কার্গিল: সাহসের শিখরে লেখা এক বিজয়গাথা
সত্যজিৎ পড়্যা
প্রতি বছর আজকের দিনে ২৬ জুলাই, সমগ্র ভারতবর্ষ এক বিশেষ শ্রদ্ধা ও গর্বের সঙ্গে পালন করে কার্গিল বিজয় দিবস। এই দিনটি কেবলমাত্র একটি সামরিক বিজয়ের স্মৃতি নয়, বরং এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর অসম সাহস, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম-এর এক অবিস্মরণীয় উপাখ্যান। ১৯৯৯ সালের এই দিনে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে কার্গিল যুদ্ধ-এ ভারত জয়লাভ করেছে। এই জয় শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের লড়াই ছিল না—এ ছিল রাষ্ট্রীয় সংহতি, কূটনৈতিক দৃঢ়তা এবং সীমান্তরক্ষার অদম্য সংকল্পের চূড়ান্ত প্রমাণ।কার্গিল যুদ্ধ সংঘটিত হয় মে থেকে জুলাই, ১৯৯৯ সালের মধ্যে, জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের কার্গিল জেলায়।পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সহায়তায়,পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত ‘Northern Light Infantry’-এর জওয়ানরা ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন দ্রাস, বাটালিক, টোলোলিং, টাইগার হিল প্রভৃতি উচ্চভূমিতে অনুপ্রবেশ করে।ভারতের তরফে এটি ছিল "Operation Vijay"—যার উদ্দেশ্য ছিল সমস্ত দখলকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করা এবং পাকিস্তানিদের পশ্চাদপসরণে বাধ্য করা।কার্গিল যুদ্ধ ভারতের জন্য এক আত্মবিসর্জনের প্রতীক। এই যুদ্ধে বহু বীর সেনানী প্রাণ হারান, যাঁদের আত্মত্যাগ আজও জাতির হৃদয়ে চিরভাস্বর।উল্লেখযোগ্য বীর সেনানীদের মধ্যে ছিলেন Captain Vikram Batra (PVC)'Yeh Dil Maange More!'—এই সংলাপের মতোই ছিল তাঁর লড়াইয়ের মনোভাব। টাইগার হিল পুনরুদ্ধারে অসীম সাহস প্রদর্শন করে শহিদ হন।ছিলেন Lt. Manoj Kumar Pandey (PVC) বাটালিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। গুরুতর আহত হয়েও শত্রুদের পরাজিত করেন।এছাড়াও ছিলেন Grenadier Yogendra Singh Yadav (PVC) জ্যান্ত অবস্থায় শত্রুর পয়েন্টে পৌঁছে গুলি খেতে খেতে অপারেশন সম্পন্ন করেন।এদের মত শত শত বীর নায়কেরা আজও আমাদের জাতীয় পতাকাকে রক্ত দিয়ে রক্ষা করে গেছেন।আন্তর্জাতিক মহলে ভারত এই যুদ্ধে রক্ষাকর্তা রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে পাকিস্তান আগ্রাসনের অভিযোগে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়।আমেরিকা ও অন্যান্য দেশ লাহোর ডিক্লারেশন ভঙ্গ করার দায়ে পাকিস্তানকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে।UN ও G8 দেশগুলি ভারতের অবস্থানকে নৈতিক সমর্থন দেয়।ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ ও সামরিক গোছগাছের দুর্বলতা প্রকাশ পায়, যার ফলে ভবিষ্যতে Kargil Review Committee গঠন করা হয়।সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং border surveillance systems উন্নত করা হয়।জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম, জাতীয় ঐক্য ও সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
🍂
তাই,প্রতি বছর আজকের দিনে ২৬ জুলাই দিল্লির আমার জওয়ান জ্যোতি, কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল (ড্রাস) ও দেশের বিভিন্ন সেনা ঘাঁটিতে শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এই দিনটি শুধুই স্মরণ নয়, বরং নতুন প্রজন্মের কাছে duty, discipline, and devotion-এর প্রেরণামূলক পাঠ।
কার্গিল বিজয় ছিল রক্তস্নাত সাহসের জয়গাথা, এক বর্ণময় অধ্যায় যেখানে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে বলেছিল ভারতীয় সেনা—“আমরা হার মানি না।”এই যুদ্ধ আমাদের শেখায়—সীমান্ত কেবল ভৌগলিক রেখা নয়, এটি আত্মারও পরিচয়।তাই আসুন, এই কার্গিল বিজয় দিবসে আমরা শুধু পতাকা উত্তোলন করেই থেমে না গিয়ে—
0 Comments