জ্বলদর্চি

বাংলাদেশনামা/দীপ মুখোপাধ্যায়

বাংলাদেশনামা
দীপ মুখোপাধ্যায়

এক

আমার নতুন পাঞ্জাবিতে
পকেট আছে দুটো
মোবাইল রাখি ডান পকেটে
অন্যটা যে ফুটো।
বাম পকেটে রাখলে টাকা
হঠাৎ দেখি বেবাক ফাঁকা
ভাংতিগুলো তাইতো এখন
আঁকড়ে রাখে মুঠো।


দুই

লালবিহারী
ভাবুক ভারি
নানার বাড়ি
ফরিদপুর-
অদ্যাবধি
খায়নি দধি
চাখবি যদি
আয় সুদূর।


তিন

মজনু মিঁয়া গ্রীষ্মকালে 
চাঁপাই নবাব গঞ্জে
ফজলি আমের জন্য তিনি
মত্ত সারাক্ষণ যে।
দই খেতে যান বগুড়াতে
কক্সবাজারে শুঁটকি
পুরান ঢাকায় বাখরখানি
এবং ভাজা বুট কী? 
চমচম চান পোড়াবাড়ির
টাঙাইলে রূপচান্দা 
ভাগ্যে লেখা ভর্তা-ভাজি
তবুও নাছোড়বান্দা!


চার

চট্টগ্রামের কৃষ্ণপদর
জনশ্রুতি, দারুণ কদর-
মানুষ তিনি গুণের,
এমন পানাসক্তি যে তাঁর
নজর কাড়েন মন্ত্রী নেতার
ব্যবসা করেন চুনের!


পাঁচ

ঠোঁটের ডগায় করুণ কথা
স্বর্গ- মর্ত -পাতালে
ঠ্যাং ভেঙেছে কবুতরের
খান সাহেবের চাতালে।
জুম্মাবারে নামাজ পড়ি
মান্য করি ধর্মের
নিন্দে করি এই ভাঙনের
মতন অপকর্মের।


ছয়

চিনি খালবিলকে
ছন্দ ও মিলকে
ছড়া লিখে দূরীভূত
করি মুশকিলকে।
তেল মারা লাইনে
কবিখ্যাতি চাইনে
চাপাবাজি করে আমি
বৃথা তড়পাইনে।


সাত

দেখেছি কর্ণফুলী কীর্তনখোলা
হাওয়া বয় ফুরফুরে মনে দেয় দোলা
বুঝিনি জঙ্গল পাহাড়ের মানে
বারেবারে ছুটে গেছি বান্দরবানে।
রংপুর বহুদূর কুষ্টিয়া কাছে
সেখানেও গাছে গাছে ফুল ফুটিয়াছে
বাঘের খোঁজেও গেছি সুন্দরবন
কোথাও পাইনি দেখা দৃশ্য এমন।
ঢাকায় রিকশা চেপে ডিঙিয়েছি ভিড়
মনেতে রবীন্দ্রনাথ লালন ফকির
বেড়াতে যাইনি আমি সব মনগড়া
তাই আজ নাকে কাঁদে বিষণ্ন ছড়া।


আট

বর্ষা বলল এসে শহর ভাসাব
উত্তরা বারিধারা মধ্যবাসাবো
পানিও উপচে যাবে বুড়িগঙ্গায়
আয় কাছে পিচ্চিরা মাছ ধরি আয়।
সমস্ত পথঘাট সাঁতরিয়ে যাই
অঙ্কের খাতা ছিঁড়ে নৌকা বানাই
ভাবনার জালে আমি ভাবি এটা ওটা
মাথায় পড়ল যেই বৃষ্টির ফোঁটা।
নয়

আব্বুর সাথে ইলিশ কিনতে
চাঁদপুরে গেছে খুকুটি
দাম শুনে চোখ কপালে উঠেছে
সঙ্গে কিছুটা ভ্রুকুটি।
শেষকালে মলা, চুনোপুঁটি কিনে
এমন মাগ্গি-গন্ডার দিনে
মনের গভীরে জমিয়ে রেখেছে
শুধু ভালোবাসাটুকুটি।


দশ

তোমার বাড়ি নীলফামারী 
আমার বরিশালে 
তুমি দূরের পাহাড় দেখ
পাটভাঙা সক্কালে।
আমার বাসায় ঢেউখেলা টিন
কাঁঠাল কাঠের পিঁড়ি
একটু দূরে কাব্য হয়ে
বয় নদী ধানসিড়ি।
তোমার বাসায় বেড়ায় ঘুরে
টিকটিকি আরশোলা
ভয় করিনা, আমরা যে ভাই
বরিশালের পোলা।


এগারো

পদ্মা আমার প্রাণ
তিস্তা আমার গান
আমি বাংলার সন্তান।
হাসনরাজার সুর
হৃদয়ে ভাঙচুর 
যখন সিলেটে ঘুরঘুর।
আমার পুকুর-বাঁওর
দূরদিগন্ত হাওর
ছড়ায় গাঁথা যা ওর।
শুধুই খুশির রেশ
নেই কোনো বিদ্বেষ
বাংলা আমার দেশ।


বারো

ময়মনসিংহের জলছবি ভুল না
নদীপথে হাতছানি দেবে ঠিক খুলনা
বাসে গেলে গাছপালা হয় পথবাহিত
ইতিহাস মেখে আছে যেন রাজশাহী তো
বঙ্গবন্ধু আজও সম্মানে পুরোধার
এখানে মানুষজন বুদ্ধিতে ক্ষুরধার
আমরাও ডুবে থাকি সেই ভালোবাসাতে
কত মণি-মুক্ত যে বাঙালির ভাষাতে।


তেরো

দামু চৌধুরীদের
আত্মীয়া বুড়িদের
ইচ্ছে, বেড়াতে যাবে
ব্রাক্ষ্মণবেড়িয়ায়
ভাবনায় ভুল ছিল
বাসটাও দুলছিল
হঠাৎ পাল্টি খেল
সুনসান এরিয়ায়।


চোদ্দ

সাভার গিয়ে পড়েছিলাম
ভীষণ গন্ডগোলে
গাছের মাথায় ডজন দুয়েক
ভূতের ছানা দোলে।
সত্যি বলছি আমি আবার
দারুণ অবিশ্বাসী
পেতনিগুলো জুড়ল তখন
নাকিসুরের হাসি।
হাঁটতে থাকি ভয়তরাসে
সেই অশুভক্ষণে
অবাক কান্ড একমিনিটেই
পৌঁছেছি গুলশনে।


পনেরো

যারা থাকে নোয়াখালী 
খায় বুঝি মোয়া খালি?
অকারণে তারা কেউ
গোসলটা করেনা
মজাদার নাস্তায়
থাকে তারা রাস্তায় 
ভাবীদের রান্নাও
কারও পেটে পড়েনা।


ষোল

বাগেরহাটের কেদার
খরচা করত দেদার
একটু পরেই বলতো হেসে
একশো টাকা দে ধার।
ঘুরতো এধার সেধার
তারিফ করি মেধার
চামড়া ছিল শক্ত ভীষণ 
যেন পিওর লেদার।
সাতেরো

বেইলি রোডের রেসতোরাঁতে
যাই আমীরুল ভাই-এর সাথে
সঙ্গে ধ্রুব এষ
ঢাকায় এলে মনটা আকুল
শান্তিনগর ফকিরাপুল
বেড়ানো অভ্যেস।
আফজল বা সানির মতো
ছড়িয়ে আছে দোস্ত কত
রোজই সমাবেশ।


আঠেরো

কদমবুসি খালাম্মাকে
মায়ের মতন নমস্যা
আদর করে খাওয়ান এত
সেটাই প্রধান সমস্যা।
গানের ভেলায় চাপেন যখন
কন্যা ভাবেন বন্যাকে
আমিও বাপু শ্রদ্ধা করি
ওনার স্নেহধন্যাকে!


উনিশ

ইরাজের মামুকে
কামড়ে দিয়েছে এক
ক্ষুধার্ত শামুকে।
মুখে নেই বাক্য
কেঁদেকেটে বানভাসি
করে রুদ্রাক্ষ!


বিশ

চির চেনা গন্ডি
নয় পাকদন্ডী
বারেবারে গেছি তাই
আমি ধানমন্ডি।
চাটগাঁ বা পটিয়া
জনগন চটিয়া
ভয়ে আছি,অঘটন
যায় যদি ঘটিয়া।


একুশ

চিপাগলির ক্রিকেটে
হচ্ছিল ম্যাচ-ফি কেটে
আমার সাথে মসকরা-
ব্যাটিং পারি বোলিং পারি
কোচের ভাষায়,নই আনাড়ি
ট্রেনিং বাকি টস করা।


বাইশ

বাংলাদেশের সব রয়েছে
নেই দুচোখে ভুল
দেশটাকে যে জড়িয়ে আছে
রবীন্দ্র-নজরুল।
সাতসকালে সূর্য ওঠে
আকাশ খুবই নীল
কাব্যচাষও হচ্ছে এখন
উচ্চফলনশীল!


তেইশ

একদা বিকেলবেলা
একুশের বইমেলা
গেছিলাম বন্ধুরা মিলে
বলছিনা রেখে ঢেকে
বুদ্ধিজীবীকে দেখে
চমকিয়ে উঠেছিল পিলে!


চব্বিশ 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে
লড়েছিল দেশ ভক্ত
ভাষার জন্য অকালে ঝরেছে
কত শহীদের রক্ত।
ঢাকা এসে আমি মালা দিতে গেছি
ফের বহুদিন বাদে
খাঁখাঁ করে সেই ফাঁকা চত্বর
শহীদ মিনার কাঁদে।
পঁচিশ

যেই না আমার বিয়ে হলো
গোলাম হলাম জরুর
কাচ্চি খেলাম এবং ভুনা
সঙ্গে কাবাব গরুর। 
তারপরে যেই বৃদ্ধ হলাম
তুবড়ে গেল চোয়াল
এখন আমি মাংস ছেড়ে
গিলছি রাঘব বোয়াল।


ছাব্বিশ 

সারাটা রাত থাকিস জেগে
করিস অনাসৃষ্টি
সাবাড় করিস সিমুই পায়েস
মরণচাঁদের মিষ্টি।
গড় করি তোর সাহসটাকে
আর বলি মুখ ফসকে
হেই সামালো পাহাড়প্রমাণ
মুদ্রা নামক দোষকে।


সাতাশ

ছিলেন ছড়ার রিসার্চ স্কলার
এক মাজাহার মিয়া
এখন নিবাস আমেরিকায়
করেন পরকিয়া।
পদ্য ছেড়ে গদ্যে আছেন
ফরেন দ্যাশে গিয়া।


আঠাশ

টিএসসিতে আড্ডা মারেন
সৈয়দ আল ফারুক
গুগুল ঝেড়ে জ্ঞান বিতরণ
বলেন,নলেজ বাড়ুক।
বন্ধুরা তাঁর ফাজিল ভারী
যতই মাথা নাড়ুক।


উনতিরিশ

মা ছিল না,নি ছিল না-
সেই ভূপালী রাগে
তাও ধ্রুপদী গান ধরেছি
পরম অনুরাগে।
না থাক মানি বলল সানি
সম্মানি নেই জানি
খেপ ছেড়ে তুই আক্ষেপে আয়
যাস মেরে গুলতানি।


তিরিশ 

ছড়ার নামে চলছে যেসব
ভাবলে মনে ঘেন্না হয়
নতুন জেনারেশন এলে
হাতেও হ্যারিকেন না হয়
আসুক ছড়ায় জ্বীনপরীরা
ছড়ার আবার হোক সুদিন
তবেই নাকি ছাপবে নাফে
এবং মঈন মুরসালিন।


