ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৩৮
সম্পাদকীয়,
বর্ষাকাল এলেই বাঙালি ফুটবল খেলতে নেমে পড়ে জল ভর্তি ঘাসে ভরা সবুজ মাঠে। হ্যাঁ,ঠিক বলেছো, নীলাব্জ আঙ্কেলের তোলা ছবিটার মতো। কিন্তু কোভিড এসে সেই আনন্দের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে, তাই না? মন খারাপ কোর না। রাত জেগে দেখে নাও ইউরো কাপ বা কোপা আমেরিকা। আমের স্বাদ ঘোলেই না হয় মিটুক। মন খারাপের কি আর শেষ আছে? কোভিড আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে আমাদের কত্ত কত্ত প্রিয়জনেদের তারাদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। যেমন, রিম্পার ঠাকুমাকে। রিম্পা কে? তারজন্য পড়ে ফেল সুব্রত নাগের গল্পটি। তোমরা যারা এই দেড় বছরে টুকু টাকু রান্না শিখে ফেলেছ মায়ের কাছে তাদের বলে রাখি, মন ভালকরা রিয়েলিটি শো-গুলো কিন্তু ছোটোদের নিয়েও রান্নার আসর করে। আর তেমন এক মন ভালকরা ছোটোদের রান্নার রিয়েলিটি শোএর কাহিনী শুনিয়েছেন বিশিষ্ট লেখিকা ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। আর অন্যান্য শখের মধ্যে তোমরা যারা বেশিরভাগ ছোটোরাই কোভিডের দোহাই দিয়ে ভিডিওগেম খেলছ, তাদের নিয়ে গল্প লিখেছে অর্কায়ন বসু। আমি জানি আমি তোমাদের যতই মন ঘোরানোর কথা বলিনা কেন তোমরা সবেতেই বলবে করোনা কবে যাবে? আর স্কুল কবে খুলবে? তাই মুনমুন ঘোষ এই দুটি নিয়েই ছড়া পাঠিয়েছেন। কিন্তু এত সবের পরেও বলতে হয়, স্কুলে যাওয়াকালীন মজার মজার স্মৃতি আজও আমাদের মন ভালো করে দেয়। তাই স্কুলজীবনে পাওয়া বন্ধুদের নিয়ে একটি শিক্ষামূলক গল্প উপহার দিয়েছেন বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক দিলীপ কুমার মিস্ত্রী। শুধু তাই নয় এক ছোট্ট বন্ধু সংঘমিত্রাও স্কুলজীবনের গল্প লিখে আমাদের মন ভালো করে দিয়েছে। মন যদি এতেও ভালো না হয়, তবে চলো ফুলকুসুমপুরে সবাই মিলে যাই। কেন? আরে আমাদের রাধাগোবিন্দের জন্মদিন না? কেক কাটা হবে তো? কি কেক কাটার কথায় লাফিয়ে উঠেছ দেখছি। কেক কেমন লাগল জানিও আর স্নেহার ছড়ার প্রত্যেক ঋতুর ফলের স্বাদ তোমাদের কেমন লাগল তাও জানিও। - মৌসুমী ঘোষ
রান্নার রিয়েলিটি শো
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
এক যে ছিল সাধের বাগান, রঙীন সব্জী চাঁদের হাট
মিলেমিশে মশলা-স্যসে সুস্বাদু এক মজার ভাত।
বর্ণে গন্ধে মাখামাখি, এই না হলে নাসিগোরেং?
রিয়েলিটি শো'তে আসে ফুলটুসি আর পাপড়ি সোরেন।
কমপ্লিট মিল খেলে পরে হবেই তুমি কুপোকাত
ইউটিউবে রান্না শিখে কোমর বেঁধে রাঁধে ভাত।
রিয়েলিটি শো, খুদে প্রতিভা, ওসব এখন মাথায় থাক্
নাসিগোরেং বানিয়ে ফেলে দুই বোনেতে লাগায় তাক।
কমলা গাজর-বিনস কুচিয়ে, তেরঙ্গা ক্যাপ্সিকাম বিছায়
মুরগী, চিংড়ি ভেজে নিয়ে ঝুরো করে ডিম ফাটায়।
ফুরফুরে ভাত জুঁইফুলে, পেঁয়াজ ভাজে গরম তেলে।
সবজী দিয়ে নেড়েচেড়ে রসুন, লঙ্কা কুচিয়ে ফেলে।
এবার সাজায় ভাতের বাগান, সোয়া স্যসের আছড়া দেয়।
গোলমরিচের গুঁড়োর ঝাঁঝে ভাত ভাজা হতে সময় নেয়।
রঙিন ভাত রাঁধে খেটে, গরমাগরম জাজের প্লেটে।
জাজ মশায়ের চক্ষুচড়ক, কি করে রাঁধিস এত খেটে?
পেঁয়াজ ভেজে লাল করে ডিম ফাটিয়ে দিও পরে
খুব সোজা তো, পারি আমি ফুলটুসি কয় হাসিমুখে।
মুরগি কুচি দাও ছড়িয়ে, সবজি সব দাও ঘুরিয়ে
লংকা আর রসুন কুচি স্যসের ফোঁটা দিই ছড়িয়ে।
ভাতের সাথে জমিয়ে ভাজো, নেড়েচেড়ে সবাই বসো
পাপড়ি বলে আরেকটু দিই? আনি তবে, একটু রোসো।
শুনলে কেমন গপ্পো বল? নাসিগোরেং নামটি ভালো?
আমাদের যা মিক্সড ফ্রায়েডরাইস, ওদেরটা যা একটু কালো।
বলিস কি রে? বলিস কি রে? তওবা তওবা টেস্ট পেলাম
গোলমরিচের ঝাঁঝের চোটে সর্দি থেকে বেঁচে গেলাম।
জাজ মশাই নাম বললেন, ফাস্ট প্রাইজ দু' বোনেই পেলেন
জমিয়ে যেটা বানিয়ে ফেলেন ফুলটুসি আর পাপড়ি সোরেন।
অফলাইন–অনলাইন
সুব্রত নাগ
তারপর তো রাজকুমার যেই রাজকুমারীকে লইয়্যা পক্ষীরাজ ঘোড়ায় উঠসে –হাজার হাজার রাইকখস হাঁউ মাউ কইরা হাজির ।
“ ক’ হাজার রাক্ষস হাজির হল ঠাম্মা?”
“হ্যার হিসেব করব কেডা? পাঁচ সাত হাজার হইব নিঘঘাৎ ।”
“অতগুলা রাক্ষস রাজকুমারকে খেয়ে ফেলল না?”
“দূর ছেমড়ি , রাজকুমারকে মারা কি চাড্ডিখানি কথা? হ্যার হাতে রাইকখসদের প্রাণ ভোমরা আছিল না?”
শাশুড়ি আর মেয়ের জম জমাট গল্পের আসরের টুকরো টাকরা রান্নাঘরে সুনন্দার কানে গিয়ে পৌঁছায়। এক একবার ভাবে ধমক দিয়ে মেয়েটাকে জোর করে নিয়ে এসে পড়তে বসায়। পরক্ষণেই ভাবে -- রিম্পার দোষইবা কী ? পৃথিবী জোড়া লকডাউনে চার বছরের একটা বাচ্চার শৈশবটাই যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে –তখন আর শাসনের খাঁড়া ঝুলিয়ে লাভ কী ? কতদিন হয়ে গেল বাচ্চাগুলো বেরোতে পারে না, বন্ধুদের সঙ্গে হুটোপাটি করতে পারে না, মাঠে খেলতে পারে না । ঠাকুমার কাছে রুপকথার গল্প শুনেই যদি আনন্দের খোরাক যোগাড় করতে পারে তো করুক ।
বছর শেষ হয়েছে; রোগের আতঙ্ক শেষ হয়নি। এবারও চোখ পাকিয়ে , দাঁত নখ বের করে, শিঙ উঁচিয়ে রোগটা এখনো বাচ্চাদের দুনিয়াটাকে রঙহীন করার জন্য হুঙ্কার ছাড়ছে। আগের মতই মুখোশে মুখ ঢেকেছে পৃথিবী । রিম্পার বাবার আগের বারের মতোই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’, সুনন্দা আগেরবারের মতোই কাজের লোক রান্নার লোককে ছুটি দিয়ে সংসারের হাজারো কাজে হাঁফাচ্ছে। রিম্পা উঠেছে কেজি টু তে । এবারও সকাল ন’টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস। মোট কথা এবারের লকডাউনেও কোথাও কোনো পরিবর্তন নেই।
সন্ধেবেলায় রিম্পার জন্য চাউমিন বানিয়ে ওকে দিতে গিয়ে ঘরে ঢুকতেই অবাক হয় সুনন্দা । কোল বালিশটা বুকে চেপে ওর খেলনা মোবাইলটা নিয়ে রিম্পা কাকে যেন শোনাচ্ছে ,--তারপর কী হলো জানো তো –প্রিন্স আর প্রিন্সেস যেমনি পেগ্যাসাসে চড়েছে অমনি ড্রাগনগুলো এসে দাঁড়িয়েছে। ড্রাগনগুলোর নোজ দিয়ে ফায়ার বেরোচ্ছিল। পেগ্যাসাস তখন ফ্লাই করে ...”
শুনতে শুনতে মুখ টিপে হাসে সুনন্দা। বাঃ মেয়েতো দিব্যি গুছিয়ে গল্প বলছে! চাউমিনের প্লেটটা রিম্পাকে দিয়ে সুনন্দা জিজ্ঞেস ,’’ কাকে গল্প শোনাচ্ছিস রে রিম্পি! কেউ তো নেই !”
মায়ের দিকে তাকিয়ে বিজ্ঞের মতো রিম্পা বলে ,’ তুমি খুব বোকা মাম্ মাম্ –দেখছ না ফোনে অনলাইনে গল্প শোনাচ্ছি । “”
“কিন্ত্ত শোনাচ্ছিসটা কাকে ?”
“কাকে আবার? ঠাম্মাকে। ঠাম্মা আগে আমায় রূপকথা শোনাতো – এখন আমি ঠাম্মাকে ফেয়ারি টেলস শোনাচ্ছি । কিন্ত্ত জানো ঠাম্মাদের ওখানে নেট ওয়ার্কের খুব প্রবলেম। ঠিক মতো শুনতে পাচ্ছে কি না কে জানে? একদম রেসপন্স করছে না।”
মুখ থেকে হাসিটা মুছে যায় সুনন্দার। ওর খেয়ালই ছিল না এ বছর অন্তত একটা পরিবর্তন ওদের বাড়িতে হয়েছে। রিম্পার ঠাম্মা এখন আর নেই—মাস চারেক হল মারা গিয়েছেন ।
ছুটি চাই
মুনমুন ঘোষ
গরমকালের দুপুরবেলা
লকডাউনে বন্দী খেলা।
অনলাইনে ভরসা রেখে
সময় আর কাটছে না যে।
স্কুল বাড়ি আর ছুটোছুটি
হৈ হুল্লোড় লুটোপুটি;
দিনগুলো সব হঠাৎ করে
কোন ম্যাজিকে গেল উড়ে!
ফ্ল্যাটবাড়ির ছোট্ট কোণে
প্রহর নিজেই প্রহর গোনে।
অনন্ত এ ছুটির মাঝে
জীবনখানা আটকে গেছে।
স্কুলের মাঠটা একলা কাঁদে
রোজ কাকে যে স্বপ্নে ডাকে!
'এমন ছুটি চাই না মা গো',
হিসেব রাখা যায় না গো।
ছুটির ঘন্টা এবার থামাও
লম্বা ছুটির বহর কমাও।
ছুটির থেকে চাই রে ছুটি,
দাও না ছুটি লক্ষীটি।।
উড়ান
অর্কায়ন বসু
নীল খামে মোড়া চিঠিটা হাতে নিয়েই চমকে উঠল প্রত্যুষ। খামটা সাধারণ খামের মতো দেখতে হলেও কেমন যেন অদ্ভুত রকমের।প্রথমত, সাধারণ কাগজ দিয়ে তৈরি নয় খামটা, কাগজের মতো একটা কিছু হবে ; আর 'প্রত্যুষ' নামটাও কেমন একটা হরফে লেখা।তবে কী,তার এতদিনের স্বপ্ন সত্যি হ'তে চলেছে! দারুণ উত্তেজনা বোধ করছে ভেতর ভেতর সে।তার সিক্সথ সেন্স বলছে, এই-ই সেই! উফফ! একটা চাপা উদ্বেগ আর সীমাহীন আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে করছে এখন এই ভর সন্ধ্যেবেলা।
খামটা উল্টোতে সে দেখতে পেল একটা বোতামঘর। সেখানে আঙুল ছোঁয়াতেই খামটা আপনা-আপনি খুলে বেরিয়ে এল একটা চিঠির মতো কিছু।চিঠিটাও বেশ অন্যরকম। কাগজের নয়।একটা খুব পাতলা ধাতব প্লেট।তাতে কোড ল্যাঙ্গুয়েজে লেখা কিছু হিজিবিজি অক্ষর। প্রত্যুষের অবশ্য সেটা পড়তে তেমন অসুবিধে হচ্ছে না, কারণ ভাষাটা মোটামুটি তার জানা। এটা প্ল্যানেট 476NW এর ভাষা *+%&#।
চিঠিটা পড়তে পড়তে সে লাফিয়ে উঠল আনন্দে। হুরররে...
