জ্বলদর্চি

যেসব কথা লেখা হয় না/পর্ব- ১০/সুমনা সাহা

যেসব কথা লেখা হয় না

পর্ব- ১০

সুমনা সাহা



“স্মৃতি আমার চড়ুইপাখি, বেড়ালছানা

স্মৃতি আমার পাড়া, আমার বাস্তুভিটে

স্মৃতি আমার কাজলদীঘি, শিউলিতলা

স্মৃতি আমার চড়কমেলা, দুগ্গাবাড়ি

স্মৃতি আমার উঠোন, দালান, ছাদের সিঁড়ি

স্মৃতি আমার মা-বাবা, আমার চোদ্দপুরুষ

স্মৃতি আমার চক্ষু কর্ণ জিহ্বা নাসা

স্মৃতি আমার সূর্য চন্দ্র নবগ্রহ

স্মৃতি আমার ক্ষিত্যপ্ তেজ মরুৎ ব্যোম।”


(স্মৃতির ছড়া, নবনীতা দেবসেন, ১৯৩৮)১ 


স্মৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কোনও লেখাই কি সম্ভব? জীবনের সুখদুঃখের নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যে যেগুলো বিশেষ কোনও কারণে কিম্বা অকারণেও মনে দাগ কেটে যায়, তাইই স্মৃতিতে থেকে যায়। এমনকি সাম্প্রতিক অর্জিত জ্ঞান এবং তথ্য ব্যবহার করেই লেখার বিষয়বস্তু তৈরি হয়। তবুও কেবল স্মৃতিতাড়িত আলাপ বা স্মৃতিকথার এক ভিন্ন মাধুর্য আছে। একসময় যা হীরের টুকরো ভেবে বুকে আগলে রেখেছিলাম, এখন জেনেছি, তা মামুলি ভাঙা কাঁচের খণ্ড। এখনের মন নিয়ে পিছন ফিরে সেই সময়টাকে দেখা তাই এক অর্থে আত্ম-বিবর্তনের পথরেখাকেই খুঁজে পাওয়া। নিজেকেই নিজে হারিয়ে পাওয়া। আর এই পাওয়ার মধ্যে দিয়ে আবিষ্কার করি সমাজের বিবর্তন। আমাদের ছোটবেলায় ভালবেসে অসবর্ণ বিবাহ করা সমাজের চোখে অপরাধ হিসেবে দেখা হতো। আমার যৌবনে সেই রক্তচক্ষু খানিকটা কমল। এখন আমার সন্তানদের কালে দেখছি কিভাবে সেইসব পুরনো ধ্যানধারণা পালটে গেল। এ-ও এক অর্থে ইতিহাস।  

