জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা (উৎসব ১৪২৮)/পার্থ সারথি চক্রবর্তী

গুচ্ছ কবিতা 
পার্থ সারথি চক্রবর্তী 


 নাগপাশ 

আলোর দিকে পেছন ফিরে থাকলে-
ক্রমশঃ মৃত্যু ঘিরে ধরে
অন্ধকারকে ভুল করে ভালবাসলে-
জীবন ক্ষুন্ন হয়ে যায় 
জীবনকে খুব করে আঁকড়ে ধরলে
সময় কোথায় পেরিয়ে যায়!
সময়কে যতই আটকে রাখতে চাই
           মুক্ত হয়ে যায় মুহূর্তেই।
অজান্তে কখন যেন-
নাগপাশে জড়িয়ে ফেলে
এভাবে জড়িয়ে থাকাই কী জীবন!
নাকি জীবনকে জড়িয়ে থাকাই আগাম মৃত্যু!


 বাঁশি 

মায়ায় ঘেরা বিস্তীর্ন জনপদ
শিকার আর শিকারির লুকোচুরি-
চলতেই থাকে আবহমান কাল 
হারিয়ে যেতে থাকে-
                 লড়াইয়ের সব শর্ত,
রেফারির বাঁশিতে ফুঁ দিতেই-
মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে অদৃশ্য সৈনিক
জানান দেয় মন্দিরের সান্ধ্য ঘন্টা-
সব শুরুর যেমন শেষ আছে-
সব শেষেরও তেমনি শুরু


 দেবতা 

সব কথা হয়নি বলা-
হয়ত বলাও যেত না।
রাত যেমন কাঁটা, মুখ তেমনি-
কিছুটা হলেও কুলুপ আঁটা।
সুন্দর ঘুমিয়ে থাকে যেমন গাছের মধ্যে-
ফুল হয়ে ফোঁটে না যারা;
তেমনি মানুষের আড়ালেও-
লুকিয়ে থাকে তীব্র দেবতা।
ঘাস যেমন রোদ চায়-
রোদও চায় ঘাসের কোমলতা;
নিজের তো কিছু নেই
পরের ভরসায় উঠে দাঁড়ায় গুল্মলতা।

কিছু বলে না, বলতে পারে না-
যদিও প্রাণে তীক্ষ্ম প্রেম, সঙ্গে যাতনা।


সোনালী রোদ্দুর 

মিথ্যের জাল জড়িয়ে ধরছে-
অনেক মানুষ ঘিরে ফেলছে,
প্রকৃত বন্ধু কমে যায় ক্রমশঃ 
শান্তির মহল খুঁজি-
          মনের,শ্মশানের নয়!
আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করা অবিশ্বাস-
মন হোক মাটির, সখ্যতার  হোক- 
               সোনালী রোদ্দুর।
শান্তির নীড় হোক ধর্মাবতার 
কপটতা, ছলনা নিপাত যাক-
              জয় হোক ভালবাসার


প্রভাত

চশমার নীচে ঘোলাটে দৃষ্টি 
মুখোশে ঢাকা পরিচিতির মতো 
সবুজ খুঁজে যায় অনবরত
পথ যেখানে দিগন্তে মিশে যায়।

সূর্যের আলোয় চকচক করে-
আশার নিরীহ প্রদীপ।
ধ্রুপদী রাগের ঝংকার-
আন্দোলিত করে মনের সব তার।

প্রভাত তবু আসবেই জানি আবার
বৃষ্টির কণায় প্রাণের অহংকার!
রামধনু আঁকা হয়ে থাকে-
হৃদয়ে আলোকিত নদীর হুঙ্কার।


বিজয়কেতন 

শ্রাবণধারার জন্য মুখিয়ে থাকা-
সবুজ মানবী ভিজছে অবশেষে,
সব অর্গল খুলে দাও আজ-
ধুয়ে যাক সব কালো,পঙ্কিলতা।
ভাস্কর্যকে ম্লান করে দেওয়া দৃশ্য-
জমিয়ে রাখা থাক প্রতিটি ঘাসে,
অন্ধকারের গহ্বরে নগ্ন শরীর
পবিত্র হোক আহুতি প্রদানে।
পরিহাসের নির্মম আওয়াজ-
প্রতিধ্বনিত হোক রোমে রোমে,
শাসন বন্ধন তুচ্ছ করে দিয়ে-
আকাশচারী হোক ভাবনারা সারি বেঁধে।
বাতিঘরে জ্বলে ওঠা প্রদীপ-
বিজয়কেতন ওড়াক দিকে দিকে।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments