জ্বলদর্চি

এসে গেল ভোট মোচ্ছব!/গৌতম বাড়ই

এসে গেল ভোট মোচ্ছব!
গৌতম বাড়ই

আজ রোববারের বাজার। সপ্তাহ শেষে ঘরের ক্ষুন্নিবৃত্তি নির্বাহের রসদ জোগাড় করা আর লোকমাঝারে গিয়ে মনেরও। আমার এক খুড়ো বলতেন- বাজারে না গেলে, লোকজনের দু- চার কথা না শুনলে, নিজেকে জানবার মধ্যে ফাঁক থেকে যায় অনেক। বাজার তোকে বিরাট অভিজ্ঞতা দেবে। নিজে হাতে বাজার করবি। লোকজনকে জানতে পারবি। প্রসঙ্গত বলে রাখি, সে খুড়ো ছিল আমার এক বিশেষ‌ আদর্শে বিশ্বাসী।ঘরের চাইতে পরের জন্যই জীবনের বেশিরভাগটা দিয়ে গিয়েছেন।

  সেই কথা বা আজ্ঞা এখনও অক্ষরে- অক্ষরে পালন করে চলেছি। বলতে গেলে এ এক নেশার মতন। দিনুদার সান্নিধ্য আছে এবং তার বিচিত্র উপলব্ধির কথা শুনে যখন ঘরে ফিরি, বেশ ফুরফুরে লাগে মেজাজ। আরও ফুরফুরে লাগত যদি বাজার দরে একটু রাশ ধরা যেত। বঙ্গ রাজনীতিতে তো এই ভোটের মুখে যা দেখছি তা এক সার্কাস বৈ কিছু নয়! এই যে, এত যে দেশসেবকরা মুখে- মুখে খৈ ফুটাচ্ছেন, বলি, ঐ কোভিডের অমানবিক যন্ত্রণায় আর আম্ফানে, দুর্গতদের বিধ্বস্ত সময়ে কী ঠাণ্ডা ঘরে বসে টিভিতে চিলড্ বিয়ার আর মুর্গীর ঠ্যাঙ্গে মজা নিচ্ছিলেন? বাপু! তোমাদের পেশা অভিনয় করে খাওয়া, তা হঠাৎ মানুষের সামনে সেবার নামে গাজর মূলোর খুড়োর কল ধরেছ কেন? বুঝি গো ঠাকরুন, ক্ষমতা আর অর্থ বেশ সুন্দর ভাবে বাগানো যায় এই রাজনীতি- রাজনীতি খেলায়। কেউ তো একজন আর রাখঢাক করেননি, সোজাসুজি বলেই দিয়েছেন এবার নাকি খেলা হবে। রাজনীতি আর সততা। ঢাকাইয়া কুট্টিরা হলে বলেই ফেলতেন-- আস্তে কতা কন কত্তা, ঘোড়ায় শুনলে হাসবো। সেই রাজাও নেই, সে রাজত্বও নেই। তবে সব আছে, রূপান্তর হয়েছে মাত্র। 

  দিনুদা বাজারে ঢুকতেই ধরলেন আমায়- তা ভায়া শান্তিনিকেতনে তো ঘুরে এলে। বলি এবারের ভোটে কী বুঝছো?

  আমি বললাম-- খেলা হবে। টাকার খেলা হবে।

  দিনুদা বললে-- শুধুই টাকার খেলা। রক্তের হোলীখেলা হবে না?

  -- কী করে বলি তা দিনুদা! আয়ারাম আর গয়ারামের খেলা বলে আমরা অন্যরাজ্যকে ব্যাঙ্গ করতাম। এখন? 

