জ্বলদর্চি

আবৃত্তির পাঠশালা-১২/শুভদীপ বসু

আবৃত্তির পাঠশালা-১২

শুভদীপ বসু

বিষয়- অলংকার(অর্থালংকার)

যে অলংকার একান্ত ভাবে অর্থের ওপর নির্ভর করে অর্থ প্রকাশক অলংকার স্রষ্টা শব্দ বা শব্দাবলীকে পরিবর্তিত করে, সেখানে সমার্থক শব্দ বসিয়ে দিলেও যে অলংকার অক্ষুন্ন থাকে তার নাম অর্থালঙ্কার।
শব্দালঙ্কার এবং অর্থালঙ্কার এর পার্থক্য নির্ণীত হয় একটিমাত্র আদর্শে। সে আদর্শটি হল শব্দের পরিবর্তন সহ্য করার শক্তি। এই শক্তি অর্থালংকারের আছে কিন্তু শব্দালঙ্কারের নেই।
অর্থালঙ্কার অনেক হলেও শ্রেণীগতভাবে বিচার করলে মোটামুটি পাঁচটি শ্রেণি পাওয়া যায়- ১)সাদৃশ্য ২)বিরোধ৩) শৃঙ্খলা ৪)ন্যায় ৫)গূঢ়ার্থপ্রকৃতীতি

১)সাদৃশ্য-উপমা,রূপক,উৎপ্রেক্ষা অপহ্নুতি, সন্দেহ,নিশ্চয়, ব্যতিরেক, সমাসোক্তি, অতিশয়োক্তি, উল্লেখ,দীপক, তুল্যযোগিতা, প্রতিবস্তুপমা, নিদর্শনা, সামান্য, অর্থশ্লেষ, সহোক্তি।

২)বিরোধ-বিরোধাভাস, বিভাবনা বিশেষোক্তি, অসঙ্গতি, বিচিত্র, অধিক, অনুকূল, অনন্য, ব্যাঘাত।
৩)শৃঙ্খলা-কারণমালা, একাবলী, সার, মালাদীপক।
৪)ন্যায়-অর্থাপত্তি, কাব্যলিঙ্গ, অনুমান, পর্যায়, সমুচ্চয়, পরিবৃত্তি, পরিসংখ্যা, উত্তর, সমাধি, সামান্য।
৫)গূঢ়ার্থপ্রতীতি-অর্থান্তরনাস, আক্ষেপ, ব্যাজস্তুতি, পরিকর স্বভাবক্তি, অপ্রস্তুতপ্রশংসা, উদাত্ত।

বিশেষ কিছু অলংকার সম্পর্কে আলোচনা-

১) উপমা অলংকার- উপমা কথাটা সাধারণ অর্থ তুলনা। একই বাক্যে স্বভাব ধর্মে বিজাতীয় দুটি পদার্থের বিসদৃশ কোন ধর্মের উল্লেখ না করে যদি শুধু কোন বিশেষ গুণ বা অবস্থায় অথবা ক্রিয়ায় পদার্থদুটির সাদৃশ্য দেখানো হয় তাহলে উপমা অলংকার হয়।
যেমন-'এও যে রক্তের মতো রাঙা দুটি জবাফুল'-এখানে জবাফুল আর রক্ত দুটি বিজাতীয় বস্তু। তারা একই বাক্যে রয়েছে।রাঙা এদের সাদৃশ্য ঘটিয়েছে,এই কারণে এখানে উপমা অলংকার হয়েছে। উপমা প্রধানত চার রকম- পূর্ণোপমা,লুপ্তোপমা,বস্তুপ্রতিবস্তুভাবের উপমা,বিম্বপ্রতিবিম্ব ভাবের উপমা।

২)রূপক অলংকার- বিষয়ের নিষেধ বা অস্বীকার না করে তার ওপর বিষয়ীর অভেদ আরোপ করলে রূপক অলংকার হয়।
যেমন-'আত্মগ্লানির তুষানল আজ তাহাকে আর তেমন করিয়া দগ্ধ করিতেছিল না।'-এখানে উপমেয় অর্থাৎ বিষয় হলো আত্মগ্লানি, উপমান অর্থাৎ বিষয়ী হলো তুষানল,দগ্ধ পদটি উপমানের অনুগামী। উপমান প্রাধান্য লাভ করেছে এবং উপমেয় কে অস্বীকার না করে গৌণ ভাবে রেখেছে।
রূপক মূলত তিন প্রকার-নিরঙ্গ,সাঙ্গ ও পরম্পরিত।নিরঙ্গ আবার দু'রকম-কেবল ও মালা।


৩)উল্লেখ অলংকার- বহুগুণ থাকার জন্য একই বস্তু যদি বিভিন্ন লোকের দ্বারা বিভিন্নভাবে গৃহীত হয় অথবা একই লোক যদি তাকে বহু দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে তাহলে উল্লেখ অলংকার হয়।
'স্নেহে তিনি রাজমাতা বীর্যে যুবরাজ।'-এখানে চিত্রাঙ্গদার কথা বলা হয়েছে।
৪)সন্দেহ অলংকার-যেখানে উপমেয় (প্রকৃত)এবং উপমান(অপ্রকৃত) দুটি বিষয় থাকে এবং সে সংশয় কবি প্রতিভা থেকে উত্থিত হওয়ায় চমৎকার হয় সেখানে সন্দেহ অলংকার হয়।
'হিমাচলের শিখর ওকি শুভ্র প্রভাস্বর?/পদ্মাসনে কিংবা ধ্যানে মগ্ন মহেশ্বর?'


৫)উৎপ্রেক্ষা অলংকার-উপমেয় কে সাদৃশ্যবশত: যদি উপমান বলে সংশয় হয় তবে উৎপ্রেক্ষা অলংকার হয়।এটি দুই প্রকার-বাচ্য উৎপ্রেক্ষা ও প্রতীয়মান উৎপ্রেক্ষা।সম্ভাবনা বাচক শব্দ যেমন-যেন,বুঝি,মনে হয় ইত্যাদি উল্লেখ থাকে সেখানে হয় বাচ্য উৎপ্রেক্ষা আর যেখানে থাকে না কিন্তু অর্থ থেকে সম্ভাবনার ভাবটি বোঝা যায় সেখানে হয় প্রতীয়মান উৎপ্রেক্ষা।
'ধরণী এগিয়ে আসে দেয় উপহার/ ও যেন কনিষ্ঠা মেয়ে দুলালী আমার।'-নজরুল।
৬)ভ্রান্তিমান অলংকার-সাদৃশ্য বশত: এক বস্তুতকে অন্য বস্তুর বলে যদি ভ্রম হয় এবং সেই ভ্রম যদি সাধারন না হয়ে কবি কল্পনায় চমৎকারিত্ব লাভ করে তাহলে হয় ভ্রান্তিমান অলংকার।
(অলংকারের অধ্যায়টি আরেকটি আলোচনায় শেষ হবে)

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments