জ্বলদর্চি

কবিতা গুচ্ছ -২/অয়ন মুখোপাধ্যায়

কবিতা গুচ্ছ -২
অয়ন মুখোপাধ্যায়


ভাঙা জানলার ভেতর দিয়ে


যাদের জানলা গুলো ভাঙা

যে জানলানাগুলো কোনোদিন খোলা হয়নি,
সেই জানলার ভেতরে ঢুকে পড়ে হাওয়া।

হাওয়াটা যেন পুরনো খবরের কাগজ,
ভাঁজে ভাঁজে গোপন গল্প লুকিয়ে রেখেছে
এক ছন্নছাড়া মায়াবী।

একদিন হঠাৎ মনে হলো—
আমার ভেতরের সমস্ত শব্দ গুলোও কি মরচে ধরে গেছে?
নিজেকে পরীক্ষা করব বলে বেরিয়ে পড়লাম।

সাথে নিলাম—
মায়ের গলায় থেমে যাওয়া গান,
বাবার টেবিলে ফেলে যাওয়া বই আর পেন।

দেখলাম—
সব যেন শুকনো পাতার মতো
একটার পর একটা ঝরে পড়ছে।
অবিনাশী নিষাদ।

আমি শুধু তাকিয়ে থাকি
সেই ভাঙা জানলার দিকে।
তার ওপার থেকে মাঝে মাঝে মনে হয়
কেউ ফিসফিস করে ডাকছে আমাকে।

যাই শুনতে—

শব্দ নয়,
একটা জ্যান্ত ধোঁয়া।


ছায়ার আঙুল


দেয়ালে হঠাৎ লম্বা ছায়া পড়ে,
কোনো মানুষের নয়—
জানলার খোলা পাল্লা থেকে জন্ম নেওয়া ছায়া।

ছায়াটা যেন হাত বাড়ায়,
আমার কাঁধে আঙুল রাখে।
আমি চমকে উঠি,
কিন্তু কেউ নেই!

মা বলত, ছায়ার ও ভাষা আছে,
শুধু শোনার কান দিয়ে শোনে না সবাই।
হয়তো সত্যিই 

কারণ রাত গভীর হলে
ছায়ার আঙুল আমার বুকের ভেতর ঢুকে পড়ে।
তখন মনে হয়—
রক্ত নয়, ভেতরে বয়ে চলেছে
একটা গোপন নদী,
যার স্রোত শুধু শুনতে পাই  আমি।


🍂

জানলার ওপারে কেউ নেই

জানলার পাল্লা খুললেই দেখি
বাইরে একটা নিস্তব্ধ আকাশ ঝুলছে।
মেঘে ভিজে আছে—
তবু বৃষ্টি নামে না।

মা বলেছিল, এই আকাশে দাঁড়ালে
কথা শুনতে পাওয়া যায়।
কে জানে!

শোনার চেষ্টা করলেই
মায়ের গলায় শুকনো কাশির মতো শব্দ আসত।

আসলে কথাগুলো কোথায় হারিয়ে যায়—
কে জানে!
বাবার রেখে যাওয়া আলমারির ফাঁকে?
নাকি আমাদের বুকের ভেতর,
যেখানে একটার পর একটা দরজা বন্ধ হয়ে যায়,
আর কেউ খুলতে চায় না।

আজকাল শুধু দেখি—
রাতে বিছানায় শুয়ে
জানলার কাঁচে ম্লান আলো এসে পড়ে।
তার ভেতর থেকে
একটা অদ্ভুত চেহারা তাকিয়ে থাকে,
যেন আমিই,
কিন্তু আমার মতো নয়—
যেন ধোঁয়ার ভিতর থেকে উঠে আসা
এক অন্তহীন প্রতিধ্বনি।

Post a Comment

2 Comments

  1. সত্যিই কথাগুলো যে কোথায় হারিয়ে যায় !! প্রত্যেকটি কবিতা ভীষণভাবে মন ছুঁয়ে গেল

    ReplyDelete
  2. মন ছুঁয়ে যাওয়া কবিতা

    ReplyDelete