-- মা, মা, কী এসেছে দেখ!
-- কী রে?
-- এই দেখ!
-- এটা কী? আমি তো কিছুই পড়তে পারছিনা!
-- আরে,কম্পিউটারে সেদিন 'starwars' নামের যে গেমটা খেলছিলাম না অনলাইনে, ওখানে একটা খুব শক্তিশালী গ্রহের রাজা পিং 48 আমাকে এই চিঠিটা পাঠিয়ে ওদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বলেছে।আমার মতো বুদ্ধিমান সৈনিক ওদের প্রয়োজন। এটা ওদের ভাষা, মা।
তার শরীরটা বেশ নড়ছে।বুঝতে পারছে প্রত্যুষ। তাহলে কী রকেট স্টার্ট নিয়েছে! কিন্তু বাবা তো আসেনি এখনও! তার স্ট্যাম্প জমানোর শখ।ইরাক,ইরান,ব্রাজিল,চিলি, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি -- এরকম হরেক দেশের বহুরকমের স্ট্যাম্প তার সংগ্রহে আছে।আজ বাবা অফিস ফেরতা জিপিও থেকে তাকে স্ট্যাম্প অ্যালবাম এনে দেবে বলেছে।অ্যালবামটা তার বহুদিনের স্বপ্ন। সেটা না নিয়ে সে যায় কী করে!
এই সাত-পাঁচ ভাবনার মধ্যে হঠাৎ সে কানের কাছে বেশ জোরে শুনতে পেল মায়ের গলা, 'ওঠ বাবু! আর ঘুমোস না। রেডি হয়ে নে! এখনি স্কুলবাস এসে যাবে...'
হাঁটি-হাঁটি পা-পা
দিলীপকুমার মিস্ত্রী
দয়াময় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। গ্রামের ইসকুলটি তার বাড়ি থেকে পাক্কা এক মাইল দূরে। এই পথটুকু সে রোজ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে। তার একমাত্র সঙ্গী হচ্ছে ছোট ভাই সুধাময়। স্কুলে যাবার পথটি এখন পাকা হয়েছে। গাছগাছালির ছায়াতলে পথটি সত্যি খুব মনোরম। স্কুলে যেতে দয়াময়দের তাই কোনো কষ্ট হয়না। বরং ওদের কাছে রোজকার এই হাঁটা পথটুকু খুবই আনন্দের। তাই ওরা প্রতিদিনই ইসকুল বসার আগেই সেখানে পৌঁছে যায় প্রায় নাচতে নাচতে। একদিনও ওদের দেরী হয়না।
দয়াময়ের বন্ধু অনিকেত ওই একই স্কুলে পড়ে। থাকে দয়াময়দে্র ঠিক দুটো বাড়ি এগিয়ে। সে স্কুলে যায় ভাড়া গাড়িতে। কিন্তু রোজই অসম্ভব দেরীতে পৌঁছোয়। দেরী করে পৌঁছনোটা যেন তার কাছে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্যার বলে- বলেও, তার এই নিয়ম বদলাতে পারেননি। তাই স্যার, অলয়েজ-লেট অনিকেতের ওপরে ভীষণ অসন্তুষ্ট।
একদিন স্যার তাকে এই কারণে খুব বকলেন। বললেন,’তুমি রোজদিন দেরী করে স্কুলে আসছ। শরীর চর্চা, প্রার্থনা, মনীষীদের নিয়ে আলোচনা—এসব ক্লাসে তুমি একদিনও হাজির থাকছ না । অথচ এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস। ছাত্রজীবনে এই ক্লাসের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তোমার বাড়ি তো খুব বেশি দূরে নয়। বলা যায় নাকের ডগায়। প্রায় সকল ছাত্রছাত্রীরা তো এই পথটুকু হেঁটেই আসছে। তুমি কেন পারবে না ? তুমি কেন রোজ-রোজ গাড়ির জন্য বসে থাক ? গাড়ির অপেক্ষাতেই তো তোমার রোজদিন দেরী হচ্ছে। এটা খুব খারাপ অভ্যেস। এটা তোমাকে ত্যাগ করতেই হবে।‘
স্যারের কথায় অনিকেতের খুব দুঃখ এবং রাগ হল। সে মনে মনে ভাবল,’স্যার খুব দুষ্টু। তাই তিনি আমাকে আজ এতো কথা সকলের সামনে শোনালেন।‘
সে এমনও ভাবল, ‘আজ সে বাড়ি ফিরে বাবাকে বলবে, তাকে যেন অন্য স্কুলে ভর্তি করে দেয়। এরচেয়ে বড়, আরও অনেক ভাল স্কুলে।‘
ছুটির পর , আজও অনিকেতের গাড়ি ঠিক সময়ে এল না। সে স্কুল-বারান্দার এককোণে চুপচাপ অনেক সময় গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইল। একসময় তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। রাগে-দুঃখে তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে নামতে লাগল। সে ঠিক করল, গাড়ির জন্য আর অপেক্ষা না করে আজ সে হেঁটেই বাড়ি ফিরবে।
এমন সময় তার কাছে এসে উপস্থিত হল দয়াময় আর তার ভাই। দয়াময় তার কাঁধে হাত রেখে বলল,’ বন্ধু, কেন মিছিমিছি রাগ করছ? স্যার তোমার ভালোর জন্যই ওই কথাগুলো বলেছেন। ঠিকই তো, এ’টুকু পথ তুমি আমাদের সঙ্গে হেঁটে এলে, রোজ ঠিক সময়ে স্কুলে চলে আসবে। আবার এই হাঁটার জন্য তোমার শরীরটাও ভাল থাকবে। সেই সঙ্গে স্কুলের সব ক্লাসগুলো করতে পারবে। এমন হলে, স্যারও তোমাকে খুব ভালোবাসবে। আমরা সবাইতো রোজ হেঁটেই আসছি। তুমি আমাদের সঙ্গেই আসবে। দুদিন এলে দেখবে, হেঁটে আসতে কত মজা।‘
এরপর দয়াময় নিজের হাতে অনিকেতের চোখের জল মুছে দিল। তার হাত ধরে স্কুল বারান্দা থেকে বাইরে নিয়ে এল। বাইরে আসতেই তারা দেখল, স্যার এখনও স্কুল ছেড়ে যাননি। ওদের জন্যই তিনি স্কুলে রয়েছেন। অনিকেত স্যারের দিকে তাকাতেই সে দেখল, স্যার তার দিকে তাকিয়ে হাসছেন । নিজের ডান হাতটা উপরে তুলে অনিকেতকে টা টা করছেন।
