জ্বলদর্চি

অ্যাঁতেলেকত্যুয়েল বনাম আঁতেল-২৫ / সন্দীপ কাঞ্জিলাল

"কেটে যাওয়া রক্ত, হত্যার রক্ত, দুর্ঘটনার রক্ত, জীবন বাঁচানোর জন্য রক্ত, সবার রং একই রকমের লাল, কিন্তু আর্তনাদ আলাদা"

অ্যাঁতেলেকত্যুয়েল বনাম আঁতেল পর্ব-২৫

সন্দীপ কাঞ্জিলাল 

বুদ্ধিজীবী ও সমাজ -৩

আমরা যাদের লেখা পড়ি বা কথা শুনি সভাঘরে বা তাদের বেশ ভূষা দেখি, তখন মনে হয় যে সত্যি তাঁরা মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছেন। তাই তাঁদের দেখে আমরা মনে মনে বুদ্ধিজীবী বলে কল্পনা করে নিই। তাঁরাও আমাদের এই ভাবনায় ভর করে, নিজেদের বুদ্ধিজীবীর হাবভাব দেখায়। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায় তাদের কাজকর্ম, নিজের লেখার এবং বলার বিরোধী। তাহলে স্পষ্ট বোঝা যায়, তাঁদের বাইরে একটা রূপ আর ভেতরে আর একটা। যেমন পাড়ার গদা একটু দেখতে শুনতে ভালো, কথা স্পষ্ট উচ্চারণ করে বলে, যাত্রায় নায়কের পাঠ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে সে নানারকম অসামাজিক কাজ করে বেড়ায়। তেমনি এই বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের একটা আচরণ ঢেকে রাখে। তার মানে তাদের বাস্তব সত্য আর মানস সত্যের মধ্যে একটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ফ্রয়েডীয় মতবাদ অনুসারে সেগুলির নির্দিষ্ট কারণ আছে। অকারণে কেউ স্বপ্ন দেখে না, ভুলে কেউ ভুল করে না, আপনার মনে যতই এলোমেলো চিন্তার উদয় হোক না কেন, তার পেছনে নির্দিষ্ট কারণের প্রভাব থাকতে বাধ্য। প্রত্যেক মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের গঠনের উপর তার মনোভাব নির্ভর করে। তাই যতই কেউ পড়াশোনা করুক, যতই লেখালেখি করুক যদি তার স্নায়ুতন্ত্রের গঠন না পাল্টায় তার পক্ষে ভেতর থেকে পাল্টানো সম্ভব নয়। স্নায়ুতন্ত্রের আসল কাজ হলো বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে মানুষের ভারসাম্য বজায় রাখা। বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে মানুষকে খাপ খাওয়ানোর কাজ। আর তাই ওই স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যস্থতাতেই আমাদের বাস্তব পরিবেশ প্রতিবিম্বিত হয় আমাদের মধ্যে- সেই প্রতিবিম্বেরই নাম হলো আমাদের মন। ফলে পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে আমাদের মনের গড়নেও। আর এই মানুষের মন পরিবর্তনশীল পরিবেশের প্রতিবিম্ব হয়েও, এই পরিবেশকে পরিবর্তন করার ব্যাপারে অত্যন্ত জরুরী শক্তির কাজ করতে পারে। কিন্তু যদি মানসিক গঠনের পরিবর্তন না ঘটে, তবে তিনি কিভাবে সমাজ পরিবর্তনের কাজ করতে পারবেন।

যেমন একবার পড়েছিলাম, নট্ট কোম্পানির নটী বিনোদিনী  যাত্রাপালায়, রামকৃষ্ণের ভূমিকা করতেন শিল্পী দ্বীপেন চ্যাটার্জি। তিনি যে বছর ঐ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, সে বছর চেষ্টা করতেন রামকৃষ্ণের জীবন যাপনে। তাই তিনি রামকৃষ্ণ চরিত্রটিকে এতো সুন্দর ফুটিয়ে তুলতেন। তাই চলতি জীবনযাত্রার বাইরে, তোমাকে অন্য কিছু হতে হলে  তোমাকে সেই চরিত্রের মতো হতে হবে। তাই বুদ্ধিজীবী হতে গেলে তোমাকে বুদ্ধিজীবীর মতো হতে হবে। কিন্তু আজকের দিনে অনেকে শুধু বুদ্ধিজীবীর পোষাক গায়ে চাপিয়ে ঘোরেন। ভেতরটাকে পাল্টায় না।
য়ুরোপীয় দর্শনের চূড়ান্ত ভাববাদী দার্শনিক 'প্লেটো', তিনি বলেছিলেন আমাদের মনের তিনটি ভাগ--(১)অন্ধ বাসনা (২)বিচার বিবেচনা (৩)সংগ্রামী অংশ।যখন অন্ধ বাসনা আর বিচার বিবেচনার লড়াই বাঁধে তখন সংগ্রামী অংশ মধ্যস্থতা করে। যাকে আবার দার্শনিক ফ্রয়েড বলেন,Id(ঈড্),Super Ego এবং Ego.তিনি বললেন, ঈড্ অন্ধ বাসনা ছাড়া আর কিছু নয়।যে শুধু নিজের তৃপ্তি চায়। আর তখন বিবেক বিবেচনা বা Super Ego তাকে বাধা দেয়। তার একমাত্র কাজ হলো অন্ধ বাসনাকে বাধা দেওয়া। এই ঈড্ এবং Sper Ego-এর মধ্যে লড়াই যখন তীব্র হয়,তখন মনের তৃতীয় অংশ Ego তার মধ্যস্থতা করে। এই বাস্তববোধ বা Ego র জন্য আমরা জীবন সংগ্রামে টিকে আছি। 

যখন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি, তখন Super Ego এবং Ego ঘুমায়।কিন্তু জেগে থাকে অন্ধ বাসনা বা ঈড্৷ তার চোখে ঘুম নেই। যারা নকল বুদ্ধিজীবী তারা বাইরে তাদের Super Ego বা Ego কে জাগ্রত দেখানোর অভিনয় করলেও, আসলে তারা Super Ego বা Ego কে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। অন্তরে শুধু জাগিয়ে রাখে অন্ধ বাসনা বা ঈড্। আর এ-ই ঈড্-ই তাদের পরিচালনা করে। এই ঈড্-এর অপর নাম নির্জ্ঞান।

যখন আমরা গাড়ি চালাই, যদি ব্রেকের উপর সবসময় আমরা পা চাপিয়ে রাখি, তবে গাড়ি পূর্ণ গতিতে ছুটবে না। অথচ তেল বেশি পুড়ছে, গাড়ি অতিরিক্ত গরম হচ্ছে, এমনকি ঈঞ্জিনের অনেক সমস্যা দেখা দেবে।কিন্তু যদি ব্রেকের উপর থেকে পা তুলে নিই, তবে গাড়ি মসৃণভাবে ছুটবে। ঠিক তেমনি যারা ভালোমানুষের ভাব দেখায়, তাদের চালকের আসনে বসে আছে সেই নিছক অন্ধ বাসনা  বা ঈড্।তাই তাদের আচার-আচরণ লেখাপড়ায় তার প্রভাব পড়বেই।

