রাজার তো কোনও ছেলে নাই। যদি আমার কোনও এক ছেলের সাথে রাজকুমারির বিয়ে হয়, তাহলে একদিন সে রাজ্যটাও হাতে এসে যাবে।
বড়সড় একখানা জাহাজ সাজিয়ে, রাজা তার বড় ছেলেকে রওণা করিয়ে দিল। জাহাজ ভর্তি উপহার নিয়ে ছেলেটা এসে হাজির হোল রাজবাড়িতে।
রাজার ছেলে বলে কথা। দেখতে ভারি সুন্দর। যেমন সাহসী, তেমনি বলশালীও। ছেলেটার বিশ্বাস, তাকে দেখে, রাজকুমারি নিশ্চয় পছন্দ করবে। কথাও বলবে তার সাথে।
🍂
ad

রাজকুমারির সামনে হাজির হয়ে, মাথা ঝুঁকিয়ে কুর্ণিশ করল ছেলেটা। রাজকুমারি কেবল তাকিয়েই দেখল তাকে। মুখে কিছু বলল না। 
অনেক উপহার এনেছিল ছেলে। পশম আর গরদের পোষাক, নকশাদার রেশমি রুমাল। হীরে আর মুক্তোর গয়নাগাঁটি। হাজার রকমের মণ্ডা-মিঠাই। থরে থরে সাজানো পাঁউরুটি আর কেক। সব সাজিয়ে দিয়ে, আরও লম্বা একটা কুর্ণিশ ঠুকল ছেলে। বলল—এ সবই আপনার জন্য।
কিন্তু ঐ পর্যন্তই। কথা ফুটল না মেয়ের মুখে। দুজন সেপাই এসে তুলে নিয়ে গেল ছেলেটাকে।
বড় ছেলে ফিরল না। সে দেশের রাজা কিন্তু হাল ছাড়বার পাত্র নয়। তার মেজো ছেলেটিও বড়টির মতোই দেখতে সুন্দর, আর সাহসীও। আরও বড় কথা, ভারি মিষ্টি গলা ছেলেটির। তার সুরেলা গলার গান শুনলে, বনের পাখিরাও নীরব হয়ে যায়।
সে ছেলে নিজেই বলল—আমি নিশ্চয়ই কথা বলাতে পারব রাজকুমারীকে। বাবা, তুমি দেখে নিও।
আবার দামী দামী উপহারে জাহাজ ভর্তি করা হোল। সে ছেলেও এসে হাজির হোল। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। উপহার, সুরেলা গলার গান কোন কাজেই এলো না। রাজকুমারি বসে রইল চুপটি করে। এবারেও মুখে কথা সরল না তার। মেজছেলেকেও তুলে নিয়ে গেল সেপাইরা।
রাজার ছোট ছেলের নাম—আবু। সে তার বাবাকে ধরে পড়ল-- আমি যাব রাজকুমারিকে কথা বলাতে।
রাজা তো হেসেই বাঁচে না। বলল— তুই তো একটা আস্ত গবেট। তোর দাদারা যে কাজ পারল না, তুই পারবি সেটা? সারা জীবন বেগার খেটে মরতে হবে, সেটা জেনেছিস তো?
আবু কিছুই শুনতে রাজি নয়। সে যাবেই। রাজা বলল—তুই দাদাদের মত দেখতে নয়। গানও জানিস না। বুদ্ধি বলে আছে কিছু তোর মগজে? সারাটা জীবনে একটা কোনও ভালো কাজ করেছিস তুই? অকাল কুষ্মাণ্ড একটা। তোর যাওয়া হবে না।
সত্যিই সাদা সরল মানুষ আবু ছেলেটি। দেখতেও তেমন সুপুরুষ নয়। রাজার ছেলে হলে কী হবে? ভারি অনাদর আর অবহেলায় বড় হয়েছে সে। নাছোড়বান্দা ছেলের কথায় বাবা কিন্তু কিছুতেই রাজি হোল না। জাহাজ বা উপহারের ব্যবস্থাও হোল না কিছু। 
অগত্যা নিজেই একটা ডিঙি নৌকায় চেপে রওণা দিল আবু। সামান্য কিছু রুটি নিয়েছে পথের খাদ্য হিসাবে। এ ছাড়া কিছু নাই তার নৌকায়। নদীর পাড়ে তখন লোকে লোকারণ্য। দল বেঁধে রাজ্যের প্রজারা এসে ভীড় করেছে। আসলে, ভারী দয়ালু এই ছেলে। নিয়মিত গরীবগুর্বো প্রজাদের সাহায্য করে সে। তাই তো সকলে এসে ভীড় করেছে তার বিদায় বেলায়।
নৌকা ভাসিয়ে চলেছে আবু। এক সময় দেখল, এক ঝাঁক ডলফিনও চলেছে তার নৌকার দু’পাশ জুড়ে। আবু তো ভারি খুশি। সারাটি রাস্তা নিজের খাবার রুটিগুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিতে লাগল ডলফিনদের। তারাও নানান কসরত দেখাতে দেখাতে ভেসে চলল।
রাজার বাড়িতে পৌঁছে এক ফ্যাসাদ। দেউড়ির সেপাই কিছুতেই তাকে দরবারে যেতে দেবে না। এমন উলুঝুলু পোশাকের একজন রাস্তার ছেলেকে ভেতরে যেতে দিতে সে রাজি নয়।
আবু বলল—ঘাড়ে কটা মাথা হে তোমার?
--কেন, কেন? মাথার হিসাব গুণে তোমার কী কাজ?
--কাজটা আমার নয় হে, তোমার। রাজকুমারিকে কথা বলাতে এসেছি আমি। আর, তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ। রাজামশাইর কানে গেলে, মুণ্ডুটা ধড়ে থাকবে তো?
সেপাইটা একটু ঘাবড়ে গেল শুনে। কী দরকার ঝামেলায় গিয়ে। ফটক খুল দিল সে।
সবে দরবারে ঢুকেছে আবু। রাজা বলে উঠলেন—আরে, আরে। কে তুমি? দরবারে ঢুকেছ কেন?
--শুনলাম, আপনার মেয়ে কথা বলছে না। তাকে কথা বলাতে এলাম আমি। আবুর গলায় ভয়ডর নাই।
রাজার পাশেই বসে আছে রাজকুমারি। দু’দিকে মন্ত্রী-শান্ত্রী, উজির-নাজির, লোক-লস্করদের ভীড়। ভরা দরবার। একজন বলল—না পারলে, সারাজীবন রাজকুমারির বেগার খাটতে হবে, সেটা জানো? বলি, ঘিলু বলে কিছু আছে তো মাথায়, না কি?
গোটা দরবার হো-হো করে হেসে উঠেছে। তাতে আবুর মেজাজ গেল বিগড়ে। বলল—ঠিক আছে। তাহলে কার মাথায় কতটা ঘিলু, দেখা যাক।
আবু বলতে লাগল— শুনুন, একটা গল্প বলি তাহলে।  তিন ভাইয়ের একটা জমি ছিল। এজমালি জমি। বড়ভাই লাঙল চালিয়ে মাটি তৈরি করে দিল। জমিতে বীজ ছড়াল মেজভাই। ছোটভাই জমিতে সেচ দিয়ে দিয়ে ফসল ফলাল। এবার বলুন, পাকা ফসল কে তুলবে?
কারও মুখে কথা নাই। রাজামশহাইও চোখ কুঁচকে আছেন। আবুর মুখে মুচকি হাসি। হঠাৎই শোনা গেল—কেন, ছোটভাই পাবে ফসল। সেচ না দিলে, ফসল ফলত না কি? গাছই তো বাঁচতো না।
কে দিল? কে দিল জবাব? সবাই অবাক।
কে আবার দেবে? রাজকুমারিই জবাব দিয়েছে। হাসিও লেগে আছে সে মেয়ের মুখে। সারা দরবার হৈ-হৈ করে উঠল। রাজামশাই যত অবাক, তত খুশি। মেয়ে কথা বলেছে, এর চেয়ে আনন্দের কী আছে!
কিন্তু একটু বাদেই রাজার মুখ গম্ভীর। সবই ঠিক আছে। কিন্তু এমন একটা ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যায় কী করে?