ছোটবেলার বিভিন্ন হিট ঘটনার মধ্যে আরেকটা সুপারহিট ঘটনা ছিল আমাদের এক মামার লাভ-ম্যারেজ। সেই মামার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। তখন আমি খুব ছোট। কিছুই মনে নেই। কেবল এটুকু মনে পড়ে, রাত্রে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, মামাতো দিদি এসে টেনে তুলে নিয়ে চুল আঁচড়ে দাঁড় করিয়ে দিল। বলল, “ক্যামেরাম্যান এসেছে, ফটো তোলা হবে।” মামা-মামী চন্দন আর ফুলের সাজ পরে মাঝখানে, একপাশে আমাকে জড়িয়ে দিদি, আরেক পাশে মা আর বড়মামী। সাদাকালো ছবিটা। সেই নতুন বৌ কয়েকদিন পরেই হাওয়া। তার নাকি একজন প্রেমিক ছিল। তারপর থেকেই বিরহে মামা একেবারে উদাস হয়ে গিয়েছিল। সবাই চাইত, মামার আরেকবার ঠিকঠাক বিয়ে হোক। কিন্তু মামাই রাজি ছিল না। বিয়ের উপর থেকে তার মন উঠে গিয়েছিল। এরপর অনেকদিন মামার খবর পাইনি। হঠাৎ এক রাত্রে বিয়ে করে সোজা বৌ নিয়ে এসে উঠল আমাদের কোয়ার্টারে। আমার মা তখন পলিটিকাল সায়েন্স নিয়ে ইভনিং কলেজ-পড়ুয়া, প্রগতিশীল ভাবের মানুষ। তাই আস্কারা পাওয়ার আশায় মামা-মামী এল আমাদের বাড়িতেই। কারণ ছোটজাতের মেয়ে (মামীর পদবী ‘মণ্ডল’) বিয়ে করার অপরাধে দাদু তাকে ত্যজ্যপুত্রও করতে পারে। এখন ভাবলেও হাসি পায়। গভীর রাত্রে মামা-মামী এল। সে কী উত্তেজনা আমাদের। আমাদের ঘরটা ছেড়ে দিতে হল। আর ওরা এত বড় হয়ে গ্যাছে যে দরজায় ছিটকিনি দিয়ে ঘুমায়! সকালে বন্ধ দরজার বাইরে উসখুস, কখন নতুন বৌটা দরজা খুলে বেরোবে। ওর গায়ে কী সুন্দর গন্ধ! মা বলল, “ওদের রাতে অনেক পরিশ্রম হয়েছে, তাই দেরি হবে ঘুম থেকে উঠতে।” ছোটরা চিরকাল অতিরিক্ত প্রশ্ন করে বড়দের বিপদে ফেলে এসেছে। আমরাও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। কিন্তু এ-ব্যাপারে আমার মা ছিল ভীষণ স্মার্ট। ‘প্রণয়পাশা’ সিনেমা দেখতে যাওয়ার সময় আমাদের প্রশ্নের উত্তরে সিনেমার নাম বলেছিল, ‘পনেরো পয়সা’। বড় হয়ে ‘ফল ফুল নাম দেশ’ খেলায় একটা সিনেমার নামের কলমও রাখতাম। তাতে ‘প’ দিয়ে সিনেমার নাম ‘পনেরো পয়সা’ও লিখতাম। বহু বছর পরে জেনেছিলাম সত্যিটা। যাইহোক, এক্ষেত্রেও মা স্মার্টলি ম্যানেজ দিল। কি বলেছিল আজ আর মনে নেই। নতুন মামী সুন্দরী ছিল না। গায়ের রঙ বেশ কালো। আমরা তখন সেসব বোঝার মত বড় হইনি। নতুন মামী হাত নাড়লেই চুড়ির ঝম ঝম শব্দ। নতুন মামীর কাপড়ে সুন্দর গন্ধ। গায়ে কী সব মাখে। সে একটা আস্ত বিস্ময় আমাদের কাছে। নতুন মামীর মন পাওয়ার জন্য আমাদের মধ্যে রীতিমতো কম্পিটিশন লেগে গিয়েছিল। মামী খুব বেশি ঘুমাত। মা বলত, “ওর এখন অনেক পরিশ্রম যাচ্ছে।” আমি একদিন মামীর গায়ের গন্ধের রহস্য জানতে উঠেপড়ে লাগলাম, ওর সব সাজুগুজুর জিনিস নিয়ে গন্ধ শুঁকে দেখছিলাম। মামী হেসে বলল, “এইটার গন্ধ? তোর ভাল লাগে?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, এই গন্ধটাই তো! কি গো এটা?” মামী এক খাবলা ক্রিম আমার গালে লাগিয়ে দিয়ে বলল, “তোর বিয়েতে দেব একটা, হি হি। বসন্তমালতী!” 

