জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ৯৬

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ৯৬
সম্পাদক - মৌসুমী ঘোষ 

চিত্রগ্রাহক - রাকেশ সিংহ দেব


সম্পাদকীয়,
আমি জানি তোমরা সবাই আগের সপ্তাহে ব্যস্ত ছিলে রাখী উৎসব নিয়ে। কিন্তু তোমরা কি জানো ১২ই আগস্ট ছিল বিশ্ব হাতি দিবস? জানো না তো? তারজন্যই তো রাকেশ আঙ্কেল তোমাদের জন্য একটা দাঁতালের ছবি তুলে পাঠিয়েছে? হাতি অত বড়ো প্রাণী বলে যে তার কথা বলছি তা কিন্তু ভেব না। পিঁপড়ে অত ছোটো হয়েও তার সম্বন্ধে জানারও শেষ নেই। সৌগত দাদা, সে কথাই বলেছে। মলয় জেঠু তোমাদের মাতানুষ্কার কথা বলেছেন। আমিও তোমাদের সঙ্গে জেনে নিলাম। জানতে জানতে হাফিয়ে উঠলে পড়ে নেবে বুলবুলি আর টুনটুনি দুই বন্ধুর ছড়া। হাতি, পাখি, পিঁপড়ে সবার কথা শুনেও আমরা ভুলিনি পুজো এসে গেল। তার মানেই শিউলির গন্ধ। জয়াবতীদের ওখানেও শিউলি ফোটা শুরু হয়েছে। তৃষ্ণা আন্টির কলমের আঁচড়ে জয়াবতী কখন যে আমাদের ছোটোবেলার সাহসী বন্ধু হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। তাই না?  সমাদৃতা মাতৃভাষা নিয়ে ছড়া লিখে পাঠিয়েছে। পীযূষ আঙ্কেল চির তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবনি বলেছেন। আরে না না ভুলে যাইনি,  রাখী উৎসবের কথা দিয়ে শুরু করে শারদ উৎসবের কথা বললেও আমার মনে আছে,  কাল ( স্বাধীনতা দিবস) থেকেই সমস্ত দেশবাসী অমৃত মহোৎসব পালন করবে আগামী একবছর।  বন্দেমাতরম 🙏
মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
অষ্টবিংশতি পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

৩২
সে এক কাণ্ড। পুণ্যি আঁচল ঘুরিয়ে বাতাস করছে পেরজাপতিকে।পালকি বেহারারা পাঁই পাঁই করে ছুটছে কাছে কোথায় পুকুর কি বিল আছে, জল নিয়ে আসবে। আর যা হয়, গ্রামের সবাই ভিড় করে এসেছে কী হচ্ছে দেখতে। তাদের উৎপাতে মেয়েটা  একটু বাতাস পাচ্ছে না। জয়াবতী গিয়েই সবাইকে বলল ‘কী দেখছ কী সবাই ভিড় করে? একানে কি ঠাকুর উটেচে নাকি? সরো সরো, আমাকে দেকতে দাও, বাতাস আসুক’
বলেই সে তার আঁচলের গিঁট খুলে কী একটা বার করে পেরজাপতির নাকে শোঁকায়। তারপর বেহারাদের ইশারা করে ওকে ধরে কাছে গাছতলায় নিয়ে শুইয়ে দিতে। তার আগে সে ছুটে পালকি থেকে একটা পাটি বার করে  গাছতলায়  পেতে আসে। তার কর্মতৎপরতা দেখে গাঁয়ের লোকের বাক্যি হরে যায়।  তার ওপর জয়াবতী শাড়ি পরে নেই, পরে আছে পেশোয়াজ ধরনের পোশাক, চুলগুলো চুড়ো করে বাঁধা, সেটাও তাদের হকচকিয়ে দেবার জন্যে যথেষ্ট। তাদের মনে এমন আশংকাও না উঠে পারে  না  যে আবার দিল্লি মিল্লি থেকে মোচলমানরা এসে তাদের গাঁ উজাড় করতে এসেছে। দিল্লিতে যে মুঘল রাজাদের অবস্থা নড়বড়ে, লালমুখো সাহেবরা ঘাড়ের কাছে নিঃশবাস ফেলছে, এসব তাদের  জানা নেই, বস্তুত ঘরের চৌকাঠের বাইরের কিছুর খবর রাখার দরকার তারা মনে করেই না। জগত সংসারে কেন, কী জন্য কী হচ্ছে, এসবে তাদের কোন আগ্রহ নেই। তাদের যাবতীয় কৌতূহল কোন তিথিতে বেগুন খাওয়া যায়, কোন মাসে মুলো খাওয়া নিষেধ- এইটুকুকে ঘিরে। তাই তারা জয়াবতীকে দেখে একদম অবাক হয়ে গেল। 