অনিকেতের মন থেকে সমস্ত ভুল ধারণাগুলো নিমেষে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। দূর হয়ে গেল তার মনের সমস্ত দুঃখ, মান-অভিমান। সে এবার স্যারের দিকে হাত তুলে তাঁকেও টা-টা করল। তারপর দয়াময়কে বলল,’বুড়ো বয়সে হাঁটলে কি আর শরীরকে ঠিক রাখা যায় বন্ধু ! এখন থেকেই সে হাঁটা শুরু করতে হয়। আমার ঠাকুর্দাও একদিন বলেছিলেন, স্বাস্থ্যই মানুষের প্রকৃত সম্পদ। তাকে রক্ষা করতে হলে ছেলেবেলা থেকেই তার যত্ন, পরিচর্চা করতে হয়। দয়াময়, আমি কাল থেকে রোজ তোমাদের সঙ্গে হেঁটেই স্কুলে আসব-যাব। আমাদের হাঁটি-হাঁটি পা-পা গাড়িটাই ভালো। যাই বল বন্ধু, এই এগারো নম্বর গাড়িটা কিন্তু পেট্রোল ডিজেল গ্যাস ছাড়া ভালোই ছোটে। এবার থেকে আমার আর কক্খোনো স্কুলে দেরী হবে না। কোনদিনই না। আজ থেকেই নিলাম শপথ, ও আমার লেট-গাড়ি , তোমাকে দিলাম জন্মের আড়ি। আমাদের এগারো নম্বর গাড়ি, জিন্দাবাদ।‘
দয়াময় আর তার ভাই সুধাময় অনিকেতের কথা শুনে খুব খুশি হল। এবার তিন বন্ধু মনের আনন্দে, নাচতে নাচতে বাড়ির পথে পা বাড়াল। বেরুবার মুখে তারা দেখল, স্যার এখনও স্কুলে রয়েছেন। তিনি ওদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন।
ঋতু
স্নেহা সুলতানা
সপ্তম শ্রেণী, চাপড়া মেরি ইমাকুলেট হাই স্কুল, নদীয়া
গ্রীষ্মকালে আম, জাম ফল
গায়েতে ঘাম বয় কলকল।
বর্ষাতে জামরুম, পানিফল খাই
পুকুর ও খালবিল জলে ভোরে যাই।
শরতে আঙুর ফল, পাকা পেঁপে হয়
ঠাকুর ঘরে তখন আবার দূর্গা মায়ের জয়।
হেমন্ততে লেবু ও পেয়ারা ফল খাই
কৃষকরা ধান সহ হাসিমুখে ঘরে ফিরে যাই।
শীতকালেতে কমলালেবু, স্ট্রোবেরি ফল
এই সময়ে শুধুই মুড়ি দিই কম্বল।
বসন্ততে কুল ও বেল
ওই সময়ে শুধুই কোকিল ডাকার খেল ।।
প্রকৃত বন্ধু
সংঘমিত্রা সৎপতি
ষষ্ঠ শ্রেণী, হুমগড় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুর
রাজু ভালো ছেলে। সে গোবিন্দপুর হাইস্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। পড়াশোনায় ভালো ,তবে খুব চুপচাপ। তার স্কুলে কোনো বন্ধু নেই। সে খুবই একা। কেউ তার সাথে বন্ধুত্ব করেনা, তার চুপচাপ স্বভাবের জন্য। আবার কেউ করলেও কিছুদিন পর আপনা থেকেই সরে যায়।
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে ও দেখল, এক বিশাল গভীর নর্দমায় একটি কুকুর ডুবে যাচ্ছে। রাজু ছুটে গিয়ে একটা মোটা লাঠির সাহায্যে তাকে টেনে তুলল এবং কলের জলে তার গা ভালো করে পরিষ্কার করে দিয়ে তাকে রাস্তার পাশে বসিয়ে রেখে বাড়ি চলে এল। পরদিন স্কুল যাবার জন্য বাড়ি থেকে বেরোতেই সে আগের দিনের কুকুরটাকে দেখতে পেল। কুকুরটা ওকে দেখে লেজ নাড়াতে লাগল। যেন ধন্যবাদ জানাতে চায়। রাজুর পিছন পিছন সেও চলতে লাগল। রাজু স্কুলে ঢুকলে সেও তার সাথে স্কুলে ঢুকে পড়ল।রাজু পড়ল মহাবিপদে। স্কুলে কুকুর দেখলে তো স্যারেরা রাগ করবেন। তাই রাজু ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাইরে বসিয়ে রেখে ভিতরে ঢুকে গেল।
টিফিনের সময় সমস্ত ছেলেরা খেলছিল। কিন্তু রাজু একা একা বসে টিফিন খাচ্ছিল। হঠাৎ উঁচু ক্লাসের কয়েকজন ছেলে এসে ওর টিফিন কেড়ে নিল। এরকম প্রায়ই হয়। রাজু কোনো আপত্তি করে না। কিন্তু আজ ও মৃদু আপত্তি করে বলল, "তোমরা আমার টিফিন খেয়ে নিচ্ছ কেন? তাহলে আমি কী খাব?" ওরা রাজুর কথায় কোনো কর্ণপাত না করে ওকে ঠেলে ফেলে দিল। হঠাৎ সেই কুকুরটা ছুটে এসে ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ওরা ভয় পেয়ে টিফিন ফেলে দৌড়ে পালালো। তখন কুকুরটা রাজুর কোলে বসে আদর করে ওর গা চেটে দিল। রাজু ওকে বলে যে, ও আজ থেকে তার বন্ধু। ওর নাম হল ভুলু। তখন ভুলু আনন্দে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। এভাবে ভুলু রাজুর প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠল।
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস
ফুলকুসুমপুর খুব কাছে ১১
রতনতনু ঘাটী
শনিবার বিকেলে ফুলকুসুমপুরের ত্রিপাঠিদের বাড়িতে এমন মহা হইচই কাণ্ড হবে কে জানত? হাফ ডে’র পর স্কুল ছুটি হয়ে গেল। বিন্নি স্কুলের পাশ দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে চিকলুকে ডেকে বলল, ‘অ্যাই চিকলু, আজ তো তোদের আমাদের বাড়ি যাওয়ার কথা? ভুলে গেলি?’