বুড়ো মন্ত্রী বলল—রাজামশাই, মন খারাপ করবেন না। বরং আর একবার পরখ করে দেখা যাক।
রাজার মনে ধরল কথাটা। বললেন—শোন গো, ছেলে। ঐসব চালাকি করে রাজার মেয়েকে বিয়ে করা যায় না। 
আবু বলল—কিন্তু ঢেঁড়া দিয়ে তো বলা হয়েছিল, কথা বলাতে পারলেই, রাজকুমারীর সাথে বিয়ে দেওয়া হবে।
রাজা বললেন—ঠিক আছে। আগামীকাল আর একবার কথা বলাও আমার মেয়েকে। সেই সাথে তোমার বুদ্ধিটাও আর একবার বাজিয়ে দেখে নেওয়া যাবে।
সেদিনকার মতো রাজসভা শেষ। আবুকেও রাখা হল বেশ আদর যত্ন করে। রাত কেটে সকাল হয়েছে। সেদিন রাজসভায় বিপুল ভীড়। সবাই শুনেছে ছেলেটার কথা। চারদিক ঝেঁটিয়ে লোক হাজির হয়েছে দরবারে।
রাজা বললেন—তাহলে দেখাও তোমার বুদ্ধি। মেয়েকে কথা বলাতে হবে। দেখাতে হবে মগজের খেলাও।
আবু বলল—একজন রাজার তিনজন ছেলে। তাদের একজনের ছিল একটা শক্তিশালী দূরবিন। একজনের ছিল একটা যাদু কার্পেট। একটা যাদু আপেল ছিল অন্যজনের। হয়েছে কী, তারা তিনজনেই এক দেশের রাজার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। বড়ছেলে দূরবিন দিয়ে দেখল, সে মেয়ের ভীষণ অসুখ। বাঁচে কি বাঁচে না, এমন দশা। তিনজনেই বলল—চলো, সেই রাজ্যে যাই। গিয়ে দেখা যাক, কিছু করা যায় কি না। 
মেজছেলে তাড়াহুড়ো করে কার্পেট বের করে আনল। তাতে চেপে রাজবাড়িতে গিয়ে পৌঁছল তিন ভাই। সত্যিই মেয়েটির তখন একেবারে মরণ দশা। এই যায়, কী সেই যায়। একটা যাদু আপেল ছিল ছোট ছেলের হাতে। সে আপেল বাড়িয়ে ধরে, মেয়েকে বলল— ছোট্ট করে একটা কামড় বসাও তো আপেলটায়। দেখি কী হয়।
ছোটর কথায় সেই আপেলে কামড় দিতেই, রাজকুমারী একেবারে সুস্থ্য হয়ে উঠল। এবার ভেবে বলুন, তিন ভাইয়ের মধ্যে কে বিয়ে করতে পারবে তাকে? 
দরবার চুপ। কথা নাই রাজামশাইর মুখেও। বাবার পাশে বসা মেয়ের মুখে হাসি। সে বলে উঠল, এতো ভাবাভাবির কী আছে এতে? ছোটছেলেই বিয়ের অধিকারী। 
হই-হই করে উঠল পুরো দরবার। রাজমশাইও ভারি খুশি। বুড়ো মন্ত্রী কানে কানে বলল—আর দোনামনা নয়। এর সাথেই বিয়ে হবে আমাদের মেয়ের। 
ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল রাজকুমারির। গোটা রাজ্য নেমন্তন্ন খেল রাজবাড়িতে। 
ছোট ছেলে জামাই হয়েছে। রাজামশাই বললেন— দু’দিন বাদে তোমাকেই তো রাজ্য চালাতে হবে। এবার থেকে তুমি দরবারে বসবে আমার পাশে। কাজকর্ম শিখে নেবে।
ছোট বলল—সে হবে তখন। তার আগে আমি একবার দেশে যাব। বাবার সাথে দেখা করে আসব।
রাজামশাই শুনে ভারি খুশি। রাজা হয়েও বাবার কথা মনে রেখেছে। ভারি ভালো লাগল তাঁর। রাজি হয়ে গেলেন। ছোট বলল—আমার একটা দাবি আছে। আমার দুই ভাইকে ছেড়ে দিন। তাদের আমি বাবার কাছে পৌঁছে দিয়ে আসি। 
রাজা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে দিলেন। পরের দিন। রাজামশাই বড় জাহাজ সাজিয়ে দিতে চাইলেন। ছোট রাজি হোল না। নিজের সেই ডিঙিনৌকায় চড়ে যাবে সে।