তাদের মুখ এতটাই হাঁ হয়ে গেল যে একটা চড়ুই পাখি ঢুকে যেতে পারত। তবে সব জায়গাতেই দু একটা অতি বিজ্ঞ, অতি পাকা লোক থাকে, যাদের বলা হয় ডেঁপো বা জেঠা। সেরকম একজন বলে উটল ‘বাপরে, মেয়েমানুষের রকম দেকো, মোচলমান নাকি? নাকি যুদ্ধে যাচ্ছে যে এমন পোশাক?  আর তুমি কি বদ্যি নাকি যে  সবাইকে সরে যেতে বলছ? তা আরশোলারও পাখি হতে সাধ যায় বৈকি!  এই কে আচিস, জমিদার মশাইকে খবর কর, বল একটা ভেকধারী এসে বদ্যি সেজে রুগী মারচে। এমন কয়েদ করে রাকবে, বুঝবে তকন। মেয়েমানুষ বলে রেয়াত করবে না’
জয়াবতী তখন পেরজাপতির গায়ের কাপড় আলগা করে, ওর পায়ে মালিশ করতে ব্যস্ত। তার মধ্যেই সে গম্ভীর গলায় বলল ‘কানের কাছে বকবক না করে এক বাটি তপ্ত দুধ নিয়ে এসো তো বাছা। আর যাবার আগে  দেকে যাও, এই যে আমাদের বদ্যির শিলমোহর। শুদু আমি না, এই মেয়েটা, পুণ্যবতী, এও বদ্যি। সোনাটিকরি গাঁয়ের নামী বদ্যি সেনমশাইয়ের ছাত্তর আমরা। বিশ্বেস করা না করা  তোমাদের ব্যাপার। তবে ভেবে দেকো আমাকে কয়েদ করতে গিয়ে নিজেরাই কয়েদ হয়ে যাও কিনা। আর কয়েদ যদি নাই হও, জমিদারের পেয়াদার লাঠির দুঘা মাথায় পড়লে, সেই ভাঙ্গা মাতা সারাতে কিন্তু আমার বা পুণ্যির কাছেই আসতে হবে। কাটাকাটি, লাঠালাঠি-এইসবের  চিকিচ্ছে  কিন্তু সেনমশাই আর করেন না কো। আমাদের ওপর  ওসব ছেড়ে দিয়েছেন। কী বল রে পুণ্যি?’
পুণ্যি বলবে কি, গঙ্গাজলের কাণ্ড দেখে তার তো বাক্যি হরে গেছে। সেনমশাই কবে আবার শিলমোহর দিলেন ওকে? না কি ও নিজেই আসার আগে চেয়ে নিয়েছে? কে জানে! ধাঁধার মত ঠেকছে গোটা ব্যাপারটা। তাছাড়া সেনমশাই কবেই বা  কাটাকাটির চিকিচ্ছে তাদের ওপর পুরো ছেড়ে দিলেন? তারা আজকাল অল্প স্বল্প চিকিচ্ছে করে বটে, কিন্তু সে তো সেনমশাই যখন ডেকে পাঠান, তখনি।তাঁর চোখের সামনে চিকিচ্ছে করতে পুণ্যির তো ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। গঙ্গাজলের অবশ্য কিছুই হয় না। সে যা  একখানা ডাকাত মেয়েমানুষ। এটাও ঠিক সেনমশাই বলেছেন পুজোর ছুটির পর ফিরলে, কাছেপিঠের রুগী দেকতে তাদের দুজনকেই পাঠাবে। বিশেষ করে অন্দরমহলের মেয়েরা, তারা অনেক সময় পুরুষ বদ্যির কাছে নিজেদের অসুকের কতা বলতে পারে না, তাদের কথা ভেবেই সেনমশাই, কিছু কিছু জায়গায় তাদের পাঠাবেন, ঠিক করেছেন। কিন্তু সে তো পুজোর ছুটির পর। আর জয়াবতী এখন বেমালুম বলে দিল এসব চিকিচ্ছে ওরা একাই করে! হে ভগমান, একে পাপ দিও না, কচি মেয়ে , আমাদের বিপদ থেকে বাঁচাতে মিছে কতা বলেছে।
