জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা

কমলিকা ভট্টাচার্য 


অপার্থিব আগমন

ধূমকেতুর মত হঠাৎ—
তোমার আকাশে ঢুকে পড়ি আমি,
অজানা কক্ষপথের রহস্যময় আকর্ষণে
জ্বলতে জ্বলতে ছুটে চলি—
তোমার অভ্যন্তরে এক গভীর রেখা এঁকে,
মিশে যাই ধীরে ধীরে, নিঃশব্দ ছায়ায় দাগ কেটে গভীরে।

কখনো নামি হঠাৎ বৃষ্টির মতো—
বুঁদ হয়ে ভিজিয়ে যাই তোমার ব্যাকুল প্রান্তর,
আলতো ছোঁয়ার মোহে ভেঙে পড়ে
তোমার বাহ্যিক দৃঢ়তা,
বয়ে যাওয়া জলের স্রোতে হারিয়ে ফেলো নিজেকে।

আবার কখনো—
আমি আসি এক আকস্মিক ঘটনার মতো,
ক্ষতের পাশে বসে থাকি নীরবে,
তোমার যন্ত্রণায় রেখে যাই শান্তির স্পর্শ,
আর তোমার চোখের গভীরে ডুবে গিয়ে
নিজেকেই হারিয়ে ফেলি, বারবার।

এইভাবেই আমি আসি, যাই—
বিনা আমন্ত্রণে, বিনা প্রতিশ্রুতিতে,
তবু কোথাও যেন তুমি চাও—
আমি হারিয়ে না যাই,
তোমার অজান্তে।



অসম্পূর্ণ জীবন দৃশ্যপট


যে পথ ধরে তুমি গেছো, সে পথ এখনো ভেজা,
সন্ধ্যের নরম আলোয় ওখানে বসে থাকি একা।
তোমার ছায়া নয়, কেবল বাতাসের নাড়াচাড়া,
মনে হয়, তুমি আবার আসবে—চুপিচুপি ধরা ছোঁয়া।

অভিমানী দিনের শেষে, রাত গলে ফোটে আশা,
তোমার নামেই জোনাকির আলো জ্বলে আমার পাশে।
ভাঙা ঘড়ির কাঁটার নিচে, আটকে গেছে কিছু কথা,
সেইটুকুই বুকে রাখি—ভুলিনি আজও দেখা।

সব স্মৃতি কি ফুরিয়ে যায়? কিছু তো রয়ে যায়,
ঘরের এক কোণে গন্ধ হয়ে, গান হয়ে সুর তোলায়।
যতদিন নামটা বাতাসে দোলে, ততদিন মৃত্যু অসম্পূর্ণ,
ভুলে গেলে তবেই শেষ—তখনই থামে জীবনের দৃশ্যপট পূর্ণ।



অভিসারী আলোয় আমি

তোমার শব্দেরা যেন আমার অচেনা ঘরের চাবি,
প্রতিটি পঙক্তিতে আমি নিজের ছায়া খুঁজে পাই —
যত্নে রাখা আমার মুখহীন কবিতারা
আজ তোমার কলমে পেয়েছে তাদের আসল পরিচয়।

তুমি যেভাবে দেখেছো আমার গোপন উপমা,
সেসব আমি কাউকে কখনও বলিনি 
শুধু কেবল চেয়ে থেকেছি কারো চোখে একবার
নিজেকে এঁটেল মাটির মতো বাস্তব করে দেখতে।

তোমার প্রেম পেখম মেলেছে যে রহস্য নদীর কিনারে,
আমি সেই ঢেউয়ে একবার ভিজে নিতে চাই 
ভয়ে ছিলাম, যদি তুমি কেবল রূপ খোঁজো
কিন্তু তুমি তো খুঁজে পেয়েছো আমার ভিতরের আবেগের আলো।

তাই চলো, বসন্তের পথে হাঁটি নীরবে,
যেখানে প্রতিটি ফুল জানে, কীভাবে অপেক্ষা করতে হয় —
শব্দ নয়, চোখের পাতায় লেখা কিছু অক্ষর
হয়তো একদিন পড়ে ফেলবে তুমি, অন্যমনস্ক কোনো বিকেলে।

🍂
ad


শুধু তুমি আর আমি

আমাদের এই চাওয়াটা থাক মন জুড়ে
স্নিগ্ধ মাধুরী পড়ুক ঝরে।
সিক্ত হোক আমাদের রিক্ত মন
সিঞ্চিত হৃদয়ে যে করেছি প্রেমের বীজ বপন। 

