ভোঁ ভোঁ মোক্ষ
কমলিকা ভট্টাচার্য
পুজোর ঘরে ঢুকে দেখি, মেঝেতে একটা মাছি জলে পড়ে উল্টে আছে। তখনও নড়ছে। ভাবলাম, সকাল সকাল প্রাণী হত্যা করব, তাও আবার ঠাকুরের সামনে! সোজা করে দিলাম। ব্যাটা ভনভন আওয়াজ করে উড়ে গেল।
আমার মনটাও ভরে গেল। চিত্রগুপ্তের খাতায় কোনো একটা পাপ নিশ্চয়ই ক্ষমায় কাটা পড়ল—সেই ভেবে প্রফুল্ল চিত্তে নিজের কাজে মন দিলাম।
পরের দিন হঠাৎ দেখি, প্রদীপের তেলে ঝাঁপ দিয়েছে। যথারীতি পুণ্য লাভের এমন সুযোগ হাতছাড়া না করে তাড়াতাড়ি তাকে তুলে জানলার কার্নিশে রেখে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই গায়েব। আমি মনে মনে অতিশয় খুশি হলাম।
তার পরের দিন গিয়ে দেখি, আবার মেঝেতে উল্টে পড়ে আছে। আজ আমি একেবারে সোজা মোক্ষ লাভের আশায় কাপড় দিয়ে ধরে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে কাপড় ঝেড়ে উড়িয়ে দিলাম।
“এত সস্তায় মোক্ষ লাভ! ভাবা যায়!”—এই ভাবতে ভাবতেই ঠাকুরঘরে ঢুকেছি।
ঠিক সেই সময় ঝড়ের বেগে ঠাকুরঘরে ঢুকে ড্রোনের মতো আমার মাথার চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে লাগল সে। তার ভোঁ ভোঁ শব্দে যেন শুনতে পেলাম দৈববাণী,
— “আরে, যে মরতে চায়, তাকে মরতে দে!”
এতদিন জানতাম প্রাণী হত্যা পাপ, আত্মহত্যাও পাপ। কিন্তু যখন স্বয়ং মাছি ইচ্ছামৃত্যুর বর ভগবানের থেকে অনুমোদন করে এনেছে, তখন আমার কী!
আমিও নিজের কাজে মন দিলাম।
অন্তরাত্মা শুধু বলল,
— “মাছি বাঁচিয়ে কি আর মোক্ষ লাভ হয়?”
🍂
2 Comments
খুব সুন্দর লিখেছেন....বেশ মজার......দিদি , দেবুদা ।
ReplyDeleteদারুণ 😄😄
ReplyDelete