জ্বলদর্চি

স্রোতস্বিনী চট্টোপাধ্যায়


স্রো ত স্বি নী  চ ট্টো পা ধ্যা য় 


মলহার

প্রথম ভোরের আলোয় 
চলে যাওয়ার সময় 
দরজার কোণে রাখা চটি ভুলে যায় তার আদিম নিবাস 

রঙিন পর্দা কেঁপে ওঠে সামান্য 
যেন দীর্ঘ বছর পরাজয়ের পর 
এই স্পন্দনটুকুই তার একমাত্র জয় 

বাইরে বেসামাল হাওয়া

দু একটি পাখি কেবল বুঝতে পারে  
কোথায় দূরে মেঘ করেছে খুব 

কুহক

এই আচমকা বৃষ্টি 
কতকটা শিকারির মতো 
নিবিষ্ট মনে যেন তাক করছে 
চঞ্চল জন্তুকে 

বাইরে এলোমেলো হাওয়া 

সহসা এই হেমন্তের রাতে 
মনে হয়, 
কোথায় যেন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আছে 

দূরে কোনও ঘরে এই মধ্যরাতেও 
চরাচরের নিস্তব্ধতা ছিন্নভিন্ন করে 
বেজে উঠছে ঘরোয়া শাঁখের হাওয়াটান 


ফাঁদ 

ভাঙ্গা চাঁদের আলো মেঝের ওপর এসে পড়ছে  
শিশুর মুঠোর মতো কারুকাজ 
ছেয়ে যাচ্ছে ঘরে অন্দরে 

যে ফুল ঝরে গেছে সকালে 
তার জন্য দুঃখ হয় 

এই একমাত্র সময় 
হতভাগ্য স্বেচ্ছায় ধরা পড়বে বলে 
চলে আসে খুব কাছে  

যেন কোনও অনন্ত ফাঁদ পাতা আছে  


সুখ 

নিঝুম সন্ধে ঘনিয়েছে যখন 
ঘোরতর বাতাস পাক খেয়ে চলে গেছে দ্রুত  

পারাপার বিহীন এক মাঠের মাঝে দাঁড়ালে দেখা যায় 
দূর কোন এক ঘরে নিভু নিভু আলো জ্বলছে

গৃহিণী ব্যস্ত সাধের ঘর গোছাতে  
দরজা হাট করে খোলা 
কেউ তো নিশ্চই আসবে...  
         
পিঁড়ি পাতা , 
নতুন আসন দেয়ালে হেলানো 

সুখী গৃহকোণ ভাবে, 
দিন ফুরোলে ফেরার কথা ছিল
পায়ে নূপুর বেজে ওঠে তখন,  

ধুলো উড়ে আসে ঘরে,  

সন্ধেতারাটির ছায়ায় দেখা হয় 
পুকুরের দীর্ঘ টানা জলে... 

একা 

দুপুর হয়ে এলো। 
 
লতানো ছায়ার ওপর কয়েকটি পাতা ঝরে পড়ে 
যেন অবসন্ন গাছ ফেলে দিচ্ছে 
তার অতিরিক্ত বিষয়-আশয় 

একা পথিক হেঁটে গেলে এই কালো ছায়াটিই  
একমাত্র সম্বল 
এখন শ্রাবণের বাতাস মুখর হয়ে ওঠে
পথিকের প্রচ্ছন্ন ক্লান্তিটুকু থেকে যায় পাতার ওপর 

ছায়া সরে যায়
গোধূলিবেলায় দু চারটে পাখি ঘরে ফেরার সময় 
লুটে নিয়ে যায় তার অবশিষ্ট অংশ 

গাছটি শুধু ভারহীন দাঁড়িয়ে 
একা

------

Post a Comment

3 Comments

  1. পড়লাম খুব ভালো। কবিতা গুলোর মধ্যে ফাঁদ এবং সুখ নজর কাড়লো।ভালো থাকুন।

    ReplyDelete
  2. অপূর্ব ৫টি কবিতা পড়লাম। কবিকে অভিনন্দন জানাই। "জলদর্চি" র এই উদ্যোগকেও অভিনন্দিত করি।

    ReplyDelete