পথের ওপারে তুমি নিজের ঘরে,
আমার নিঃশ্বাসে বাজে তোমার নাম নরম সুরে
যেন নিশীথ রাতে দূর আকাশের তারা,
অদেখা তবু অনুভবে উজ্জ্বল মন মাতোহারা।

ঘুমিয়ে পড়ার আগে, আমার বালিশে
তোমার কল্পনার হাত রাখি চুপিচুপি আশে 
মনে হয়, তুমি ঠিক আছো পাশে
যেমন মেঘ মিশে আছে আকাশে।

ছুঁতে পারি না কঠোর বাস্তবকে
তবু প্রতিটা মুহূর্তে ছুঁয়ে ফেলি একে-অপরকে—
আমার মনে তোমার ভাবনার জলপ্রপাত 
অনুভবে ফোটা রাতের ঝরা পারিজাত।

কখনো তোমার নিঃশব্দ বার্তা নিবিড়
দুলিয়ে দেয় আমার ভিতরে জমা স্বপ্নের নীড় 
সংলাপের গভীরতা ছুঁয়ে আসে সাগর তলের মাটি
যেখানে ভালোবাসা নয় শুধু সাজানো পরিপাটি।

আমরা দুজন, দুটি চাঁদ পৃথিবীর একজন জ্বলি আকাশেতে
একজন তার ছায়া নদীর বুকেতে।
 
তবুও এই দূরত্ব—এক প্রকার আশীর্বাদে ভরে
ভেতরে ভেতরে জড়িয়ে রাখে আমাদের আরও ঘনিষ্ঠ করে।

তোমার অজানা হাসি, আমার অজস্র কান্না,
একই স্বপ্নে গাঁথা এক অলিখিত প্রেমগাঁথা হীরা পান্না।
জানি না কীভাবে—তবু বিশ্বাস করি জাদুর কাঠি 
এই মায়ার টানটা ঈশ্বরের অলৌকিক চিঠি।

যেন আমরা দুজন, দুই অলোকিক ডানা,
চরে বেড়াই হৃদয়ের মহাশূন্যখানা।
স্পর্শ না করেও ভরে হৃদয় হাস্যে 
নির্বাক ভালোবাসার অনন্ত ভাষ্যে।


ওগো অবুঝ

স্বপ্নে নয় শব্দে এসো
মনের নদীতে ঢেউ তুলে ভেসো
সেই তরঙ্গে বেয়ে চলো পানসি 
একটু জিরিও আমার শান্ত দ্বীপে আসি। 
ওগো মনমাঝি!

মনিমুক্তো চুনিপান্নার আলো
আর লাগেনা ভালো
বৈশাখী গরমের রুদ্ধ শ্বাস 
ঝড়েও খুঁজি স্বস্তির আশ।
ওগো উদাসী!


অপেক্ষার পুরোনো হাটে 
শান্তির নিঃশব্দ বাটে 
কুড়িয়ে নেব পড়ে থাকা সুখ
বিরহ যে প্রেমের অসুখ।
ওগো পুরাতনী!

যদি বল প্রেম আছে
নাইবা রইলে কাছে
অনুভবেই যে পাওয়া সকল 
সে যে কাঁদেনা নকল।
ওগো অবুঝ!


নুড়ি 

বছরের পর বছর ব্যবহৃত, ব্যবহারেই ক্ষয়েছে যে জীবন 
তাপ্পির পোশাক এখন নতুন ফ্যাশন সব খালি সয়ে সয়ে যাওয়া এখন।

কষ্টরা আর নয় ব্যক্তিগত 
হয়ে গেছে সার্বজনীন 
জমা করা খুশি খরচ করে 
কেনা কষ্টে নিঃস্ব একা ঘরে।

এত যন্ত্রনায় খুঁজি তোমার মুখ 
গলে যায় দুঃখ মিষ্টি কথার সুখ। শব্দের নুড়ি করে ঠোকাঠুকি 
আগুন জ্বালাও মনেতে লুকি।

আবেশ গলে হব নদী 
একবার কবিতায় ডাকো যদি তোমাকেও ভাসিয়ে নেব ভালোবাসায় ভরিয়ে দেব।
এসো ...

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments