বাংলার ঘাস পাতা ফুল ফল, পর্ব -- ১০২
সন্ধ্যামনি
ভাস্করব্রত পতি
সর্বপ্রথম পর্তুগীজরা এই সন্ধ্যামনি ফুলের বীজ বিদেশ থেকে ভারতে এনেছিল। এর আদি বাসস্থান দক্ষিণ আমেরিকার পেরু। পশ্চিমবঙ্গের হুগলির ব্যান্ডেল চার্চে এই সন্ধ্যামনির বীজ প্রথম বপন করেছিলেন পর্তুগীজ ধর্মযাজক দ্যা ক্রুজ।
সাদা সন্ধ্যামনি
সন্ধ্যামনিকে সংস্কৃতে কৃষ্ণকলি, সন্ধ্যামণি, হিন্দিতে গুলবাজী, গুলাম্বাস, ওড়িয়াতে রঙ্গানি বলে। এটি চারটার সময় ফোটে, তাই একে ইংরেজিতে Four o' Clock Flower বলে। এছাড়াও কৃষ্ণকলি, কৃষ্ণকেলি, কেষ্টকলি নামেও পরিচিত। তবে গ্রামাঞ্চলে এটি সন্ধ্যামনি নামেই বেশি পরিচিত। অনেক স্থানে সন্ধ্যামালতী নামেও পরিচিত।
বীজসহ ফুল
Nyctaginaceae পরিবারের অন্তর্গত এই সন্ধ্যামনির বিজ্ঞানসম্মত নাম Mirabibis jalapa। এই গাছটি দক্ষিন আমেরিকা থেকে এদেশে আনা হয়েছিল। বিভিন্ন রঙের ফুলটি দেখতে বেশ চিত্তাকর্ষক এবং মনোলোভা। লাল, সাদা, হলুদ - এই তিন রঙের ফুলের তিন শ্রেণীর গাছ রয়েছে। ফুলের মধ্যে সামান্য সুগন্ধ মিলবে। একটি গাছেই বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটতেও দেখা যায়। তাছাড়া, একই ফুলের মধ্যে বিভিন্ন রঙের ছিটেও দেখা যায়। তবে গাছ থেকে ফুল তুলে নেওয়া হলেই ফুলটি ঝামলে যায়। সেই তরতাজা ভাব হারিয়ে যায় ফুলের। মূলত ছায়ানিবিড় স্থানে এই গাছ জন্মায়।
হলুদ সন্ধ্যামনি
এই গাছ সহজে মরেনা। বহুবর্ষজীবী। ঝোপ ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এদের গোলাকার বীজগুলি পেকে গেলে কালো রঙের হয়। যা দেখতে গোলমরিচের মতো। তবে আকারে বড়। অনেকটা ছোলার মতো। পেকে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে গাছের তলায়। সেখানেই নতুন চারাগাছ জন্মায়। কোথাও কোথাও এর বীজ দিয়ে প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি হয়। এছাড়াও রঞ্জক শিল্পে কাজে লাগে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই গাছ মাটির সাথে মিশে থাকা ক্ষতিকর ক্যাডমিয়াম ধাতুর থেকে উদ্ভূত দূষণ রোধে সহায়ক।
রঙবেরঙের সন্ধ্যামনি
এর আদিভূমি পেরুতে সেদেশের লোকজন এর ফুল থেকে নিষ্কাষিত রস হার্পিসের ক্ষত এবং কানের ভেতরের ক্ষত নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। মূল থেকে বের করা রস কানের ব্যথা, সিফিলিস, আমাশয়, লিভার সংক্রমণ ইত্যাদি নিরাময়ের ক্ষেত্রে কার্যকরী। সন্ধ্যামনি ফুল ব্যবহৃত হয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে রঙের কাজে। কেক ও জেলি রঙ করতেও এই ফুলের রঙ কাজে লাগে। সন্ধ্যামনির পাতা দেহের প্রদাহ কমাতে এবং এর ক্বাথ ফোঁড়া নিরাময়ের জন্য লাগে।
🍂
0 Comments