  দিনুদা বলে ওঠে-- ভায়া বাঙালী বলে আর স্পেশাল কিছু নিজেকে ভাবা উচিত নয়। বঙ্গীয় সংস্কৃতি দুমড়ে- মুচড়ে এক নতুন রাজনীতির সংস্কৃতি এখানে আমদানি হয়েছে। এরজন্যে দায়ী কে? আরে আমরাই দায়ী, একশ শতাংশ দায়ী আমরা বঙ্গবাসী। মুখের ভাষা, আলটপকা মন্তব্য, কবিতা আর গানের মাধ্যমে যা হচ্ছে তা বাঙালীর সঙ্গে আগে যেত? যেত না। একদম সরল উত্তর। রাজনীতির আঙ্গিনায় এত যে কোটি- কোটি টাকা, আগে অন্য রাজ্যে শুনতাম, এখন বঙ্গদেশেও কান পেতে শুনি। বলি তোরা তো নেতাজী সুভাষ বোস আর দেশবন্ধুর দেশের লোক, তাদের দেখেও শিখিসনি। ত্যাগ কাকে বলে! এখন ভোগসর্বস্ব যুগ, খালি কামাতে আসা। তাহলে মানুষের সেবার মূলমন্ত্র রাজনীতিকে লাভজনক পেশায় পরিণত করে ফেললে? লজ্জা ভায়া এ গভীরতম লজ্জা। লেখক বুদ্ধিজীবী খেলোয়াড় চলচ্চিত্র শিল্পী সব জেনে বুঝেও কোন না কোন রাজনৈতিক দলের কাছে নাম লেখাচ্ছে মানুষের সেবা করবে বলে। আসলে ও তো নিজেকে বিক্রি করে দেওয়া। জিতে গেলে সেই রাজনৈতিক দলের মতের বাইরে কোন কাজ করতে পারবে? আসলে এ,  রঙ দে বাসন্তী! রঙে রাঙিয়ে বোকা বানানোর খেলা। অনেক বকলাম এবার আমার পেসাদী দাও। মনের সুখে বাজার করে সপ্তাহ ভর খাও।
  আমি বলি -- দিনুদা, বাজারের থেকেও আপনার কথার থেকে যা দেখতে পাই তাও অনেক পাওয়া। দেখলাম ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণায় সবাই তা নিয়ে কথা বলাবলি করছেন। একটা ব্রিগ্রেড গেল, আজ রোববার একটা ব্রিগ্রেড আছে। আশার ফানুসে চিরটাকাল মানুষ ভেসে বেড়ায়। একটা লাল- চা আর বিড়ির ব্যাবস্থা করে বাজারে ঢুকি। 


  বাজার থেকে ফিরতেই গিন্নী বলে -- আজ আবার খাসির মাংস। এই বয়সে জানই তো রেডমিট খাওয়া বারণ।

  আমি বলি-- মুরগীতে মড়ক লেগেছে। চড়া দামে বিকোচ্ছে। আর জানি রেডমিট খাওয়া বারণ, তবে যে সব ডাক্তাররা বারণ করে, তারাও দেখলে না ওখানে পিকনিকে গিয়ে কী রকম পাইকারী হারে খাসি চিবোচ্ছে! তাদের অনেকের বয়স আমার থেকেও বেশি। তোমার খুকুদির মেয়ের বিয়েতে মনে নেই , চিকেন হয়েছিল বলে আড়ালে- আবডালে উদয়দার কত সমালোচনা। উদয় একটা হাড় কিপ্টে, এইসব। যারা করছিলেন তারা সবাই পঞ্চাশোর্ধ পুরুষ- মহিলা। মনে পড়ে?

  --- মনে আবার পড়বে না!  আমারও তো মনে হয়েছিল ঐ এক কথাই। আমি বাবা অনেস্ট, বলেই দিলাম সত্যি কথা। একটা কথা বলতো বাজার ঘুরে কী বুঝলে?

 আমি বললাম-- বুঝলাম মানে? তোমার মতলবটা কী বলতো? কী জানতে চাও?

  গিন্নী বলে ওঠেন-- আহা! অত চটো কেন? একটা সিম্পিল কোয়েশ্চেন। ভোটের হাওয়া কোন দিকে? আমি বাবা হাওয়া বুঝেই ভোট দি। যে জিতবে তার দিকে।

  সে আর বুঝব না। বঙ্গদেশের হাল দেখেই বুঝে উঠতে পারি। এ ঘরকা, এ বাহারকা কাহানী! সবই এক। হাম সব এক হ্যায়!

আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments