জ্বলদর্চি

রণজিৎ অধিকারী


র ণ জিৎ অ ধি কা রী


পাথর

যারা ডুবেছিল 
তারা জেনেছে যে সমুদ্রের নিচে কত পাথর। 
সমুদ্র তৈরির অনেক আগে কেউ অত পাথর জমিয়েছিল 
আমরা তখন কিছু দেখতাম না, শুনতাম না। 
তারপর শ্যাওলা হয়ে বুঝলাম কিছু, 
নিবিড় মাছের চক্ষু যতটুকু বোঝে, 
কতবার জাহাজডুবির পর গিয়েছি —
অত অত পাথর কেন নিঃসাড়ে গোপনে 
            কেন তাদের অজ্ঞাতবাসে রাখা হল!    

আজ ঢেউ দেখে বুঝি কতদিনের 
                          জমানো কান্না উতলা।    
তারা কি একদিন কিছু বলে উঠবে? 
সেই জলীয় অস্থিরতার নিচে অত পাথরের বিস্ফারণ... 
আমরা সেদিন যেন বুঝতে পারি। 

ডানা

আমাদের উচিত ছিল অনেক আগেই কল্পনার ডানা লাগিয়ে নেওয়া। 
এই সামান্যে এমন মন ভরল কীভাবে এতদিন 
যৎসামান্য কুঠুরিতে টিকে রইলাম! 

একদিন উঁচু পাহাড়ে উঠে অবাক হয়ে গেলাম —
অতবড় দিকচক্রবাল কিন্তু কোথাও পৌঁছানো যায় না সহজে 
গল্পগুলো গ্রানিট পাথরের ওপর পাথর দিয়ে রচিত। 

ভাবো, পাহাড়গুলো যখন ডানা লাগিয়ে ঘুরত 
আর কখনোই তারা ছুঁতে পারত না নক্ষত্রগুলিকে 
তখন থেকে খেলবার ছলে তারকারা স্থাণু 
আর মাঝে অনেকটা করে শূন্য। 

এদিকে আমরা খুঁটে খুঁটে কাটালাম দিন অনুদিন পল অনুপল 
দেখেও না-দেখার ভান করে। 
আগেভাগে ডানা লাগিয়ে যারা অনেকদূর পেরিয়ে যাওয়ার খেলা 
খেলছে —তাদের মতোই উচিত ছিলনা কি 
আমাদেরও কল্পনার ডানা লাগিয়ে নেওয়া? 


তালগাছ 

কোথা থেকে এনে প্রথম তালগাছের বীজ ফেলা হল। 
আকাশ যেমন আছে তেমনই 
ছিল আন্দ্রোমিদা আকাশ-গঙ্গার মতো আরও যারা যথাযথ নামহীন। 
বিস্তর আলোকহীনতার পর আলো-আঁধারি 
                          কোটি কোটি দিন 
তারপর কোথাও ক্ষীণানুক্ষীণ সম্ভাবনা  
                           লম্বমান ছিল
তার বীজ হাওয়ায় ছিল। 

আজ উচ্চশির তালগাছের 
হাতছানির দিকে যেতে যেতে ভাবি ... 

আকাশ যেমন আছে তেমনই 
শুধু 
কোথা থেকে এনে প্রথম তালগাছের বীজ...


পাথরপ্রতিমা

আমরা এসে দেখেছি পাথরের প্রাণ নেই। 
ঝরনা নেচে নেচে চলে যায়, সে তবু অসাড়। 
অপরূপ জ্যোৎস্না এসে পড়ে থাকে —সে নির্বাক। 
আমরা আন্দাজ করেছি সে পুঞ্জীভূত ব্যথার নীরব। কীভাবে কোটি অনন্ত সময় বয়ে এসেছে 
— তার চিহ্ন তাদের বুকে। 

তবে কি পাথরপ্রতিমা ছিল কোনও দিন! 
অনেক অগ্নিপরীক্ষার অভিমানে আজ কেবল নিথর পাথর রয়েছে! 


হে প্রকৃতি        

নক্ষত্রের আলোয় পোকারা যাচ্ছে 
এতবড় দিনের ভেতরে তাকে কেন নাও? 
সে কেটে কেটে অযথা হাওয়ায় উড়ে চলে যায়। 
তাকে দাও ছোটো ছোটো দিন 
সে বুঝতে পারুক — ছোটো ছোটো অর্থ। 

এই বিপুল আকাশের নিচে তার অসহায় সমর্পণ কেন রাখলে? 
হে বিরাট প্রকৃতি, তুমি যথাযথ ছোটো হয়ে এসো 
— তারা তোমার আদি ও অন্ত দেখতে পাক।
 
-----------       

Post a Comment

5 Comments

  1. "তারপর শ্যাওলা হয়ে বুঝলাম কিছু,
    নিবিড় মাছের চক্ষু যতটুকু বোঝে"

    " কোথা থেকে এনে প্রথম তালগাছের বীজ"

    "তবে কি পাথরপ্রতিমা ছিল কোনও দিন!"

    কি সাংঘাতিক perspective!
    যেনো কোনো প্রাচীন আত্মার ছুড়ে দেওয়া প্রশ্ন। অভুতপুর্ব। ম্যাজিক রিয়ালিস্ম এর ছোয়া ও প্রকট।

    ReplyDelete
  2. চমৎকার লেখা। রণজিৎ অসামান্য।

    ReplyDelete
  3. পড়লাম
    ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  4. ধন্যবাদ সবাইকে।

    ReplyDelete
  5. বহুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে বিষাদ এলো, কী অনায়াসে লৌকিককে অলৌকিক করে দেন এই কবি ...

    ReplyDelete