প্র ভা ত মি শ্র
শত্রুর বাড়ি
আমাদের শত্রুর বাড়ি গেছিলাম কাল ।
আমাদের জন্য সে বানাচ্ছে স্বপ্ন-তুবড়ি ।
তার দু-হাত বারুদমাখা, বারুদের গন্ধে তার ছেলেমেয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছে , তার বৌ কলতলায় যেতে যেতে
আছড়ে পড়েছে, আমি তার ফাটা মাথা থেকে
রক্ত ঝরতে দেখে চমকে উঠলাম , আর তখনই
মনে পড়ল-- শত্রু, শত্রুর বাড়িতে রক্ত থাকবে --
এ আর এমন কি !
তারপর আমাদের শত্রুর সাথে কথা হ'ল ।
আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সে তৈরি করছে পরিকল্পনা :
আমাদের ভালোর জন্য
লোক লাগিয়ে তৈরি করাচ্ছে সে নরম চেয়ার।
তাক লাগিয়ে দেবার মতো একটা ঝকঝকে মুকুট
তার পায়ের তলায় মাথা হেঁট করে হাসছিল।
আমাদের শত্রুর বাড়ি গেছিলাম কাল ।
ফুলের বাগানে ফুল , শেলফে ব ই , দাঁতের গোড়ায় হাসি--
সব দেখেছি , শুধু হাত দুটো দেখতে ভুলে গেছি ।
শশবিন্দুবাবুর হাসি-হাসিমুখ
আমার এই দিনযাপনের অলক্ষ্যে ডেকে ওঠে কাক --
অশুভ মানি না ।
আমি হামাগুড়ি দিতে দিতে দাঁড়াবার গান গাই--
কাক কোন সঙ্গীত বোঝে না, ডেকে ওঠে , আর
হেসে ওঠেন এল-আই-সি অফিসের শশবিন্দুবাবু --
শশব্যস্ত তিনি পথে চলেছেন ।
কাকের চেয়েও তিনি বিরক্ত করেন বেশি। আমি
বুঝতে পারি না তাঁর ব্যবহার, তিনি
হামাগুড়ি , না দাঁড়াবার গান--
কিসের জন্য এমন হাসেন !
দাঁড়াতে পারলে একদিন শশবিন্দুবাবুর
কলার চেপে ধরবো, হিড়হিড় টেনে নিয়ে যাব সোজা
কাঁসায়ের চরে ।
দাঁড়াতে পারলে একদিন কাক ভরে দিয়ে আসব
শশবিন্দুবাবুর বাড়ির খাঁচায় ।
দাঁড়াতে পারলে জোরে চিৎকার করে গান গেয়ে উঠব
তাঁর দাঁতের সামনে ।
যেদিকে তাকাই অগ্নিগর্ভ হাওয়া, অশুভ মানি না
যেদিকে তাকাই হাত তোলা হতাশা, অশুভ মানি না
যেদিকে তাকাই নদীভর্তি চোখ , অশুভ মানি না
যেদিকে তাকাই গলা টিপে ধরার সাঁড়াশি , অশুভ মানি না
যেদিকে তাকাই শশবিন্দুবাবুর হাসি-হাসিমুখ!
গাজনের দিনে আজানের ধ্বনি শুনে মুখ লুকোই মাটিতে;
মাটি ভেজে চক্ষুজলে , কপালবাহিত ঘামে--
হামাগুড়ি বিলম্বিত হয় , গান থামে ।
দাঁড়াব কোথায় ?
একদিন সাত- ই ডিসেম্বর উনিশশো বিরানব্বই , সময় সকাল --
মুখ তুলতেই দেখি শশবিন্দুবাবু
আরো বেশি হাসি-হাসিমুখ
আরো বেশি হাসতে হাসতে আমাকে বললেন:
এয়্ ল্যাংড়া, পালা - পালা , পালা --- পুলিশ আসছে !
জলজননী
আমার হাত ধরো তুমি , হাতে আমার ভয়
এপার ওপার করতে গিয়ে জেগেছে সংশয়
পায়ের তলায় মাতাল নদী কী কথা যে কয়
মাথার ওপর পাতলা আকাশ , বৃষ্টি হয় হয় !
সেদিন একটা ঝড়ের দিনে বেরিয়েছিলাম আমি
আমার পিতা বলেছিলেন যাস্ নে যেন থামি
দিলেম তোর বুকপকেটে জীবন্ত পাগলামি
কোথাও খুব গভীর পেলে যাস্ নে যেন নামি!
আবার একটা ঝড়ের দিনে যখন আমি একা
যখন দেখি চতুর্দিকে খৈ উড়ছে... ফাঁকা
যখন দেখি দুই তীরেই শ্মশানে শব ঢাকা
শব্দ ক'রে চেঁচিয়েছিলাম , তোমার পেলাম দেখা!
ছায়ার মতো ভেবে কিছু মাড়িয়ে যাব চ'লে
হ'ল না তা, দৌড়ে এলাম তোমার উপকূলে
অসাড় হ'লাম যেন কী এক মারণকৌশলে
হাঁপ উঠল, ধরব কিছু কেমন এ- আঙুলে !
চেঁচিয়ে কিছু বলতে যাব , তুমি বললে চুপ
চাইলে আমার হাতটি ধরো, আমি তো নিশ্চুপ
ভুলে গেলাম দেহ আমার দেখে তোমার রূপ
ছায়া তো নয় , মায়ায় ঘেরা জলজননী কূপ!
আপাতত শান্তি পাথর
আপাতত শান্তি পাথর , নেভে নি প্রদীপ, প্রাচীরের
গায়ে সমবেত হাওয়া, ফিসফিস কথা বলছে, আমি
ভয় পাচ্ছি ভীষণ , ভয়ের ভিতর লুকিয়ে রেখেছি
আত্মহনন, তবু জিজীবিষা , এগোই সামনে , হাওয়া
প্রাচীর ডিঙিয়ে আসছে , শুনতে পাচ্ছি
হাওয়া ও রাতের কথা ,পালাব কোথায়?যাই
পাথরের দিকে, পাথরের চোখে চিকচিক জল, কাল পূর্ণিমা--
ও পাথর , তুমি কাঁদো , চিৎকার ক'রে কাঁদো দেখি আজ ।
আমার সংগ্রহে
আমার সংগ্রহে কোন বড় জীবনের চাবি নেই।
প্রায়ান্ধকার
সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠি , ছাদ থেকে নামি
কখনো হুমড়ি খাই, পড়ে যাই, থামি
আবার উঠতে থাকি, নামতেও থাকি
একদিন ছাদে আমি দাঁড়িয়েছিলাম --
বড় বড় বাড়ি সব গিলে খাচ্ছে ছোট ছোট ঘর
বড় বড় বক্তৃতা ঢেকে ফেলছে ছোট কান্নাগুলি
বড় বড় মিছিলের সারির ভিতর
লুকিয়ে থাকছে ছোট লোভাতুর মুখ !
আর কোনদিন ছাদে দাঁড়িয়ে থাকিনি
সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠি, ছাদ থেকে নামি
------
1 Comments
পড়লাম
ReplyDeleteভালো লাগলো