পুরনো ঘাটের কথা
আমার ঘাট অনেক পুরনো
জলের আয়নায় ধরা পড়ে কালের রেখা,
বট, অশ্বত্থ, আর কিছু বিসর্জিত বিকেল
আঁকা থাকে ভেজা সিঁড়ির ধূসরতায়।
এই ঘাটে কেউ কোনোদিন করেছিল প্রেম,
কেউ করেছিল প্রতীক্ষা, কেউ নিঃশব্দ ত্যাগ।
স্মৃতির রন্ধ্রে জমেছে অভিজ্ঞতার ধুলো
যেন কোনো প্রাচীন পুরোহিত,
মুখে মন্ত্র নেই, তবু পূজার অভ্যেস আছে তার।
বটগাছের নিচে বসে যারা, তারা সকলেই ঋদ্ধ
তাদের চুপ থাকা একেকটি শ্লোক।
আমরা মাথা নুইয়ে শ্রদ্ধা জানাই,
ভুলে যাই, ছায়ার নিচেও পড়ে রোদ।
তবু জানি
শুধু জ্ঞান নয়, শুধু শ্রদ্ধা নয়
কর্মই সেই নদী, যা বয়ে নিয়ে যায় ভবিতব্যের তীরে।
আর প্রতিটি পদক্ষেপের পাশে বসে থাকে শনি,
সে দেখে, গুনে রাখে, আর চুপিচুপি লেখে
কার পাতায় কতটা রৌদ্র, কতটা ছায়া।
এই ঘাটে বিসর্জনও হয়েছে বহু
না, মূর্তি নয়, ভক্তির নয়
এখানে বিসর্জন হয়েছে সেই আয়নার,
যেখানে প্রতিফলন ভেবেছি শিখর;
যা ছিল কুয়াশার দম্ভে ঢাকা
যা ত্যাগ না করলে, কর্মের দরজা খোলে না।
আমরা যারা নদীর গভীরতা মাপি পাথর ছুঁড়ে,
সে নদীর তলদেশে ক’জন নামি তা কে জানে!
জলের স্তব্ধতাকে ভেবে নিই নিস্তেজ,
ভেবে নিই—নীরব মানেই শূন্যতা।
অথচ সেই স্তব্ধ জলে রয়ে যায় কালের আর্তি,
অভিজ্ঞতার পলি জমে যে কাদা, তা চোখে পড়ে না সহজে।
তাই আজও আমি ঘাটে বসে থাকি,
বটের পাতায় শুনি বাতাসের মন্ত্র,
অশ্বত্থের ছায়ায় দেখি এক বিসর্জনের দৃশ্য,
ক্ষয়ে-যাওয়া শানের কোণে জমে থাকা টুকরো জল,
আর শনি—সে নিঃশব্দে লিখে যায় আমার ভবিষ্যৎ,
আমারই কর্মের কলমে।
🍂
তুমি আছো
দিনভর বুকে জেগে থাকে এক মরুভূমি,
তৃষ্ণার নাম—তুমি।
আকাশ যখন রোদে পোড়ে,
আমার চোখ দুটো তখন খুঁজে ফেরে
এক ফোঁটা চুম্বনের ছায়া।
একটা ময়না, যেন প্রেমের বার্তাবাহী,
বসে পড়ে গাছের মঞ্চে—
তার লেজে ঝুলে থাকে ব্যাকুলতা।
তার সাথী আসে, তারা ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়
যেন শব্দহীন কবিতা লেখে আমার মনের খাতায়।
ওরা জানে না যুদ্ধ কি,
জানে শুধু ছায়ায় লুকনো শান্তির স্বাদ।
আমি চেয়েছিলাম তেমনই
তোমার ঠোঁটের ছোঁয়ায়
একটা পৃথিবীর খোঁজ, যেখানে
বেঁচে থাকা মানে ভালোবাসা।
তুমি আসো না, তবু হাওয়ায় বাজে
তোমার নিঃশ্বাসের বাঁশি,
চোখ বুজলেই দেখি—
তুমি আমার হৃদয়ের জানালায় বসে আছো,
জোনাকিরা আলোয় সাজায় মিলনের মেহফিল।
তোমার হাসি মাখা মুখ
একটা গোপন দরজা,
যেখানে ঢুকলেই—
দুঃখ হারায়, ক্লান্তি মরে,
আর আমি জন্ম নিই, বারবার
তোমার ভালোবাসায়
একটা মিষ্টি গন্ধ কোষে কোষে
ছড়িয়ে দেয় তোমার অনুভূতি
তুমি আছো!
তুমি আছো!
তুমি আছো!
আমায় ছুঁয়ে
রং টুকু থাক
কি রঙে সাজিয়েছ আজ তুমি নিজেকে?
প্রশ্ন নয়,
একরাশ ভালোবাসা অঝোর ধারায় নামে।
ভিজিয়ে দেয় আমাকে,
কানে কানে বাতাস—
কি খবর দেয় তোমাকে?
চায়ের চুমুকে উষ্ণতা,
আমার ঠোঁট ছুঁয়ে—
জানিনা সে আর্দ্রতা
কি বলে তোমায় গিয়ে।
তোমার যে আমায় এত করে চাওয়া,
পাই না খুঁজে মানে—
দেওয়ার ঝুলি উল্টে দেখি,
আমি তো আটকে পিছুটানে।
তবু, তুমি—
এতটুকু রঙে, ক্ষণ ক্ষণ সাজাও আমায়,
মোহময় কোন ঢঙে।
রঙের আড়ালে ছড়াও যে রং,
নিজের রঙে মনকে রাঙিয়ে,
সে যে অধিকার করে যায়—
আমার থেকে আমাকে নিয়ে।
বলবো না আর আজকের রং,
আমি তোমাকে ...
ভালোবাসার ব্যাকরণ
ভালোবাসা কি কেবল স্পর্শের দাবি?
না কি, সে এক নিঃশব্দ আকাশ
যেখানে হৃদয় কথা বলে,
আলো ছুঁয়ে তবু ঢাকা মেঘের ছায়ায়।
কেউ তো আছে—জানি,
আমাকে ভাবে
আমি আছি ,শুধু সেই বিশ্বাস
আমার নিঃশ্বাসে ভরে
তুমি প্রতীক্ষায় জড়িয়ে নাও আমাকে আপন করে।
তুমি যখন চোখ বুজে ভাবো আমায়,
মনের ভিতর কাঁপন হয়।
ভালোবাসা এখানে শরীর ছুঁয়ে নয়,
আত্মা ছুঁয়ে বাঁচে—
যেখানে দুইটি মন মিলিত হয়
অন্তর্লোকে, আত্মোপলব্ধির দীপ্তিতে।
জীবন এক মহাকাব্য—
তুমি তার প্রথম ছন্দ,
আমি শেষ পঙ্ক্তি—
আর মাঝখানে শুধু ভালোবাসার
অদৃশ্য ব্যাকরণ
1 Comments
তিনটেই ভালোবাসার কবিতা। তাই ভালোলাগা খুব স্বাভাবিক।
ReplyDelete