তিন্নি বলল, ‘তাই তো রে! তোদের তো আমাদের বাড়ির চিড়িয়াখানা দেখতে যাওয়ার কথা?’ আশপাশে নীলূফারকে দেখতে না পেয়ে বুম্বাকে বলল, ‘অ্যাই বুম্বা, তোর বন্ধু নীলূফারকে ডেকে আন! ও-ও তো যাবে বলেছিল? শিগগির যা!’
একটু পরে নীলূফারকে জামা ধরে টানতে-টানতে এনে হাজির করল বুম্বা। নীলূফার বলল, ‘বিন্নিদি, তোমাদের বাড়িতে যাব একদম ভুলেই গিয়েছিলাম! অথছ, স্কুলে আসার সময় মাকে বলেও এসেছিলাম, ‘মা, স্কুল ছুটির পর ত্রিপাঠীদের বাড়ি ঘুরে তারপর বাড়ি ফিরব!’
পাঁচজন মিলে হইচই করতে-করতে যখন ত্রিপাঠীদের বাড়িতে ঢুকল, তখন ইচ্ছেদাদু দোতলার বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে চা খাচ্ছিলেন। অনিচ্ছেঠাকুরমা পাশে একটা চেয়ারে বসেছিলেন। দাদু ওদের চেঁচামেচি শুনে উঠে দাঁড়িয়ে দেখলেন দোতলা থেকে। তারপর ঠাকুরমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার গো অনিচ্ছে? স্কুল থেকে তিন্নিদের সঙ্গে বন্ধুরাও এসেছে দেখছি? তোমার রাধাগোবিন্দর হ্যাপি বার্থ ডে নাকি?’
হাসতে-হাসতে ইচ্ছেঠাকুরমা বললেন, ‘তা হলে বিলন্বকুমারকে দোকানে পাঠিয়ে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ লেখা কেক আনাও!’
দাদু ফিকফিক করে হাসলেন, ‘বিলম্বর কেক নিয়ে ফিরতে ফিরতে রাধাগোবিন্দর পরের জন্মদিন এসে যাবে তো?’
কলকল করতে-করতে ওরা পাঁচজন উপরে উঠে এল। তিন্নি বলল, ‘দাদু, স্কুলের বন্ধুরা আমাদের বাড়ির চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছে!’
ইচ্ছেদাদু হাসতে-হাসতে বললেন, ‘তা, তোরা বেশ সুন্দর একটা নাম রেখেছিস তো! চিড়িয়াখানা! আয়, আয় তোরা।’
ইচ্ছেঠাকুরমা দোতলা থেকে চেঁচালেন, ‘কই গেলি রে বিলম্ব? একটু দোতলায় আয় তো!’
আশপাশ থেকে বিলম্বর গলা শোনা গেল না। মাধুরীজেম্মা চেঁচিয়ে বললেন, ‘মা, বিলম্বদাদুকে তো দুপুরের খাওয়ার পর থেকে দেখতে পাচ্ছি না। কেউ কি কোথাও পাঠিয়েছে?’
মাধুরীজেম্মার কথা শুনে হঠাৎ ঠাকুরমার মনে পড়ে গেল, কপালে বাঁ হাত চাপড়ে বললেন, ‘ও মা, ভুলেই গেছি! আমিই তো ওকে রাধাগোবিন্দর খাওয়ার জন্যে একশো গ্রাম তিসি আর একশো গ্রাম ভুট্টা আনতে পাঠিয়েছিলাম লাঞ্চের পর। ও এখনও এল না? ও কি মাঠে তিসি আর ভুট্টা চাষ করে তবে আনছে?’ তারপর দাদুর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমার আশকারাতেই বিলম্বের অতখানি আস্পদ্দা বেড়েছে। তুমি তো ওকে কখনও কড়া করে কিছুই বলতে পারো না। তোমার যত কড়াকড়ি সব আমার উপর!’
‘আ-হা-হা! বাপ-মা মরা বিলম্বকুমারকে আমার বাবা তেমোহানি নদীর পার থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন বাড়িতে। তখন বিলম্ব ওদের গ্রামের নামটাও বলতে পারেনি। সেই থেকে আছে এ বাড়িতে। ওকে কি কিছু বলা যায়?’ দাদু গলা তুলে ডাক দিলেন, ‘বিলম্ব, ও বাবা বিলম্ব, একবারটি উপরে এসো তো! তোমার কি রাধাগেবিন্দর জন্যে খাবারদাবার কেনা হয়েছে? একবারটি দেখা দাও বিলম্ব!’
ইচ্ছেদাদুর কাতর ডাকে দূরের মাইতিপুকুরের করঞ্জা ঝোপের দিক থেকে বিলম্বদাদুর গলা ভেসে এল, ‘আসছি বড়বাবু! এই তো এসে গেলুম বলে। ‘বিশালক্ষ্মী স্টোর’ কি এখানে গো? গেলুম আর এলুম তো!’
মাথা চুলকোতে-চুলকোতে বিলম্ব এসে হাজির হল ঠাকুরমার সামনে। কাগজে মোড়া দুটো মোড়ক রেখে বলল, ‘এই নাও বড়মা তোমার রাধাগোবিন্দর খাবার!’ একটা মোড়ক এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘বাব্বা, বাব্বা! বাজরা কোথায় রেখেছে দোকানদার, কিছুতেই খুঁজে পায় না। তারপরে খুঁজে পেল।’ আর-একটা মোড়ক এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘আর এই নাও নকুলদানা!’
ইচ্ছেঠাকুরমা মাথায় হাত দিয়ে ফের চেয়ারে বসে পড়লেন, ‘বিলম্ব, আমি তোকে বাজরাও আনতে বলিনি, আর নকুলদানাও আনতে বলিনি। আমি কি নকুলদানা দিয়ে রাধাগোবিন্দর পুজো করব নাকি? তুই কী রে বিলম্ব, দুটো জিনিস আনতে পাঠিয়েছিলাম। দুটোই ভুল এনেছিস! তোকে নিয়ে আর পারি না!’
বিলম্বদাদু বিরক্ত গলায় বলল, ‘তোমরা অত ‘বিলম্ব, বিলম্ব’ কোরো না তো! বিলম্ব তো একটা মাত্র লোক, তার তো মাত্র দুটো হাত। দুটো হাতে আর কত কাজ করবে বলোদিকিনি বড়মা? দাও, দাও। কাগজে লিখে দাওদিকি! পালটে এক্ষুনি এনে দিচ্ছি।’
ইচ্ছেঠাকুরমা দু’ হাত তুলে বললেন, ‘থাক বাবা! এসব জিনিস থাক। ঢের হয়েছে! তুই বরং ছুট্টে এক্ষুনি চলে যা দিকিনি। ‘কনক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ থেকে দশখানা লাড্ডু এনে দে তো। স্কুল থেকে ছেলেমেয়েগুলো বাড়িতে এসেছে। কিছু না খাওয়ালে হবে?’ বলে ঠাকুরমা বিলম্বদাদুর হাতে টাকা দিলেন।
ওরা রাধাগোবিন্দর খাঁচার সামনে দাঁড়াল। বিন্নিকে জিজ্ঞেস করল চিকলু, ‘হ্যাঁ রে, তোদের এই টিয়াপাখিটা কথা বলতে শিখেছে?’
বুম্বা বলল, ‘হ্যাঁ, তা কথা ও বলতে পারে! ট্যাঁ-ট্যাঁ-ট্যাঁ! তবে ওর কথা ঠাকুরমা ছাড়া আমরা কেউ বুঝতে পারি না।’
নীলূফার বিড়ালছানার খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তিন্নিদি, এর নাম কী?’
‘মিঁউ!’ তিন্নি উত্তর দিল।
‘বাঃ! কী সুন্দর তুলতুলে দেখতে। ওকেও কি তোরা কথা বলা শেখাবি নাকি?’ জিজ্ঞেস করল চিকলু।
তিন্নি বলল, ‘তুই যে কী! বিড়াল আবার কথা বলতে পারে নাকি?’
পাশের খালি খাঁচার দিকে আঙুল তুলে জিজ্ঞেস করল চিকলু, ‘এই খাঁচায় কী থাকবে রে বিন্নি?’
‘ওটায় থাকবে শুধুকাকার খরগোশ। এখনও ডেলিভারি দেয়নি।’
এমন সময় নীচ থেকে শুধুকাকার গলা শোনা গেল, ‘বিলম্বদাদু, ও বিলম্বদাদু, তুমি কোথায় গেলে গো? শিগগির এসো! দেখবে এসো, কে এসেছে!’
(এর পর আগামী রোববার)
গল্পে গল্পে ক্যুইজ
রাজীব কুমার ঘোষ
দ্বিতীয় পর্বের উত্তর নিয়ে গল্প
১।। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ট্রেনটির নাম ‘পদাতিক এক্সপ্রেস’। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পদাতিক’ ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। ‘কবিতাভবন’ থেকে প্রকাশিত। উৎসর্গ করেছিলেন ‘বাবা ও মাকে’। ৩২ পাতার বই, ২৩টি কবিতা ছিল। দাম ছিল ১ টাকা। প্রচ্ছদশিল্পীর নাম না থাকলেও কবির কথায় জানা যায় প্রচ্ছদ করেছিলেন অনিল ভট্টাচার্য। প্রচ্ছদ ছিল কালো রঙে হাঁটার ভঙ্গীতে উদ্যত এক জোড়া পায়ের ছবি। পরে এই বইয়ের বহু সংস্করণ বেরিয়েছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই কবিতার বইটির একটি উল্লেখযোগ্য স্থান আছে। কলকাতায় একটি মেট্রো স্টেশন হল, কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন, যেটি আগে নিউ গড়িয়া স্টেশন বলে পরিচিত ছিল।
২।। টাইগার শ্রফ। হিন্দি চলচ্চিত্রের বিখ্যাত নায়ক জ্যাকি শ্রফের ছেলে। টাইগার শ্রফের প্রথম চলচ্চিত্র ‘হিরোপান্তি’ (২০১৪), যার মধ্যে ‘হিরো’ শব্দটি আছে। উল্লেখযোগ্য যে জ্যাকি শ্রফের একেবারে প্রথম দিকের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ছিল ‘হিরো’ (১৯৮৩)।
৩।। কিশোর কুমার। আসল নাম আভাস কুমার গাঙ্গুলি। তার অভিনীত কয়েকটি বিখ্যাত হিন্দি চলচ্চিত্র হল, চলতি কা নাম গাড়ি (১৯৫৮), হাফ টিকিট (১৯৬২)। উল্লেখযোগ্য একটি বাংলা চলচ্চিত্র ‘লুকোচুরি’ (১৯৫৮)। তোমাদের চুপি চুপি বলে রাখি এই তিনটে সিনেমাই তোমরা কিন্তু দেখতে পারো। যারা হাসির সিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করো তারা তো দেখবে অবশ্যই। কিশোর কুমার পরিচালিত একটি উল্লেখযোগ্য হিন্দি চলচ্চিত্র হল, ‘দূর গগন কি ছাঁও মে’ (১৯৬৪)। প্রজন্মের পর প্রজন্ম কিশোর কুমারের গানকে জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছে। তোমাদের জীবনেও গানে গানে তিনি কীভাবে জড়িয়ে যাবেন বুঝতেই পারবে না।
৪।। ডিভাইস আর মেশিন। সত্যি কথা বলতে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এই দুটির পার্থক্য খুব সূক্ষ্ম। তাই অনেকের কাছেই শব্দ দুটি সমার্থক। এসো আমরা সহজ করে বোঝার চেষ্টা করি।
মেশিন, যাকে বাংলায় আমরা যন্ত্র বলি, তা বলতে আমরা বুঝি এমন একটা কিছু যা আমাদের পরিশ্রম আর সময় বাঁচিয়ে দেয়। তাহলে তোমার ক্লাস রুটিন বা ক্যালেন্ডার কি একটা মেশিন? সেটাও তো তোমার মনে করার পরিশ্রম আর সময় বাঁচিয়ে দেয়। উত্তর হবে - না। কারণ মেশিন এমন একটা কিছু যা যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করবে। গম ভাঙানো যাতে হয় সেটা কি মেশিন? উত্তর হবে হ্যাঁ, সেটা হাতে ঘোরানো যাঁতা হলেও যন্ত্র বা বিদ্যুত চালিত হলেও যন্ত্র। দুটি ক্ষেত্রেই তা যান্ত্রিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গম পিষে আটা বার করে। ফারাকটা হল, প্রথমটি আমরা হাত দিয়ে চালাই আর দ্বিতীয়টি বিদ্যুত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে চলে।