প্রাচ্যে পশ্চিম উপনিবেশি অবস্থান এবং উপনিবেশিতর সামগ্রিক পরিস্থিতি পাঠ করার প্রক্রিয়া যদি আমরা দেখি উপনিবেশি আগ্রাসনের সাথে পশ্চিমের সাংস্কৃতিক মনোভঙ্গি ও জ্ঞানচর্চার নিবিড় সম্পর্ক। বিশেষ ধরনের সাংস্কৃতিক প্রণোদনা ও জ্ঞানচর্চা পশ্চিমাদের মনে প্রাচ্যকে নিকৃষ্টরুপে দেখায়, প্রাচ্যকে কব্জা করতে ও বশ করতে প্ররোচনা যোগায়। এবং শাসিত দেশের কিছু গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী তাদের কলোনিয়াল প্রভুদের প্ররোচনা এবং প্রচারনায় হাওয়া জুগিয়ে চলেন। পশ্চিমের এই জ্ঞান-কলুষ, নৈতিকতা বিবর্জিত সাংস্কৃতিক আধিপত্যকে এডওয়ার্ড সাঈদ বলেছেন, "জ্ঞান ও ক্ষমতার শয়তানী জোটের সবচেয়ে বড়ো নমুনা, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষের করুণতম এক কালপর্বের পেছনে এটা অন্যতম কারণ।"

আমরা যদি মার্টিন লুথার কিং ও রাজা রামমোহন রায় এর তুলনা করি, দেখতে পাবো এই দুই শতকের দুই দেশের উল্লেখ্যযোগ্য সমাজ সংস্কারক কিভাবে দুই বিপরীত ভূমিকা পালন করেছিলেন। অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীর সামাজিক কাজ ও দায়িত্ব দুই আলাদা বিষয়। লুথার মার্টিন নিজে বাইবেলের অনুবাদ করেছিলেন। কিন্তু সেই অনুবাদের ভাষা ছিল আমেরিকার কৃষক সমাজের ভাষা, যাদের অধিকাংশই কালো চামড়ার। এটা শ্বেত ক্রিষ্ট সমাজ বা ভ্যাটিকানের অধিপত্যের বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহ-ই বলা যায়। 
অন্যদিকে রামমোহন-র বেদের অনুবাদের ভাষা ছিল তৎসম বহুল বা ফোর্ট উইলিয়াম-এ হিন্দু শ্রেণির জন্য নির্মিত নির্ধারিত ভাষা। যা প্রকারন্তরে এই দেশে ইংরেজ কোম্পানির শাসনকে স্বীকৃতি প্রদান করে। শুধু তাই নয় রামমোহন ও লালন প্রায় সমসাময়িক হবার পরেও সেই সময় লালন এর ভাষা সাহিত্যের ভাষা হতে পারেনি। কারণ লালন ক্ষমতার সীমা থেকে অনেক দূরে ছিলেন। অন্যদিকে রামমোহন কাজ করেছেন উপনিবেশিক কাঠামোর সীমার মাঝেই। যদিও সমাজ পরিবর্তনে তিনি কাজ করেছেন কিন্তু তাঁর সেই কাজ ক্ষমতার জন্য কোন হুমকি হয়ে আসেনি, বরং ক্ষমতাকে এক প্রকার বৈধতা তৈরি করতেই সহায়ক হয়েছে। এটা তাঁর চেতনাগত ব্যর্থতাও বলা যায়। 

উনিশ শতকে বঙ্কিমচন্দ্র যে গদ্য লিখলেন তাঁর ভাষা ও প্রকরণ সাধারণ মানুষদের নিয়ে ছিল, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল না সাধারণ মানুষ। বঙ্কিম নিজে বলেছিলেন, "তিনি সাম্য বা এ জাতীয় প্রবন্ধ ও তাঁর রচনা ও উপন্যাসে সমাজের যে চিত্র দেখিয়েছেন সেটার উদ্দেশ্য সমাজের পরিবর্তন নয়।" বরং তিনি লিখেছিলেন জমিদারদের উদ্দেশ্য, যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকরের সুবিধার্থে জমিদারগণ কিছুটা সংশোধিত হন। নতুবা সামাজিক বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী। সরাসরি কৃষক স্বার্থের বাইরে গিয়ে জমিদার শ্রেণির হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তাঁর লেখা কাজ করেছে। 
অর্থাৎ বঙ্কিমের সমাজ সচেতনতা বুদ্ধিজীবী সুলভ হলেও এর উদ্দেশ্য সামাজিক বিপ্লবের প্রতিকূলেই ছিল। যেন তাঁর আস্থাভাজন ইংরেজদের অনুমিত সামাজিক কানুন মিথ্যে হয়ে না যায়। এবং নতুন করে তৈরি হতে যাওয়া "আধুনিক বঙ্গীয় কাঠামো" ভেঙ্গে না পড়ে। তিনি স্পষ্ট করে লিখেছিলেন "আমরা সামাজিক বিপ্লবের অনুমোদক নই।" একসময় বঙ্কিম তাঁর "সাম্য" প্রবন্ধটি নোটিশ দিয়ে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট করে লিখেছিলেন "এটি বেশি বিক্রি হয় বেশি মানুষ বোঝে বলে এটি ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছি।"
এমনকি আমরা দেখবো মীর মোশারফ হোসেন "জমিদার দর্পন" নাটক লিখলে বঙ্কিম সেটির ভাষার প্রশংসা করলেও প্রচার করতে বারণ করছেন। এ ক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার যে ভাষার প্রশংসা ছিল কেবল এ জন্য যে এটা মুসলমানি গদ্য নয়। কারণ বঙ্কিমের ভাষায় এই বই কৃষক সমাজেরই ক্ষোভ।বিশেষ করে তৎকালীন পাবনা ফরিদপুর অঞ্চলে যে কৃষক আন্দোলন সেখানে ইন্ধন যোগাতে পারে। 
তত্ত্ব ও সেই সাথে বাস্তবিক জ্ঞান এই দুটি এক না হলে কোন শিক্ষাই পূর্ণ হয় না। বুদ্ধিজীবী সেই সামাজিক মানুষ যিনি তাঁর সময়, সমাজ ও ক্ষমতাকে প্রশ্ন করবেন জন-মানুষের অধিকার সাপেক্ষে। যিনি সমাজ ও ক্ষমতার অন্ধকার দিক সমূহকে উন্মুক্ত করবেন সর্বসমক্ষে। যিনি সময় ও সমাজের নৈতিক বিবেকের দুয়ার পাহারা দেবেন জীবন ও সম্মানের ঝুঁকি নিয়ে এবং যিনি ইতিহাস ও আপন অভিজ্ঞতার আলোকে সামাজিক মুক্তির নিজস্ব ব্যাখ্যা দেবেন। 
বলাই বাহুল্য এসবে ঝুঁকি মারাত্মক, বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে যেখানে জাতীয় রাজনীতির বৃহত্তর ঐক্য প্রশ্নে সমাজ দ্বিধা বিভক্ত। এখানে যে দলই ক্ষমতায় থাক, তাদের দিকে প্রশ্ন তোলা মানেই ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বলা অর্থাৎ ক্ষমতার শত্রুতে পরিণত হওয়া। এমন পরিবেশে কেবল বই লিখে বা একাডেমিক্যেলি বুদ্ধিজীবীতায় দায় শোধ হয় না৷ এমনকি সেই একাডেমিক কাজ যদি জনস্বার্থমুখী ও হয় এবং কোন বুদ্ধিজীবী যদি সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা না করেন, তাহলে তিনি আসলে নিজের চৈতন্য বোধ বা ইতিহাস বোধকে ক্ষুন্ন করার সাথে সাথে আত্মমর্যাদা বোধকে ক্ষুন্ন করে নিজেরই বিরোধিতা করেন। তাই একাডেমিক কাজ বা বই লেখা বা অন্য কোন কাজ যাই থাক সেটা বুদ্ধিজীবীর সামাজিক দায়িত্ব পালনের অপারগতার অজুহাত কখনোই না। ইতিহাসে আমরা বড়ো বড়ো বুদ্ধিজীবীদের বড়ো সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি, আর সেই উদাহরণ অবিরল। 

