জ্বলদর্চি

দূর দেশের লোকগল্প-- ২৬৬( মরক্কো, আফ্রিকা )দুঃখ সুখের সাতকাহন /চিন্ময় দাশ

দূর দেশের লোকগল্প-- ২৬৬

(মরক্কো, আফ্রিকা)


দুঃখ সুখের সাতকাহন 

চিন্ময় দাশ


এক গ্রামে দুই ভাই বাস করত। দুজনের আলাদা আলাদা বাড়ি। বড়ভাইয়ের সাত-সাতটা ছেলে। আর ছোটভাইয়ের সাত-সাতটা মেয়ে।

দুজনকেই নানান কাজে বাইরে থাকতে হয়। সারাদিন কাজকর্ম নিয়ে সময় কাটে। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে সাফসুতরো হয়ে মসজিদে যায় মাগরিবের নামাজ পড়তে।

সব দিন একটা জিনিস দেখা যায়। বড়ভাই মসজিদে যাবে একটু দেরিতেই। তখন আসর ভরা লোক। বসবার ঠাঁই নাই। বড়ভাই সোজা গিয়ে হাজির হবে ছোটভাইয়ের কাছে। বলে -- ওঠ, ওঠ। সাত দুঃখীর বাপ তুই। তুই কী আসনে বসবি। আসনে বসবে সুখীর বাপ। তুই গিয়ে দাঁড়া। আমি বসি।

প্রতিদিন একই ঘটনা। প্রতিদিন দেরিতে যায় বড়ভাই। ঘর ভর্তি লোকের সামনে ‘সাতটা দুঃখীর বাপ’ বলে খোঁটা দেয় ছোটকে। আর আসন থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে বসে পড়ে।

সাত-সাতটা মেয়ে তার। প্রতিদিন ঘরভর্তি লোকের সামনে সেজন্য অপমান করে তার বড়ভাই। প্রতিদিন মুখ গোমড়া করে ঘরে ফেরে ছোটভাই।

ছোটোর বউ একদিন জিজ্ঞেস করল তার স্বামীকে-- ব্যাপারটা কী? মসজিদ থেকে প্রতিদিন অমন মুখ ভার করে ফেরো কেন তুমি?

সেদিন সব কথা খুলে বলল ছোটভাই। বড়ভাই প্রতিদিন আমাকে ঘর ভর্তি লোকের সামনে বেইজ্জত করে। বলে, আসনটা সুখীর বাপের বসার জন্য। দুঃখীর বাপের জন্য নয়। বলে আমাকে তুলে দেয় আসন থেকে।

লোকটা যখন তার বিবিকে কথাগুলো বলছে, ঘরের ভেতর থেকে ছোটমেয়ে শুনছিল। সে বেরিয়ে এসে বলল—আব্বা, মন খারাপ করোনা আমার কথা শোন। দেখবে, সব মিটে যাবে। বলে বাবাকে কিছু পরামর্শ দিয়ে দিল সে। 

ছোট মেয়ে যা বলেছে, হুবহু সেই কথা মেনে চলল ছোট ভাই। সেদিন মসজিদে গিয়ে, বেশ জাঁকিয়ে বসেছে আগে থেকে। প্রতিদিনের মতো বড়ভাই এসে তাকে তুলে দিতে গেল। ছোটভাই বলল—শোনো, দাদা। সুখ-দুঃখ সে তো ভাগ্যের লেখা। এক কাজ করি এসো। তোমার তো সাত-সাতটা ভাগ্যবান ছেলে। আমার এদিকে সাতটাই দুঃখী মেয়ে। তোমার একজন ছেলে আর আমার একজন মেয়েকে ঘর থেকে রওনা করে দিই। তিন দিন সময় দেওয়া হোক। তারা ঘরে ফিরে আসুক। দেখা যাক, কার কপালে কত সুখ আর কার কপালে কতটা দুঃখ। হাতে নাতে প্রমাণ হয়ে যাবে।

বড়ভাই বেশ মজা পেলে কথাটায়। মসজিদের লোকেরাও সবাই শুনছিল। তারাও সবাই বলল—হ্যাঁ, মেনে নাও মেনে নাও।

