জ্বলদর্চি

অংশুমান কর


অং শু মা ন  ক র


নন্দিনীকে

আমাকে যদি কঠিন কোনো বাঁকের মুখে তুমি
একলা ফেলে যাও 
ভাবব যাক 
জিতে গেলাম শেষ যুদ্ধটাও

পাথর আরও পাথর আরও পাথর মোড়া
তোমার কুঠুরিতে
নির্বাসনে থাকতে যদি হয়
তাতেই আর কীই-বা আসে যায়? 

শুধু তোমার দেহে গহীন গ্রামে
প্লিজ কখনো ডেকো না আমায় 

আমার বড়ো  সারল্যকে ভয়!
মাঝারি মাপের মানুষের কবিতা

ওভারব্রিজের ওপর
একটু দাঁড়ালেই
ভয় করে।
মনে হয়–পড়ে যাব
ট্রেন যায়, দ্রুত যায় 
ব্রিজ 
নড়ে ওঠে। 
আমি ভাবি –পড়ে যাব 
তুমি ভাবো –পড়ে যাব 
অল্প একটু উঁচুতে  উঠলেই
মনে হয় 
এই বুঝি পড়ে যাব নীচে!


ফ্রিজ

প্রথম ফ্রিজ এল আমাদের বাড়ি
টেম্পো চড়ে, লাল, আলালের ঘরের দুলাল
প্রথম ফ্রিজ  
ঘরে বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব
দু-দিন বেশ আইসক্রীম খেলাম আমরা
ছোটো ছোটো রেকাবিতে আপেল,  সন্দেশ ঝকঝক করতে লাগলো
তারপর ফ্রিজ পড়ে রইল,  বন্ধু আরশোলা
আর ঠাণ্ডা, মারাত্মক ঠাণ্ডা

 ঘরে রয়েছে ফ্রিজ
 আপেল নেই আর, সন্দেশ নেই
ছোটো  ছোটো ট্রে-তে টলটল করছে জল
জল জমে বরফ
ঘরে রয়েছে বরফ,কেবল বরফ


বাবা

পুরনো শোক আমরা ভুলে গিয়েছি। দুজন নতুন মানুষ এসেছে আমাদের ঘরে আর আমরা তাদের কোথায় বসাব, কী খাওয়াব, কীভাবে এগিয়ে দেব হাত ধোয়ার জল ভাবতে ভাবতে ভুলেই গেছি, এই জ্যৈষ্ঠে পুরে যাবে পাঁচ বছর।  আশ্চর্য না? যে-শোক মনে হয়েছিল কাটবে না কোনোদিন, বছর যায় আর সস্তা ডিসটেমপারের মতো ফিকে হয়ে আসে তা। ছোটো সিংহাসনে যেখানে ঠাকুর থাকে,  এখন সেখানে কালী-দুর্গা-শিবের সঙ্গে তুমিও। প্রতিদিন ফুল-বেলপাতা পাও। আর আমি দেখি ক্রমশ ঠাকুর হয়ে উঠছ তুমি। সেই ঠাকুর যাকে তিনশ চৌষট্টি  দিন ভুলে থাকতে থাকতে, বিপদে পড়ে, একদিন হঠাৎ বলে উঠি : 'রক্ষা করো'।

শিল্প 

কেউ দেখছে না
মাঠের প্রান্তে রাখাল বালক না 
হন্তদন্ত  কলেজ ছাত্র না   জানলার ফাঁক দিয়ে মুখ বের করে রাখা অভিমানী নারীটিও না,
কেউ দেখছে না, জেনেও  
 মধ্যদিনে
জল ঝরে পড়ছে বেগুনিরঙা জারুল ফুল। 

একা একাই 
পুকুরকে সাজাচ্ছে


------

Post a Comment

0 Comments