একতিরিশ

এপাড় নদী ওপার নদী
মধ্যে বসতঘর
ছড়ার দেশে রাশেদ রউফ
আছেন তপংকর
লিখব ছড়া ফারুক নওয়াজ
রহীম শাহের মতো
চন্দ্রাবতীর কাজল তবে
পুছবে গো অন্তত।


বত্তিরিশ

ছড়ার জন্য ঝুটঝামেলা 
মেতেছিলাম তর্কে 
সেই জন্য সুলেরী ভাই
পালালো নিউইয়র্কে।
ধরাকে ভাই ছড়ার জ্ঞানে
বোঝেন শুধু রিটন
ছ্যাকরা ঘোড়া টানছিল তাই
আদ্যিকালের ফিটন।
তেত্তিরিশ

ফারুক হোসেন ছন্দ পোষেন
দেখান বিদ্যেবহর
আমলা বলে এসইউভিতে
ঘোরেন ঢাকা শহর।
কিন্তু যখন মঞ্চ মাতান
আমজনতার ভিড়
দৃশ্যটাকে মোবাইল ফোনে 
তুলেছে আনজীর।


চৌতিরিশ

এখনও চাঁদের হাটে
সুস্বাদু ছড়া কাটে
তাই নিয়ে রাতদিনভর
নাস্তাতে কাঁচা ছোলা
বিচ্ছুতে চাঁচাছোলা
দাদুভাই আলোকিত
বাসাবো বা শান্তিনগর?


পঁয়তিরিশ

আমি তো জানিনা ভাই
কী বা রাম কী বিয়ার
আসল কারণ ছিল
মধুমেহ সিভিয়ার।
নাইটিংগল পাবে
অথবা ঢাকাই ক্লাবে
হেসে হেসে তবু বলি
এক গ্লাস দিবি আর?


ছত্তিরিশ

ঢাকায় গেলে যখন চাপি রিকশাতে
বান্ধবী এক থাকবে তখন ঠিক সাথে
আমার মতন হতচ্ছাড়া ডেডলিকে
গালমন্দ করিস "এ টু জেড" লিখে
কলাগাছের মতন আঙুল ফুলছিল
সবার চোখে ঠিক দেখা না ভুল ছিল?


সাঁইতিরিশ

আসাদ ভাইয়ের নানার মামার
খালাতো ভাই তিনি
দেখতে গেলেই দরজাটাতে
দেন তুলে ছিটকিনি।
মোদ্দাকথা সঙ্গোপনে
গান লিখেছেন দুশো
কামাল বলে এসব নাকি
সবই কানাঘুষো। 


আটতিরিশ

আমি এক গোবেচারা
ম্যাদামারা স্বামী যে
বউ থাকে বিবি সেজে
সালোয়ার কামিজে।
বিউটি বোর্ডিং-এ গেলে
খাই গালাগালি তো
বউ যে চাকরি করে
আমি গৃহপালিত।


উনচল্লিশ

কুর্তা কিনি আড়ং গিয়ে 
হালফ্যাসনে কী ভক্তি
রপ্ত আমার জামদানিটার
সন্ধি-সমাস-বিভক্তি।
মসলিনে ঠিক ঢাকবে কেমন
লজ্জা অবগুন্ঠিতার
শিখিয়েছিলেন আমার উনি
খরচা করা গুণটি তাঁর।
চল্লিশ

রং-চা দে রে কানাই
কানাই বলে, চা নাই-
ক্যান রে ধানাই পানাই?
সবুর করেন,বানাই-
এক দৌড়ে চায়ের পাতা
সিলেট থেকে আনাই।
জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇


আরও পড়ুন 

Post a Comment

2 Comments

  1. ছড়ার শব্দে মন আনন্দে ভরে গেলো।বহু বহুদিন পর শব্দের ঝংকার আর টংকার টের পেলাম।সাবাশ শব্দ যাদুকর। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো।(গৌতম বাড়ই)

    ReplyDelete