ডিভাইস (একেও বাংলায় আমরা যন্ত্র বলি) বলতে আমরা বুঝি এমন কিছু যা বানানো হয়েছে একটিই নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য আর এগুলো বানানো হয়েছে মেশিনের কাজকে আরো উন্নত করার জন্য। বর্তমান যুগে ডিভাইসকে আমরা বলতে পারি মেশিনের পরিশীলিত একটি রূপ। এই যুগের মেশিনদের আমরা ডিভাইস বললেও বলতে পারি যদিও মনে রাখবে প্রতিটি ডিভাইস কিন্তু মেশিন নয়। একটা মেশিন অনেক ডিভাইস নিয়ে তৈরি হয় বা হতে পারে। প্রতিটি ডিভাইসের সেখানে নিজের নিজের নির্দিষ্ট কাজ থাকে। এই কাজগুলোর তালমিলেই গোটা মেশিনটি তার কাজ করে। বিপরীতে একটি মেশিন কিন্তু এক বা একাধিক কাজের জন্য হতে পারে। ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, ফ্রিজ এদের আমরা মেশিন বলি আবার স্মার্টফোন, প্রিন্টার, কীবোর্ড এদের আমরা ডিভাইস বলি। এখানে বলে রাখা ভালো কম্পিউটারের দুনিয়ার ডিভাইস শব্দটা আমরা একটু আলাদাভাবে ব্যবহার করি। কম্পিউটারে যুক্ত হওয়া সব কিছুকেই আমরা ডিভাইস বলে থাকি। যেমন পেন ড্রাইভ, প্রিন্টার ইত্যাদি।
৫।। ক্লু শব্দটি যে অর্থে আজ আমরা ব্যবহার করি তা এসেছে গ্রীক পুরাণের একটি গল্প থেকে। থেসাস আর মিনেটারের গল্প। মিনেটার, গ্রীক কাহিনিতে এক দানব, যার দেহ মানুষের আর মাথা ষাঁড়ের। মিনেটার থাকত একটা গোলকধাঁধার মধ্যে। থেসাস সুতোর বল থেকে সুতো ফেলতে ফেলতে সেই গোলকধাঁধার মধ্যে গিয়ে মিনেটারকে মেরে ফেলে। তারপর সুতো ধরে ধরে সেই গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসে। এই গল্প মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে জনপ্রিয় ছিল। তখন সুতোর বলকে ইংল্যান্ডে “clew” বলা হত। যার থেকে পরে “clue” শব্দ এসেছে। অর্থ এমন কিছু যার মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান করা হয়। ক্যুইজে যেমন “ক্লু” মানে একটা তথ্য যা তোমাকে সঠিক উত্তর দিতে সাহায্য করে। পুলিশ বা গোয়েন্দাদের কাছে ক্লু মানে সেইসব তথ্য যার সাহায্যে তারা অপরাধীকে ধরতে পারে।
৬।। দরবার শব্দটি ফারসি শব্দ। সাধারণ অর্থে দরবার বলতে আমরা রাজসভা বুঝি কিন্তু 'দরবার' শব্দটির প্রচলন মুঘলদের মাধ্যমে শুরু হয়। মুঘল দরবার কিন্তু সম্রাটের উপস্থিতিতে শুধু একটা জমায়েত ছিল না, এটা একটা প্রতিষ্ঠানের চেহারা নিয়েছিল ছিল যার মাধ্যমে নানা প্রশাসনিক কাজ কর্ম হত। পরবর্তীকালে দরবার শব্দটির ব্যবহার ছড়িয়ে যায়। যেমন জমিদারদের দরবার, ধর্মগুরুদের দরবার (শিখ, সুফি)। পাঠকের দরবারে, দর্শকের দরবারে, জনতার দরবারে - এই কথাগুলিও বহুল প্রচলিত।
৭।। উদ্দেশ্য আর উদ্দেশ শব্দদুটির অর্থ আর ব্যবহার মনে রাখার সহজ উপায় কিছু বাক্য মনে রাখা, যেমন, “বিজ্ঞান শিক্ষক পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনা বাড়াবার উদ্দেশ্যে ছাত্রদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন।”
এখানে বুঝতেই পারছ যে পরিকল্পনা বা লক্ষ্য বোঝানোর সময় 'উদ্দেশ্য' শব্দটি ব্যবহার হয়েছে আর কাউকে কিছু বলা বোঝাতে 'উদ্দেশ' শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, যাকে আমরা ইংরাজিতে address করা বলি। 'উদ্দেশ্য' শব্দটি গন্তব্য বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, অমল কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
৮।। ১৯৫৪
৯।। দো বিঘা জমিন (১৯৫৩)। পরিচালক ছিলেন বিমল রায়।
১০।। ‘দো বিঘা জমিন’ চলচ্চিত্রের মূলে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি। চলচ্চিত্রের শিরোনাম স্পষ্টতই একই। দুই বিঘা জমি কবিতা ছাড়াও এই চলচ্চিত্রটি সলিল চৌধুরীর একটি গল্প ‘রিকশাওয়ালা’ নিয়ে তৈরি হয়েছিল। চলচ্চিত্রটির মূলে ছিল প্রখ্যাত ইতালীয় চলচ্চিত্রকার ভিক্টোরিয়া ডি সিকোর ‘বাইসাইকেল থিভস্’ চলচ্চিত্রটির প্রেরণা। তোমরা সম্ভব হলে এই দুটি চলচ্চিত্রই দেখতে পারো। হৃদয়ের জানালাটা অনেকটা খুলে যাবে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া ১
(শুভশ্রী সাহা জ্বলদর্চির ৩৬ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে যা লিখলেন)
জ্বলদর্চি পত্রিকার ছত্রিশ নম্বর সংকলন পড়তে পড়তে ছোট্ট হয়ে গেছিলাম। প্রথমেই শ্রদ্ধেয় গৌর বৈরাগী দার মৌমাছি এবং মৌচাক সংক্রান্ত লেখাটি তথ্যভারে নুব্জ হয়নি বরং চমৎকার পরিবেশনের স্বাদগুনে চকোলেট ফ্লেভার লাগল। ছোটরা পড়ে নিও কিন্তু।