জয়াবতীর ধ্মকানি খেয়ে সেই লোকটা যে কোথায় পালাল তার ঠিক নেই।  সে যেন স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। বেটাচ্ছেলে নির্ঘাত ভয় পেয়েছে। তাকে নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামাল না, উলটে চারদিকে ধন্যি ধন্যি পড়ে গেল। ঠিক তখুনি  পেরজাপতি চোখ মেলে চারদিকে এত লোক দেখে পুণ্যির কোলে মুখ লুকোল।   ভিড় করা লোকজন তখন সসম্ভ্রমে অনেকটা পিছিয়ে দাঁড়াল। এ ওকে বলতে লাগল, বদ্যি ঠাকুরানিদের আসন এনে দে, মিঠাই আন।মুখ থেকে কথা খসল কি খসল না,  কোথা থেকে এসে গেল বাটি ভরা তপ্ত দুধ, ধামা ভরা খই বাতাসা, মুড়কি, আরেক ধামায় খেতের বেগুন, পুনকো শাক। ওরা অবশ্য দুধ ছাড়া আর কিছুই নিল না।  দুধ খাইয়ে পেরজাপতিকে পাল্কিতে তুলল জয়াবতী। তারপর ফিসফিস করে বলল ‘বলা নেই কওয়া নেই মুচ্ছো গেলি যে! দিনামানে ভূত দেখলি নাকি? ‘ বলে জয়াবতী নিজেই চারদিক তাকিয়ে  গ্রামটা নজর করল ভাল ভাবে। এ গ্রামের নাম ইন্দ্রপুর, গ্রামে ঢোকার আগেই মধুদাদা বলেছিল নামটা। এখনো রোদ চড়া হয়নি। রাস্তাঘাটে বেশি লোক নেই। কাছেই পুকুর, যেখান থেকে জল এনে দিল বেহারারা পেরজাপতির চোখে মুখে ছেটানোর জন্যে, সেই পুকুরে দু তিনজন বুড়ো মানুষ সূর্য প্রণাম করছে, একজন মেয়েমানুষ সিঁড়ি ধুচ্ছে ঘড়া ঘড়া জল ঢেলে।রাস্তার ধুলো ঝাঁট দিচ্ছে একজন, জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে। শরতকালের সোনা রোদ মায়ের হাতের মত ছুঁয়ে আছে ইন্দ্রপুর গ্রামকে। একটা গাছের তলায় অজস্র শিউলি পড়ে আছে। শিউলির গন্ধে সব মন খারাপ ভাল হয়ে যায়। এর মধ্যে কোত্থেকেই বা ভূত দেখলে পেরজাপতি যে একেবারে মুচ্ছো গেল!
পুণ্যি গলা নামিয়ে বলল, ‘আসলে শ্বশুরঘরের লোক দেখেছে যে পেরজাপতি!’
‘শ্বশুরঘরের লোক! তা পেরজাপতি কোতায় দেকল সেই মহামানবদের? ‘
‘এই তো এই গাঁয়ে ঢোকার আগে একটা বড় বটগাছ পড়ল না? সেখানে ওর দুই ভাসুর, বসে বসে গল্প করছিল। ওদের গাঁয়ে জমিদারের পুজোয় নাকি শহর থেকে বাইনাচ আসবে, সেই নিয়েই খুব কথা বলছিল। বাইনাচ কী রে গঙ্গাজল?’
জয়াবতী কটমট  করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল ‘সে তোর এখুনি না জানলেও চলবে। কিন্তু আমি আচ্চযয হয়ে যাচ্ছি পেরজাপতি, দুটো লোককে দেকে তুই ভয়ে মুচ্ছো গেলি? তারা তোকে দেকেনি অব্দি। এই পাল্কির বেহারারা সবাই পাকা লেঠেল, তাছাড়া  আরো দুজন লেঠেল পেছন পেছন আসছে, তোরা জানিস না। আসার আগে সেনমশাই আমাকে ডেকে সব বুজিয়ে দিয়েছেন। আর এই শিলমোহরটাও। আমি এটা বানিয়ে বলিনি। পথে বিপদ আপদ কী আসতে পারে আন্দাজ করেই দিয়েছেন। আর আমাকেই কেন দিয়েছেন বল দিকি?’
পুণ্যি আর পেরজাপতি দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকায়। উমাশশী মিচকি হাসে ওদের রকম দেখে।
জয়াবতী নিজেই বলে ‘এই যে আমাদের ছোট দল, এই সেনাদল, এর সেনাপতি কে? আমি? কেন? না আমি বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারি। তোদের মতো হাঁউ মাঁউ করে কাঁদি না। ভয় পেয়ে মুচ্ছো যাই না। তোকে কী বলি বল তো পুণ্যি। বদ্যি হয়ে তুই কিনা  মুচ্ছো রুগীর  চিকিচ্ছের বদলে কাঁদতে বসলি। এক ঘটি জলে মরা ছাড়া তোর আর উপায় নেই, যাই বলিস আর তাই বলিস। নে নে চল এবার, নইলে বোলসিদ্ধি পৌঁছতে সুযযি পাটে উটবে।’ ( ক্রমশ)

অনুশ্রুতি মন্ডল, প্রথম শ্রেণী, সবং নার্সারি স্কুল, পশ্চিম মেদিনীপুর


চুনীর খোঁজ  

রূপা চক্রবর্ত্তী 
 
 বুলবুলি ঐ বলছে ডেকে 
 শোন রে চুপি টুনটুনি ---
 ছোট্ট বলেই বলছি তোকে 
 রাজার ঘরেই সব চুনী |

 জেনে কি আর করবো রে বল 
 ওসব খবর বুলবুলি ---
 লাগে যদি যা না রে তুই 
 আমি তো ভাই কান মুলি |

 চুনী যদি আনতে পারিস 
 দেবো তোকেও ঘট ভরি ,
 আর কতকাল থাকবো রে বল 
 এদিক ওদিক গাছ চড়ি ?

 একটি টাকা নিয়ে কত 
 হয়েছিল ঝকমারি !
 দিয়েছি তাই লোভ তাড়িয়ে 
 লোভের ফাঁদে সব আড়ি |

 ফুড়ুৎ উড়ে রাজার ঘরে 
 তোর্ রূপের যে নাইরে তুল ,
 চুনী দিয়ে গড়ে দেবো 
 তোর বিয়েতে জোড়া দুল |
 
 যতই দেখাস লোভ আমাকে 
 শেষে জানি রাজার শূল ---
 ভুলে গিয়ে প্রশংসাতে 
 করবো না আর অমন ভুল |

 রূপটি যে তোর্ বেশ মজাদার 
 ঝুঁটি বাঁধা মন-লোভা ,
 চুনী ঘেরা রাজার খাঁচায় 
 হ' গে তাঁরই ঘর-শোভা।। 

