(ছাব্বিশ পর্ব)
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(নজরুল রচিত শ্যামাসঙ্গীতের পরবর্তী অংশ)
অষ্টাদশ শতাব্দীর উত্তাল দুর্যোগময় রাজনৈতিক সামাজিক পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পাবার জন্য মানসিক শক্তি সাহস সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে বঙ্গভূমিতে দেবী কালীমাতার সাধনার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। সেই উদ্বেগজনক দূর্বিষহ অস্থিরতার যুগে বৈষ্ণব ধর্মের শান্ত স্নিগ্ধ প্রেম সাধনার ক্ষমতা ছিল না মানবকূলকে সান্তনা দেবার ও সাহস যোগানোর।
তৎকালীন ভারতবর্ষে একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর অন্যদিকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছিল। বিশ্বব্যপী পুঁজিবাদী দেশগুলোর আগ্রাসন নীতিতে উত্তাল সময়ে প্রতিবাদই ছিল নজরুলের একমাত্র ভাষা। অসহায় জাতির মনের ঐকান্তিক ভরসা ও বিশ্বাস ছিল একমাত্র সর্বশক্তিরূপিণী দেবী মা। তিনি করাল ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে ঐশ্বরিক বল ও ক্ষমতার দ্বারা এই অসহনীয় ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রাষ্ট্র কে রক্ষা করতে পারেন। মাকালী যে একই আধারে জগজ্জননী রক্ষাকর্ত্রী। তিনি শক্তিস্বরূপিণী অসুরদলনী সংহারিণী দেবী। কবির ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতায় মাতৃবন্দনার স্পষ্ট প্রকাশে রাজনৈতিক চেতনার সাড়া পাই । যেখানে কবি সকাতরে তার আর্তি জানান
—'‘দেব শিশুদের মারছে চাবুক,
বীর যুবাদের দিচ্ছে ফাঁসি " ---
-- রক্ষাকর্ত্রী কালীমাতা কে নালিশ জানিয়ে লিখলেন, '' ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?”
বঙ্গভূমির শ্যামা সঙ্গীতের সীমাহীন সম্ভারের আলোচনায় আলোকপাত করলে সর্বপ্রথম কবি নজরুলের অসাধারণ সৃষ্টি মনে আলোড়ন তোলে। কবি তাঁর সাহিত্য চর্চার জীবনে যে সীমিত সময় টুকু পেয়েছিলেন সেই স্বল্প সময়েই তিনি রেখে যান বাংলার জন্য বিভিন্নধারার সংগীতের সাথে শ্যামাসংগীতের এক বিপুল ভাণ্ডার। বাংলার চরম অশান্ত পরিস্থিতিতে শ্যামামায়ের একনিষ্ঠ ভক্তরূপে কবির অস্থির চিত্ত শান্ত করতে অবগাহন করেছেন শ্যামাসংগীত রচনায়। কবি নজরুলের আগে স্বদেশি আন্দোলনের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে চারণ কবি মুকুন্দ দাসের ‘মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমরঙ্গে’ এবং সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম’ শ্রেষ্ঠ মাতৃমন্ত্র ও দেশমাতৃকার বন্দনা হয়ে লোকমুখে প্রতিষ্ঠিত।
🍂
