জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

গুচ্ছ কবিতা 
পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

সস্তা

ভোর বেলাকে সাক্ষী রেখে রাতবিরাতের আমি।
মায়ার ঘরের সামনে এসে ডুকরে কেঁদে থামি।
সভ্যতার এই আস্তাবলে,
মানুষ আমায় সস্তা বলে,
খাবার কেনার সঙ্গে বাঁচে তুচ্ছ এ বদনামি।


গরিবী

খানিকটা পথ আলোয় হাঁটি, তারপরে ঘোর আঁধার।
অংক মেলার তাল জানিনা, ছিন্ন জীবন বাঁধার।
এমনভাবে সামলে রাখি,
তুচ্ছ আমার গানের পাখি,
এই পৃথিবী কারোর বিলাস , কারোর গোলকধাঁধার।


হেরো

সাধ্য এবং সাধ মেলানোর বুকের তরুণ তুর্কি।
হিসাব ভুলে গুলিয়ে ফেলে লাভের মুড়ি মুড়কি।
কিছুই তাতে হয়না পাওয়া,
আকাঙ্খা, আর স্বপ্নে চাওয়া,
সাফল্য, তোর ভিনগ্রহটা এতই বেশি দূর কি?


জ্বালা

মশাল হয়ে কাটছে জীবন, বলছে মানুষ, বাহ।
পুড়ছে আলো,ভিতর ভিতর হচ্ছে হৃদয় দাহ।
শান্তি সুখের তাল মেলেনা,
তেষ্টা মেটার হাল মেলেনা,
আত্মা ছাড়া জীবন কাটান বুক জ্বলা শের শাহ।


একা

আমার সঙ্গে আমিই চলি কক্ষপথে ঘুরে।
শূন্যপানে এদিক ওদিক ইচ্ছেরা যায় উড়ে।
মেঘ কি দুখী দৃষ্টি হেনে,
বুক  ভেজানোর বৃষ্টি কেনে?
এমন ভেবেই কাল কেটে যায় আস্ত জীবন জুড়ে।


ভাবনা

প্রতিষেধকের মতো
তুমিও তেমনতর প্রতিরোধী কিনা;
এখনো তা ভেবে দেখা হয়নি।
তোমার যা আছে দাবি,
তাই রাত দিন ভাবি,
দোলাচলে ভাবতে সময় নি।


কিছু নেই

আসলে, আকাশ বলে কিছু নেই।
মহাশূন্যের মাঝে
আরো কত 'কিছু নেই' আছে।
তাই আমি ,সব জানি-
ভেবে, হয়ে অভিমানী,
দেমাক করিনা কারো কাছে।
মূল কথা-
আমাদের কারোর কিছুই জানা নেই।
তাই চুপচাপ থাকি,
মলিনতা ঢেকে রাখি,
বেপরোয়া দুবিধা, দোটানা নেই।


সার কথা

যত রঙ মাখ মনে,
রামধনু মিলে সেই সাদা।
তাই আমি অকারণে,
মনকে পুড়িয়ে তাপে,
জ্বালাকে খুঁজিনা এক গাদা।
এ ব্যাপারে নেই সংশয়।
যা কিছু আপন মানি,
যা যা করি টানাটানি,
সবই শেষে ছেড়ে দিতে হয়।


অল্প না

পৃথিবীর স্বাদ আছে কত!
সবই পেয়ে যেতে হবে সাধে।
করলে এমন বাচালতা,
কোথায় কিভাবে যেন বাধে।
তাই, আমি চুপ করে থাকি,
মন থেকে ডানা মেলা পাখি।
ডানারা মেটাক কল্পনা।
সেও তো নেহাত অল্প না!


মানুষের দাবি

তোমাকেই ছোঁব বলে
কাউকে ছুঁইনি আমি আগে,
এরকম বলি যদি, তবে।
নিশ্চিত জেনে রেখ,
সে শুধু মিথ্যে বলা হবে।

মানুষের ছোঁয়া চাওয়া
চিরকাল মানুষের দাবি।
এর অন্যথা মেনে
জীবন কিভাবে চলে, ভাবি।


কি আসে যায়?

অমিলে'রা মিলেদের সাথে,
কখনো বিবাদ করেনি।
আমাদের ভাবনাতে ভুল।
অনুভব ও আবেগ-
নিজেদের মর্জিতে ওঠে আর বসে।
মানুষের ভাবনাতে
কিছু কি যায় বা আসে-
কখনো তাদের একচুল?


তোমাদের দায়

হাজার ওজর অজুহাতে।
বেকসুর খালাসের সাথে।
আমাদের পাপ ধুয়ে যায়।
এ কেবল তোমাদের দায়।


সংশয়

আমাকে বাতলে দিলে পথ,
স্বপ্ন দেখার,
খুঁজে নিতে পারি ঠিক তাকে।

এ রকম যদি মনে হয়।
স্বপ্ন চিনব কিনা,
তাতে ঘোরতর সংশয়।

এও যদি বোঝা যেত।

যাকে আমি ঘিরে থাকি,
সে কি আমাকেও ঘিরে থাকে?
কাক ভেজা দুপুরে, ও
মেঘ রঙা আকাশের বাঁকে?
জামরুল ছায়া মাখা
কামরাঙা চেতনার বনে।
এও যদি বোঝা যেত
মায়াবী মনের সুগোপনে!


অকপট

অকপট ভাবে কেবল তোমাকে
এ কথা বলতে পারি।
আমার ভাবনা বেপরোয়া।
নেই সেমিকোলন আর দাঁড়ি।
আমি তাকে ভাবি তেমনই
আমাকে সে যেমন তলে তলে।
ভাবনার রেশ এরকম ভাবে
যতদিন হাঁটে চলে!


ইচ্ছে

যখন ইচ্ছে, তখন বলি
যখন ইচ্ছে শেষ করি।
প্রশ্ন যদি আমায় কর
আমার কথা, বেশ করি!
পাঁজর ভাঙা বুকের আঁচর
রক্তে রাঙা, তাই হলে।
আমার কথাও নীরব হবে
আবেগ পুড়ে ছাই হলে।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments