জ্বলদর্চি

বাংলা ব্যাকরণ ও বিতর্কপর্ব ১৮/অসীম ভুঁইয়া

Bengali grammar and debate
বাংলা ব্যাকরণ ও বিতর্ক
পর্ব ১৮
অসীম ভুঁইয়া

বাংলা বচনের খেলাঘর

আজকের আলোচ্য বিষয় বাংলা বচন। 
প্রথমে কয়েকটি বাক্য নেওয়া যাক। 
১.তুমি ফিরে এসো, তারপর "সকলের" সঙ্গে কথা বলো। 
২."একটি কথা" মনে রেখো, "সমস্যাগুলো" কিন্তু এমনি এমনি আসে না। আর এলে তার "সমাধানটিও"  করতে হয়।
 উপরের বাক্যে উদ্ধৃতি দেওয়া পদগুলি লক্ষ করা যাক। 

    দেখা যাচ্ছে, এখানে "তুমি", "একটি কথা", "সমাধানটি": এই তিনটি পদ যেকোনো এক জন ব্যক্তি বা বিষয়কে প্রকাশ করছে।
যেমন:  তুমি: যেকোনো একজন ব্যক্তি।
 একটি কথা: একটিই মাত্র কথা
  সমাধানটি: একটিই  বিষয়।
 আবার "সকল" ও "সমস্যাগুলো": এ দুটি শব্দ একাধিক ব্যক্তি বা বিষয়কে বোঝাচ্ছে।
 সকল: অনেক ব্যক্তির সমন্বয়।
  সমস্যাগুলো: একাধিক সমস্যার সমন্বয়।

    অর্থাৎ এক বা একাধিক সংখ্যা দিয়ে একটি বা একের বেশি ব্যক্তিকে বোঝানো হচ্ছে।
   পদের এই  সংখ্যাগত পার্থক্যকেই বচন বলে।
 
   অর্থাৎ যে পদ কোনো বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম বা ক্রিয়াপদের সংখ্যা নির্দেশ করে, তাকে বচন বলে ।

উল্লেখ্য,  বচন বিশেষ্য, বিশেষণ , সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

   বাংলা ব্যাকরণে বচনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
 ১.একবচন ও  ২. বহুবচন।

১. এক বচন: বচনের যে বৈশিষ্ট্য একটিই বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদকে বোঝায়, তাকে এক বচন বলে।
 যেমন: বইখানা, একটি কলম, তুমি, আমি, রুপম প্রভৃতি।

বাক্য:  "ফুলটি" খুব সুন্দর। "একটি কলম" তোমাকে দিলাম।
 "সে" একাই বসে আছে। "রূপসার" সন্ধ্যার আকাশ।
 
  এক বচন গঠনের নিয়ম: 
টি, টা, খানা, খানি প্রভৃতি। 

নির্দেশক যোগে: 
 "বইটি"। "একখানা" চাদর। "কথাটা" ভালো।
 "ছেলেটা" আবার এসেছে।  
   মনে রাখতে হবে এই নির্দেশকগুলো দিয়ে বহুবচনও গঠন করা যায়: যেমন: "চারটি" আম। "তিনখানা" বই।

সংখ্যা নির্দেশ করে একবচন গঠন:
 "একটি" কথা। "একটি" গাছ। "একটি" বিষয়। "একটি" প্রেম। "একটি" ঘৃণা।
 
   একক শব্দও একবচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়:
 যেমন: তুই, আমি, সে, আয়লা, রোয়ানু প্রভৃতি।

   বহুবচনের রূপে বা শব্দদ্বৈত দ্বারাও একবচন গঠন করা যায়:
 যেমন: "ভোর ভোর" চলে এসো। 
"দুপুর দুপুর" ডাক দিও না।