🍂
ad

মা একদিন সাহস করে মামা আর নতুন মামীকে দাদু দিদিমার সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে গেল। মা-র বিশ্বাস ছিল দাদু-দিদিমাকে ঠিক যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারবে। হলও তাই। আমি সব ঘটনার সাক্ষী। বড়দের সমস্ত কথার মাঝখানে এক কোণে দাঁড়িয়ে সব শুনতাম, আক্ষরিক হাঁ করে, বলা যায় কথা গিলতাম। মা-র খেয়াল হলে হঠাৎ আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলত, “হাতে দুব্বো দেব?” হাতে কয়েকগাছি দূর্বা নিয়ে নাকি ‘কথা’ শুনতে বসতে হয়। মা তার ছোটবেলায় গ্রামে দিদিমার সঙ্গে এমন অনেক ভাগবত ‘কথা’-র আসরে গিয়েছে। যাই হোক, দাদুর প্রথম আপত্তি ‘ছোট জাতের মেয়ে’। মা-র উত্তর, “বামুনের সাথে বিয়ে হয়ে গোত্রান্তর হল, বড় জাতের হয়ে গেল।” দাদুর দ্বিতীয় আপত্তি, “বড্ড কালো! আর মেয়ে পেল না?” মা বলল, “শিক্ষিত মেয়ে, চাকরি করে। দাদার অতীতের সব কথা জেনেই ভালবেসেছে। দেখো, ও দাদাকে ভাল রাখবে।” তাদের সুদীর্ঘ দাম্পত্য জীবন তার সাক্ষী। আজ সেই মামা ছবি হয়ে গেছে। আমাকে ফটো তুলবার জন্য ঘুম থেকে টেনে তুলেছিল যে দিদি, সেও চলে গেছে তারাদের দেশে। মামী কিন্তু আমাদের মধ্যে এখনো আছে। কিছুদিন আগে একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল, এক কোণে হাসিমুখে বসেছিল। আমাকে চিনতে পারেনি। অনেক স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। আমিও কি হারাইনি? বসন্তমালতীর গন্ধ এখন আমার আর মনে পড়ে না।        

