কেমন যেনো পাল্টে গেছে সবটাই বড্ড তাড়াতাড়ি, তাই না?
মনের ঘরে অনবরত খেলা করে সেই কথা গুলোই।
তখন ঘরের দরজায় ছিল কড়া, কলিংবেল এসেছে অনেক অনেক পরে। কলিংবেল তখন যেনো একটা সৌখিনতা মানে যাদের ঘরে কলিংবেল থাকতো মনে মনে জানতাম তারা খুব বড়লোক। পরে অভিজ্ঞতা অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছে অর্থ দিয়ে বড়লোক হওয়া যায় না আসলে মানসিকতা টাকে বড় করতে হয়।
কেউ এলে ওই কড়া ধরেই ঠকঠক করত। আবার ঘরের মানুষদের কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনে কে এসেছে মানে বাবা না কাকা না ভাই ,পিসি ইত্যাদি সেটা বোঝাও যেত।এক একজনের কড়া নাড়ার আওয়াজ এক এক রকম আর কান সেই আওয়াজের সাথে পরিচিত হয়ে যেত।
আবার কখনো দরজার আওয়াজ শুনে কে এসেছে জানতে চাইলে উত্তর আসত তো 'আমি'। এই আমি নামক গলার স্বর শুনে বলে দেওয়া যেত কে এসেছে। আসলে মানুষের বাড়িতে তখন মানুষের আনাগোনা ছিল ,গল্পগুজব ছিল, হাসি-ঠাট্টা ছিল। তখন টিভি সিরিয়াল মিস হয়ে যাবে অকারণে এক কাপ চা বানিয়ে দিতে হবে মোবাইল থেকে বিরত থাকতে হবে আরো কত না কি, এসব উটকো ঝামেলা মানুষের মাথায় তখনও শিকড় গেড়ে বসে নি যে! আসলে আমরা যত উন্নত হয়েছি ততই নিজেদের কে কোন ঠাসা করেছি এবং ঝামেলার কারাগারে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে তুলেছি। এ তো ফোন ছিল না তাই হঠাৎ করেই আত্মীয়রা ঘুরতে চলে আসত,আর সাথে নিয়ে আসতে খুশির হিমেল হাওয়া। আলাদা করে তাদের জন্য বিশেষ আয়োজন এর প্রয়োজন পড়তো না। ঘরে যা যা রান্না হতো তাই একসাথে মিলেমিশে সবাই খাওয়া হত। আড়াল আবডাল বা লুকিয়ে চুরিয়ে গল্প গুজব করার প্রয়োজন পড়তো না। মন খুলে একে অপরের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়া যেত। অতিথি এলে সুইগি বা জোম্যাটো তে অনলাইন অর্ডার নয় ঘরের কেউ ছুটে হাতের কাছের দোকান থেকে নিয়ে আসতো গরম গরম শিঙারা, মিষ্টি, জিলিপি ইত্যাদি ... ।
জীবন ছিল সুন্দর সহজ, সরল , আন্তরিক।
তখন মানুষকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খাই ছিল সবচেয়ে বেশি আকর্ষনের। কাজের ব্যস্ততা তখনও ছিল, কিন্তু অকারণ চাপ ছিল না। কৃত্তিমতার ছাপ ছিল না বর্তমানের মতো। আত্মীয়রা বাড়ি ফিরে গেলে বলতাম পৌঁছে পৌঁছে সংবাদ জানাবে। সত্যিই খবর নিয়ে পোস্ট কার্ড আসতো তখন, আসত নববর্ষ বা বিয়ের খবর নিয়ে কোন উৎসবের খবর নিয়ে গ্রিটিংস কার্ড, আসত খামে ভরা চিঠি। চিঠি পাওয়ার পর আমরাও সঙ্গে সঙ্গে লিখতে বসে যেতাম ফেরত চিঠি। পোস্টম্যান কে আসতে দেখলেই কত উৎসাহ নিয়ে ছুটে যেতাম কার চিঠি এসেছে বলে। কোথায় কোন গভীর অন্ধকারে হারিয়ে গেছে সেইসব সময়।
🍂
মনের মানুষ গুলোও কেমন যেনো বদলে গেছে। চাপা পড়ে গেছে সম্পর্কের গভীরতা।
নিজের মনটা মাঝেমধ্যে নিজের কাছে কেমন অচেনা ঠেকে। সারাদিন ছোটার শেষে উপলব্ধি হয় আসলে আমরা একা বড্ড একা। কেনই বা আমরা ছুটে চলেছি কিবা আমাদের উদ্দেশ্য কিছুই জানিনা, তবুও কিন্তু এক একটা দিন কেমন নিমেষে উধাও হয়ে যায়, জীবন থেকে।
খামখেয়ালী, উদাসীনতা, এগ্রেসিভনেস, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা, ঈর্ষা, একে একে বেড়েই চলেছে। ফোনের মাধ্যমে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় যে যাই পোস্ট করুক এখানে দল তৈরি হয়ে গেছে। তুমি আমাকে ভালো বললে আমি তোমাকে লাইক দেবো। তুমি আমার টায় কমেন্ট করলে আমি তোমার টায় কমেন্ট করব, সে কনটেন্ট ভালো হোক চাই না হোক। যোগ্য-অযোগ্য'র লড়াই সবজায়গায় আসন পেতে বসেছে। সত্যি কি আমাদের মন থেকে সবার লেখা বা সবার পোস্ট গ্রহণযোগ্য হয়? হয় না এটাই সত্যি কথা । কিন্তু তাও মেনে নিতে হয়। নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে। নিজস্বতা হারিয়ে। যে জায়গায় আমাদের মনের খবর থাকবে না যে জায়গায় মতামতের গুরুত্ব নেই, সেটা কি ধরনের সামাজিক মাধ্যম হয় বুঝে পাইনা !
আমাদের সময় গোটা গ্ৰীষ্মের ছুটি হোম ওয়ার্ক করা, কাছে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, লোডশেডিং ,হাত পাখার বাতাস, দাদু ঠাকুমার কাছে গল্প শোনা , পাড়ার সবাই মিলে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা, বিকেল হলে মাঠে খেলতে যাওয়া এসব নিয়েই কেটে যেত। এখনকার ছেলেমেয়েরা এসব থেকে বঞ্চিত তাদের জীবন সম্পূর্ণ অন্যভাবে বয়ে যায়। আমরা উন্নত হয়েছি ঠিকই কিন্তু মন থেকে হতে পারিনি অনেক নিত্যনতুন জিনিস আমাদের নিত্যদিন কার কাজ সহজ করেছে ঠিকই কিন্তু শারীরিকভাবে আমরা প্রতিবন্ধী হয়ে গেছি এবং মানসিকভাবেও ভারসাম্য হারিয়েছে ভালো থাকার ভালো রাখার।
মনের দরজার কড়া গুলো আজও কিন্তু অমলিন কিন্তু কেউ নাড়া দেয় না, সবাই দরজা আষ্টেপৃষ্টে বন্ধ করে নিজের নিজের টা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এটা কি সত্যিই মানুষের জীবন হওয়া উচিত? সৃষ্টিকর্তা তো মানুষকে সব দিয়েছেন । সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছে বদলে আমরা এই পৃথিবীতে কি দিলাম??
1 Comments
মনের দরজায় কড়া নেড়ে দিলে যে বন্ধু,কড়া তো নেই,কলিংবেল আছে,না চাইলে বাজাতে ,দরজায় ঠক ঠক করে চলে এসো।
ReplyDelete