কৃতিশা পাল, ইউ কে জি, এইচ এম এডুকেশান সেন্টার, হুগলি


পিঁপড়ে - পরিচয়

সৌগত রায়


কয়েকদিন আগে সকালে হাঁটতে বেড়িয়েছিলাম মর্নিং ওয়াক যাকে বলে। তা বাড়ির ফেরার পথে রাস্তার পাশে একটা গাছের গায়ে চোখ আটকে যায়, একটা পাতা একা একা ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। আজব তো! কাছে গিয়ে দেখতেই বুঝলাম বেশ কয়েকটা পিঁপড়ে ওটাকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাসা বানানোর জন্যই সম্ভবত। তখনই ভেবে নিলাম পিঁপড়ে নিয়েই একটু পড়াশোনা করি। এমনিও পরীক্ষা শেষ , হাতে তেমন কোনো কাজও নেই। আর আগেও বলেছি নতুন কিছু জানার নেশা আমার প্রবল। যাইহোক তো সেইদিন ইন্টারনেট ঘেঁটে আমি যা দারুন দারুন তথ্য পেলাম সেগুলোই না হয় তোমাদের বলি আজ। 
মানুষ যেমন একসাথে মিলেমিশে থাকে, পিঁপড়েদের সমাজও কিন্তু সেরকমই, ওরাও অনেকে মিলে একসাথে মিলেমিশে থাকে। তাদের সেই সমাজে একজন বা একের বেশী রানী থাকে যারা ডিম পারে, একদল শ্রমিক পিঁপড়ে থাকে আর থাকে কিছু পুরুষ পিঁপড়ে। আবার সেই শ্রমিক পিঁপড়েদের মধ্যেও কাজের ভাগ করা থাকে, পুরো আমাদের সমাজের মতোই। সারা পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত ১২০০০ রকমের পিঁপড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমরা তো আমাদের বাড়ির চারপাশে ৩-৪ রকমের বেশি দেখতেই পাই না। সেখানে ১২০০০ একটা অনেক বড় সংখ্যা। তাই না ! তো সেই পিঁপড়েরা সব বিভিন্ন রকমের। কেউ কেউ উড়তে পারে। কেউ আবার মাটির তলায় মাটি দিয়েই গড়ে তোলে বিশাল প্রাসাদ। এর মধ্যেই একটা পিঁপড়ে আছে যার নাম "বুলেট অ্যান্ট"। এদের আমাজন এর গভীর জঙ্গলে পাওয়া যায়। তাদের কামড় নাকি একটা গুলি খাওয়ার সমান ব্যাথা দেয়। কি ভয়ানক ! ফায়ার অ্যান্ট আরো একধরনের পিঁপড়ে যারা নাকি বছরে প্রায় তিন বিলিয়ন পাউন্ড বা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করে ! মাদাগাস্কার এর একটি পিঁপড়ে প্রজাতি যাদের vampire ant বা রক্তচোষা পিঁপড়ে বলা হয় তারা নিজেদের বাচ্চাদের লার্ভায় ছিদ্র করে সেখান থেকে রক্ত খেয়ে নেয় এমনও শোনা গেছে। তোমরা জানো পতঙ্গদের মধ্যে সবচেয়ে বেশীদিন বাঁচে পিঁপড়ে। এমনকি একটি বিশেষ প্রজাতির রানী পিঁপড়ে প্রায় ৩০ বছর বাঁচে। যেখানে একটা কুকুরের স্বাভাবিক জীবনকাল ১২-১৩ বছর । তোমরা হয়ত অনেকেই জানো যে পিঁপড়ে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জীবের মধ্যে অন্যতম। এরা নিজের ওজনের চেয়ে কুড়ি (কিছু তথ্য অনুযায়ী পঞ্চাশ) গুন বেশী ওজনের জিনিসও বহন করতে পারে। মানে ধরো তোমার ওজন ৩০ কেজি আর তোমায় ৩০ x ২০ = ৬০০ কেজির একটা পাথর তুলতে দেওয়া হয়েছে। ভাবাও দুষ্কর তাই না ! তবে বলে রাখা ভালো যে মানুষ এর তোলা সবচেয়ে বেশী ওজনের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হলো ৫০১ কেজি। জানলে অবাক হবে সারা পৃথিবীর সব জায়গায় পিঁপড়ে আছে শুধুমাত্র অ্যান্টার্কটিকা বাদে। পিঁপড়েদেরও বোধ হয় ঠান্ডা পছন্দ নয়। আর্জেন্টিনায় একটি পিঁপড়ের বাসা পাওয়া গেছিলো যেটা প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত ছিল। কি দারুন না ! ওই বাসায় যে রানী পিঁপড়ে থাকত সেই মনে হয় পিঁপড়ে সমাজের ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রানী। তোমাদের কি মনে হয় ? ক্রীতদাস প্রথার কথা নিশ্চয়ই পড়েছ ইতিহাস বইতে। হ্যাঁ পিঁপড়ে সমাজেও এই প্রথা রয়েছে। এক কলোনির পিঁপড়ে সেনা অন্য কলোনির পিঁপড়েদের ধরে নিয়ে আসে নিজেদের কলোনির শ্রমিক বানানোর জন্য। বিজ্ঞানীদের মতে পিঁপড়েরা ডাইনাসর এর সময় থেকে পৃথিবীতে আছে। অন্যান্য প্রাণীদের মতোই পিঁপড়েও কিন্তু অকারণে তোমায় কামড়াবে না । যদি তারা নিজেদের বিপদের আঁচ পায় তাহলেই তারা কামড়ায়। তোমরা জানো একটা পিঁপড়ের গতিপথকে অনুসরন করে বাকি পিঁপড়েরা খাবার খুঁজে নেয়। তাই তুমি খাবারের কাছাকাছি কখনোই একটা শুধুমাত্র একটা পিঁপড়ে পাবে না - দল নিয়ে হাজির হয় সেখানে।
 পিঁপড়ে নিয়ে এত নতুন তথ্য আমারও জানা ছিল না। আমিও জানলাম তাই তোমাদেরও জানিয়ে দিলাম। এবারে তোমরা তোমাদের বন্ধুদের জানাও। আজ তাহলে এখানে কলম ছাড়লাম। আবার দেখা হবে নতুন কোনো বিষয়ে এরম মজাদার তথ্য নিয়ে। 
ওই দেখো রান্নাঘরের মিষ্টির বাটিটায় পিঁপড়ে ভরে গেছে...