বড়দের আসরে বসে গল্প শোনার আরেক কাহিনী মনে পড়ে। আমরা যাকে বড়মামী বলে জানতাম, আসলে তিনি আমাদের মেজমামী হওয়ার কথা ছিল। আমার মায়ের বড়দা বিয়ের যোগ্য বয়স হওয়ার পরে মা রা গিয়েছিলেন, বাংলাদেশের দাঙ্গায়, আগেই বলেছি। তাই বড়মামাকে মা-মাসিরা মেজদা ডাকত। মামা-মামী দুজনেই বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারতেন এবং প্রচুর বাহুল্যরঞ্জিত সংবাদ পেশ করতেন। তিনি ‘দশ দোকান ঘুরে এটা নিয়ে এলাম’ বললে আমরা ধরে নিতাম, কোন দোকানেই যাননি, ঘরেই বাড়তি জিনিসটা পড়েছিল, সেটাই নিয়ে এসেছেন। মামী তত সুন্দরী না হলেও চোখেমুখে কথাবার্তায় একটা চটক ছিল। গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ। খুব ভাল রান্না করতেন। প্রত্যেক বছর দুর্গানবমীর দিন আমাদের সপরিবার নিমন্ত্রণ থাকত বড়মামার বাড়িতে। আমরা ঐ দিনটার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। কারণ মামী যে পদগুলো রাঁধতেন, আমার মা সেসব রান্না করতেন না। মায়ের রান্না ছিল সহজপাচ্য, ঢলো ঢলো লাবণ্যে ভরা। পাঁচফোঁড়নের গন্ধওয়ালা ঘন ঘন মুসুর ডাল, রাঁধুনি বাটা দিয়ে পাতলা মাছের ঝোল, যেসমস্ত বাঙালি রান্না আমাদের ছেলেবেলায় মা-মাসিরা তৈরি করতেন, সেরকমই, স্পেশাল কিছু নয়। কারণ আমার মায়ের ছিল পড়াশুনোর বাতিক। তিনি বিয়ের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া পড়াশুনো ফের চালু করেছিলেন, প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে, পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভনিং সেশনে ভর্তি হয়ে ডবল এম এ করে তবে শান্ত হয়েছিলেন। তাই রান্নাবান্নার অত তড়িজুতের প্রতি তার মন ছিল না। কিন্তু বড়মামীর রান্নাই ছিল একমাত্র গৌরব। তাতে তিনি পি এইচ ডি বললেও কম বলা হবে। এক একবার এক একরকম খেয়ে এসে আমরা ধন্য ধন্য করতাম। চিতল মাছের মুইঠ্যা, মুড়িঘণ্ট, চাপড় ঘণ্ট, এইসব নানা রকমারি পদ, সব মনে নেই। তারপর নারকোল বাদাম ভাজা দিয়ে আলুর ঝুরিভাজা সেসময় তত কমন ছিল না যেমন এখন সব ক্যাটারাররাই করে থাকে। সেও আমরা বড়মামীর হাতেই প্রথম খেয়েছি। মামীর স্বপ্নের নায়ক ছিলেন উত্তমকুমার। নায়ক বলা ভুল, দেবতা বলা যায়। ঘরে উত্তমকুমারের বাঁধানো ছবি টাঙানো ছিল। আমার বাবা গিয়ে ঐ নিয়ে খুব মামীর পিছনে লাগতেন। উত্তমকুমার যখন সত্যি সত্যিই ছবি হয়ে গেলেন, গুরুদেবের দেহ গেলে শিষ্য যেভাবে হবিষ্য করে অশৌচ পালন করে, মামী নিয়ম করে তাইই করেছিলেন। তবে পড়াশুনো জানতেন না বলে ভিতরে একটা চাপা দুঃখ ছিল মামীর। সেটা কথায় কথায় বেরিয়ে আসত আমার মায়ের কাছে, “তোর মতো তো লেখাপড়া করিনি!” মা ততবারই মামীর রান্নার প্রশংসা করে বলত, “তোমাকে এই রান্নার বিদ্যায় তো কেউ হারাতে পারবে না।” আর একটা দুর্বলতা ছিল মামীর। সে হল এক ঢাল ঘন কুঞ্চিত কেশ। অপূর্ব সুন্দর সেই চুল মামী কখনোই দেখিয়ে বেড়াতেন না। খোপা বেঁধে রাখতেন। একদিন একটি ঘরোয়া আসরে মায়ের প্রাইভেট কোচিং সেন্টারের এক সহপাঠিনী ছাত্রীও যোগ দিয়েছে। আমার মা একে বিবাহিতা তার উপর বয়সে বড় সহপাঠিনী, সেইজন্য মা-কে সে বৌদি বলেই ডাকত। আমাদের বাড়িতে আসত মাঝে মাঝে কোন টানে জানি না, বোধহয় দাদার বান্ধবী ছিল। খেয়ে দেয়ে সে আমাদের বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ত। সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমাত। মা ঠেলে তুলত, “ঝুমুর ওঠ, বাড়ি যাবি না?” ঝুমুরের ছিল ঝুমরো ঝুমরো কোঁচকানো চুল, একেবারে স্প্রিং কয়েলের মত, আন ম্যানেজেবল। মা আড়ালে ওকে ‘ঝুনো নারকেল’ বলত। সেই আসরে সেদিন কেশ পরিচর্যা নিয়ে কথা উঠেছে। আমি সর্বথা ও সর্বদা বড়দের কথার মধ্যে তো থাকতামই, বুঝে না বুঝে কমেন্টও করতাম। কিন্তু আমার উপস্থিতি সকলের কাছে খুব আদরণীয় ছিল, মা মাঝে মাঝে শাসন করলেও কেউ চাইত না আমি চলে যাই। যাইহোক, সে সময় ঝুমুর মায়ের প্রশংসা আরম্ভ করল। পড়াশুনো, ব্যবহার, আন্তরিকতা সব শেষ করে চুল নিয়ে পড়ল। “বৌদির চুল দেখ, একদম সিল্কের মত, নরম, মসৃণ...” ঝুমুর বলেই চলেছে। মা বলল, “ঝুমুর কী আরম্ভ করলি? চুপ কর তো!” বড়মামী এইবার বলে উঠল, “বুলু, আমি যদি চুল ছাড়ি?” সবাই চুপ। মা এবং উপস্থিত সবাই সেদিন বড়মামীকে খোঁপা খোলার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল। বড়মামীর নাসা স্ফীত হল। মুখে ছড়িয়ে পড়ল এক উজ্জ্বল বিভা। খুব ধীরে, প্রায় জাদু দেখানোর মত খুলে ফেলল বড় হাত খোঁপাটি। পিঠময় ছড়িয়ে পড়ল ঘন কুঞ্চিত এক ঢাল চুল। মৃদুস্বরে কেবল বলল, “তাও তো এখন অনেক চুল উঠে গেছে।” আমার চোখের সামনে গল্পের ‘কেশবতী কন্যা’, তার মেঘসম এলানো কেশভার, আত্মপ্রশংসার লজ্জায় নত তার দৃষ্টি! ঠিক যেন চিত্রকরের তুলিতে আঁকা একটি ছবি। আমি বললাম, তোমাকে তো শকুন্তলার মতো লাগছে!” আমার এই পাকা মন্তব্যটি ফ্যামিলিতে হিট হয়ে গেল। সেদিনের পর থেকে আমাদের বাড়িতে কারুর কোন কথা থামিয়ে দেওয়ার কোড হয়ে গেল, “আমি যদি চুল ছাড়ি?” আমাদের রন্ধন-পটীয়সী বড়মামীও তারাদের দেশে চলে গেছে। যাওয়ার আগে কয়েকমাস ছিল বিছানায় শয্যাশায়ী, অর্ধ-অচেতন। মামা তার বিশাল বপু নিয়ে মামীর সমস্ত পরিচর্যার ভার নিজের হাতেই তুলে নিয়েছিল। খুব সেবা করেছিল। দু’জনার ভাব ছিল কিংবদন্তী সমান। প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার আগে আচ্ছন্ন অবস্থায় কম্পিত দুটি হাত তুলে মাথায় ঘোমটা তোলার ভঙ্গি করে ইশারায় বসার জায়গা দিতে বলেছিল, সামনের দিকে চেয়ে প্রণামের চেষ্টা করছিল। আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো অন্তিমে শ্রীগুরুদেব এসেছেন রামকৃষ্ণ-ধামে নিয়ে যেতে। মামী মা-কে খুব মানত। সব কিছুতে একটু পরামর্শ করে নিত, “বুলু তুই কি বলিস?” বড়মামাদের বাড়িতে মা-কে ডাকত ‘বুলু’ আর মেজমামার ডাক ‘কৈদি’। মা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দীক্ষা নেওয়ার পর মামা-মামীও মায়ের ব্যবস্থাপনায় দীক্ষা নিয়েছিল একই গুরুর কাছে। শেষের দিকে মামী আর তার প্রাণের মানুষ, উত্তমকুমারের ছবির দিকে তাকাতো না। গুরুদেবের ছবি কেউ সামনে ধরে দিলে খানিকক্ষণ বুকে নিয়ে প্রণাম করে ফিরিয়ে দিত। ‘ভূত’ আছে কি নেই, তাই নিয়ে কত আলোচনা তর্কাতর্কি বড় হয়ে শুনেছি। কিন্তু ছোটবেলায় যত মৃত্যুদৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছি, লক্ষ্য করেছি, তাঁরা কিছু না কিছু দেখছেন, যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। মৃত্যুপথযাত্রী ঢং করছে বা মিথ্যে করে অভিনয় করছে, এটাও তো মন মেনে নেয় না। তাই বিশ্বাস করেছি, তাঁরা সূক্ষ্মদেহীর দর্শন পাচ্ছেন, তাকে ভূত বললে ভূত, ভগবান বললে ভগবান।   

পাদটীকা ১- স্মৃতি প্রসঙ্গ ও প্রয়োগ, জ্বলদর্চি, ২৩ বর্ষ, নবম সংখ্যা। 

(ক্রমশ)  

Post a Comment

0 Comments