জ্বলদর্চি

সারমেয় দিবস /দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

সারমেয় দিবস 
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে 

আজ ২৬শে আগস্ট আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবস। সারমেয়দের প্রতি মানুষের সহানুভূতি ও যত্ন করতেই এই দিন ৷ শুধু বাড়ির পোষ্য নয়, আশে-পাশের যে সমস্ত সারমেয় থাকে তাদেরও যত্ন নেওয়া উচিত ৷

ভালোবাসা, আনুগত্য, বিশ্বস্ততা ও বন্ধুত্ব এই সবকিছু নিয়েই যে প্রাণী তার নাম সারমেয় ৷ মানুষ এবং কুকুরের অটুট সম্পর্কের নজিরও নতুন নয় ৷ আজ কেন হঠাৎ কুকুরের কথা বলা, সেই নিয়েও প্রশ্ন থাকতেই পারে । আসলে আজ অর্থাৎ, ২৬শে অগস্ট আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবস।  ২০০৪সাল থেকে পালিত এই দিনটি ৷

কলিং পাইগে (colleen Paige) যিনি পশু বিষয়ক উকিল ও বিশেষজ্ঞ ৷ তিনি প্রথম ২০০৪ সালের ২৬শে অগস্ট এই দিনটি পালন করেন আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবস হিসাবে ৷ মাত্র ১০বছর বয়সে তিনি ও তাঁর পরিবারে একটি সারমেয় দত্তক নিয়েছিলেন ৷ তারপর থেকেই এই দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবস উপলক্ষে ৷ প্রতিটি পশুপ্রেমী নানাভাবে এই দিনটি উদযাপন করেন ৷ যদিও পোরা সবসময়েই বড় আদরের হয় ৷ আজ আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবস উপলক্ষে শুধু নয় সারা বছর পোষ্যদের যত্নে রাখা উচিত ৷

বিশ্ব সারমেয় দিবস প্রতি বছর ২৬শে আগস্ট তারিখে পালিত হয়। এই দিনটি কুকুরদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, যত্ন ও সহানুভূতি প্রকাশের জন্য উৎসর্গীকৃত এবং যারা এখনও পরিবার খুঁজে পায়নি, তাদের দত্তক নিতে উৎসাহিত করার জন্য পালন করা হয়।

কেন এই দিনটি পালিত হয়, তারও একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। প্রতিদিন নানা কাজ করে জীবন অতিবাহিত করে কুকুররা। নিজেদের সুরক্ষা, বিশেষভাবে সক্ষমদের সাহায্য, আমাদের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা, বোমা নিষ্ক্রিয় করার আগে সুরক্ষা, ধ্বংসাবশেষ থেকে দুর্গতদের তুলে আনা, এমন বহু গুরুত্বপূর্ণ ও বিপদজনক কাজ করে তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেবা ও আনুগত্য দিয়ে ওদের মতো আর কেউ জয় মানুষের হৃদয় করতে পারে না। প্রভুভক্তি ও কৃতজ্ঞতার ক্ষেত্রে এরা অন্যসব প্রাণির চেয়ে অনেক এগিয়ে। ফলে কুকুর ভালবাসেন না, এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল। তাই কুকুর ভালবাসেন এমন কোটি কোটি মানুষের কাছে ২৬শে আগস্ট দিনটি একটু বিশেষ এবং আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবস হিসাবে উদযাপিত।

গবেষকদের মতে, যেসব চতুষ্পদী প্রাণি সমাজের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে, কুকুর তাদের অন্যতম। কিন্তু তাদের জীবনযাপন ঠিক কীরকম, সেটা অনেকেই জানেনা। অকাতরে তাদের সেবা ও আনুগত্য নিলেও মানুষ কুকুরের প্রতি উদাসীন। আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবস সেই দায়িত্বহীনতা দূর করতে আগ্রহী।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পুলিশের ডগ স্কোয়াডে (পিটিএস-এ) প্রচুর সারমেয় রয়েছে। এদের মধ্যে ‘এক্সক্লুসিভ’ সারমেয়দের সংখ্যাই বেশি। তাছাড়াও রয়েছে ট্র্যাকার-ডগ, এদের ন’মাসের ট্রেনিং হয়। তাছাড়াও এক্সক্লুসিভ ডগ, নারকোটিক ডগ, গার্ড ডগ পদে তৈরি করতে কুকুরের ট্রেনিং দেওয়া হয়।
🍂

ট্রেনিং এর সময় সাধারণত প্রত্যেক দিন এদেরকে সকাল ৬.৩০টা থেকে প্র্যাকটিস করানো হয় ইনডোর বা আউটডোরে। তারপর ৮.৩০টা থেকে শুরু হয় গ্রুমিং, চলে আধঘণ্টা পর্যন্ত। ৯টার পর ওদেরকে খেতে দেওয়া হয়। সাধারণত ওদেরকে পেডিগ্রি খাওয়ানো হয়। পেডিগ্রির সঙ্গে ডিম অথবা দইও দেওয়া হয়। গরম পড়লে দইটা বেশি করে দেওয়া হয়।বিকালে, ৩.৩০ নাগাদ আবার প্র্যাকটিস। সকাল-বিকেল প্র্যাকটিসের পর বিস্কুট দেওয়া হয়। বিকেলের আবার মাঠে প্র্যাকটিস করানো হয়। সকালের মতোই আধঘন্টা গ্রুমিং সেশন। দুবেলাই গ্রুমিং সেশনে উপস্থিত থাকেন ভেট অ্যাসিস্ট্যান্ট। কোন সারমেয়র কী সমস্যা রয়েছে, সবকিছু পরীক্ষা করে দেখে। মোটামুটি ৬টার মধ্যে বিকেলের খাওয়ারটা ওদেরকে দিয়ে দেওয়া হয়। বিকেলের খাবার- বয়েলড রাইসের সঙ্গে চিকেন, টাটকা সবজি।

‘ইন্টারন্যাশনাল ডগ ডে’-তে বলা হয়েছে, এত বিশ্বস্ত প্রাণী বোধহয় পৃথিবীতে আর নেই। এদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এরা কথা বলতে পারে না, কিন্তু এদের আবেগ-বুদ্ধি মানুষের থেকেও প্রখর। এদেরকে যদি একটুকরো রুটি খেতে দেন, এরা কিন্তু মনে রাখবে, ভুলে যাবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। পরিবারের সদস্যের মতো থেকে যাবে। স্নেহ পাওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করবে।

প্রভুভক্তি ও আনুগত্যের বিনিময়ে এদেরও রয়েছে স্নেহ, ভালোবাসা, আদর, আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকার। আন্তর্জাতিক সারমেয় দিবস এসব কথাই মানুষকে মনে করিয়ে দেয়।

Post a Comment

0 Comments