গুচ্ছ কবিতা
অভিজিৎ হালদার
চুম্বনরেখার চিহ্নতৃষ্ণা
তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে যে আলো জেগে ওঠে
তাকে বলে তেজস্পর্শ— এক ধরণের শিহরণ।
চোখে চোখ রাখলে উঁকি দেয় আলোকভাষ্য
সেই ভাষা বোঝে না কেউ,জানে কেবল হৃদয়।
আমার বুকজুড়ে এখন নিঃশ্বাসলতা
যা প্রতিটি নিঃশ্বাসে তোমার নাম ছুঁয়ে ফেলে।
রাত হলেই মেঘেরা খুঁজে ফেরে তোমারেখা
আকাশের গায়ে যে স্পর্শ রেখে গেছ।
তোমাকে ছুঁতে পারি না, তবু চিন্তোকণ্ঠে
আমি প্রতিদিন গেয়ে যাই এক গোপন গান।
জীবন বলে— তুমি অর্ধেক
আর প্রেম বলে— তুমি পূর্ণতা।
তোমার নামে লেখা আমার স্পর্শগাঁথা
যেখানে শব্দেরা নিজেই প্রেম হয়ে ওঠে।
তোমার চলে যাওয়াও এক থেমে-থাকা ঘূর্ণিপাক
যা হাওয়ার মতোই অবিরাম ফিরে আসে।
ভাষাহীন ভালোবাসার ভোরগান
যখন তুমি ছিলে দূরে তখন আমার হৃদয় ভরা ছিল নৈকিরণ্যে
এক ধরণের আলো যা কেবল অপেক্ষারাই বোঝে।
তোমার পদচিহ্নে জন্ম নেয় প্রেমাঙ্কুর
যা মাটির ভিতরেও ফোটে না, কেবল মনে অঙ্কুরিত হওয়ার পথে ছোটে।
তুমি বলো না কিছু, তবু নিঃশব্দগান্না বাজে
যেখানে প্রতিটি ধ্বনি আসে চোখের ভাষা থেকে।
আমার স্পর্শ ছুঁয়ে গেলে এক দেহবর্ণনা
গড়ে তোলে— তবেই তো বুঝি প্রেম।
চোখে চোখ রাখলেই উঠে আসে অন্তরজল
যা আমাদের গোপন দুঃখে হিম হয়ে যায়।
তোমাকে ভালোবাসা মানে শব্দহীন উল্লাস
যেখানে হাসি আর কান্না একসাথে বাজে।
তোমার মুখের চাঁদে আঁকা এক নামছায়া
যা জলের মতো বয়ে যায় কবিতায়।
তুমি থাকো বলেই—
এই হৃদয় এখন আত্মপুষ্পিক।
স্মৃতিগন্ধের সংসার
তুমি চলে যাওয়ার পরও রয়ে গেছ গন্ধছায়া হয়ে
প্রতিটি বইয়ের পাতায় তোমার উষ্ণতা।
আমার আলমারির কোণায় জমে থাকা প্রেমধূলি
আজও ঝাড়তে পারিনি, পারবও না।
তোমার নামে লেখা চিঠিগুলো চিহ্নশ্বাসে ভেজা
যেন প্রতিটি অক্ষর হাঁপিয়ে উঠছে তোমার অভাবে।
একাকী রাতে আমি ছুঁই কল্পস্পর্শ
যা তুমি রেখে গেছ অলক্ষ্যে।
তোমার ব্যবহৃত কফির কাপ, কৌটো, রুমাল—
সব কিছুই আমার স্পর্শস্মৃতিঘর।
তুমি নেই, তবু সব জিনিস আজও তোমার মতো।
আমার দিন কাটে স্মৃতিনির্ভর সংসার সাজিয়ে।
এই প্রেম ছিল না আকাশের
এ ছিল এক মাটিস্নেহ— গভীর, জেদি, নিঃশব্দ।
তোমার না-থাকাটাও এক ধরণের প্রাপ্তি
যার নাম নিভন্তপ্রেম।
প্রেমপথিকের পদ্যপদ
আমি হেঁটে গেছি এক পথ ধরে—
যার দুই ধারে ছিল চাহনিলতা আর তবুজাল।
সেই পথের শেষে তোমার মুখ
আর মুখে এক অদ্ভুত নীরবহাসি।
তোমার চোখ দুটি বেদনবর্ণ—
একদিকে ভালোবাসা, অন্যদিকে আত্মসংঘাত।
আমি সেই চোখে লিখে গেছি ছায়াপদ্য
যেখানে প্রেম নেচেছে সুরের বাইরে।
তুমি ছিলে না আমার প্রেমিকা
তুমি ছিলে আমার প্রেমযাত্রার প্রেরণা।
তোমাকে পাওয়া নয়
তোমাকে চাওয়াই ছিল আমার চেতনাগীত।
আমরা ছিলাম না দুজন
আমরা ছিলাম এক দ্বৈতসত্তার মিলনরেখা
যেখানে প্রেম মানে ছিল
পথের ধুলোয় অক্ষর খোঁজা।
নতুন নামে প্রেম
তোমার নাম আমি রাখলাম আলোকশব্দ
কারণ তুমি আসলেই আলো আর উচ্চারণের মাঝামাঝি।
তোমার চুলে ঝরে পড়ে নির্বাকনিদ্রা
যা আমাকে ঘুম পাড়ায়, জাগিয়েও তোলে।
তুমি প্রতিদিন গড়ে তোলে স্পর্শঘড়ি
যার প্রতিটি ঘণ্টায় বাজে এক প্রেমের সুর।
তোমার চিঠিগুলো পড়লে উঠে আসে ভাষাভ্রান্তি
কারণ প্রেমে সব ব্যাকরণ ব্যর্থ হয়।
তুমি আর আমি মিলে গড়ে তুলেছি প্রেমধ্বনি
যা পৃথিবী বুঝতে না পারলেও
আমাদের মাঝে অনুরণন তোলে।
আমার অস্তিত্বে তুমি হয়ে গেছ তোমিসত্তা
এমন এক স্বরূপ, যার বাইরে আর কিছুই নেই।
এই প্রেম এক অভিব্যক্তিবৃত্ত
যার কেন্দ্র তুমি, আর পরিধি আমি।
🍂
0 Comments