জ্বলদর্চি

সৌম্যদীপ চক্রবর্ত্তী / পর্ব - ১


সৌ ম্য দী প  চ ক্র ব র্ত্তী

ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা

পর্ব- ১


নানা সময়ে নানা লেখক, সমালোচক, ইতিহাসবিদেরা ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসকে বিবিধ রূপে দেখেছেন, বিবিধ পর্বে ভাগ করেছেনI তাই এ বিষয়ে বহু মতান্তর রয়েছে, মতান্তর রয়েছে পর্বের নামকরণ ও ব্যাপ্তি নিয়েওI এসকল বিবিধতা ও মতান্তরকে সাথে নিয়েই এগিয়েছে ইংরেজি সাহিত্যের ধারা, গড়ে উঠেছে ইংরেজি সাহিত্যের এক অনন্য ইতিহাসI 'ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা' শীর্ষক ধারাবাহিকে সাধারণ ভাবে গৃহীত পর্ব বিন্যাস-কে অনুসরণ করে অতি-সংক্ষিপ্ত, সীমাবদ্ধ আলোচনার মধ্যে দিয়ে ইংরেজি সাহিত্যের এক নির্মেদ রূপরেখা নির্মাণের চেষ্টা রইলোI      

ওল্ড ইংলিশ পিরিয়ড :

ইংল্যান্ড তার জলবেষ্টিত ভূভাগের আদি নাম 'ব্রিটেন' এর প্রতি আজও অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, এই নাম উচ্চারণ ও ব্যবহারে তাঁরা আজও জাতির মর্যাদা খুঁজে পানI অন্যান্য সভ্যতার মতোই ব্রিটেন এর সভ্যতা প্রাক-আদি পর্বের  'প্রস্তর যুগ', 'ব্রোঞ্জ  যুগ' ও 'লৌহ যুগ' এর মধ্যে দিয়ে এগোয়I ইতিহাসের পাতা উল্টে জানা যায়-- 'ব্রিটেন' এর অধিবাসী 'ব্রিটন'-রা জাতিগত ভাবে ছিলেন 'কেল্ট' বা 'সেল্ট' এবং ধর্মাচরণে 'পেগান' বা 'প্যাগান'I সভ্যতার আদি কাল থেকেই ব্রিটেনে দেখা যায় ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভাব যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সমৃদ্ধির সোপান রচনা করেছেI রোমের উপনিবেশ হিসেবে প্রাথমিক ভাবে বিশ্বের দরবারে আত্মপ্রকাশ করা ব্রিটেনে এই পর্বে ঘটে চলা নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা ৫৯৭ (মতান্তরে ৫৯৬)সালে সন্ত অগাস্টিনের ব্রিটেনে আসা এবং ক্যান্টারবেরীতে খ্রীষ্ট ধর্ম প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের জন্য এক চ্যাপেলের (পরবর্তী কালে যা 'দি চার্চ অফ ক্যান্টারবেরী' নামে বিশ্ববন্দিত হয়েছে)নির্মাণI এই সময় থেকেই ব্রিটেন গৃহযুদ্ধের আঁচও পেয়েছেI উত্তর ভাগের বর্বর পিক্ট দের হাত থেকে মধ্যভাগের আপাত-সভ্য 'ব্রিটন'-রা নিজেদের বাঁচাতে শরণাপন্ন হয় ইংলিশ চ্যানেল ও সংলগ্ন এলাকার জলদস্যু 'অ্যাঙ্গেল', 'স্যাক্সন' এবং 'জুট' দের যা সূচনা করে 'অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন' যুগেরI আবার হেস্টিংস এর যুদ্ধে নরম্যানডি (অধুনা ফ্রান্স)-র ডিউক প্রথম উইলিয়াম এর হাতে অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন রাজা হ্যারল্ড এর পরাজয় তথা ১০৬৬ -র 'নরম্যান কংকোয়েস্ট'-এর মধ্যে দিয়ে সূচিত হয় 'অ্যাঙ্গলো-নরম্যান' যুগI এই সম্পূর্ণ সময়কালে রচিত সাহিত্যকে ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসের প্রথম যুগ তথা 'ওল্ড ইংলিশ পিরিয়ড' বলে অবিহিত করা হয়I
মতান্তর থাকলেও ধরে নেওয়া যায় ৬০০ সালের কিছু আগে বা পরের সময়কাল থেকে ইংরেজি সাহিত্যের যাত্রা শুরুI এই সময় মূলত কাব্য-কবিতার যুগ বলেই পরিচিতI তবে তার সাথে কিছু ইতিহাসাশ্রিত, কিছু অনূদিত ও কিছু ধর্মীয় আখ্যানমূলক গদ্যের-ও সন্ধান পাওয়া যায়I বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাহিত্য ছিল কবির ও লেখকের নাম-গোত্রহীন বা 'অ্যানোনিমাস'I 

এ সময়ের কাব্য-কবিতাগুলি 'বেউল্ফ', 'জুনিয়াস', 'দি এক্সাটার বুক' এবং 'দি ভার্সেইলী বুক' শীর্ষক পাণ্ডুলিপি-সংকলনগুলির মধ্যে পাওয়া যায়I বিষয় অনুযায়ী এসময়ের কাব্যকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়: ধর্ম ভিত্তিক, যুদ্ধ-বিগ্রহ ভিত্তিক এবং বিষাদ ও বিলাপ ভিত্তিকI যে কবিদের নাম জানা যায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কেডমোন ও কিনেউল্ফ বা সিনেউল্ফI এঁদের কাব্য-সৃষ্টি মূলত খ্রীষ্ট ধর্মকেন্দ্রিক বিষয় নিয়েI যুদ্ধ-বিগ্রহ ভিত্তিক কাব্যের মধ্যে 'উইডসিথ', 'ওয়ালডেয়ার' এবং বিষাদ ও বিলাপ ভিত্তিক কাব্যের ক্ষেত্রে 'দি ওয়ান্ডারার', 'দি সীফেয়ারার'-এর নাম বিশেষ ভাবে উঠে আসেI যুদ্ধ-বিগ্রহের রোমঞ্চ, বেউল্ফ-এর অতিমানবীয় পরাক্রম ও বেশ কিছু মহাকাব্যিক বৈশিষ্ঠ্য সম্বলিত 'বেউল্ফ' এসময়ের সবচেয়ে চর্চিত এক কাব্যI সংখ্যায় কম হলেও এসময়ে কিছু গদ্যও আমরা পাইI অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন রাজা আলফ্রেড এর পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত 'অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন ক্রনিকল' এই সময়ের এক দলিল; এছাড়াও  রাজা আলফ্রেড বন্দিত কিছু গদ্যানুবাদের জন্য যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পোপ গ্রেগোরির 'প্যাস্টোরাল কেয়ার' এবং ওরোসিউসের 'হিস্ট্রি অফ দি ওয়ার্ল্ড'I এছাড়া এসময়ের আরো দুই গদ্যকার এলফ্রিক ও উলফস্ট্যান মূলত কিছু ধর্মোপদেশ ও আখ্যানমূলক গদ্যই লিখেছেনI 
এই পর্বে রইলো ইংরেজি সাহিত্যের সূচনাকাল নিয়ে কিছু কথাI মেনে নিতেই হয়- অনেক কথাই অব্যক্ত থেকে গেল।
----

Post a Comment

5 Comments

  1. ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসের আরম্ভ সুন্দর হয়েছে। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

    ReplyDelete
  2. সাধারণ জ্ঞানস্পৃহা সুন্দরভাবে মেটাবে, বেশ বুঝতে পারছি ।

    ReplyDelete
  3. সৌম‍্যদীপ লেখাটি ভালোই হয়েছে। তবে বিউল্ফ এর সময়কাল নিয়ে আমার মনে একটি অন‍্য সময় উঁকি দিচ্ছে। কোথায় যেন ৯৯৩ খ্রীষ্টাব্দ পড়েছিলাম মনে হচ্ছে। যদিও অনেকদিন ইতিহাস থেকে দূরে রয়েছি।

    ReplyDelete