জ্বলদর্চি

সৌম্যদীপ চক্রবর্ত্তী || পর্ব - ৪


ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা
পর্ব- ৪  

সৌ ম্য দী প  চ ক্র ব র্ত্তী

 

ক্যারোলাইন পিরিয়ড এবং দি এইজ অফ রেস্টোরেসন:

রানী প্রথম এলিজাবেথের শাসনকালে ইংল্যান্ড খ্যাতির শীর্ষে ওঠে, সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রচিত হয় স্বর্ণ যুগI জ্যাকোবিয়ান পিরিয়ডের সাহিত্যে সেই প্রভাব পরিব্যাপ্ত হয়I ঠিক এর পরে, ১৬২৫ সালে প্রথম চার্লস আসীন হন ইংল্যান্ডের সিংহাসনে যা সূচনা করে ক্যারোলাইন পিরিয়ডেরI এসময়ে ইংল্যান্ড এক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায়I গোঁড়া পিউরিট্যানদের উত্থান রাজার সাথে প্রত্যক্ষ সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরী করেI প্রথম চার্লস ও তাঁর পার্লামেন্টের  প্রয়োগ করা নিয়ম-নীতি ও করের বিরোধিতা করে পিউরিট্যানপন্থী 'রাউন্ডহেড'-রা সরাসরি রাজতন্ত্রের বিলোপসাধনের পথে হাঁটেI কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষদের মনে সাধারণতন্ত্রের আশা জাগিয়ে এই বিরোধিতার আঁচ আরো বাড়িয়ে তোলেন অলিভার ক্রমওয়েলI সমাজ ক্রমশ বিভাজিত হয়ে ওঠে প্রথম চার্লসের অনুগামী তথা 'রয়ালিস্ট' ও রাজতন্ত্রবিরোধী 'রাউন্ডহেড' দের মধ্যেI এই দোলাচলের প্রভাব পড়ে শিল্প-সাহিত্য জগতেI প্রতিবাদের অন্যতম সর্বোত্তম মাধ্যম নাটকের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে এবং ১৬৪২ সালে আইন জারি করে সমস্ত সাধারণ রঙ্গালয়ের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়I রাজনৈতিক বিরোধিতা চরমে ওঠে গৃহযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যা ঘটিয়ে যায় এক অভূতপূর্ব ঘটনাI ১৬৪৯ সালে রাজা প্রথম চার্লসের শিরোচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে রাজতন্ত্রের সাময়িক অবসান ঘটেI 'প্রটেক্টরেট' গঠন করে ইংল্যান্ডের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন অলিভার ক্রমওয়েলI এই সময়কাল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এক কালো যুগI ক্রোমওয়েলের মৃত্যুর পরে ১৬৬০ সালে ফ্রান্স থেকে এসে রাজা দ্বিতীয় চার্লসের ইংল্যান্ডের দায়িত্বভার নেওয়ার মধ্যে দিয়ে সূচিত হয় রেস্টোরেসান পিরিয়ড, পুণঃপ্রতিষ্ঠিত হয় রাজতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা, অবাধ সাহিত্য রচনা ও তার লালনI আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রেস্টোরেসান পিরিয়ডে ঘটা সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ১৬৬৬ সালে লন্ডন শহরের বড় অংশের আগুনে ভস্মীভূত হওয়া বা 'গ্রেট ফায়ার অফ লন্ডন'  এবং ১৬৮৮ সালের বিনা রক্তক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে ঘটে যাওয়া 'গ্লোরিয়াস রেভোলিউশন'I      

সাহিত্য ক্ষেত্রে ক্যারোলাইন পিরিয়ডে আমরা একদল কবিদের পাই যাঁরা ছিলেন রাজা প্রথম চার্লসের পৃষ্ঠপোষক এবং একপক্ষে তাঁর রাজসভার সভাসদ; এঁরা 'ক্যাভেলিয়ার পোয়েটস' বলে খ্যাতI রবার্ট হের্রিক, জন সাকলিং, রিচার্ড লাভলেইস এঁদের মধ্যে অন্যতমI তবে সাহিত্য ক্ষেত্রে এযুগের সবচেয়ে বড় নাম হলেন মহাকবি জন মিল্টনI তাঁর  সাহিত্য জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে  'লিসিডাস' এর মতো বিলাপধর্মী ও প্রকৃতিকেন্দ্রিক দীর্ঘ কবিতা লিখলেও এক ছোট সমালোচনামূলক গদ্য 'এরেওপ্যাজেটিকা' লেখার মধ্যে দিয়ে তিনি রাজার বিরাগভাজন হন যার ফল তাঁকে প্রায় সারা জীবন ধরে ভুগতে হয়েছেI তবে মহাকবি মিল্টন খ্যাতির উচ্চে আসীন হন তাঁর সাহিত্য জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে, রেস্টোরেসান পিরিয়ডে লেখা মহাকাব্য 'প্যারাডাইস লস্ট' এর মধ্যে দিয়েI খ্রীষ্টীয় পুরানকে ভিত্তি করে লেখা 'প্যারাডাইস লস্ট' মানবসৃষ্টির ইতিহাসের অন্তরালে বিপ্লবের কথা বলে যায়I সৃজনশীল ও সমালোচনামূলক গদ্যের ক্ষেত্রে এই যুগ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্যI রবার্ট বার্টন -এর 'দি অ্যানাটমি অফ মেলানকোলি', টমাস হবস এর 'লেভিয়েথান' ও স্যার টমাস ব্রাউন এর 'রেলিজিও মেদিচি' সে কথাই বলে যায়I                              

রেস্টোরেসন পরবর্তী সময়ে সাহিত্য চর্চার জগতে এক জোয়ার আনে বীর-আখ্যানমূলক ইতিহাসাশ্রিত 'হিরোইক' আঙ্গিকের এবং সামাজিক রীতি,জটিল সম্পর্কের রসায়নে ও নাট্যবিন্যাসে বিরচিত 'কমেডি অফ ম্যানার্স' আঙ্গিকের নাটকসমূহI সাহিত্য জগতে রেস্টোরেসন পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে বড় নাম জন ড্রাইডেনI বেশ কিছু রূপক ধর্মী দীর্ঘ কবিতা, রাজনৈতিক বিদ্রুপাত্মক কবিতা (যেমন 'দি হাইন্ড এন্ড দি প্যান্থার', 'অবসালোম এন্ড অ্যাকিটোফেল', 'ম্যাক ফ্লেকনো') লিখলেও ড্রাইডেন নাট্যকার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন শেকসপিয়রের 'অ্যান্টোনি এন্ড ক্লিওপেট্রা' নাটকের অনুসরণে লেখা 'হিরোইক' নাটক 'অল ফর লাভ'-এর জন্যI তবে সৃজনশীল নাটক, গদ্য ও কবিতার বাইরেও সমালোচক হিসেবে তাঁর অনন্যতার পরিচয় পাওয়া যায় 'অ্যান এসে অন ড্রামাটিক পোয়েসি'-তেI পূর্ণাঙ্গ, গঠনমূলক সমালোচনার জন্য তিনি "ফাদার অফ ইংলিশ ক্রিটিসিজম" বা "ইংরেজি সমালোচনামূলক সাহিত্যের পিতৃপুরুষ" হিসেবেও ভূষিত হয়েছেন।

এসময়ের অন্যান্য বিশিষ্ট নাট্যকারদের মধ্যে অন্যতম হলেন জর্জ এথারেজ, উইলিয়াম উইচার্লে এবং উইলিয়াম কংগ্রেভI এসময়েই প্রথম পেশাগত মহিলা নাট্যকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন আফরা বেন যাঁর 'অরুনোকো' কৃতিত্বের দাবি রাখেI নাট্যকারদের পাশাপাশি বিদ্রুপাত্মক কবিতা 'হুডিব্রাস' এবং রূপকধর্মী দীর্ঘ-গদ্য 'দি পিলগ্রিম'স প্রগ্রেস'-এর জন্য যথাক্রমে স্যামুয়েল বাটলার এবং জন বানিয়ান-এর নাম চিরস্মরণীয়I এযুগেই বিশ্ববন্দিত চিন্তাবিদ জন লক চিন্তার জগতে নতুন দিশা দেখিয়ে লেখেন 'অ্যান এসে কন্সার্নিং হিউম্যান আন্ডারস্ট্যান্ডিং' এবং 'সাম থটস কন্সার্নিং এডুকেশন'-এর মতো প্রবন্ধI এসময়ে লেখা জন ইভলিন এবং স্যামুয়েল পেপিস-এর ডায়েরিগুলি এসময়ের দলিল রূপে পরবর্তীকালে সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছেI 
সামান্য কিছু কথায় এই যুগের সমাজ ও সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি ও রূপরেখা তুলে ধরার ক্ষুদ্র চেষ্টা রইলো এই পর্বে।(চলবে)  

-----

Post a Comment

2 Comments

  1. পড়লাম
    ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগলো... অপেক্ষায় থাকলাম

    ReplyDelete