গুচ্ছ কবিতা
সুপ্রভাত মেট্যা
বিধানলতিকা
মানুষ হারিয়ে গিয়ে অন্ধকার নেমে আসছে এখন
মানুষের ভিতর। শ্মশানপুরি আর যম ও জেলি-জ্যামের
ভোগ তৈরি হচ্ছে। আনন্দে নেচে উঠছে, রাত ও কারবারির
অসুখ সংগ্রহের মানুষজনেরা, জোর!
এরই মধ্যে আতঙ্কের হাওয়া বইছে শোঁ শোঁ করে।
গাছপাতার কবিতা-কথা উড়ে যাচ্ছে দূরে, ভয়ে,
ভীষণ দূষনপঙ্খীর ধুলোর চিৎকারে এখন।
আশঙ্কা আর উদ্বেগের বয়সে ভরে যাচ্ছে সময়।
ওদিকে আরোগ্য নিয়ে সভা বসিয়েছেন প্রকৃতি এবং ঈশ্বর।
তারপর সভা শেষে, বেরিয়ে, মিশেল কণ্ঠে উনারা উভয়েই বলে উঠলেন: ভালো থাকতে গেলে ভালো হয়ে থাকাটাই এখন
প্রধান ওষধি হয়ে দাঁড়িয়েছে আপনাদের কাছে, মানুষ!
সন্তান টান
বেঁচে থাকা ভালো,
যদি সে বেঁচে থাকায় বাঁচার আর্তি-জীবন না হয়ে থাকে।
দুঃখের সমগ্র প্রসারণ শুধু জলের গভীরে নয়।
ধারাস্নানে সংসারও সুখের হয়ে ওঠে।
আনন্দদিনের আলো হয়ে ফোটে, গৃহস্থের ও-মেয়েরা।
তোমার দুপুর পারাবার স্রোতে যে আগুন;
সেও তো এক প্রকার বৃষ্টিরই উৎস, তাইনা?
ভালো থাকার ব্যাপার-সহস্রের ভিতরেই
একাগ্রচিত্তের প্রাণ হতে হয় মানুষকে;
তবেই শান্তি পাওয়ার যায়।
যেকোনও পরিস্কার মনস্কের আকাশই
রৌদ্র উঠলে তবে, ঝলমলিয়ে ঈশ্বর দেখতে পায়।
মায়ের সন্তান টানের ভেতর দিয়েই
এখনও পৃথিবী সূর্যের হয়ে আছে!
জলের জন্য
এই জলে আমার বসবাস নয়।
অথচ জলের অবগাহন জীবিকা
আমার প্রবাহ-জীবনের একমাত্র অবলম্বন স্রোত।
দুঃখবাহিকার যা-কিছু কর্মযজ্ঞের ওম, তার সবই
ওই জল থেকে উঠে আসা।
এমনকি ঘৃতাহুতির শিখায় যে নীল, আমার পুড়ে যাওয়া
সুখের নামকথা ভেসে ওঠে তাও ওই জলের জন্য।
জলের শ্রীমাধ্যমেই খুঁজে বেড়ায় আমার অতিশয় স্বপ্ন, এক-একটি রঙিন ঠিকানা।
স্বর্গ লাভের একমাত্র নিরলস প্রচেষ্টাই হল জল-
আমার অশ্রু সজল ভেসে যাওয়া কর্তব্যের এক-একটা পথ, ঘাত-প্রতিঘাতের প্রতিটি মুহূর্তের
বাঁক নিয়ে চলে যাওয়া প্রগাঢ় অন্ধকারের দিকে
আহা কী সকরুণ!
🍂
রজনী সৌরভের ঘ্রাণ
যত বেশি আলোর দিকে এগিয়ে যাই
অন্ধকার সামনে এসে দাঁড়ায়। বলে, রজনী সৌরভের ঘ্রাণও
তোমাকে কবিতা দিতে পারে,
আলো দিতে পারে বাঁচার; সেটা জানো?
সিঁড়ির চাপ চাপ ধাপে,
যে উতরে যাওয়া উপরের মসৃণ লেখা ভেসে ওঠে,
তা একান্ত আমারই,
শিকড়ের গভীর নীরবতা থেকে উঠে আসা।
ভালো-মন্দের বিচার করবার
তুমি কে হে বলি হরিগঙ্গাধর
নিজের অন্ধকারটাকেও এখনও ঠিকমতো চিনলে না
তা আবার আলোর জন্য
অপরের দরবারে গিয়ে
বেশ ভালোরকমের তেল মালিশ করিয়ে,
একটা লম্বা জীবনীসুলভের লাবণ্য ছিটানো
বৃষ্টির কবিতার কথা ভাবছ!
কবিতা বার্তা
ঈশ্বরের সত্য আর দর্শনের টনক নড়লেই
পরিষ্কার লাগে মানুষ।
যেকোনও শুভ্রতা,
সৌন্দর্যের এক পরমাশ্চর্যের রূপ।
শাস্ত্র সম্মত শরীর-সর্বস্বীয় যদি সঙ্গত সুখের হয়
তবে লীলাখেলার প্রেম কি অমৃত, অসুখের?
প্রশ্ন, বারবার প্রশ্নের ভিতরে খেলা করতে করতে
উত্তর সে প্রশ্নের হলেও,
প্রশ্নই থেকে যায়!
অনুভবের মহানুভব কবিতা বার্তা
0 Comments