আ শি স মি শ্র
আজ কাল পরশু তুমি
কেউ কেউ কবিতা পড়ে, অধিকাংশে পড়ে না।
কেউ কেউ কবিতা শোনে, অধিকাংশে শোনে অপদার্থ কিছু পলাপ।
মধ্যরাত বদল হতে হতে কামুক মুখের মতো;
অস্থির কিছু আঙুলে সবুজ বিন্দু খেলা করে।
পড়ে না,পড়েই না,দেখে যায় মুখের অসুখ।
বই কাঁদে একা একা। পান্ডুলিপি কুরে খায় পোকা- মাকড়।
ধূর্ত ব্যবসায়ী কেজি দরে বিক্রি করে দেয়
লিটল ম্যাগাজিন --
বিক্রির টাকা পায় না সম্পাদকরা;
তার মধ্যে কোনো চতুর তেল মেরে পেয়ে যায় পুরস্কার।
তারপর বড়ো করুণ পরিনতি অপেক্ষা করে
সেই সব মহাকবি ও সম্পাদকের জন্য।
এতো গণসংর্বধনার ঢেউ, এতো মঞ্চ পাওয়ার বাসনা
তবু ভালো, এতো কবি, এতো ছবি --
তার মধ্যে একটু মুক্ত বাতাস ওঠে
কখনো পুবে, পশ্চিমে, উত্তুরে বা দখিনা।
যাকে তুমি মঞ্চ দিলে, কাল থেকে সে পরিযায়ী পাখি।
যাকে তুমি কবিতা চেনালে
কাল থেকে সে কবির কবি।
আজ আর তোমার সামনে কেউ নেই, পড়ে আছে
শত শত শূন্য আসন;
কাকে আর কী শোনাবে।
কেউ কেউ তবু শুনতে চায়। আজ তুমি তাদের কাছে বলো।
তারা কেউ মানুষ নয়। তারা এই হাওয়ার ধূলিকণা।
অদৃশ্য কোনো শ্রোতা, বসে থাকে তোমার কাছে
আজীবন বসে থাকে তোমার কাছে ;
আজ তুমি, কাল তুমি, পরশু তুমি
একটি একটি করে কবিতা শোনাচ্ছো--
আর মহাকাশ থেকে তোমার মাথায়
ঝরে পড়ছে অক্ষর -বৃষ্টি ;
তুমি সোজা হয়ে ব্যাগ কাঁধে হেঁটে যাচ্ছো
ভুবনডাঙা থেকে হাঁসুলিবাঁকের দিকে।
কবিতা
ঘরের নারী জানে আমি আজ উত্তরে চলেছি
উত্তর জানে আমি আজ যাবো দক্ষিণে;
তবে ওরাও জানবে না সব--
আমি পুবের কাছে গেলে পশ্চিমও জানবে না,
পশ্চিমের কাছে গেলে পুবও জানবে না।
আমি কখন কোথায় কার কাছে যাবো আর যাবো না,
তা কি কাউকে বলা যায়?
শুধু একজনই জানে
আমি কখন কোথায় যাই--
তার নাম কবিতা।
সেতু ও মায়া
একটি সেতুর দু'দিকেই থাকে
একটি বিছানা ও রান্নাঘর।
সেই সেতুটি মাঝে মাঝে
টলিয়ে দেয় ওই দু'জনকেই।
তখন বিশ্বাস, অবিশ্বাস
ঝগড়া বা অভিমান নিয়ে
টলমল করে সেতু
কিন্তু ভেঙে যায় না অতো সহজে।
সেতু ভেঙে গেলেই
বিছানা ও রান্নাঘর দু'দিকেই চলে যায়
তখন ঘর একা একা কাঁদে
ঘরের দরজা জানলা কাঁদে
ঘরের আলো ও অন্ধকার কাঁদে।
সমগ্র জীবনের আয়ু
কখনো কান্না হতে পারে না
সমগ্র কান্না নিয়ে কখনো কেউ
সেতু পেরোতে পারি না
মায়া ধরে রাখে শরীরদের।
এতো মায়া কাটিয়ে কোথাও যাওয়ার ছিলো না
মায়া নিয়ে বেঁচে থাকা অনন্ত সময়।
সাঁকো
তুমিও তোমার মতো থাকো
আমি তো বিপন্ন লোক
তুমিও তোমার মতো ডাকো
দু'দিকে ছড়িয়েছে শোক।
আলাদা আলাদা সব দাগ
দাগের চারপাশে নদী
আলাপ আলাদা সব ভাগ
যোগের কাছে থাকে যদি।
সে-সব স্মৃতির কালো দিন
দিনের আড়ালেই আছি
ব্যথার অশ্রু চিরদিন
দ'জনে ভাগ করে বাঁচি।
বাঁচার প্রেরণা কাকে বলো
গোপন যন্ত্রণা আঁকো
আমি তো সেখানে এলোমেলো
ছিন্ন স্বপ্নের সাঁকো।
অরণ্যলিপি ৩৭
দেহ নেই তাঁর ;ঝুমুর -জীবন আছে
বাড়ির উঠোনে। চারপাশে মহুয়ার
বন; শাল,জাম,সোনাঝুরি --গাছে গাছে
ফুটে আছে যেন অজশ্র ঝুমুর! আর
তীব্র যন্ত্রণার তাঁর হাত কেঁপে কেঁপে
লিখে চলে অরণ্যের কান্না ; আদিবাসী
জীবনের গান। আজ বৃষ্টি এলো ঝেঁপে।
দু'চোখে তখন অশ্রুর প্রবাহ ; বাসি
হয়ে থাকা ভাত --কবি খেয়ে নেয় এক
মুঠো, চার মুঠো। কতদিন এইভাবে
চলে গেছে --কেউ খোঁজ করে; কেউ মুখ
খোলে; তুমি চলে গেলে বিষাদে - নীরবে।
তবু থেকে যায় সেই কবি ; ফাঁকা বাড়ি
ঘিরে থাকে অরণ্য-মহল, যে সঞ্চারী
ভালোবেসেছিল, তার চোখ ভিজে থাকে;
সেও শুধু খুঁজে যায় জীর্ণ কবিতাকে।
--------
0 Comments