পরদিনই দুটো ছেলে আর মেয়ে ঘর থেকে বেরোবার জন্য তৈরি হল। বড়ভাই পাঠালো তার বড় ছেলেকে। তার নাম সুলেমান। ছোটর তো ছোটমেয়েই যাবে। আমিনা নাম তার। দুজনের মা দুটো পুঁটলি বেঁধে, দরকারি জিনিসপত্র দিয়ে দিয়েছে তাদের সাথে। 

দুজনের জন্য দুটো ঘোড়ার ব্যবস্থা করেছে দুই বাবা। সবাইকে সালাম জানিয়ে, দুজন রওনা হয়ে গেল বাড়ি থেকে।

ঘোড়া চালিয়ে চলেছে দু’জনে। কতদূর চলতে চলতে এক জায়গায় এসে পথটা দু’দিকে ভাগ হয়ে গেছে। একটা পথের রঙ সাদা। সেটা ধরে এগোলে, কিছু দূরেই একটা সাদা রঙের পাহাড়। অন্য পথটা কালো রঙের। পিছনের পাহাড়টাও তাই।

মোড়ের মাথায় দুজনে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আমিনা বলল-- তুমি বড় দাদা। তোমারই অধিকার আছে পথ বেছে নেওয়ার। তুমি কোন পথে যেতে চাও, বলো। 

সুলেমান দেমাগ দেখিয়ে বলল-- আমার সুখের ভাগ্য। সাদা পথ সাদা পাহাড় খোদাতালা আমার জন্যই তৈরি রেখেছেন। তুই দুঃখী মেয়ে। তুই কালো পথটাতেই যা।। 

আমিনা বলল—হ্যাঁ, দাদা। তাই যাচ্ছি। ঘোড়া চালিয়ে দিল মেয়েটা। 

কিছুদূর গিয়েছে। ছোট্ট একটা নদী। বয়ে যাচ্ছে কুলকুল করে। নদীর পাড়ে এসে নেমেছে। ভাবলো, একটু জল খেয়ে নিই। নদীর জলের কাছে গিয়েছে, দেখলো জলের রঙ মিশমিশে কালো। জল বলে উঠলো-- এই জল খেয়ে না গো মেয়ে। এই জল নোংরা। তুমি বরং পারলে আমার এই জল পরিষ্কার করে দাও।

আমিনা লক্ষ্য করল, পাড়ে বসে অলিভ ফল ভেঙেছিল কেউ।  তার সব খোসা জলে ঢেলে দিয়ে গেছে। তাতেই জলের রঙ কালো। সমস্ত পচা খোসা নদী থেকে তুলে ফেলে দিল আমিনা। আবার টলটলে জল বইতে লাগলো নদীতে। দু’ আঁজলা জল খেয়ে, আবার চলতে শুরু করল।

 কিছুদূর গিয়েছে। এক থুরথুরে বুড়োর সাথে দেখা। নোংরা পোশাক। মাথায় এক বোঝা সনের নুড়ির মত চুল। পাশে একটা লাঠি পড়ে আছে। সারাদিনে কোন মানুষ দেখল আজ। বুড়ো কাকুতি মিনতি করল-- একটু দাঁড়িয়ে যাও গো, মেয়ে। একটু উপকার করে দিয়ে যাও আমার। 

দেখে দয়া হলো আমিনার। ঘোড়া থেকে নেমে বুড়োর কাছে গিয়ে বলল— বল, কী উপকার করতে পারি তোমার?

পাশেই একটা লাঠি রাখা ছিল। বুড়ো বললো-- এইটা তুলে আমার মাথায় মারো কষে এক ঘা। এ জীবন শেষ করে দাও আমার। 

আমিনা অবাক হয়ে বলল—সে কী? এমন কথা কেন বলছো?

--কত দিন পেটে কিছু পড়েনি। নদীর জলটাও এত নোংরা যে, এক আঁজলা তুলে গলায় দিতে পারি না। এই জীবন বড় কষ্টের। একে শেষ করে দিয়ে যাও তুমি।

কোন মেয়ে কী আর এ কাজ পারে? খুব যত্ন করে বুড়োর মাথার চুল কেটে দিল আমিনা। কাপড় জামা পরিষ্কার করে ধুয়ে আনলো নদীর জল থেকে। পাশে একটা ভাঁড় ছিল। জল নিয়ে এলো নদী থেকে। পরিষ্কার টলটলে জল এনে ধরল বুড়োর মুখে। জল গলায় যেতে, যেন জীবন ফিরে পেল বুড়োমানুষটা।

পুঁটলি খুলে দুটো বের করে ব্বুড়োর হাতে দিল আমিনা। আকাশের চাঁদ হাতে পেল মানুষটা। বলল-- শোনো গো, মেয়ে। অনেক উপকার করেছ তুমি আমার। নদীর জল পরিষ্কার করে দিয়েছ। তাতে অনেক জীবজন্তুরও প্রাণ বাঁচবে। তুমি আমার উপকার করেছ। আমিও তোমার একটা উপকার করতে চাই। 

আমিনা বলল—বল, কী উপকার করবে তুমি আমার?

বুড়ো বললো-- অনেক পথ এসেছো। স্নান করে নাও নদীতে। ঘোড়াকেও জল খাওয়াও। ঘোড়াটা ছেড়ে দাও এখানে। পায়ে হেঁটে রওনা হয়ে যাও তুমি। দূরে গেলেই তুমি একটা বাড়ি দেখতে পাবে। দরজা লাগানো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে— 'খুল যা সিম সিম’। অমনি পালা দুটো খুলে যাবে। 

বুড়ো বলতে লাগল-- ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়বে তুমি। বলবে—‘লাগ যা সিম সিম’। অমনি দরজাও তোমার পেছনে বন্ধ হয়ে যাবে। সামনের ঘরে ঢুকে দেখবে, সারি সারি মড়া শুয়ে আছে। আসলে ওটা রাক্ষসদের বাড়ি। মানুষজন মেরে এখানে জমিয়ে রেখেছে। এক্কেবারে ভয় পাবে না। মাথা খাটাবে। তাহলেই দেখবে, তোমার কোনও বিপদ হবে না। ঘরের একেবারে কোণায় গিয়ে মড়াগুলোর আড়ালে শুয়ে থাকবে। যাতে রাক্ষসের সন্ধান না পায়। সন্ধ্যের পর রাত করে রাক্ষসেরা ঘরে ফেরে। একটা লোহার লাঠি আছে ওদের। সেটা গরম করে প্রত্যেকটা মড়ার উপর ছোঁয়াবে। নতুন কেউ ঢুকে আছে কি না, সেটা পরখ করবার জন্য। খুব সাবধানে থেকো।

বুড়োর কথা খেলাপ করল না আমিনা। কিছুদূর যাওয়ার পর সত্যিই একটা ঘর দেখতে পেল। সেখানে বুড়োর কথামতো ‘খুল যা সিম সিম’ বলতে, দরজা গেল খুলে। ভেতরে ঢুকে আবার ছড়া কেটে দরজা বন্ধ করে দিল।

ঘরের ভিতরে সত্যি সত্যিই সারি সারি মড়া রাখা আছে। একেবারে দূরের দিকে গিয়ে মড়াগুলোর আড়ালে শুয়ে পড়লো মেয়েটা। তারপর সন্ধ্যা হল। রাক্ষসেরা ঘরে ফিরে এলো একসময়। একটা রাক্ষসকে বলতে শুনলো-- মানুষের গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে। ভয় করতে লাগলো আমিনার। রাক্ষসেরা গরম লোহার লাঠি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলো। লুকিয়ে ছিল, আমিনার কোন বিপদ হলো না।

সকাল হোল। রাক্ষসেরা বেরিয়ে যেতে আমিনা উঠে পাশের ঘরে ঢুকল। অবাক হয়ে দেখল, সেই ঘরে হিরে মুক্তা রাখা আছে পুঁটলী বেঁধে। ন’টা মুক্তা ওড়নায় জড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে এল আমিনা। বাড়িতে তারা নয়জন। তাই ঠিক নটা মুক্তাই নিয়েছে সে। একটাও বেশি নেয়নি। লোভ করা ভালো নয়, এটা সে ভালই জানে। বাইরে বেরিয়ে অবাক। তার ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে সামনে। ঘোড়ায় চেপে বাড়ি ফিরে এলো মেয়েটা।

