জ্বলদর্চি

পথের পাঁচালী: সত্তর বছর পরে আমার দেখা/ অয়ন মুখোপাধ্যায়

পথের পাঁচালী: সত্তর বছর পরে আমার দেখা

অয়ন মুখোপাধ্যায়  

আমি প্রথম পথের পাঁচালী দেখেছিলাম কিশোর বয়সে। আজও মনে আছে—সেই 
সাদা-কালো পর্দায় হঠাৎই খুলে গেল অন্য এক জগৎ। হঠাৎ যেন আমি চলে গেলাম নৈঃশব্দ্যের মধ্যে, অজ পাড়াগাঁয়ের পথে।

আপুর চোখে আমি দেখলাম আমার নিজের শৈশব—দুর্গার সঙ্গে আমলকী গাছের ডাল ঝাঁকানো, বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া, আর সেই বিখ্যাত দৃশ্য—ট্রেনের শব্দে দু’জন দৌড়ে চলেছে কাশফুলের ভেতর দিয়ে। যেন আমিও তাদের সঙ্গে ছুটছি।

বছর কেটে গেছে। জীবনের পথে অনেক কিছু বদলেছে। কিন্তু পথের পাঁচালী আমার কাছে থেকে গেছে এক অবিনশ্বর সঙ্গী। যখনই দেখি, নতুন করে খুঁজে পাই। সর্বজয়ার চোখের জল আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়—আমাদের মায়েদের মুখেই তো লুকিয়ে আছে আসল মহাকাব্য।

অনেকেই বলেন, এটা নাকি দারিদ্র্যের ছবি। কিন্তু আমার কাছে পথের পাঁচালী হল জীবনযাপনের মহৎ কাব্য—যেখানে ক্ষুধা আছে, কিন্তু আছে স্বপ্নও; মৃত্যু আছে, কিন্তু আছে ভালোবাসার উষ্ণতা।
🍂

আজ সত্তর বছর পেরিয়ে গেছে। ভাবি—কীভাবে এক তরুণ সত্যজিৎ রায়, যিনি আগে কখনও ছবি বানাননি, তিনি আমাদের সামনে এনে দিলেন এই অপূর্ব আখ্যান! কেবল সিনেমা নয়, এটি যেন আমাদের আত্মার দলিল।

কখনও কখনও মনে হয়—আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে এক একটা "অপু আজওবেঁচে আছে।
আমি যখন নিজের জীবনের দিকে তাকাই, দেখি—আমারও তো হারানো আছে, আমারও তো স্বপ্ন আছে, আমারও তো ভেসে যাওয়া দিনগুলির গান আছে।

তাই পথের পাঁচালী আমার কাছে শুধু সিনেমা নয়—এ এক ব্যক্তিগত আত্মজীবনীর অংশ, যেখানে আমি নিজের শৈশব, নিজের মা, নিজের বাবা গ্রাম্য জীবন সব কিছু খুঁজি।

তাই বলতে ইচ্ছে করে
“যে ছবিতে আমি আছি, অথচ আমার নাম নেই,সেই ছবিই পথের পাঁচালী।

Post a Comment

7 Comments

  1. খুব ভাল লাগল

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগলো লেখাটা,, শেষ লাইনটাতো মন ছুঁয়ে গেলো। সত্যি তো পথের পাঁচালী আমাদের কাছে আত্মার দলিল

    ReplyDelete
  3. ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  4. খুব সুন্দর লেখা...

    ReplyDelete