ভাষা

সমাদৃতা রায় 
দশম শ্রেণীউত্তর পাড়া গার্লস হাই স্কুলহুগলি

আমি বাঙালি , বাংলা আমার মা।।
বাংলা আমার মাতৃদুগ্ধ
শৈশবে মায়ের মুখে শুনে শুনে শিখে নিই যা।।

ভোরের আলো ফোটার মত শুদ্ধ হবে সবার মন।।
এবার ভাষা আন্দোলনের পথে নামবে দেশের লক্ষ জন।। 
 বাংলার মাটি বাংলার জল
পূর্ণ হোক সবাই বল।।

বাংলা আমার মনের সুখ।
বাংলা ভোলায় মনের যত দুঃখ
স্বেছায়  বলতে পারি
বাংলা আমার ভালোবাসার নারী।।


ধারাবাহিক ভ্রমণ
হিমবাহের ঘাড়ের উপর
পর্ব ৪
মলয় সরকার


এই মাতানুষ্কা প্রায় ৪৬ কি মি লম্বা আর চওড়াও কম নয়, প্রায় সাড়ে ছয় কি মির মত।এই বরফের স্তুপ কিন্তু মাটি থেকে কম উঁচুও নয়, কোন কোন জায়গায় ৩০০ মিটারের কাছাকাছি। এটার অবস্থান সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৩২০০ ফুট উপরে।যাই হোক, ভাবো, এত বড় একটা বরফের নদী যদি এগোতে থাকে, তার ওজন আর ক্ষমতা কতখানি!
এটা তিনটি পর্বতমালার মধ্যে দিয়ে আসছে, ১) আলাস্কা পর্বতমালা, ২)তালকিতনা পর্বত, ৩) সুগাছ পর্বত