বাড়ির সবচেয়ে ছোট্ট মেয়ে সে। তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে হয়েছে। বাবা মা তার ছয় দিদি সকলের খুব মন খারাপ। হঠাৎ ঘোড়ার খুরের শব্দ। সবাই ঘর থেকে বাইরে এসে দেখল, আমিনা ফিরে আসছে হাসিমুখে। সকলের সে কী আনন্দ। আল্লাহ মেহেরবান। কোন বিপদ হয়নি আমাদের মেয়ের।

বিপদ তো হয়ইনি। উল্টে সকলের জন্য একটা করে মুক্তা এনেছে মেয়ে। আনন্দ ধরে না বাড়ির সবার। আমিনা বলল--  আব্বা, তুমি এবার যাও। বড় আব্বাকে বলো, তার ছেলে কী নিয়ে এসেছে, কত সুখ ভরে এনেছে বাড়িতে।

ওদিকে হয়েছে কী, বড় ভাইয়ের সুলেমান গিয়েছিল সাদা পাহাড়ের সাদা রাস্তা ধরে। কিছুদূর গিয়েই সেও দেখেছে এক নদী। নদীর পাড়ে এক মুচির পাল্লায় পড়ে গেছিল সে। মুচিটা ঢোলক বানিয়ে বিক্রি করবার জন্য বসেছিল নদীর পাড়ে। সুলেমানকে দেখতে পেয়ে তার কেল্লা ফতে। কথার ফাঁদে ফেলে, বোকা সাজিয়ে নটা ঢোলকই বিক্রি করে দিয়েছে। সুলেমান তার সঙ্গে যা নিয়ে গিয়েছিল, সব পয়সা চলে গেছে মুচির পকেটে। নটা ঢোলক নিয়ে ঘরে ফিরেছে বড় ভাইয়ের বড় ছেলে।

আমিনার কথা মত তার বাবা দাদার বাড়ি গিয়ে বলল—দাদা, তিন দিন তো কেটে গিয়েছে। তোমার ছেলেও বাড়ি ফিরেছে। আমার মেয়েও বাড়ি ফিরেছে। এবার একটু যাচাই দেখা যাক, কে কতটা সুখ আর কতটা দুঃখ নিয়ে ফিরেছে।

দুই ভাই রাজি হল। দুই ভাইয়ের বাড়ির সামনে উঠোন। সেখানে সুলেমান বেরিয়েছে ন’খানা ঢোলক নিয়ে। আমিনা বেরোলো গুনে গুনে নটা মুক্তা নিয়ে।

🍂

কাউকে কোন বিচার করতে হলো না। বড়ভাই নিজেই লজ্জায় মাথা নিচু করে নিয়েছে। সুলেমানকে বলল-- হতভাগা, এই তোর সুখের কপাল? এই তোর সৌভাগ্য? নটা ঢোলক ছাড়া, কিছুই আনতে পারিসনি। ছোট বোনটাকে দেখ। সে তো দুঃখী মেয়ে। সবাই আমরা খোঁটা দিয়েছি তাদের। দেখ, মাত্র তিন দিনের মধ্যে সে কী নিয়ে ফিরেছে।

বড়ভাই এগিয়ে এসে ছোটভাইয়ের হাত দুটো ধরে বলল-- তুই আমাকে ক্ষমা করে দে, ভাই। আমি অনেক ভুল করেছি। মেয়ে হয়েছে বলে, অনেক তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছি। কিন্তু সেই মেয়ে নিজেই প্রমাণ করেছে, তারা একেক জন সৌভাগ্যের প্রতীক। তুই সত্যিই ভাগ্যবান, ভাই।

বড়ভাই এবার আমিনাকে বলল—বেটি, তুই আমার উপর রাগ করিস না। বরং আয়, আমরা দুটো পরিবারের সবাই মিলেমিশে থাকি। সুলেমান এসে বলল—বোনটি, তুই কী করে পেলি রে এতো মুক্তা?