 ২. বহুবচন:
 বচনের যে বৈশিষ্ট্য একাধিক বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদকে বোঝায়, তাকে বহুবচন বলে । 
যেমন: "ছেলেগুলো" খেলছে। "তিনটি" আম কুড়িয়েছি। "লোকেরা" কিছু বলাবলি করছে। 
" তারা" সবাই আসবে।
 
   উল্লেখ্য, একক শব্দেই যে, সব সময় এক বচন বোঝাবে তা কিন্তু নয়। কখনও বহুবচনও বোঝাতে পারে। অথবা একবচন বা বহুবচনের কোনটি হবে সন্দেহ থেকে যেতে পারে। 

    যেমন: তোমার বাড়ি গিয়ে তোমার বাগানে কেমন "ফুল" ফুটেছে দেখে এলাম। 
এখানে "ফুল" একক শব্দ কিন্তু বাগানে তো একটি ফুল ফোটেনি। অনেক ফুটেছে। তাই "ফুল" এখানে অনেক ফুল অর্থেই ব্যবহৃত। তাই এটি বহুবচন ।

   আবার "বিয়ে বাড়িতে অনেক বরযাত্রী আসবে, বরকে "ফুল" কিন্তু আমিই দেব। 
এখানে "ফুল" একবচন। কারণ বিয়েবাড়িতে সাধারণত একটি ফুল বা ফুলের স্টিক দেওয়া হয় ।
এভাবে বাক্য দেখে অনেক সময় বচন নির্ণয় করতে হয়।
 
বহু বচন গঠনের নিয়ম:
 ১. পদের শেষে রা, এরা, গুলা, গুলি প্রভৃতি প্রত্যয়/  নির্দেশক জুড়ে বহুবচন গঠন করা যায়।
উদাহরণ: মেয়েরা, আমরা, তোমরা, তারা, অঙ্কিতারা, বইগুলি, গাছগুলো প্রভৃতি।

    বাক্য গঠন:  
"মেয়েরা" সবাই পাশ করেছে। "তোমরা" একবার তো আসতে পারতে।
"হোস্টেল ভরা "ছেলেরা" "মেয়েরা।" 
"বইগুলি "পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
 
 ২. পদের শেষে গণ, বৃন্দ, মন্ডলী দল, সমূহ, মালা, কুল, রাজি, পাল প্রভৃতি প্রত্যয় যোগে বহুবচন গঠন করা যায়।
 
যেমন: জনগণ, নিয়মাবলী, নিয়মসমূহ, মেঘমালা, জলরাশি প্রভৃতি।
বাক্য গঠন:  "মেঘপুঞ্জ" ভেসে যায়।
" এক ঝাঁক বুনোহাঁস পথ হারালো।" 
 "অথৈ" জলরাশি। "জনগণ"মন-অধিনায়ক জয় হে"
 " ফুলদল" দিয়া কাটিলা কি বিধাতা শাল্মলী তরুবর।" 

  ৩. শব্দদ্বৈত দ্বারাও বহুবচন গঠন করা যায়:

   বিশেষ্য পদ: 
"পথে পথে" ঘুরে মরে।
 "বাড়ি বাড়ি" দুধ দেয়। 
   বিশেষণ পদ: "লাল লাল" আম। "পাকা পাকা" পেয়ারা। "কাঁচা কাঁচা" রোদমাখা সকালবেলা।"
 
   সর্বনাম পদ: "কোন কোন" ব্যক্তি? 
"কে কে" এসেছে?
 "কাকে কাকে" ডাকা হয়েছে? 
 
    অসমাপিকা ক্রিয়া:
 "ঘুরে ঘুরে" দেখে এসেছে। "রেগে রেগে" কথা বলে।
 "বলে বলে" কাজটি করিয়েছি। 

৪. পদের আগে বহুত্ব বাচক বিশেষণ যোগে বহুবচন গঠন: 

  যেমন: অনেক, অসংখ্য, প্রচুর, সকল, নানা প্রভৃতি।

   "অগাধ" জল। "অগণিত" লোক। "নানা কথা নানা চর্চা।"

সংখ্যা যোগেও বহুবচন গঠন করা হয় :
যেমন: "হাজার" জনতা।
 "দশ" কথা প্রভৃতি।

  সংখ্যা যোগে বহুবচন কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে:
যেমন: সংখ্যা ও বিশেষ্য পদ: চার পুরুষ, তিনকাল, কুড়ি টাকা।
 
  সংখ্যা, নির্দেশক ও বিশেষ্য পদ: পাঁচটি আম, দুটো লোক,
 
সংখ্যা, জন ও বিশেষ্য পদ: তিনজন কুলি, কুড়ি জন মজুর,

 গোটা/ গুটি, সংখ্যা ও বিশেষ্য পদ: 
গুটি কয়েক ছাত্র। 
গোটা পাঁচেক আম।

জনা, সংখ্যা, এক ও বিশেষ্য:  জনা দশেক ব্যবসায়ী।
 জনা তিনেক লোক।

    উল্লেখ্য, চারজন লোক, আর জনা চারেকে লোক:  এই দুটি বহুবচনের ক্ষেত্রে প্রথমটি একেবারে নির্দিষ্ট, কিন্তু দ্বিতীয়টি কিছুটা যেন অনির্দিষ্ট বা অনুমান নির্ভর।  

৫. সংখ্যাবাচক শব্দ যোগে বহুবচন গঠন:
  "লোকজন" এসেছে।  
ঝড়ে "গাছপালা" সব ভেঙ্গে পড়ছে।
" রাজা বাদশার" আর নেই। "জিনিসপত্র" সব চুরি গেছে।
  
   অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক  শব্দ যোগে বহুবচন গঠন:
 "জল টল" নিয়ে এসো তো।
"ভাত টাত" কিছু রেখেছ কি?  "আজেবাজে" কথা বলো না।   

    উল্লেখ্য, অনেক সময় একবচন শব্দ, শ্রেণি বোঝালে বহুবচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: "পাখির ডানা" আছে। "হাতি" শাকাশী  প্রাণী।
 "মানুষ" মরণশীল। 

   আর বাংলাতে দুটো বহুবচন একসঙ্গে  ব্যবহৃত হয় না।
যেমন:  সকল ছাত্ররা নয়। সকল ছাত্র বা ছাত্ররা।
 
     একটি কথা মনে রাখতে হবে, সমস্ত বিশেষ্যপদের বহুবচন হয় না, যেমন: ক্রিয়াবিশেষ্য: দর্শন, শয়ন, শ্রবণ প্রভৃতি।

   অতি সংক্ষেপে একবচন থেকে বহুবচন গঠনের কয়েকটি উদাহরণ:
  
   ক্রিয়াপদের ক্ষেত্রে: একবচন: ঘুরে, গেয়ে। বহুবচন: ঘুরে ঘুরে। গেয়ে গেয়ে।
  
বিশেষ্য পদ : একবচন: গাছ, বাড়ি, একটি পাখি, নক্ষত্র।
 বহুবচন: বাড়ি বাড়ি, গাছপালা /গাছেরা/ গাছগুলি, পাখিরা, নক্ষত্রপুঞ্জ।
 
বিশেষণ পদ: একবচন: ভালো, কালো। 
বহুবচন: ভালো ভালো, কালো কালো। 

   সর্বনাম পদ: একবচন: আমি, তুমি, আপনি।
 বহুবচন: আমরা, তোমরা, আপনারা প্রভৃতি।

   একটু সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল বোধহয়।

মতামত জানাতে পারেন।
Mail id: ashim.bhunia1982@gmail.com
Whatsaap 7001888143
West Bengal, India
পেজ-এ লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. ছাত্রীবৃন্দ নাকি ছাত্রিবৃন্দ - কোন বানানটি সঠিক?

    ReplyDelete