রাজকুমারী আর দুই ভাইকে নিয়ে চলেছে আবু। কিছু দূর গিয়েছে। দুই বড় ভাই ফন্দি এঁটেছে, আবুকে মেরে ফেলবে। রাজকুমারিকে বিয়ে করে নেবে বাড়ি ফিরে। নৌকা তখন মাঝ নদীতে। ছোটকে তুলে জলে ফেলে দিল দুজনে। এবার মনের আনন্দে বাড়ির পথে চলল।
কিন্তু কথায় বলে না—রাখে ভগবান, মারে কে? আবুর বেলায়ও তাই হয়েছে। ফেরার পথেও সেই ডলফিনেরা ঝাঁক বেঁধে চলেছিল নৌকার দু’পাশে। জলে ফেলে দিতেই, তারা টুক করে তুলে নিয়েছে আবুকে। পিঠে চাপিয়ে, তারাও চলেছে নৌকার পাশে পাশে। দুই ভাই, রাজকুমারী কেউ জানতেই পারল না সে খবর।
তিনজন রাজবাড়িতে পৌঁছতেই, আনন্দের শেষ নাই রাজার। ছেলেরা ফিরে এসেছে। সাথে অত বড় রাজ্যের রাজকুমারিও। রাজা বলল—বউ নিয়ে ফিরেছ। এবার ঘটা করে ভোজের আয়োজন করব রাজবাড়িতে। 
শুনে রাজকুমারী কাঁদতে শুরু করেছে। রাজা অবাক হয়ে জানতে চাইল—তুমি কাঁদছ কেন, বাছা?
রাজকুমারি বলল—আমি তো এদের কাউকে বিয়ে করিনি। আমার তো বিয়ে হয়েছে ছোটর সাথে।
রাজা আরও অবাক-- ছোটর সাথে বিয়ে হয়েছে তোমার? তাহলে, আমার সে ছেলে কোথায়?
রাজকুমারিকে কিছু বলতে দিল না। দুই ভাই বলে দিল—সে তো জলে ডুবে মারা গেছে। সে আর আসবে কোথা থেকে? 
এমন সময় বাইরে থেকে কিসের যেন কোলাহল শোনা গেল। এক দল লোক হই-হই করে ঢুকে পড়ল রাজার দরবারে, রাজ্যেরই সাধারণ প্রজার দল। আর, তাদের সাথে এসেছে ছোট রাজকুমার আবু। দেখতে পেয়েই রাজকুমারি ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে তাকে—দেখুন, এই তো রাজকুমার। এই তো কথা বলিয়েছিল আমাকে। এর সাথেই বিয়ে হয়েছিল আমার। এরা দুজন ভারি দুষ্টু। নিজের ভাইকে মাঝনদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। 
--তাহলে, ফিরে এলো কী করে? রাজামশাই বিস্মিত। প্রজারা বলল—হ্যাঁ, রাজামশাই। কথাটা ঠিক। ফেলেই দেওয়া হয়েছিল ছোট রাজকুমারকে। এক দল ডলফিন পিঠে চাপিয়ে বয়ে এনেছে একে। তারাই ডাঙায় তুলে দিয়ে গিয়েছে।
গোটা দরবার চুপ। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনল এই কাহিনী। দুই রাজকুমার দাঁড়িয়ে আছে মাথা নীচু করে।
রাজকুমারি রাজাকে সেলাম জানিয়ে বলল—আপনি এদের উপযুক্ত বিচার করবেন। অনুমতি দিন, আমরা দুজন বাবার কাছে ফিরে যাচ্ছি। 
ছোট রাজকুমারের হাত ধরে, রাজকুমারী বলল—চলো এবার। সেখানে বাবা অপেক্ষা করে আছে। তুমিই তো রাজা হবে সেখানে।
আবার ডিঙা ভাসল জলে। প্রজারা ভিড় করে এসে দাঁড়িয়েছে জলের কিনারায়। একজন দয়ালু মানুষ চিরকালের জন্য চলে যাচ্ছে তাদের ছেড়ে। চোখের জল বাধা মানছে না তাদের। 
ডলফিনেরা আবার এসেছে দল বেঁধে। তারাও ভেসে চলল নৌকার দু’পাশ জুড়ে।

Post a Comment

0 Comments