তারপরবর্তী কালে নজরুল স্বীয় মানসিক শান্তি ও শত্রুকে নিধন করতেই মাতৃবন্দনায় মনোনিবেশ করলেন।---
শ্যামাসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে তিনি নারীশক্তিকে রূপ দিয়েছিলেন দেবীমূর্তিতে। তাঁর কাছে মাকালী ছিলেন প্রতিবাদের সাহস, শক্তি ও মুক্তির প্রতীক। তাই তাঁর গানে যেমন ভক্তির আর্তি, তেমনি রয়েছে জাগরণের মন্ত্র --আহ্বান। ধর্মীয় দৃষ্টিতে শ্যামাসঙ্গীত নানাভাবে বিতর্কিত হয়—এটা যেমন সত্য, তেমনি তার সঙ্গীতের রচনা কৌশল ও ভক্তির গভীরতা নির্দ্বিধায় বোঝাযায়।
তাঁর ভক্তিগীতির মধ্যেও ছিল ধূমকেতুর ন্যায় অন্তরজ্বলা আর বিষেভরা চির বিদ্রোহের বাণী। মরমী কবি নজরুলের ভক্তিগীতি, দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে আজও তাঁর প্রবহমান শ্যামা সঙ্গীতের অতুলনীয় নান্দনিক প্রভাব লক্ষ্যনীয় ।
হিন্দুধর্মের প্রধান তিনটি বিভাগের অন্যতম শাক্তধর্ম। হিন্দু দিব্য মাতৃকা শক্তি বা দেবী পরম ও সর্বোচ্চ ঈশ্বর— এই মতবাদের ওপর ভিত্তি করেই শাক্তধর্মের উদ্ভব। আর এই শাক্তদর্শন থেকেই নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত রচনা শুরু। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে, দুর্গাদেবীর একটি বিশেষ রূপ হল মা ‘কালী বা শ্যামা।
সনাতন হিন্দু ধর্মের দেবী শ্যামার উদ্দেশ্যে রচিত গান ‘শ্যামা সংগীত’। কীর্তন যেমন বৈষ্ণব পদাবলী অবলম্বনে গাওয়া হয়, তেমনি শ্যামা সংগীতও শাক্ত পদাবলী অবলম্বনে গাওয়া হয়। শাক্ত পদাবলীর কাঠামো গঠিত হয়েছিল বৈষ্ণব পদ ধারার কাঠামো অনুসরণে। তাই বাৎসল্য রসের পদাবলী হিসেবে আজো শাক্ত পদাবলী বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। শ্যামা সংগীতের জনক রামপ্রসাদের শ্যামা সংগীতে বাণী, সুর ও গায়নভঙ্গি সহজ আবেদন পূর্ণভাবে তুলে ধরে এক স্বতন্ত্র ধারার প্রচলন করেছেন। রামপ্রসাদ তাঁর শ্যামা সংগীতে দেবতা ও মানবকুলের মধ্যে ব্যক্তিতান্ত্রিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
শ্যামা মার পরিচয় দিতে গিয়ে কবি লিখেছিলেন— “ "কেউ কেউ মনে করেন, নজরুল হৃদয়ের গভীর থেকে শ্যামার প্রতি ভক্তি নিবেদন করেছিলেন। আর সে ভক্তি সাকার হয়েছিল তার গানের ভাষাতে। ''
"কিন্তু স্বভাব সুলভ কোমল প্রাণের বাঙালির দেবতা ধরা দেন সখা ও প্রেমিক রূপে। তাই ভয়ঙ্করী উগ্রচণ্ডী মহাশক্তিও বেশিদিন রইতে পারলেন না কবি মননে।"