দুই পরিবারে মিলেমিশ হবে। আর কোন দ্বন্দ্ব থাকবে না। বিবাদ থাকবে … শুনে আমিনা ভারী খুশি। সে তার দাদাকে কোন পথ থেকে গিয়েছিল, কী কী হয়েছিল, কী কী করতে হবে-- সব বুঝিয়ে বলে দিল।

 এবার সূলেমান চললো কালোর কালো রঙের সেই পথ ধরে। কিন্তু স্বভাব যাবে কোথায়? যেতে যেতে সেই নদীর সাথে দেখা। নদী বলল-- আমার জল পরিষ্কার করে দাও। সূলেমান বলল—আমার কী দায় পড়েছে? তোমার জল তুমি পরিষ্কার করে নাও। 

খানিক গিয়ে বুড়োর সঙ্গে দেখা। বুড়োকেও সে জল এনে দিল না। উল্টে তার ভাঁড়টাকেই লাঠি দিয়ে ভেঙে এগিয়ে চলল। কিছুদূর গিয়ে, সেই ঘরের সামনে হাজির। বোনের বলে দেওয়া ছড়া কাটলো—খুল যা সিম সিম। 

দরজা খুলে গেল ঘরের। ভিতরে ঢুকে পড়েছে ছেলেটা। সেখানে সার দিয়ে মড়া শোয়ানো আছে। সুলেমান একেবারে সামনের সারিতে মড়াগুলোর সাথে শুয়ে পড়লো।

 সন্ধ্যে হল। রাক্ষসের ফিরেছে বাড়িতে। সামনেই দেখল, একটা ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে। মজা করে ঘোড়াটাকে খেলো সবাই মিলে। ঘরের ভেতরে ঢুকেই দেখল, একেবারে সামনে একটা জ্যান্ত লোক শুয়ে আছে। সুলেমানকে ধরে ফেলল রাক্ষসেরা। বুড়ো রাক্ষস বলল-- এটাকে শেকলে বেঁধে রাখ। উৎসবের দিনে খাওয়া হবে। অনেকদিন জ্যান্ত মানুষের মাংস খাওয়া হয়নি। 

বুড়োর কথা মত সুলেমানকে শেকল দিয়ে বেঁধে, একটা ঘরের মধ্যে রেখে দেওয়া হল

এদিকে দিন কয় কেটে গেল। সুলেমান বাড়ি ফিরল না। তার বাবা-মা এসে আমিনাকে ধরল—কিরে, তোর দাদা তো ঘরে ফিরল না? কারণটা কী বল তো? তুই কি একটু হদিস করতে পারবি মা? 

আবার ঘোড়ায় চড়ে বসল আমিনা। একই রাস্তা ধরে রাক্ষসের ঘরে এসে হাজির হলো। খুল যা সিম সিম বলতে দরজা গেল খুলে। ঘরের ভিতরে খোঁজ নিয়ে দেখল, তার বড়দাদা শেকলে বাঁধা হয়ে পড়ে আছে। শেকল খুলে দাদাকে মুক্ত করল। দাদা বলল-- চল চল, বোন। পালাই এখান থেকে। এক্ষুনি ওরা ফিরে আসবে। 

আমিনা বলল—না, দাদা। ওরা তোমাকে বেঁধে রেখেছিল। তার শাস্তি দেব আমি ওদের। আমার পেছন পেছন এসো তুমি। খালি হাতে ফেরা যাবে না। 

পিছনে তার দাদা। আমিনা গিয়ে পাশের ঘরে ঢুকল। পুঁটলি পুঁটলি হীরা মুক্তা সাজানো। সবগুলো পুঁটলি তুলে নিল দুজনে। বাইরে বেরিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বাড়ি ফিরে এলো দুজনে। 

সাড়া পড়ে গেল দুই বাড়িতে। গোটা গ্রাম জানলো যে বহুৎ ধন সম্পদের মালিক হয়ে ফিরেছে ছেলেমেয়ে দুটো।

অবস্থা ফিরে গেল দুটো পরিবারের। তার পর? তারপর আর কী? বিয়ে হয়ে গেল ভাইবোনেদের সকলের। সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে লাগল তারা।

Post a Comment

0 Comments