শেয়াল বুড়ির বুদ্ধি
সংগ্রাহক- পূর্ণিমা দাস
কথক- লাবণ্যময়ী দাস, গ্রাম-বেড়াজাল,থানা-নয়াগ্ৰাম, জেলা-ঝাড়গ্রাম
অনেকদিন আগের কথা। সেইসময় চারিদিকে ছিল শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। সেইসব জঙ্গলের মাঝখানে থাকত দু- একটা গ্ৰাম। চারিদিকে জঙ্গল থাকার কারণে সেইসব জঙ্গলে নানা ধরনের গাছ-পালা, পশু-পাখি বসবাস করত। আর সেইসময় জঙ্গলে বাঘ, সিংহ, হাতি প্রভৃতি ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর পশুরা বাস করত। তেমনি একটি জঙ্গলের মধ্যে থাকত এক শেয়াল, তার বুড়ি অর্থাৎ স্ত্রী ও তার চার ছেলেমেয়ে। শেয়াল ও তার বউ সারাক্ষণ ঝগড়া লাগত। কেউ তাদের ঝগড়া থামাতে পারত না। ছোটো-খাটো বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হত। ঝগড়ায় বুড়ির সঙ্গে শেয়াল কোনোদিন পেরে উঠত না, তবুও ঝগড়া লাগত। কখনো বুড়ির কাছে যে হার স্বীকার করত না।
তেমনই একদিন শেয়াল তার বুড়ি ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে খাবারের খোঁজে যাচ্ছিল। সেইসময় কোনো একটা বিষয় নিয়ে শেয়াল ও শেয়াল বুড়ির মধ্যে ঝগড়া লেগে গেল। শেয়াল বুড়িকে বলল-“শোন বুড়ি, তোর থেকে আমার বুদ্ধি বেশি, তোর বুদ্ধি আমার থেকে অনেক কম।” বুড়ি বলল-“না বুড়া তোর থেকে আমায় বুদ্ধি বেশি।” এই নিয়ে তাদের ঝগড়া শুরু হয়। এইরকম ঝগড়া লেগে যেতে যেতে শেয়াল ও তার পরিবার হঠাৎ দেখতে পায় বাঘ তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শেয়াল বুড়ি তখন শেয়াল বুড়াকে বলে-“চল বুড়া, এই বাঘের মাধ্যমে আমরা আমাদের বুদ্ধির পরীক্ষা করব।” বুড়োও মেনে নেয়। বাঘ তাদের দেখে বলে-“আজ আমি তোদের সবকটাকে খাব।” শেয়াল বুদ্ধির পরীক্ষার জন্য তৈরি থাকলেও বুড়িকে সামনের দিকে এগিয়ে দেয়। কারণ সে ভাবে “বেঁচে থাকলে তো বুদ্ধির পরীক্ষা হবে, বুড়ি আগে যাক্। বাঘ বুড়িকে খেতে খেতে আমি বাবা এদিকে পালিয়ে যাব।” এই ভেবে বুড়িকে বাঘের সামনে ঠেলে দেয়। তখন বুড়ি বাঘের হাত থেকে বাঁচার জন্য একটা বুদ্ধি বের করে এবং শেয়াল ও তার ছেলেমেয়েদের বলে-“আমি যা যা করব, তোমরা সবাই তাই তাই করবে।” এই বলে শেয়াল বুড়ি বাঘের সামানে গিয়ে বলে-“রাজামশাই, সেলাম।” তখন তার দেখাদেখি শেয়াল ও তার ছেলেমেয়েরাও বাঘকে সেলাম করে। শেয়াল বুড়ি বলে-“জানো রাজামশাই, আমাদের ঘরে না দিন-রাত ঝগড়া লেগে থাকে। কোনো সময় একটু শান্তি নেই। দয়া করে তুমি যদি একটু এই ঝগড়াগুলো মিটিয়ে দাও, তাহলে খুব ভালো হত। আর ঝগড়া মিটিয়ে দেওয়ার পর না হয় তুমি আমাদের খেও।” তখন বাঘ বলে-“ঠিক আছে বলো কী ঝগড়া হয়, আমি সব মিটিয়ে দেব।” এইতালে আগে ভাগেই বুড়ি শেয়াল বুড়া ও তার ছেলেমেয়েদের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। বুড়ি তখন বলে-“ওরা তো এখানে নেই, তুমি না হয় আগে আমাদের ঘরে চলো, সেখানে গিয়ে নিজের চোখে দেখে তারপর ঝগড়া মিটিয়ে দিও।” বাঘ তখন আর কিছু না বলে শেয়াল বুড়ির সঙ্গে তার ঘরে যায়। ঘরে অর্থাৎ গর্তে পৌঁছে শেয়াল বুড়ি শেয়াল বুড়াকে বলে-“তুমি ঘরের ভিতর গিয়ে বাচ্চাদের চিমটি কাটতে থাকো আর আমি এদিকে বাঘকে সামলাচ্ছি।” তখন বুড়ির কথায় বুড়া ঘরের ভিতরে গিয়ে বাচ্চাদের চিমটি কাটতে থাকে।তখন বাচ্চারা জোরে জোরে চেঁচাতে থাকে। এই শুনে শেয়াল বুড়ি বাঘকে বলে- “দেখেছ তো রাজামশাই, রাত- দিন এরা এইরকমভাবে ঝগড়া চেঁচামেচি করতে থাকে। আমি এদের নিয়ে কী করব বলো তো?।” তখন বাঘ বলে-“ঠিক আছে, আমি ঘরের ভিতর গিয়ে এখনই ওদের ঝগড়া মিটিয়ে দিচ্ছি।” শেয়ালবুড়ি বলে-“না না রাজামশাই, তুমি এখানে দাঁড়াও। তোমাকে ঘরের ভিতর কষ্ট করে যেতে হবে না। আমি ওদের ডেকে নিয়ে আসছি।” এই বলে শেয়াল বুড়ি ঘরে অর্থাৎ গর্তে ঢুকে শেয়াল ও বাচ্চাদের নিয়ে এই গর্ত থেকে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে দূরে অন্য একটা জঙ্গলে গিয়ে উঠে। আর সেখানে গিয়ে ডাকতে থাকে হুক্কা-হুয়া-হুয়া। আর বাঘ এদিকে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ তার আর শেয়ালের পরিবারকে খাওয়া হল না।এইসব দেখে শেয়াল বুড়া বুঝতে পার যে তার বুড়ি অর্থাৎ তার বউর বুদ্ধি তার থেকে বেশি।
0 Comments