দেবীর উগ্ররূপ শান্ত প্রশমিত হলো । তিনি হয়ে গেলেন বাঙালির ঘরের মেয়ে—ও একান্ত আপন স্নেহময়ী জননী। কাজী নজরুল ইসলামের— ‘শাক্ত পদাবলীগুলিও এই নিয়মেই ধরা দিল। তাই তাঁর কালোমেয়ের উগ্ররূপের অন্তরালে কবি উপভোগ করেন সৌন্দর্য স্বরূপিণী জননীকে—যাঁর রূপ দেখে স্বয়ং মহাদেবও বুক পেতে দেন। তন্ত্রের দেবী শক্তিকে নতুন মাত্রা দিয়ে কবি সৃষ্টি করলেন এক মধুর স্নিগ্ধ জননী মূর্তি — কখনো তিনি দেবী — কখনো কন্যা, ভক্ত যাঁকে চোখে হারান প’লে প’লে।
ভক্তহৃদয়ের বিভিন্ন অনুভূতিতে ভর করে কালী, দুর্গা, উমা, চণ্ডী হয়ে যান ঘরের মেয়ে।’ শাক্ত পদে আরাধ্যা জননী শক্তির সঙ্গে ভক্তের সম্পর্ক যেমন সামাজিক, তেমনি সর্বোপরি সাংসারিকও। পুরাণে শক্তিকে বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়। কখনো তিনি ভয়াল ভয়ঙ্করী চামুণ্ডা, কখনো তিনি স্নিগ্ধ মাতৃরূপা, কখনো তিনি শান্ত স্নিগ্ধ কন্যা স্বরূপিণী। প্রাচীন অনার্য নারী দেবতা চণ্ডী -- শক্তিরূপিণী --শতাধিক নামে পূজিতা হতেন।
গবেষকদের মতানুসারে ,রামপ্রসাদের শ্যামা সংগীতে সমসাময়িক অসঙ্গতি দূর করার আহ্বান ফুটে উঠেছে দেখা যায় । তাঁর রচনার সাথে নজরুলের রচনার বিশেষ মিল ও খুঁজে পাওয়া যায়। রামপ্রসাদ শক্তিদেবীর মাহাত্ম্যকে অজস্র গীতরচনায় উচ্ছ্বসিত করে তোলেন। কিন্তু নজরুল শ্যামা সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে নারীশক্তিকে রূপ দিয়েছিলেন দেবীমূর্তিতে। তাঁর কাছে মা কালী ছিলেন প্রতিবাদের সাহস, শক্তি ও মুক্তির প্রতীক। ধর্মীয় দৃষ্টিতে নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত যত বিতর্কিতই হোক, তার শ্যামাসঙ্গীত জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, আবেগের গভীরতা। হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে শ্যামা মায়ের প্রতি ভক্তি নিবেদনে তাঁর রচনায় শৈল্পিক নিপুনতা ও ভাবগভীরতা বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে অনন্য হয়ে রয়েছে।
তাঁর কণ্ঠের মাধ্যমে ভক্তি ও বিদ্রোহ একাকার হয়ে উঠেছিল যেখানে কালীভক্তি আর মানবমুক্তির স্বপ্ন একই সুরে বাজে।‘ আর সে ভক্তি সাকার হয়েছিল তাঁর গানের ভাষাতেই।
তিনি মায়ের রূপ বর্ণনায় অনায়াসে লেখেন---
"মার হাতে কালি মুখে কালি,
মা আমার কালিমাখা, মুখ দেখে মা পাড়ার লোকে হাসে খালি।
মোর লেখাপড়া হ’ল না মা, আমি ‘ম’ দেখিতেই দেখি শ্যামা,
আমি ‘ক’ দেখতেই কালী ব’লে নাচি দিয়ে করতালি।”
এই প্রবন্ধের সূচনা পর্বের প্রথম দিকেই উল্লেখ করেছি নজরুল সঙ্গীত বা ‘নজরুল গীতি’ নামে পরিচিত সংগীতের বিভিন্ন ধারায় নজরুল প্রায় ৪০০০ গান রচনা করেছেন। যার বড় একটি অংশই শ্যামা সঙ্গীত এবং অধিকাংশের সুর নিজেই সৃষ্টি করেছেন । ''গানের মালা’ ১৯৩৪ গ্রন্থে '' নজরুল রচিত কিছু শ্যামাসংগীত লিপিবদ্ধ আছে। তাঁর এই সংকলন টি শুরু হয়েছে ‘বল রে জবা বল’ গান দিয়ে, আর শেষ হয়েছে ‘স্থির হয়ে তুই বস দেখি মা’ দিয়ে। মা যেন কন্যা রূপে পিতৃ গৃহে বিরাজিত।
সঙ্গীত বিষয়ক নজরুলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হচ্ছে ‘রাঙা—জবা’। ১৯৬৬ সালে ১০০টি শ্যামা সঙ্গীতে সমৃদ্ধ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। নারীশক্তির প্রতি নজরুলের ভক্ত হৃদয়ের অকৃত্রিম আকুলতা চিরকালই ছিল। তাই শুধু শ্যামা সঙ্গীতের প্রভাব সঙ্গীতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তার কবিতাতেও প্রকাশ পেয়েছিল।‘ আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী কবি হিসেবে নজরুল এই জন্য জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছেন। শোক-তাপে অস্থির, নজরুল শ্যামা মাকে আশ্রয় করে পেয়েছেন শান্তি, লিখেছেন গান। সৃষ্টি করেছেন সুরের সাগর।
"শ্মশানে জাগিছে শ্যামা’ বলেছেন,
‘জ্বলিয়া মারিলি কে সংসার জ্বালায়,
তাহারে ডাকিছে মা কোলে আয়, কোলে আয়।"
গভীর শ্রদ্ধায় ও ভক্তিতে অন্তর থেকে উৎসারিত এক মানবিক আবেদনে ভক্তের আবেগ, দুঃখ, কষ্ট, মায়ের কাছে তার আবদার ও নালিশ! শ্যামা মায়ের প্রতি এক আন্তরিক শরণাগতি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর প্রতিটি গানের রচনায় শব্দ ও সুর সংযোজনে। অন্তর থেকে উৎসারিত নজরুলের সঙ্গীত ও ভক্তি সুরের মূর্ছনায় প্রতিটি ছত্রে ছত্রে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে । শ্যামা সংগীত রচনায় নিজস্বতা সুদৃঢ় ঐতিহ্য থাকলেও নজরুলের গানগুলি এই ধারায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি শুধু চরম ভক্তির প্রকাশ দেখাননি কিন্তু মানুষের জীবনের দুঃখ-কষ্ট ও সংগ্রামকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাঁর প্রতিটি রচনার গভীরে রয়েছে সাম্যবাদী মানসিকতার পরিচয় ।
নজরুলের গীতির একটা বিশাল অংশ জুড়ে যেমন রয়েছে ভজন এবং কীর্তন গান তেমিন বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে শ্যামাসঙ্গীত। সমগ্র বঙ্গদেশে সম্ভবতঃ এত অজস্র শ্যামামায়ের গান কাজী নজরুল ছাড়া আর কেউই লেখেননি। তাঁর সঙ্গীতে কোথাও শ্যামা মাতৃরূপিণী, কোথাও কালীর রৌদ্রী রূপের ভয়ঙ্কর বর্ণনা, আবার কোথাও দেশাত্মবোধের প্রেরণা প্রকাশিত। তিনি কত সহজে আন্তরিকতায় লিখলেন---
"বল রে জবা বল।
কোন সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল।
মায়া–তরুর বাঁধন টুটে
মায়ের পায়ে পড়লি লটে
মুক্তি পেলি, উঠলি ফুটে আনন্দ–বিহ্বল!"
কবি জবা ফুলকে সম্বোধন করে শ্যামা মায়ের চরণে পৌঁছানোর আকুতি জানিয়েছেন। কবির মতে ভক্তি, ত্যাগ ও মায়ামুক্তির সাধনার মাধ্যমে কিভাবে একটি সাধারণ ফুলও (জবা) মায়ের নৈকট্য লাভ করতে পারে। এবং প্রসাদী ফুল হয়ে ওঠে। আর কবিও সেই পথ অনুসরণ করে নিজের মলিন চিত্তকে রাঙাতে চান। এটি মূলত শ্যামাসঙ্গীতের একটি রূপ, যেখানে সাধক মায়ের কাছে আত্মসমর্পণের পথ জানতে চেয়েছেন ।
তাঁর আশাবরি দাদরা তালে আর একটি বিখ্যাত গান---
আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায়
দেখে যা আলোর নাচন।
মায়ের রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব
যার হাতে মরণ বাঁচন॥
আমার কালো মেয়ের আঁধার কোলে
শিশু রবি শশী দোলে
(মায়ের) একটুখানি রূপের ঝলক
ওই স্নিগ্ধ বিরাট নীল-গগন॥
অথবা তিনি যখন লেখেন, ----
নিশীথিনীর দুলিয়ে কেশ
নেচে বেড়ায় দিনের চিতায়
লীলার রে তার নাইকো শেষ॥
সিন্ধুতে ওই বিন্দু খানিক
তার ঠিকরে পড়ে রূপের মানিক;
বিশ্বে মায়ের রূপ ধরে না
মা আমার তাই দিগ্বসন॥
গানটি আজ ও সমান প্রাসঙ্গিক।' এই গানে কবি মা কালীর এক অসাধারণ রূপের বর্ণনা করেছেন, যেখানে তিনি প্রাণভরে শ্যামা মায়ের কালী রূপের সাথে কন্যারূপিণী শ্যামার ছবি এঁকেছেন। এই গানটি শ্যামা মায়ের মহিমা ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে তাঁর লীলার এক গভীর ভাব প্রকাশ করে, যেখানে অন্ধকার ও আলোর মিলন ঘটেছে। শ্যামা মায়ের কালো রূপের মধ্যেই অপার আলো বিদ্যমান। মা কালীর যেন সেই রূপের কথাই মনে পড়ে যা শিবও নিজের বুকে ধারণ করেন, কারণ তাঁর হাতেই জীবন-মৃত্যুর খেলা। কবি বুঝি মা কালীর গভীর, রহস্যময় ও বিশ্বজনীন রূপকে তুলে ধরেছেন, যেখানে অন্ধকার, আলো, সৃষ্টি ও ধ্বংস একই সাথে বিরাজমান।
কবি একে একে উপহার দিলেন কত সঙ্গীত। শ্রোতার হৃদ কমল ভরে ওঠে তাঁর অপরূপ সংগীতের সুরসাধনায় ---
‘শ্যামা নামের লাগলো আগুন’ । ’শ্মশানকালীর রূপ দেখে যা’; ‘শ্মশানে জাগিছে শ্যামা’, ‘থির হয়ে তুই বস দেখি মা; ‘ভারত শ্মশান হলো মা তুই; ‘আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশি শ্যামা কালী’; ‘শ্যামা তোর নাম যার জপমালা’; ‘ওমা খড়গ নিয়ে মাতিস রণে’ কবি রচিত আরো অজস্র সংগীতে।
হিন্দু ধর্মের প্রতি নজরুলের অতি আগ্রহ থাকার কারণে একশ্রেণীর মুসলমান নজরুলকে বিজাতি ঘোষণা করেছিল এবং হিন্দুদের একটা শ্রেণী নজরুল মুসলিম হওয়ার কারণে তাঁকে বিজাতি মনে করত। ''‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় কবি লিখেছিলেন—‘মৌ—লোভী যত মৌলবী আর ‘মোল্লারা ক’ন হাত নেড়ে,/দেব—দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে!’ ,ওঁর সমাজের কিছু মুসলিম নজরুলকে কাফির আখ্যা দিতে দ্বিধা করেনি। কট্টরপন্থি মুসলমানদের মধ্যে নজরুল সম্পর্কে সবচেয়ে বড় অভিযোগের কারণ ছিল নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত।একটা সময়ে পূর্ববঙ্গের বেতারেও নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত সম্প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। ক্রমশ :
তথ্য সূত্র :---১)নজরুল জীবনী / করুণা ময় গোস্বামী
২)নজরুল গবেষক ও অনুবাদক / পীযুষ ভট্টাচাৰ্য
৩)নজরুল-চরিতমানস, ডঃ সুশীলকুমার গুপ্ত, দে’জ পাবলিশিং (২০১৫)।
৪) নজরুল রচনাবলী, বাংলা একাডেমি (২০০৭)।
0 Comments