কবিতা গুলি বিশেষ করে গাছের ফোঁড়া দারুন লেগেছে। ছড়া ও ফোড়া মিলে মিশে গেছে। বাকি দুটি কবিতাও , তারাপদ বাবু ও গৌতম বাবুর ছন্দ গন্ধ বর্ণে, পরিবেশনে ভারি মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে। সাক্রেড হার্ট স্কুলের রেঁনেসা কি সুন্দর ছড়াটা লিখেছ গো।তোমার কলম চলুক এমনি। অপেক্ষায় থাকব আরো। সুহানা! ছোট্ট সুহানা, ওর রুমি বেড়াল নিয়ে একদম চলে এসেছে, দেখো কি সুন্দর চোর ধরবে ওর বেড়াল। তোমরা পড়ে নিও চটপট। সুহানার লেখা আরো চাই।
রূপক কুমার হাতি সুন্দর লিখেছেন জল সংরক্ষণ সংক্রান্ত নিবন্ধটি। কত কিছুই জানতে পারলাম আমরা। এবং শেষে আমাদের কুইজ মাস্টারের কলামটি না পড়লে বৃথা যাবে সব। বন্ধুরা,একবারটি চোখ বুলান, কি ভাবছেন আপনি সব জানেন? মোটেই না! রাজীব কুমার ঘোষের কুইজ সংক্রান্ত উত্তরে সাত নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেখুন! আই কিউ নিয়ে কত উত্তর পাবেন, জানবেন। ছবি আর ধারবাহিক উপন্যাসটির কোনো কথাই হবে নাম শীর্ষেন্দু ফ্লেভার পুরো। আসলে এগুলোই আমরা ফিরে পেতে চাই। মোবাইল থেকে লেখায় ফিরুক ওরা।
শেষে কান্ডারীকে না ধন্যবাদ দিয়ে লেখা শেষ হয় না। মৌসুমীর অনন্য সম্পাদকীয় এবং প্রচেষ্টাকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। জ্বলদর্চি আনন্দমেলাকে মনে করালো। আর হ্যাঁ, শ্রীপর্ণার লেখা মিস করেছি কিন্তু। এগিয়ে চলুক জ্বলদর্চি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া ২
( জ্বলদর্চির ৩৭ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী অশোকনগরের শাশ্বতী কর যা লিখল)
অচেনাকে চেনা গান অজানাকে জানার ইচ্ছা আমাদের প্রত্যেকের তাইতো আমরা ছুটে যাই প্রকৃতির কোলে। কিন্তু বর্তমানে আমরা প্রত্যেকে গৃহবন্দী। এই একঘেয়েমি কে দূর করার জন্য 'জলদর্চি 'পত্রিকাটি এখন আমাদের বিকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রত্যেকটি লেখা ও আঁকা এত সুন্দর ভাবে সাজানো যে মনে দাগ কেটে যায়, আর সময় টাও বয়ে যায় তার ছন্দে।
মৌসুমী ম্যাডাম এত সুন্দর ভাবে কৌতুহল তৈরি করে দেন যে তা শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে ছন্দ আকারে। প্রথমেই বলি বিশ্বদ্বীপ দে এর 'টিটো ও আয়নার গল্প'টি পড়ে আমার 'ডোরেমন' এ দেখা এরকম ই একটা মুভির কথা মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় আমরা যখন কাঁদতাম তখন আমাদের আয়না দেখিয়ে বলা হয় যে ওপারে যে দাঁড়িয়ে আছে সে কিন্তু কাঁদছে না , তাহলে তুমি কাঁদছো কেন? আর তখন আমরা চুপ করে যেতাম। সেই কথাটা আবার মনে পড়ে গেল, গল্পটা পড়ে সত্যি খুব ভাল লাগলো ।
সুব্রত চৌধুরীর 'মামারবাড়ির সুখ' কবিতাটি পড়ে আমার মনে হল , আমরা একটা কথা শুনেছি 'মামার বাড়ি ভারী মজা কিল চড় নাই'! সত্যিই মামার বাড়ি মানে আমাদের কাছে আনন্দ, মজা করার কিছু স্মৃতি ভেসে ওঠে। কারোর মামার বাড়ি যদি গ্রামের মধ্যে হয় তাহলে খুব ভালো অনুভব করবেন আম, কাঁঠাল , লিচুর গন্ধে চারিদিক মম করে ওঠে এই সময়,গ্রীষ্ম ঋতুর আহ্বান জানায়। সত্যি আমিও খুব ফিরে যেতে পারছি ওই সুন্দর দিনগুলোতে। কবিতাটি আমার খুব ভালো লাগলো পড়ে।
পীযূষ প্রতিহারের এর 'মস্ত বড় অন্যায়' গল্পটি আমার মনের মতই হয়েছে। আমিও যখন ঠিক রেগে যাই মাকে বলি কি যে পড়াটা আবিষ্কার করেছিল? মনে হয় বিদ্যাসাগরের সাথে দেখা করতে পারতাম তাহলে খুব ভালো হতো। গল্পটি পড়ে আমি ভীষণ ভীষণ আনন্দ পেয়েছি।
'আমার ঠাকুর 'সৌমি আচার্য এর কবিতাটি পড়ে ভালো লাগলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার ও খুব প্রিয়, ওনার প্রত্যেক টি লেখা আমাকে সবসময় প্রাণিত করে, এমন একজন ব্যক্তিক্ত যিনি জীবনের প্রত্যেকটি অধ্যায়কে অনুভব করেছেন।
মৌসুমী রায় এর' ঋভুর কথা' গল্প টি খুব ভালো লাগলো পড়ে, এ রকম একটি যন্ত্র যদি আমার কাছে থাকতো তাহলে খুব ভালোই হতো।
রতনতনু ঘাটী মহাশয় এর 'ফুলকুসুমপুর খুব কাছে' গল্পটি যত এগোচ্ছে আমার ও কৌতূহল ততই বাড়ছে। খুব ভালো লাগছে পড়তে, বড়বাবুর বলা গল্পটি আমার খুব ভালো লাগলো, বর্তমান এ যৌথ পরিবার খুব কম দেখা যায়। সেখান থেকে দেখলে এই গল্পের প্রত্যেকটি চরিত্রের মধ্যে একতা, মানিয়ে নেওয়া, মিলে মিশে থাকা এটা আমার ভালো লাগলো।
এই সংখ্যার প্রত্যেকটি আঁকা আমার খুব ভালো লেগেছে। প্রকৃতির এক একটি দিককে তুলে ধরেছে । খুব ভালো লাগলো। সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন।
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
2 Comments
খুব ভালো লাগলো
ReplyDelete😃❤️❤️❤️👌
Delete