স্বাধীনতার পরে আজ পর্যন্ত যে পথ এটি অতিক্রম করেছে সেটি আর যাই হোক মুক্ত স্বাধীন মত প্রকাশের অনুকূল বা প্রগতিশীল চর্চার নিরাপদ ক্ষেত্র যেমন হতে পারেনি, তেমনি এর শিক্ষা ব্যবস্থা কোন ক্রমেই "স্বতন্ত্র মত" গড়ে তোলা বা শাসক দলের আধিপত্যের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণের অনুকূলে নয়। যার ফলে সমাজে সার্বিক রাজনীতি বিমুখতার এক পরিবেশ বিরাজ করছে আজ পর্যন্ত। 

এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক দলসমূহের বিরোধিতার কারণে। এখন রাজনৈতিক দল গুলোর একমাত্র লক্ষ্য যেন ক্ষমতা ভোগ করা। যে কোন প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় গিয়ে ব্যক্তিগত বিত্ত ও বৈভবের পাহাড় গড়ে তোলা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে। আমরা লক্ষ্য করলে দেখবো যারা ক্ষমতায় যাবার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা রাখে এমন দল সমূহের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি, অর্থনৈতিক কর্মসূচি, দৃষ্টিভঙ্গি এমনকি নৈতিকতার জায়গায় বড় মাপের গুণগত কোন পার্থক্য নেই। ভোগবাদী অর্থনীতির এই চরম ও পরম যুগে সব রাজনৈতিক দলগুলো যখন লুটতন্ত্রের নামান্তর হয়ে ওঠে, তখন জন অধিকার বা গণ আকাঙ্ক্ষার শেষ মশাল হিসেবে প্রতিরোধের স্বরকে কণ্ঠ দেওয়া বুদ্ধিজীবীর কর্তব্য। 

কিন্তু এখন প্রশ্ন জাগে এই বহু শিক্ষায় বিভক্ত সমাজে কোন ভাষায় কথা বলবেন বুদ্ধিজীবী? তাঁর আপন মাতৃভাষায় নাকি শোষক শ্রেণির প্রতীকী ভাষা। ভাষা নিজেই এক প্রকার ক্ষমতা যেমন ঠিক, তেমনি ভাষা ক্ষমতা প্রকাশের এক প্রতীক। তথাকথিত উপনিবেশিক শাসনের অবসান হলেও, এই নব্য উপনিবেশবাদের কালে ইংরেজির মতো বিদেশি ভাষা এখনও ক্ষমতার ভাষা, পুঁজির ভাষা ও নব্য সাম্রাজ্যবাদের ভাষা। তাই সাধারণ পরিমাপেই যদি বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিজীবীতার প্রকাশ আপন মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় হয়, সেটা যেমন একজন বিচ্ছিন্ন স্বার্থপর পরিমণ্ডলেই ঘটে, তেমনি এই বুদ্ধিজীবীতার চর্চা সমাজের ক্ষমতার কাছের একদল মানুষের সংস্কৃতি চর্চার বিলাস ছাড়া কিছুই হয়ে উঠবে না।
---------
 আরও  পড়ুন

ভারভারা রাও জেলে। তাঁর জেলে থাকাই উচিত। যখন আমরা দু চার লাইন লিখে, শুধু একটা 'টিনের খলা' বা একটা প্রশংসা পত্রের জন্য, কাউকে গোপনে দিচ্ছি অর্থ বা পাঠাচ্ছি 'কারণ-বারি' বা শুধু একটু স্বীকৃতির জন্য, সম্মানের জন্য, সরকারি পুরস্কারের জন্য, লালবাতি গাড়ির জন্য,শাসক এলে চেয়ার এগিয়ে দিচ্ছি বা চেয়ার না থাকলে নিজে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ার ছেড়ে দিচ্ছি, তখন উনি লিখেছেন "পারলে তুমি বণিক ডেকে গোধূলিও দাও বেচে/গোদাবরীও শুকিয়ে যাবে,থাকবে না কেউ বেঁচে।"
 ----লিখেছেন সন্দীপ কাঞ্জিলাল। 

Post a Comment

0 Comments