সামনে গিয়ে মাতানুষ্কার চেহারা দেখে তো আমি থ'। বিশাল বরফের নদী এঁকেবেঁকে এগিয়ে এসেছে।দূরে তাকিয়ে দেখি, অনেক দূরে দুই পাহাড়ের খাঁজ থেকে বেরিয়ে এসেছে এই বরফের ধারা।চকচক করছে রোদের আলো পড়ে, এই সাদা বরফের উপর। তবে একটা কথা বলি। সত্যি সত্যিই কিন্তু এই বরফের রাজ্যে অত ঠাণ্ডা নয়, যতটা ভাবছিলাম, বা এত বরফ শুনে, মনে হচ্ছিল।এখানে তাপমাত্রা আমাদের কোলকাতায় খুব বেশি শীত পড়লে যতটা হয়, অনেকটা সে রকমই। অর্থাৎ ৭-৮ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। আমরা তো দেখে প্রচণ্ড উত্তেজিত।চোখের সামনে জলজ্যান্ত একটা এত বড় গ্লেসিয়ার পড়ে রয়েছে গা এলিয়ে। তাকিয়ে দেখি, অনেক লোকই ওর মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। 

আমরাও এগোলাম, সাবধানে পা ফেলে ফেলে। অসাবধান হলে বরফে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বরফ প্রায় কোথাও মসৃণ নয়।আর স্তুপটাও সাধারণ নয়।উঁচু নীচু, গর্ত, ঢিপির মত, খাড়াই এইরকম। হাঁটতে হয় সাবধানে।আমরা সাবধানে বরফের উপর পা ফেলতে ফেলতে এগিয়ে গেলাম অনেক খানি।এর মুখের দিকটা মাটি থেকে ঢালু হয়ে উপরে উঠেছে।সেখান দিয়েই উপরে উঠে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরেই পৌঁছে গেলাম। ভাবলেই কেমন যেন শিহরণ লাগছিল, যে আমরা এখন গ্লেসিয়ারের মাথায়।

আর জান তো, আমেরিকার মধ্যে এটাই সব থেকে বড় গ্লেসিয়ার,যেটা মোটরে করে যাওয়া যায়।

হঠাৎ খেয়াল করে দেখি, সাদা বরফের মাঝে ফাঁকে ফাঁকে অনেক জায়গাতেই কেমন যেন নীল আলোর মত লাগছে। মনে হচ্ছে জায়গাটা নীল কোন আলোয় আলোকিত।এরকম শুধু এক জায়গা নয়, অনেক জায়গাতেই রয়েছে লক্ষ্য করলাম। বরফের সাদা রঙের মধ্যে নীল আলো কোথা থেকে এল? 
ছেলের কাছে জেনে নিলাম, একেই বলে "নীল বরফ" বা "ব্লু আইস"।
(ক্রমশ)


স্মরণীয়
(সুকান্ত ভট্টাচার্য)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার


কলকাতার কালীঘাটের ৪৩ নং মহিম হালদার স্ট্রীটের মামাবাড়িতে ১৯২৬ সালের ১৫ই আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। তাঁর পিতা ছিলেন নিবারণ ভট্টাচার্য ও মাতা ছিলেন সুনীতি দেবী। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া থানার ঊনশিয়া গ্রামে। বেলেঘাটার কমলা বিদ্যামন্দির নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেননি। এই সময়েই তিনি বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের মূল স্রোতের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ও শিক্ষাজীবন থেকে দূরে সরে যান। 

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ফ্যাসিস্ট আগ্রাসন, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কলম তুলে নেন তিনি। ১৯৪৪ এ 'আকাল' নামক একটি সংকলন গ্রন্থ সম্পাদনা করেন তিনি। ১৯৪৪সালেই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ পান। স্বাধীনতা ও সাম্যবাদের পক্ষে কলম ধরেছিলেন তিনি। তিনি শুধু কবিতা লিখেননি, লিখেছেন গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ। 
    মাত্র আট-নয় বছর বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন তিনি। স্কুলের পত্রিকা 'সঞ্চয়' এ একটি হাসির গল্প লিখেছিলেন তিনি। 'শিখা' নামক পত্রিকায় লিখেছিলেন বিবেকানন্দের জীবনী‌। এগারো বছর বয়সেই রচনা করেছিলেন একটি গীতিনাট্য, 'রাখাল ছেলে'। বাল্যবন্ধু কবি অরুনাচল বসুর সঙ্গে মিলে একটি হাতে লেখা পত্রিকা 'সপ্তমিকা' সম্পাদনা করতেন তিনি। কবি সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক 'স্বাধীনতা'র 'কিশোর সভা' সম্পাদনা করতেন। মার্কসবাদী চেতনায় বিশ্বাসী কবি তাঁর কবিতায় লিখেছেন অসহায়, নিপীড়িত, বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও কষ্টের কথা। মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি ডাক দিয়েছেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ও আনতে চেয়েছেন সাম্য। বাংলা কবিতার ধারাকে বদলে দিয়েছেন নিজস্ব দক্ষতায়। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল 'ছাড়পত্র'(১৯৪৭), 'পূর্বাভাষ'(১৯৫০), 'মিঠেকড়া'(১৯৫১), 'অভিযান'(১৯৫৩), 'ঘুম নেই'(১৯৫৪), 'হরতাল'(১৯৬২), 'গীতিগুচ্ছ'(১৯৬৫) ইত্যাদি। 

    সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্য পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে ম্যালেরিয়া ও পরে দূরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হন। ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

শুভায়ু মন্ডল, তৃতীয় শ্রেণী, কন্টাই পাবলিক স্কুল


পাঠ প্রতিক্রিয়া
(ছোটোবেলা - ৯৫ পড়ে দোলনচাঁপা তেওয়ারী যা লিখলেন) 

অনেকবারের মতো এবারও জ্বলদর্চি ছোটবেলা বিশেষ সংখ্যা ৯৫, পড়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে বসলাম।
প্রথমেই খুব সুন্দর একটা সম্পাদকীয় পড়ে চোখ গেল তৃষ্ণা বসাকের লেখা ধারাবাহিক "জয়াবতীর জয়যাত্রা"র সপ্তবিংশতি পবে  দেখলাম সেই সময়ের নারীরা মানসিকতায় কত এগিয়েছিলেন। সংসারের বাঁধা থাকলেও লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েছেন এবং চিকিৎসাও শিখেছেন।

তারপরের চোখ গেল ছোট মেয়ে প্রীতিলতা ঠাকুরের আঁকা একটি সুন্দর মান্ডালা আর্টের দিকে।
মুক্তি দাসের লেখা "কান্না" গল্পটিতে দেখলাম,ছোট সরল টুকাইয়ের  ছাগলটিকে নিয়ে কত প্রশ্ন এবং অন্য বাচ্চাদের মতই তারও স্কুল ভীতি আছে।
 
শতদ্রু মজুমদারের লেখা "খায় খায়" কবিতাটিতে বেশ হাস্যরসের পরিচয় পেলাম, এবং সুকুমার রায়ের লেখাগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।
এরপরেই দেখি একেবারে ছোট্ট মেয়ে অনুশ্রুতি মন্ডলের আঁকা এক সুন্দর প্রকৃতির ছবি, বাচ্চাদের দৃষ্টিতে প্রকৃতি কত সুন্দরী না হয়ে ওঠে।

নবম শ্রেণীর ছাত্রী প্রণিধির লেখা "চেনা অচেনা" গল্পটি তে রিণিতা ও আকাশের বন্ধুত্বের কথা জানতে পারলাম। বেশ পরিণত লেখা।
 
প্রত্যেক বারের মতই এবারেও মলয় সরকারের ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী "হিমবাহের ঘাড়ের উপর" পড়ে মনে হয় আমরাও যেন লেখকের সঙ্গে মাতানুষ্কা হিমাবাহে পৌঁছে গেছি। হিমবাহের কি সুন্দর বিশ্লেষণ দিয়েছেন লেখক।
এবারের স্মরণীয় কলম পিযুষ প্রতিহারের লেখা "গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য" সম্পর্কে। তিনি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন।কীট- পতঙ্গ নিয়ে অনেক গ্রন্থ লিখেছেন। বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বিজ্ঞানী গোপাল ভট্টাচার্য সম্পর্কে আরও অনেক নতুন তথ্য জানতে পারলাম এই লেখা থেকে।

শেষে সম্পাদক মহাশয় মৌসুমী ঘোষ দি কে ধন্যবাদ জানাই এই পত্রিকাকে ১০০ পর্বের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য। অক্লান্ত নিরসল পরিশ্রম ছাড়া এটা কখনোই সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments